'দি উইন্ড উইল ক্যারি আস' দেইখা আমার অ্যান্টেনা ক্ষতিগ্রস্ত হইলেও অন্যরকম একটা মজা পাইসিলাম। কি ধরনের মজা কইতারি না।মনে লয় একটা ভাব আসছিল ভিতরে। আরেহ শালা কি এক খান সিনেমা দেখলাম।
তো সেই ভাবের জগতে থাকতে থাকতেই জনাব আব্বাস কিওরুস্তমির আরেক খানা সিনেমা দেইখা ফেলাইলাম।১০৬ মিনিটের এক ড্রামা, রোম্যান্টিক কমেডিও বলা যায়,Certified Copy ।যেহেতু দেইখাই ফালাইসি, একটা রিভু লেখতে মন চাইল।এই সিনেমা দেইখাও আমার অ্যান্টেনা ক্ষতিগ্রস্ত হইসে, এইভাবে চলতে থাকলে কতদিন আমার অ্যান্টেনা টিকবো বুজতেসি না।
২০১০ সালে সিনেমা মুক্তি পাইসে ৬৩ তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে এটি ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইতালি, আমেরিকায় প্রদর্শিত হইসে।এটা আব্বাস কিওরুস্তমির ইরানের বাইরে করা প্রথম ফিল্ম এবং বলাই বাহুল্য , বিনোশে র পোশাক এর জন্য এটি ইরানে নিষিদ্ধ করা হইসে।
প্রথমে একটু বেড়াছেড়া লাইগা গেসিল, ফ্রেঞ্চ সিনেমা ভাইবা দেখতেসি, হঠাৎ মনে হইল ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলতেসে।জায়গাটাও ইতালিতে।
তুসকানি।
তুস্কানি হইল ইতালির একটা প্রদেশ, যার প্রাদেশিক রাজধানি ফ্লোরেন্স।ইতালির ওই প্রদেশের একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে।বলা হয় ইতালিয়ান রেনেসাঁর কেন্দ্র স্থল হইল এই তুস্কানি।শিল্প সাহিত্য ভাস্কর্য বিজ্ঞান ইত্যাদির বড় বড় গুরু, যেমন পেত্রার্ক, দান্তে, বত্তিচেল্লি, মেকিয়াভেলি,গেলিলিও, দা ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো এদের বাড়ী হইল ওই এলাকায়।এবং ওই এলাকা তাদের জাদুঘর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত।
এই তুস্কানি নিয়া আমার এত প্যাচাল পারার কারন হইল, সিনেমার বিষয় বস্তুর সাথে শিল্পের একটা সম্পর্ক আছে।যদিও ম্যাজিক মুন্সী জনাব আব্বাস, সিনেমার কাহিনিতে বিরাট এক টুইস্ট মাইরা সিনেমাটারে পরিস্কার দুই ভাগ কইরা ফালাইসেন।
প্রথম ভাগের কথা কই
প্রথম অংশ আপনের কাছে কিসুটা বোরিং লাগতে পারে। কারন একজন ব্রিটিশ লেখক তার নতুন লেখা বই এর উপরে লেকচার দিতে গেসেন তুস্কানি এলাকায়।এতে তেমন মজার কি আছে?? নাই। তার বই এর নাম 'সারটিফাইড কপি'। ওই বইয়ে উনি বলতে চাইসেন যে, একটা অরিজিনাল শিল্পকর্ম থেকে যদি কপি করে আরেকটা তৈরি করা হয়, সেটা চিত্রশিল্প , স্কাল্পচার যাই হোক না কেন, তার নিজের একটা শিল্প গুণ আছে।ওইটা একটা সারটিফাইড কপি।
তো সেই লেকচারে গেসে এক লোকাল আর্ট ডিলার(জুলিয়েট বিনোশে)।সময়ের অভাবে লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে না পাইরা তার কার্ড দিয়ে আসে সে।পরে লেখক সেই কার্ড এর ঠিকানা অনুযায়ী বিনোশের আর্ট গ্যালারি তে গিয়া হাজির।
প্রিয় লেখকরে কাছে পাইয়া বিনোশে একটু আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়। তারা ঠিক করে গাড়ীতে করে ওই এলাকা ঘুরে দেখবে।
এই হইল প্রথম ভাগের কাহিনী, গাড়ীতে ঘুরতে ঘুরতে তারা একে অপরকে জানতে পারে, লেখক তার বই গুলোতে অটোগ্রাফ দেয়, শিল্প নিয়া আলোচনা করে।এক পর্যায়ে তারা কফি খাইতে এক ক্যাফে তে ঢুকে। সেখানে লেখকের অনুপস্থিতিতে ক্যাফের মালিক মহিলা তাদের কে স্বামী স্ত্রী ভেবে অনেক কথা বার্তা আদেশ উপদেশ দিলে সে আর মহিলার ভুল ভাঙ্গায় না।লেখক ফিরে আসলে সে তাকে এই কথা বলে। তারা ক্যাফে থাইকা বের হয়ে যায়।এই খান থিকা ২য় পার্ট এর শুরু।
ক্যাফে থিকা বাইর হইয়া তারা স্বামী স্ত্রীর মতো আচরন করতে থাকে। বিনোশে তার ছেলের দস্যিপনার অভিযোগ করলে জেমস(লেখক) ছেলের পক্ষে কথা বলে , যেন তার নিজের ছেলে।এক সাথে খেতে যায়, সেখানে একে অপরের বিরুদ্ধে স্বামী স্ত্রীর মত অভিযোগ আনে।যেমন-
তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসনা
তুমি বদলে গেছ
তুমি আগে এইগুলা করতা এখন আর করনা ইত্যাদি ইত্যাদি
পরে তারা একটা হোটেলে যায়, যেখানে বিনোশে তার বিয়ের প্রথম দিন গুলো কাটাইসিল।
তো আমার কাসে মনে হইল, চরম একাকীত্বে ভুগতে থাকা বিনোশে, লেখকের সাথে স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করে তার সুখের দিনগুলোর একটা সারটিফাইড কপি তৈরি করতে চায়। যদিও সিনেমায় কখনই বিনোশের আগের স্বামীর কথা উল্লেখ করা হয় নাই। সে ডিভোর্স দিসে কিনা , নাকি মারা গেসে অইটাও বলা হয়নাই।এমনকি বিনোশের কোন নামও দেয়া হয়নাই সিনেমায়।
বিনোশে তো তুমুল অভিনয় কইরা সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার জিত্তা নিসে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ।অপেরা সিঙ্গার উইলিয়াম শিমেল লেখকের চরিত্রে ভালো অভিনয় করসে।অন্তত পক্ষে সে আগে কোনদিন সিনেমায় অভিনয় করে নাই এটা বুঝা যায় নাই।
আর আব্বাস কিওরস্তমির কথা কি কমু??
উস্তাদ খালি ভারি সিনেমা বানায়। দেখার পরে অ্যান্টেনা,রাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তাই কিসুদিন গ্যাপ দিয়া দিয়া উনার সিনেমা দেখতে হইব।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০১