somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থনৈতিক যুদ্ধ : অজগর ও খরগোশ

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইতিহাস পূর্ব সময়কালে পেশীশক্তিই সফলতার উৎস ছিল। শক্তিধর ব্যক্তির জন্য সবই ছিল, কিন্তু দূর্বলকে খড়-কুটো কামড়াতে হত। এরপর বিভিন্ন স্তরের যুদ্ধ অস্ত্র তৈরী ও ব্যবহার হতে থাকে - যেমন তীর ধনুক থেকে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল-যা বেশ কিছুকাল পর্যন্ত শক্তির নমুনা ছিল। বর্তমান সময়কাল বরং অর্থনৈতিক শক্তির কাল। কোন কোন সময় তার সাথে সামরিক শক্তি যোগ হয় তাদের যার যার পরিকল্পনা ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য।

হাল আমলের দুনিয়ায় ছোট ছোট জাতি ও রাষ্ট্রগুলিকে শক্তিশালীরা নিয়ন্ত্রন করছে বড় বড় যন্ত্রপাতি দিয়ে যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ইত্যাদি ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সামপ্রতিককালে আবিস্কৃত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) এর ভিতর দিয়ে ওরা সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। একাজে তারা মূলা/গাজর ও লাঠি পদ্ধতির সাহায্যে বোঝাপড়ার সাথে হুকুমদারী করে। বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অর্থপ্রদান, সরাসরি ঘুষ প্রদান, ব্যবসার ভিতর দিয়ে আর্থিক সুবিধাদি প্রদান করে থাকে তারা রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ক্ষমতার অলিতে-গলিতে যারা থাকে তাদের প্রায় সবাইকে যেমন নাকি সেনারা যুদ্ধে ট্যাংক, মিসাইল, কামান ইত্যাদি ব্যবহার করে।

বহুজাতিক শোষণের ক্লাবের নতুন সদস্য ভারত, এবং বাংলাদেশ সেই ভারতের প্রথম অর্থনৈতিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্র। ব্যাপারটি কিছুটা অবাক হবার বিষয় হলেও ভারত নিজেকে পরাশক্তি মনে করে তার সবগুলি পড়শী দেশকে তার পায়ের নীচে দাবিয়ে রাখতে তৎপর রয়েছে, তাই সেখানকার শাসক অভিজাতরা কিছুতেই মেনে নিতে চায়না যে, তাদের প্রতিবেশীরা উন্নতি করুক।
বছরের পর বছর আস্তে ধীরে এক এক করে সিকিম, তিব্বতের অংশবিশেষ, ভূটান এবং নেপাল ওদের (ভারতের) সাম্রাজ্যবাদী লালসার শিকার হয়েছে, শ্রীলঙ্কা যদিও এখন পর্যন্ত ভারতের মারণাঘাত প্রতিরোধ করছে, পাকিস্তান ১৯৭১ এর বিপর্যয়ের পরও ভারতের চক্ষুশূল হয়েই আছে এবং বাংলাদেশ এর একটি পা গর্তে আটকে গেলেও সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ও মুক্ত হবার অব্যাহত চেষ্টা করেই চলেছে। তবে একজন শিকারী ভাল করেই জানে যে, এমন আটকে পড়া জন্তু প্রাণপন চেষ্টা করে সে ধরনের বিপদ থেকে মুক্ত হবার জন্য। বাংলাদেশ সেভাবেই প্রাণপন চেষ্টা করছে, তবে বেগতিক অবস্থা এবং হতাশার কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হলে বা ভুল করলে সেই মহাবিপদ সবকিছুই শেষ করে দিতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য একমাত্র আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগি হচ্ছে ভারত, তবে ভারতের জন্য বাংলাদেশ কোনরূপ প্রতিযোগিই নয়। এতদসত্ত্বেও ভারত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তার জন্মলগ্নকালেই মেরে ফেলতে চাইছে। একজন বাংলাদেশী আমার বন্ধু বলেছেন যে এমনকি একজন রুটি তৈরির কারখানার মালিককে পর্যন্ত ভারতের অনুরূপ ব্যবসায়ীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়।

