somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভূতি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়স্ক নাপিত লোকটার মন বেশ খারাপ। আমি খানিকটা অবাক হলাম। এমন তো কখনো দেখিনি। যখনই লোকটিকে দেখেছি, খুব হাসি-খুশি দেখেছি। আমি চুল কাটতে এলেই আমার সাথে রাজ্যের সব বিষয় নিয়ে হাসি মুখে আলাপ করতে থাকে, আমার বেশ মজাই লাগে। কিন্তু আজকে কি যেন হয়েছে! আমি খানিকক্ষণ চাপাচাপি করলাম যে কি হয়েছে, কিন্তু বলতে চাচ্ছিল না। ভাবলাম, থাক। আর চাপাচাপি করলাম না।

হঠাৎ চুল কাটতে কাটতে লোকটা বলতে শুরু করল :

-মাইয়াডার কথা খুব মনে হইতাছে বাবা।


-মাইয়াডার কথা??

-হ বাবা।

আমি কিছু না বলে কিছুক্ষন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।

লোকটা আবার বলতে শুরু করে :

-আমার একমাত্র আদরের মাইয়াডারে বিয়া দিয়া দিছি এক সপ্তাহ আগে। শশুর বাড়িতে মাইয়া আমার খুব কান্নাকাটি করে, আমারে নাকি দেখতে খুব মন চায়। খালি জিগায়: "বাবা,তুমি কহন আমারে দেখতে আইবা?" কন তো বাবা, শশুর বাড়ি মেলা দূর আর এক্কেরে খালি হাতে কি যাওন যায়? কিছু ট্যাকা তো লাগব, নাকি? মেয়ে বিয়া দিতে গিয়া এই কয়দিনে মেলা ধার হইয়া গেছে, এহন হাত একদম খালি। কি যে করি...


বলতে বলতে লোকটির চোখে পানি চলে আসে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।

-মাইয়া আমার দিন রাত খালি কান্দে, তার নাকি আমগোরে ছাইড়া থাকতে খুব ডর লাগে। খালি আমাগো কথা মনে হয় আর দেখতে ইচ্ছা করে। কন তো বাবা, আমগো কি তারে দেখতে ইচ্ছা করে না? এক্কেরে জানের টুকরা আসিলো বাবা, মাইয়াডা, বাবা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। গরীব হইয়া জন্মানোর খুব কষ্ট বাবা।

চুল কাটা শেষ হলে আমি চুপচাপ বাসায় চলে আসি। ভাব করি যেন কিছুই হয়নি।আমরা মানুষগুলো এমনই। অপরের দু:খ-কষ্ট শুনে সেটাকে কৌশলে পাশ কাটানো এখনকার দিনে আমাদের স্বাভাবিক ব্যাপারের মাঝে চলে এসেছে।

দুপুরে অল্প একটু ঘুম দিয়েছি, হঠাৎ মনে হল, একটি বাচ্চা মেয়ে যেন তার বাবাকে ডাকছে আর কাঁদছে। কি অদ্ভুত! আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মনটা ভয়াবহ অস্থির লাগতে থাকে। আমি দ্রুত ড্রয়ার খুলে আগামী এক মাসের রিক্সা ভাড়া আর বই কিনার কিছু টাকা ছিল - সেটা নিয়ে নেই। আমি এমন আগে কখনই করিনি, এত উদার মানুষ আমি কখনই ছিলাম না। কিন্তু এখন মাথার মাঝে হঠাৎ কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। বোঝার সময়ও নেই।

লোকটা টাকা দেখে খুবই অবাক হল। একদমই নিতে চাচ্ছিল না। বারবার বলছিল," লাগব না,বাবা।আপনি আমারে বলছেন,এতেই আমি খুব খুশি হইছি।"

আমি একরকম জোর করে উনার হাতে টাকাটা ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত কেটে পড়ি। মনে একটা শান্তি শান্তি লাগতে থাকে।


৭ দিন পর লোকটার সাথে রাস্তায় আবার দেখা হতেই জোর করে দোকানে নিয়ে চা খাওয়ালো। বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। তারপর বলল

-জানেন বাবা, সেদিনকা মাইয়ারে ফোনে বোঝাইয়া বলছিলাম : "টাকা পয়সা নাই, কিভাবে আসব মা?" মাইয়া আমার বুঝছে। আমারে আর কিছু বলে নাই। কিন্তু সেদিন মাইয়া নাকি আমার সারারাত আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছে আর বলছে : "আল্লাহ,তুমি আমার বাপজানরে একটাবার শুধু আমার সাথে দেখা করাইয়া দেও, শুধু একটাবার, আমি আর তোমার কাছে কিছুই চাই না।" সকালে উইঠা আমারে দেইখা মাইয়া আমার যা একটা চিৎকার দিছে গো বাবা, আপনি যদি দেখতেন!!

এটুকু বলে লোকটা হাসতে থাকে...সেটা দেখে আমার ভিতরে খুব বিচিত্র একটা আনন্দের অনুভুতি আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যে আনন্দের কোন সীমা-পরিসীমা নেই।

----------------------------------------------------------------------

গল্পটি লিখেছেন : স্বপ্নীল

প্রথম প্রকাশের তারিখ : ২৩ জুন , ২০১১

স্বপ্নীল এর ফেসবুক : http://www.facebook.com/sopnill.ahmed
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×