somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক থিয়েটারে বহু নাটক : জাতিকে বিভ্রান্ত করার নয়া কৌশল

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে করুন থিয়েটার দেখতে গেছেন। গিয়ে দেখলেন, মূল মঞ্চ ছাড়াও আরও কয়েকটি মঞ্চ হলের বিভিন্ন স্থানে এবং সেখানে আরও কয়েকটি নাটকের অভিনয় চলছে একযোগে। দর্শকদের বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করার এর চেয়ে উত্তম কোনো কৌশল কল্পনা করতে পারেন?
অথচ ঠিক সেটাই হচ্ছে আজকের বাংলাদেশে। দেশে বিভিন্ন অশুভ প্রবণতায় গত তিন বছর ধরে সব চিন্তাশীল ও দেশপ্রেমিক মানুষ উদ্বিগ্ন। পঁচাত্তরে বাকশাল করে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া এবং বাক ও সংবাদের স্বাধীনতাকে জাহান্নামে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমান সরকার ‘বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ও পরামর্শে’ এবং একটি ‘মাস্টারপ্ল্যানে’ গদি দখল করেছিল। সে গদি চিরস্থায়ী করার চেষ্টা তারা গোড়ার দিন থেকেই শুরু করে। নািস কৌশলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ময়দান থেকে অপসারণের পরিকল্পনায় ছাত্রলীগ আর যুবলীগের গুণ্ডারা বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ও ছাত্রাবাস দখল করে নিয়েছে।
মিগ-২৯ ও ঠুঁটো ফ্রিগেট ক্রয় এবং বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাপারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষী-প্রমাণসহ ১৫টি দুর্নীতির মামলা এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাত হাজারেরও বেশি মামলা তুলে নেয়া হয়েছে, ২২ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। খুনের মামলাও তুলে নেয়া হয়েছে কয়েকটি। অন্যদিকে হাস্যকর সাজানো মামলায় বিএনপি ও সরকারবিরোধী অন্যান্য গণতন্ত্রী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে, টুপি-দাড়িধারী কোনো ব্যক্তি রাজনীতির নাম মুখে নিলেও সন্ত্রাসী অপবাদ দিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইসলামের নাম মুখে আনলেই তাকে ধর্মান্ধতার অপবাদ দেয়া হচ্ছে। অবস্থা দাঁড়িয়েছে যেন আজকের বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে কথা বলার এবং ভোটের অধিকার পেতে হলে টুপি খুলে দাড়ি কামিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘মা-দুর্গা’র যপমালা গলায় পরতে হবে।
দেশপ্রেমিকদের মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাকশাল কিংবা অন্য কোনো নামে একটা ফ্যাসিস্ট স্বৈরতন্ত্র কায়েম করাই বর্তমান সরকারের অসদুদ্দেশ্য। এক লাখ পাউন্ড ব্যয় করে এ সরকার বিদেশি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন ছাপায়। সেসব বিজ্ঞাপনে মিথ্যা প্রচার চালানো হয় যে, সরকার মিডিয়ার স্বাধীনতার সয়লাব বইয়ে দিয়েছে দেশে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে অন্য কথা। মিডিয়াকে হয়রানি করার ঘটনা ঘটছে না—এমন দিন বর্তমান বাংলাদেশে কমই যায়।
মিডিয়া হত্যার সুপরিকল্পিত চক্রান্ত
সংবাদকর্মীদের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও নেতারা। গত তিন বছরে সাংবাদিক হত্যা, হত্যার চেষ্টা ও আহত করার অনেক ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ একটি ঘটনায় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার একটি টেলি-চ্যানেলের এক মহিলা সাংবাদিককে মারধর করেছেন, তার হাত ভেঙে দিয়েছেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের এই গুণধর সংসদ সদস্য এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে অতীতেও বহু অপকর্ম আর দুষ্কৃতির অভিযোগ পড়েছি বলে মনে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কোনো বিদেশি শক্তির সংরক্ষণের ভরসায় বুঁদ হয়ে আছেন, তার আজকাল আর মনোযোগ নেই প্রশাসনে কী ঘটছে না ঘটছে, সেদিকে। পত্রিকায় খবর বেরোয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে খবর দেয়া হয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়নি। দেশে যে নারী-নির্যাতন হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে, সেদিকেও লক্ষ্য নেই বাংলাদেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর। আজকাল তার মনোযোগ প্রথমত, সাজগোজ; দ্বিতীয়ত, বিদেশ ভ্রমণ এবং তৃতীয়ত, আবার তিনি ডক্টরেট শিকারে মনোযোগী হয়েছেন। স্বামী ওয়াজেদ মিয়া যতদিন বেঁচে ছিলেন শেখ হাসিনাকে এমন রঙচঙে আর বাহারের সাজগোজ করতে দেখেছেন কেউ?
