somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাফাখুম দেখে বান্দরবানের আশেপাশে (পর্ব-৪)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*****ফিরে আসতে আসতে গোধূলি সন্ধ্যা হয়ে গেল। হটাত আমদের এক গ্রুপ মেম্বার রেমাক্রিতে এসে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল কিরে তোর পায়ে কি হল, আমি তাকিয়ে দেখি রক্তে আমার পা ভেসে গেসে। বুঝলাম যে জোঁকবাবাজী আমার পা থেকে রক্ত চুষে আবার ছেরেও দিয়েছে, যদিও পুরো রাস্তা আমি পা চেক করতে করতে এসেছি। গাইড পাহাড়ি পাতা ঘশে দিয়ে জায়গাটা কাপড় দিয়ে বেধে দিল।
রেমাক্রি পৌঁছে খাবারের জন্য পেট চোঁ চোঁ করতে লাগল। দুপুরেই খাবারের অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলাম, এসে দেখি খাবার তৈরি, শুধু বেরে নিয়ে খাওয়া বাকি। সাঙ্গু নদীতে গোসল করে এসে, আমরা দুপুরের খাবার খেলাম সন্ধ্যায়। আইটেম ছিল ভাত, বরবটি ভাজি, পাহাড়ি মুরগী আর ডাল। খাবার ছিল বেশ সুস্বাদু। জনপ্রতি খাবার ৮০ টাকা।
থানছিতে শুধু রবি আর টেলিটক মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করে। থানছি পার হয়ে আসলে আর কোন নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবেনা। তবে রেমাক্রি বাজারে অ্যান্টেনাযুক্ত ফোন আছে, মিনিট ৫ টাকা করে সেখান থেকে সবখানে ফোন দেয়া যায়। রেমাক্রি বাজার ৮-৯টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা একটু রেস্ট নিয়ে আমাদের আকর্ষণীয় খাবার বার-বি-কিউ বানাতে বসে গেলাম।


মুরগী কাটা পর্ব

বার-বি-কিউ (মুরগী পোড়া)

যে বাড়িতে ছিলাম তাদেরই একটা পাহাড়ি মোরগ ছিল ৩ কেজির। রান্না আর মশলার সবকিছু মিলে ৮০০ টাকা দিয়ে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলাম। রাতে মজাদার বার-বি-কিউ দিয়ে ডিনার সেরে ক্লান্ত শরীরকে ঘুমে আচ্ছাদিত করলাম। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ ডজন কলা কিনলাম মাত্র ১৫ টাকা দিয়ে, সাথে নিলাম প্রতিজনের জন্য ২ টা করে ৫ টাকা দামের পরাটা। কলা আর পরাটা দিয়েই সকালের নাস্তা পর্ব সারলাম। রেমাক্রিতে ডিম দিয়ে নাস্তা করতে গেলে অবাক হতে হবে, একটা ডিম মামলেট ২৫ টাকা!!! সকালে নাস্তা শেষে আমরা বিদায় জানালাম রেমাক্রি বাজারকে। ফিরে আসার পথে আমাদের সময় লাগবে কম কারন আমরা নিচের দিকে নামবো আর স্রোতের দিকেই চলব।


এভাবেই নদী নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে

নদীর পাশের পাহাড়ি সৌন্দর্য

এই নৌকা ভ্রমণটা আর একটা মজা দিল আমাদের, পাথুরে নদীতে নৌকা দিয়ে রাফটিঙের মজা উপভোগ করতে করতে আমরা থানছি চলে আসলাম।


থানছি এসে নৌকা আর গাইডের ভাড়া মিটিয়ে চলে গেলাম থানছি বাস স্ট্যান্ডে। সকাল ১০টার বাস ধরে আবার রউনা হলাম পাহাড়ি রাস্তা ধরে, জীবনে আর পেছনের পথগুলোতে আসতে পারব কিনা জানিনা। ভরতপারা ভাঙ্গা রাস্তার পর বাস পরিবর্তন করে আমাদের স্টপেজ হবে নীলগিরি। দুপুর ১টার দিকে আমরা এসে পৌঁছলাম নীলগিরিতে।


নীলগিরি

নীলগিরি

নীলগিরির নাম অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি। বান্দরবান বললেই প্রথমেই আসে নীলগিরির নাম। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় এই অবকাশ যাপন কেন্দ্র।


এই কটেজগুলোতে থাকতে পারবেন

এই নীলগিরিতে সারা বছরই মানুষের ভিড় লেগেই থাকে, এখানে থাকতে হলে সামরিক অফিসারের মাধ্যমে ৩-৪ মাস আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। নীলগিরিতে কাটানোর জন্য সবচে সুন্দর সময় শরৎকাল, এ সময় মেঘ ছুঁয়ে যায় নীলগিরির উপরে দাঁড়ানো পর্যটকদের।


এখানে দাঁড়ালেই শরতের মেঘ ছুবে আপনাকে

নীলগিরি ছবি তোলার জন্য একটা দারুন স্পট। বিশেষ করে হেলিপ্যাডের অংশটুকু বেশী জোস।



হেলিপ্যাড


নীলগিরিতে টিকেট কাটতে হয়, প্রতিজন ৫০ টাকা আর খাবার একটা ক্যান্টিন আছে যেখানে ২০০ টাকা প্যাকেজে ১ প্যাকেট বিরানি, ১ টা মাম পানি আর ০.৫ লিটারের একটা কোক পাওয়া যায়।




এভাবেই নীলগিরির সৌন্দর্য ধারন করতে পারবেন

নীলগিরিতে ঘুরাঘুরি আর কামেরাবাজি শেষ করে আমরা ক্যান্টিনে বসে দুপুরেরে খাবার খেয়ে নিলাম, তারপর অপেক্ষা পরের বাসের জন্য। বাস ধরে সন্ধ্যানাগাদ আমরা এসে পৌঁছলাম বান্দরবান শহরে। এখানে এসে আমরা উঠলাম বাসস্ট্যান্ডের কাছেই হোটেল হিলবার্ডে, রুম পেয়ে গেলাম সহজেই কারন ইতিমধ্যে ঈদের ছুটি শেষ করে পর্যটকেরা বান্দরবান ছাড়া শুরু করেছে।


হোটেল হিলবার্ড

বান্দরবানের ম্যাপ

২টা ৩ বেডের রুম আমরা একদিনের জন্য নিলাম ১৫০০ টাকায়। রুমে গোসল সেরে একটু রেস্ট নিয়ে নিলাম। তারপর রাতের খাবার খেতে বাজারের দিকে একটু হেঁটে আমরা থানা ক্যান্টিন যার নাম এখন “তাজিংডং হোটেল” এ রাতের খাবার শেষ করলাম। হোটেলটি অনেক পরিষ্কার এবং সার্ভিস অনেক ভাল। রাতের খাবার শেষে আমরা হোটেলে ফিরে ঘুমোতে গেলাম।

(চলবে)
শেষ পর্বে বান্দরবানের নাফাখুম, নীলগিরি এবং শহরের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানের কিছু তথ্য দেয়া হবে।
আগের পর্ব গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন
Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×