আমেরিকার নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের দেশসমূহ ভারতকে এখন একটি আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চায় যার ভিতর দিয়ে সে একটি পরাশক্তির দেশ হতে পারে। ভারতের একটি শক্ত শিল্প ভিত্তি আছে, সরকার সেসব কারখানা সাবসিডি দিয়ে রক্ষা করছে, কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প ভিত্তি নতুন গড়ে উঠবার প্রথম স্তরে আছে মাত্র। তাই দু'দেশের মধ্যে সমঝোতার প্রশ্ন উঠে না। এতদসত্ত্বেও ভারতীয়রা ভাবছে যে, বাংলাদেশের সকল শিল্প সম্ভাবনাকে সূচনাতেই শেষ করে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে তাদের লক্ষ্য বাধাগ্রস্থ হতে পারে। টাটা, বিড়লা, মিত্তাল, রিলায়েন্স প্রমুখ সবাই ব্যাগভর্তি বিশাল অর্থ নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছে। বাংলাদেশের কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে, এতে তো দেশের ভালই হবে। তবে এসব সহজ সরল মানুষকে আমি নির্দ্বিধায় বলে দিতে চাই যে, ওরা এখানে বিনামূল্যে লাঞ্চ খাওয়াতে আসছে না, তারা আসছে দরিদ্র বাঙ্গালীদের পিছনে ছুরি মেরে সর্বনাশ করতে। তারা মানবিক দরদ নিয়ে আসছে না, তারা বাজার অর্থনীতির অজগর এর মত সবকিছু গ্রাস করতে আসছে, কোন উচ্চতর মূল্যবোধ অথবা তেমন কোন কারনে নয়, বরং শেষমেশ খেয়ে ফেলার জন্য। অথচ এই খরগোশের শক্তি ও সামর্থ্য আছে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু ভবিষ্যতই বলবে এই ছোট প্রাণীটির ভাগ্যে কি জুটবে?

অন্য একটি নির্মম ষড়যন্ত্র এই যে, এই উর্বর ভূমির বাংলাদেশটিকে মহাভারতীয়রা একটি মরুভূমিতে পরিণত করতে চায়। এই দেশটির জন্য পরম সত্য এই যে, এই দেশের বড় বড় নদীর সবগুলি এসেছে উজান দেশ ভারত থেকে। এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভারত উজানে বাঁধ, খাল, গ্রোয়েন ইত্যাদি নির্মাণ করে ভবিষ্যতে ভাটির বাংলাদেশকে একটি শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত করতে চায়। ধানের যে শীষ আমরা দেখি তা পানির অভাবে খড়কুটো হয়ে যেতে পারে মাত্র। খোদা না করুন, সেই দুর্দিন যদি এসেই যায় তাহলে তারা এক টুকরো রুটির জন্য বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রন অধিকার বাঙ্গালী সংস্কৃতি বাংলাদেশের সম্পদ সবই বিক্রি করে দিতে পারে। ভারতের সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক স্থাপনা যারা কিনা চানক্যের দর্শন অনুসরণ করে তারা তাদের ছোট ছোট পড়শীর বিরুদ্ধে ঐ নীতি লক্ষ্যই অনুসরণ করে; বাংলাদেশের কিছু শিক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ মানুষও ঐ একই ভারতীয় নীতির একান্ত অনুসারী। অথচ তারাই কিনা জাতিকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে পারত, তারাই কিনা দূর্ভাগ্যবশতঃ ভারতীয় নব্য সাম্রাজ্যবাদের ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক যেভাবেই হোক অংশীদার বটে। মানুষ কিভাবে এই ট্রাজেডি থেকে বাঁচবে যদি না ঈশ্বর এদের মনে একটি সঠিক অনুভূতি দান করেন যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, বাংলাদেশ যদি আত্মসম্মান নিয়ে স্বাধীন থাকতে না পারে তাহলে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মানসম্মান নিয়ে বাঁচবে কেমন করে, নাকি ভারতের নিম্নজাতের নমশূদ্রদের মত অমানবিক অবস্থা বৈ ভিন্ন কিছুই ভাগ্য বাস্তবে হবে না সেদেশে জাত-পাত এর কঠোর বিধি নিষেধের কারণে।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×