somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০০১: আ স্পেস ওডিসি'র কথা

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যে কারণে অবতারণা (স্কিপযোগ্য)

ঘটনা হল গিয়ে, খেয়াল করলাম, যেদিকে মানুষের বেশি টান, সেটা দূরেই থেকে যায়। আর টানটা চলে গেলে সব দূর কাছে চলে আসে। এই যেমন, আমার মোবাইল ফোন সাইকোসিস। একটা সময়ে কি আমিও মোবাইল ফোন সাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলাম না? বিলক্ষণ ছিলাম! তারপর ঠিক করলাম, যাকে ব্রিটিশ ইংরেজিতে বলে, গম্ এ মোবাইল ফোন আর অ্যামেরিকান ইংরেজিতে বলে দরদ্ এ সেলফোন, সেটা দূরে যাও! শুধু কথা বলা, এইতো? তাই শুধু এমন একটা ফোন থাকলেই যথেষ্ট যা কথা বলতে পারে, সেইসাথে একটু অডিও প্লে করতে পারে।

কিন্তু তিনি তখন কী যে চাইছিলেন, আমি কি আর তা জানি? ফলাফল, জানুয়ারি মাসে কথা নাই বার্তা নাই, অ্যান্ড্রয়েড ফোন গিফটে পেয়ে গেলাম। এখন এই টেকনো জিনিস নিয়ে আমি কী কর্ব? যথারীতি অডিও শুনি আর কল করি। সিমের নেটই অন করিনি।

অ্যান্ডু ফোনের কত ঘিড়িঙ্গি দেখে তো টাস্কিত। কীসের অ্যাপস ম্যাপস নামায়। আবার সেইসব নামাতে হলে গুগল প্লেস্টোরে যেতে হয়। ইন্সটল করা যায় না ফাইল নিয়ে। তো কিছুটা ব্যবহার করলাম ওয়াইফাই। অ্যাপস ম্যাপস নামিয়ে ভর্তি করে আবার উগলে দিলাম। এরপর শুনলাম রুটমুটও করতে হয়। তামিম ইবনে আমানের ব্লগে সেইসব দেখা শুরু করতে না করতেই বিনা মেঘে বজ্রপাত।

আরেক ফোন সাহেব এসে হাজির। ইনিও গিফট। মেইড ইন চায়না। দেখে চোখ আর ফিরতে চায় না। আইফোন ফাইভ।

আমি যথারীতি অ্যাপস ম্যাপস নিয়ে আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু আমার কষ্ট কি কেউ বুঝবে? গেম-অ্যাপসের গুষ্টি কিলাই, আইফোনে অডিও ঢোকানো যাচ্চে না কেন পিসি থেকে?

মোদ্দা কথা হল, আমি এই বস্তু পেয়ে মাত্র দুইটা কারণে খুশি, প্রথম কারণ, প্যানারোমা ছবি তোলার সুবিধা, দ্বিতীয় কারণ- উফ্! আমার হাতের কাছে একটা মনোলিথ! কমপ্লিট ব্ল্যাক অ্যান্ড শাইনি অ্যান্ড ফিচারলেস মনোলিথ।

আর ফ্যামিলি খুশি টেম্পল রান পেয়ে। হায়রে টেম্পল রান! খালি দৌড়ায় আর দৌড়ায়। আমার চার বছরের বাপধন তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টেম্পল রানের দৌড়ের উপরই আছে। ছোটভাই, বোনটা কিম্বা কাজিনগুলো খালি দৌড়ায়। দৌড়ায়া পয়সা গুণে। তোমার চেয়ে আমার বেশি। (আমিও দৌড়াই প্রায়ই, কিন্তু কই ক্যাম্নে, শরমের কথা না?)

যাকগা, আমার কাছে ঘটনা হল, এর ডিজাইন। দেখলে মনে হয়, এক টুকরা ব্ল্যাকহোল পড়ে আছে।



মনোলিথ: ২০০১: আ স্পেস ওডিসি থেকে


প্রতিটা মানুষের মাইন্ড শেইপ হয় শৈশব থেকে শুরু করে প্রথম তারুণ্যের উদ্দীপনার মাধ্যমে। আমার এই উদ্দীপনায় অন্যতম পালক ছিল ২০০১: আ স্পেস ওডিসি।

বইটা পড়ার প্রেরণা পেয়েছি সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে। তারপর পড়লাম বই। এরপর দেখলাম মুভি।

২০০১: আ স্পেস ওডিসি'র লেখক আর্থার চার্লস ক্লার্ক। এই সিরিজের চারটা বইই মূল ইংরেজিতে এক লহমায় পড়ে ফেলেছিলাম, ২০১০:ওডিসি টু, ২০৬১:ওডিসি থ্রি, ৩০০১: দ্য ফাইনাল ওডিসি সহ। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সায়েন্স ফিকশন রাইটারদের মধ্যে তিনটা নাম বললে একটা বলতে হবে ক্লার্কের।

ক্লার্কের বই নিয়ে আবার স্ট্যানলি কুবরিকের মত মুভিমেকিং মাস্টারমাইন্ড সেই ষাটের দশকে বানান ২০০১: আ স্পেস ওডিসি। মজার বিষয় হল, মুভিটা আমি দেখেও ছিলাম ২০০১/ ২০০২ সালে। কী মেকিং! এই যুগেও তব্দা লাগানো বিষয়।

