somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়তি

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিকিৎসকদের কিভাবে পদোন্নতি দেয়া যায়? তা নিয়ে বহু চিন্তা ভাবনা হল। অবশেষে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, নিষ্কলুষ এক উপায়ে এই পদোন্নতি দেয়া হবে। গত সরকারের আমলে পি এস সি হয়ে উঠেছিল দুর্নীতির আখড়া। এম ডি কিংবা এফ সি পি এস এসব ডিগ্রীধারীদের ডিঙিয়ে ডিপ্লোমাধারীদেরকে এর আগের সরকার প্রমোশান দেয়। বিতর্কিত ওয়ান টাইম রিলাক্সেশান (যার বদৌলতে একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে এক ধাপে প্রফেসার হওয়া সম্ভব)এর নতুন নিয়ম করে, পি এস সি এর মাধ্যমে নিজেদের (অর্থাৎ ড্যাব এর সঙ্গে জড়িত) চিকিৎসকদের পদোন্নতি দেয়ার ব্যবস্থা করে।
তাই তাঁরা ঠিক করে পি এস সি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) কে পাশ কাটিয়ে নিষ্কলুষ পদ্ধতি ডি পি সি এর মাধ্যমে পদোন্নতি দিবে। কারণ হচ্ছে পি এস সি ভাইবা ভিত্তিক একটি পরীক্ষা। এতে দুর্নীতি করা খুব সহজ। এই সরকার যেহেতু সাধু এবং নীতিপরায়ণদের তীব্র এক মিশ্রণ, তাই এমন একটা দুর্নীতি পরায়ণ সিস্টেম কে হিমঘরে পাঠানোর তীব্র সংকল্প নিয়ে কাজে নামল। ২০১১ সালের ৩০ শে অক্টোবর পদোন্নতি প্রাপ্তদের দারুণ পবিত্র একটি লিস্ট বের হয়।
লিস্টটি প্রকাশের পরে কিছু দুষ্ট চরিত্রের লোক এর ভেতর দুর্নীতি দেখতে পেল। তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হল। আদালতকে জানাল এই পদোন্নতি প্রক্রিয়া যেসব নিয়ম মেনে দেয়ার কথা তা মানা হয়নি। ডিপ্লোমা কে এম ডি কিংবা এফসিপিএস ডিগ্রীর ওপরে স্থান দেয়া হয়েছে। সিনিয়রকে ডিঙিয়ে জুনিয়রকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। শুধু তাই না, প্রকল্পের অধীনে যারা সরকারী চাকুরিতে প্রবেশ করেছে, যারা ক্যাডারভুক্ত নয় তাঁদেরকেও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আদালত নিয়মতান্ত্রিক পথে এগুতে লাগলো। যা এখনও চলছে এবং হয়তো আরও কয়েকশ বছর চলবে।
কিছুদিন চুপচাপ কাটল। একসময় মনে হল, সরকারের সময় তো প্রায় শেষ হতে চলেছে। আরও কিছু পুন্য অর্জনের সময় এসেছে। পদোন্নতি দিয়ে পুন্যার্জনের এই চেষ্টা তাই দ্বিতীয়বারের মত শুরু হল। ২০১৩ এর মার্চের ৩১ তারিখে দ্বিতীয় দফা পদোন্নতি দেয়া হল। দুষ্ট লোকেরা এবারও বলাবলি শুরু করলো, এবারো নাকি অন্যায় হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে। প্রকল্পের চিকিৎসকদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের চিকিৎসকদের বঞ্চিত করে।
দুষ্ট লোকেরা আরও বলে এবারের পদোন্নতির লিস্ট নাকি এতোটাই দুর্নীতি তে ভরা ছিল যে সচিব সাহেব এই সরকারী আদেশটিতে স্বাক্ষর করতে রাজী হন নি। তাই সচিব সাহেব কে বদলী করে, এমন একজনকে সচিব করে নিয়ে আসা হয় যেন এই আদেশে নির্দ্বিধায় স্বাক্ষর করে দেন। শুধু কি তাই, বেশ কিছু সংখ্যক চিকিৎসক কে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির প্রমার্জন গ্রহণ পূর্বক। শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও তাই তাঁদেরকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
অনেকেই এই পদোন্নতি মেনে নিতে পারছেন না। ভাবছেন চাকরী ছেড়ে দেবেন। কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তবে অনেকেই আছেন বুদ্ধিমান। তাঁরা আশায় আছেন। ডিপিসি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। আজ না হয় কাল পদোন্নতি হবেই (?)। একান্তই যদি না হয় কপালের ফের ভেবে মেনে নিতে হবে। আর নয়তো শেষ চেষ্টা হিসেবে বি এম এ অফিসে যেয়ে স্বচিপ তে নাম লেখাতে পারেন। কিংবা নাকে খত দিয়ে বলতে পারেন, ‘ড্যাব করে জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল করেছিলাম’।
এতেও কিছু না হলে? প্রশ্নটি বেশ জটিল। এবং অনেক শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট। যদি আপনার অনেক সাহস থাকে কিংবা উকিলের খরচ যোগানোর মত পকেটে যথেষ্ট পয়সা থাকে তবে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। আপনার জীবদ্দশায় কোন রায় না হলেও আপনার পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে। ফেসবুক কিংবা ব্লগে জ্বালাময়ী কিছু পোস্ট দিয়ে সরকারের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে পারেন। কোন পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কিংবা সংবাদ দাতার সঙ্গে কি জানাশোনা আছে? থাকলে দারুণ অনুসন্ধানী ধাঁচের একটা রিপোর্ট প্রকাশের ব্যবস্থা করতে পারেন, যার আনাচে কানাচে থাকবে বিভিন্ন ডাক্তারের উদাহরণ। কে কিভাবে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পায়নি কিংবা না থাকা সত্ত্বেও পেয়েছে, এইসব আর কি।
কিছু কি হবে? এই লিস্ট কি বাতিল হবে? ভুলেও সে দুরাশা করবেন না। যা হতে পারে তা হচ্ছে পরবর্তী লিস্টে নাম উঠাবার চেষ্টা করতে পারেন। উৎকোচ, নেতাদের পদলেহন, নিজের স্বাচিপ হওয়ার প্রমাণ দাখিল এসব পথে হাঁটতে পারেন। আজকে একজন স্বাচিপ নেতার সঙ্গে দেখা। উনিও বঞ্চিত। তিনি আজ যাচ্ছেন নেতার সঙ্গে দেখা করতে। জানতে চাইবেন, ‘আমার অপরাধ কি?’
অর্থাৎ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিএনপির আমলে স্বাচিপ করার কারণে বাদ পড়া নৈতিক ভাবে শুদ্ধ। সেটা তিনি হৃষ্ট চিত্তেই মেনে নেয়া যায়। আওয়ামী আমলে ড্যাব করা কেউ পদোন্নতি না পাওয়াও খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে স্বাচিপ করা সত্ত্বেও বাদ পড়া? আর যারা কোন প্রকার রাজনীতির সংশ্রবে যায় নি, পড়াশুনা করেছে, শিখেছে, দুই আমলেই তাঁদের বাদ পড়া? এ হচ্ছে নিয়তি। মেনে চলতে পারলে সরকারী চাকরী করবেন নয়তো...। বলে দিতে হবে?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×