somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবু১৫৪
জীবনে সহজেই কোন কিছু পাবার আশা করাটা বোকামী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়েই আসতে হয় কাংক্ষিত লক্ষে। এই পথ এত সোজা নয়। অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে সেই পথ চলায়। হয়তো আরো অনেক কোথিন হবে সামনের পথ টুকু। তারপর ও হার মেনে নেয়ার পক্ষে আমি নই। জয়ী যে আমাকে হতেই হবে।

সে, আমি; আমরা ও আমাদের সম্পর্ক :)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্পর্কে সে আমার খালাতো বোন। আমার ছোট খালার সবার ছোট মেয়ে। আমার খালাদের (আম্মা সেঝো, ৪ বোন আম্মারা) মধ্যে এই খালা সবার ছোট। ছোট বলেই কি না জানি না, এই খালার প্রতি আমার অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ। আম্মার পরেই যাকে খুব সম্মান করি উনি হলেন আমার এই খালা। উনি খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ। প্রচন্ড হাসিখুশি এবং গল্প / আড্ডা করতে উনার জুড়ি নেই। উনার সামনে গল্প করতে মিনিট দশেক বসলে কেউ না হেসে পারবে না। তার একেকটা কথার মাঝে এত হাস্যরস লুকিয়ে থাকে যাতে তাঁর সামনে কেউ থাকলে হাসতে বাধ্য সে। তাই সব আসরের মধ্যমণি আমার এই খালা। আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে উনি একজন।

ধরি, আমার খালাতো বোনের নাম “অহনা” । এখনও মনে পরে সেই ছোটবেলা থেকেই তার সাথে আমার সম্পর্কটা বেশ মজবুত ছিল। সে শুধু আমার বোন যে তা নয়। একাধারে সে আমার খুব ভাল একজন বন্ধুও ছিল। এমন কি আমার বড় ভাই বোনদের থেকে তাকে আমি বেশি পচ্ছন্দ করতাম। তার সাথে সব কথা শেয়ার করা যেত। সেও তার মনের সব কথা আমাকে অকপটে বলে দিত। সে কোন সমস্যায় জড়ালে আমার কাছে আসতো বলতে। বলতে পারেন তার সাথে আমি বেশ ফ্রী ছিলাম। অহনা খুব বোকা, ভীতু স্বভাবের ছিল। কেউ ক্যামেরা নিয়ে তার সামনে ছবি তুলতে দাঁড়ালে কেদে দিত। তখন তাকে থামানো অনেক কষ্টকর ছিল।

খাওয়া দাওয়া কম করার কারণে তাকে আমরা সবাই আদর করে ডাকতাম “কাঠি” । এতে সে খুব ক্ষেপে যেত। মনে পরে সে যখন ইন্টার মিডিয়েট দেবে তখন অবধি তাকে এই নাম ধরেই ডাকতাম। তার বাবা মানে আমার ছোট খালু ছিলেন ঢাকা। ঢাকার কাকরাইলে উনাকে তার পেশার কারণে থাকতে হত। সেখানে তিনি একাই থাকতেন। আর তার পরিবার থাকতো জয়দেবপুর, গাজিপুরে। মাঝে মাঝে তিনি গাজিপুর যেতেন। এই খালু যখন মারা যান তখন খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে যে তিনিও আছেন। আমাকে অসম্ভব ভালবাসতেন।

সে যাই হোক, মনে পরে যখন স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হত তখন স্কুল ছুটি থাকতো ১ মাসের বেশি। সেই ১ মাসের জন্য আমরা চলে যেতাম নানু বাড়ি। আমি, আম্মা, ছোট খালা, আর অহনা। নানু আমার জন্মের আগেই মারা গিয়েছিলেন। অসাধারণ কেটেছে আমার সেই মধুর দিনগুলো। মামাতো ভাই বোন, অহনা, আমি সবাই মিলে অনেক মজা করে সময় কাটিয়েছি। কুয়াশা মাখা শীতের সকালে উঠে বাদাম কুড়াতে যাওয়া কিংবা হাল্কা বাতাসে ঘোড়াঘুড়ি করা, কিংবা দূরে খেজুর গাছের রস নিয়ে যাওয়া লোকটার কাছ থেকে খানিক রস চেয়ে খাওয়া, খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাটা সেসব এখনও চোখের সামনে ভেসে উঠে।

সারাদিন ছুটোছুটি করে, পিকনিক করে, কিংবা বোমবাস্টিং খেলে, পুকুরে মাছ ধরা দেখে সময় কাটতো। রাত নামলে হারিকেনের হাল্কা আলোয় চোর পুলিশ খেলার কথা মনে হলে এখনো অনেক মজা পাই। নানার বাড়িটা দোচালা হওয়াতে আমরা ঘুমাতাম উপরে। মাটিতে তোশক বিছিয়ে ঢালাও ভাবে ঘুমাতাম আমরা।