ক্লার্ক এই বইতে দেখান, মহাকাশের নক্ষত্র-এলিয়েনরা সারা সৃষ্টিজগৎ চষে বেড়ায়।
নক্ষত্র-এলিয়েন বা নক্ষত্র-শিশু'র ধারণা কিন্তু ক্লার্ক নিজে থেকে তৈরি করেননি। এই ধারণাটা এসেছে আত্মার ধারণা/ নিরাকার দেবতাদের ধারণা থেকেই। শক্তি অবিনশ্বর। শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তর হয় মাত্র।

তিনি দেখাতে চাইছেন, টেকনোলজির সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে যাবার পর, বিভিন্ন গ্রহের প্রাণীরা উন্নয়নের চরম শিখরে আরোহণ করে একটা পর্যায়ে দেহে আর আবদ্ধ থাকতে চায়নি। তারা দেহকে ছেড়ে দিয়ে নিরাকার ধারণ করেছে, যাকে বলা চলে স্টার চাইল্ড। সেই স্টার চাইল্ডদের ক্ষমতা প্রায় অসীম। কারণ তারা আলোর গতিতে গমনাগমন করতে পারছে এবং প্রয়োজন মত শক্তি নিতে পারছে নিথর মহাকাশ থেকে। তাদের স্মৃতিভান্ডারের এককও শক্তি, বিশ্লেষণ ভান্ডারের এককও শক্তি- ঠিক রূহের ধারণা।

তারা মহাকাশের চাষী। কেমন চাষী? যারা বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সিতে ছুটে বেড়ায় প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন গ্রহের খোঁজে।
প্রাণের অস্তিত্ব যদি পায়, তখন তারা সেখানে খোঁজে, উন্নততর প্রাণ পাওয়া যায় কিনা সেই সম্ভাবনা।
সমসাময়িক প্রাণগুলোর মধ্যে তথা খাস বাংলায় পশুদের মধ্যে তারা বেছে নেয় সবচে উন্নত জাতটাকে।
এরপরই মজার বিষয়। পাঠিয়ে দেয় একটা কালো, আয়তাকার জিনিসকে, যাকে বলা চলে এক পাথরে গড়া স্তম্ভ। সলিড, মিশকালো, চরম জিনিস।



এই মনোলিথ হল স্টারচাইল্ডদের মাল্টিপার্পাস মেশিন।
এটাই বিশাল মেমোরি ও প্রোগ্রাম সমন্বিত কম্পিউটার, এটাই ট্রান্সমিটার, রিসিভার, আসা-যাবার গেটওয়ে, রিফ্লেক্টর এবং, সবচে ভয়ানক বিষয় হল, ভরকে শক্তিতে রূপান্তরকারী।

এখন বিষয় হচ্ছে,
এই মনোলিথ পৃথিবীতে দিয়ে যায় তারা।
তার ফলে মনোলিথ বানরকে বেছে নেয়।
(ক্লার্ক এখানে এক হিসাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, এম্নি এম্নি বানর থেকে মানুষ আসা সম্ভব নয়। তাই তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত জেনেটিক প্রণোদনা। এই পার্টটাই মুভির ও বইয়ের প্রথমে। দেখলে অসম্ভব মজা পাবেন।)

পাথরটাই বানরকে বারবার প্রণোদনা দিতে থাকে। শেখাতে থাকে। শাস্তি দেয়। স্বপ্ন পুঁতে দেয়, সুখে থাকার স্বপ্ন। আঙুল ও হাত চওড়া করতে শেখায়। ধরতে শেখায়। ধরতে শেখার পর সে কী তান্ডব প্রথম বানরের হাতে উঠে আসে হাড়ের রূপী অস্ত্র!

সবশেষে ক্লার্ক গল্পে দেখাতে চাইছেন,
প্রণোদনা ছাড়া বানর থেকে মানুষে রূপান্তর ছিল অসম্ভব। যার আরেক মানে হয়, মানুষ এবং বানরের মধ্যে একটা কিন্তু রয়ে গেছে। সরল গমনাগমন নয়। মানুষ ও বানর এক নয়।
এবং মানুষের এই রূপও পূর্ণ নয়।
তার পূর্ণ রূপ স্টারচাইল্ডে। রূহে।
অর্থাৎ সেই পুরনো কথা- বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মিকতা একটা পর্যায়ে গিয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।



আর মুভিটা কিন্তু মিস করবেন না।
আসল ঘটনার কিছুই বলা নেই এখানে। মহাকাশের বিদ্বেষী বুদ্ধিমান কম্পিউটার হাল কীভাবে মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কীভাবে মানুষ আউটার প্ল্যানেটের দিকে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে মুখোমুখি হয় মনোলিথের...

এখন, তিনি যদি স্টারচাইল্ডদের ফেরেস্তা আকারে দেখিয়ে থাকেন, তাহলে আব্রাহামিক রিলিজিয়ন গুলোর ধারণার একটা বৈজ্ঞানিক আবহ তৈরি হয়, এইতো।
অসাম।

সবশেষে,
আমার মনোলিথের একটা ডাউনলোড করা ছবি-


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×