বয়স যত বাড়তে থাকলো ততই অহনার সাথে আমার সখ্যতা বাড়তে লাগলো। আমাদের বাসায় আসলে কিংবা আমরা তাদের বাসায় গেলে অনেক ভাল লাগতো। সে আমার থেকে ১ বছরের ছোট ছিল। তাই আমাকে সে ভাইয়া না ডেকে নাম ধরে ডাকতো। এই নিয়ে আমার ছোট খালা ওকে বকা দিত। কিন্তু সে কিছুতেই আমাকে ভাইয়া বলে ডাকতো না। ওরা যখন ঢাকা চলে এসেছিল তখন প্রতি ঈদেই তার বাসায় যাওয়া হত। অহনার সাথে কাটানো প্রতিটা সময় আমার কাছে ছিল অনেক মুল্যবান।

অহনা যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে তখন থেকেই তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য তার পরিবার উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। আমি এই কারণে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। কেন এত তারাতারি বিয়ে দিতে হবে অহনাকে? ওর তো বয়সই হয় নি বিয়ের। বিয়ে করলে পড়াশোনা করবে কিভাবে? কিন্তু অহনার পরিবার রক্ষণশীল হওয়াতে আমার কোন কথাতেই কোন কাজ হয় নি। বিয়ের পরেও পড়াশোনা করা যাবে এটা ছিল উনাদের যুক্তি।

সময় থেমে থাকে না। আসতে আসতে আমরা বড় হতে লাগলাম। অহনা তার অসুস্থতার কারণে ইন্টার পরীক্ষা দিতে পারলো না। পরের বছর দিতে হল তাকে। ছোটবেলা থেকেই সে খুব অসুস্থ থাকতো। তাই তাকে নিয়ে সবাই অনেক চিন্তা করতো।

আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে তখন অহনা সবে ইন্টার পাশ করে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েছে। আগেই বলেছি ছোটবেলা থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব আসছিল। অনেক দেখে শুনে তার পরিবার একটা ছেলে পছন্দ করলো। সবারই পছন্দ হল ছেলে। কিন্তু অহনার কেন জানি এতে মত ছিল না, তারপর ও সে মত দিল। এ ছাড়া আর কোন উপায় তার ছিল না। যেহেতু তার পরিবার চাপ দিচ্ছিল।

সেই বিকেলের কথা আমার এখনও মনে আছে যেদিন সে আর তার মা আমাদের বাসায় এসেছিল ছেলের ব্যপারে আমার আব্বার সাথে কথা বলতে। অহনাকে একা পেয়ে আমি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম -

আমিঃ কি রে! খবর কি?
অহনাঃ এই তো। ছেলে দেখে গিয়েছে।
আমিঃ জানি। তা কেমন লাগলো?
অহনাঃ আছে আর কি, সেই রকম না।
আমিঃ কেন, ভাল লাগে নাই?
অহনাঃ না, আমার ভাল লাগে না।
আমিঃ (রাগত স্বরে) তাহলে তোমার কারে ভাল লাগে? এতজন দেখলা কাউকে তো দেখি তোমার ভাল লাগে না!
অহনাঃ (নিরবতা)
আমিঃ তাহলে কি আমারে ভাল লাগে? কেমন ছেলে তোর পছন্দ?
অহনাঃ (আমার দিকে তাকিয়ে) তোমার কি মনে হয়?
আমিঃ দেখ, তুই যদি আমার সম্পর্কে বোন না হতিস, তাহলে তোকেই আমি বিয়ে করতাম। কাউকে দরকার হত না তাহলে। আর তোকে অপছন্দ করার মত কিছু নেই। তুই অনেক শান্ত, ভদ্র একটা মেয়ে। আমি যেরকম চাই। কিন্তু আমার পরিবার আর তোমার পরিবার কেউ এরকম পরিবারের মধ্যে বিয়ে মেনে নিবেন না। তাই সেটা সম্ভব না। আর আমিও চাই না।
অহনাঃ হ্যা, জানি।

সেই ছেলের সাথে তার বিয়ের কথা পাঁকা হয়েছিল। যথারীতি বিয়ের তারিখ ও ঠিক হয়েছিল। আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছিলাম তার বিয়ের ব্যপারে। কারণ অনেক কষ্টের বিনিময়ে এরকম একটা ভাল পাত্র আমার খালু পেয়েছিলেন। তার গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো, বাজার, বাসা ডিজাইন করা, ছবি তোলা, বাসর ঘর সাজানো, গেইট ধরা, রান্নাবারা তদারকি করা, বিয়ে বাড়িতে গেস্টের আপ্যায়ণ, তদারকির কাজ ইত্যাদি সবকিছুতেই আমার উপস্থিতি ছিল সবসময়। এমন কি অহনার সাথে তার শ্বশুর বাড়িতে আমি আর আমার মামাতো ২ ভাই বোন গিয়েছিলাম।

শেষ বিদায় দিয়ে যখন বাসায় আসলাম তখন নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে ২ ফোটা পানি গড়িয়ে পরেছিল। হয়তো এটা আমার প্রিয় বোনের, বন্ধুর বিদায়ের কারণেই।

বর্তমান সে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জননী।



বিঃদ্রঃ অনেক তো গল্প লিখেছি। এইবার নিজের জীবন থেকে নেয়া সত্য ঘটনা লিখলাম। জানি, অনেক আগাছালো হয়েছে লেখাটা। আরো অনেক কিছু লেখা যেতো কিন্তু লিখলাম না। এতে বড় হয়ে যেত অনেক। সংক্ষেপে লিখেছি যতটুকু পারা যায়।
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×