কামাল আহমেদ মজুমদারদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের কোনো ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা অবশ্যই পারবেন না। কেননা এঁরাই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর আগ্রাসী, অত্যাচারী রাজনৈতিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। প্রমাণ পেতেও বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন মহিলা টেলি-সাংবাদিকের গায়ে তিনি হাত তুলেছেন, তাকে মারধর করেছেন, তার একটা হাতও ভেঙে দিয়েছেন। মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে এই কাপুরুষোচিত আক্রমণের ঢেউ থিতিয়ে আসার আগেই তিনি এবং বিভিন্ন এলাকার আরও কোনো কোনো সন্দেহজনক চরিত্রের আওয়ামী লীগ নেতা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে আরও কিছু মানহানির মামলা ঠুকে দিয়েছেন।
নতুন একটা সিস্টেম আবিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগওয়ালারা। কোনো পত্রিকায় (এবং এমন পত্রিকাও এখন বাংলাদেশে আছে যারা আওয়ামী লীগের মাস্তানদের হাতে হাতিয়ার তুলে দেয়ার মতলবেও ‘খবর‘ ছাপে) আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সম্বন্ধে কোনো বিরূপ মন্তব্য ছাপা হলে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের ডজন ডজন লোক উল্টোপাল্টা মানহানির মামলা ঠুকে দেয় সে মন্তব্যকারীর বিরুদ্ধে। শুনেছি, আদালতে বহু বিচারপতি আছেন সরকারের হুকুম মান্য করতে পারলে যারা আহ্লাদে আটখানা হয়ে যান। অতএব মন্তব্যকারীর উক্তির সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে তাকে এজলাসে ডাকা হবে। একশ্রেণীর বিচারপতি তাকে সারাদিন দাঁড় করিয়ে রেখে নিজেদের ‘মেগালোম্যানিয়া‘ চরিতার্থ করবেন। তারপর অভিযুক্তকে হয়তো ধোলাই-মোলাই করার জন্য রিম্যান্ডে দেয়া হবে। এর পরও হয়তো বিচারক তাকে কারাদণ্ড দিলেন। সে দণ্ড ছয় মাসের হলে আট-নয় মাস তো ভাগ্যহত লোকটাকে জেলেই পচতে হবে।
শালের বন যদি হতো শালার বোন
সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান শাসককুলে বহু মানুষ আছেন যারা নিজেদের মানকে (হয়তো ইজ্জতকেও) নেহাত ঠুনকো বিবেচনা করেন। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে, অথবা না বললেও, এমনকি কেউ তাদের দিকে চোখ তুলে তাকালেও তারা মনে করেন, তাদের মানহানি হয়েছে। সমস্যা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যার সম্বন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ হয়েছে, তিনি টের পেলেন না কিংবা বুঝতে পারলেন না যে তার মানহানি হয়েছে। কিন্তু দুইশ’ কিম্বা চারশ’ মাইল দূরে থেকে তার কোনো অজানা-অচেনা ‘শুভকামী’ টের পেলেন যে ওই ব্যক্তির মানহানি করা হয়েছে, অতএব তিনি আদালতে গিয়ে ঠুকে দিলেন মামলা—এক কোটি কিংবা দুই কোটি, হয়তো দুইশ’ কোটি টাকারও ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন। বাংলাদেশে এখন মামলার সংখ্যা ওজনদরে স্থির হয়। ছোটবেলা কবিতা পড়ে হেসেছি : ‘সাতাশ হইতো যদি একশ সাতাশ / ঝুড়িটি ভরিত, হাড়ে লাগিত বাতাস। / শালের বন যদি হতো শালার বোন...।’ বাংলাদেশের অবস্থা এখন সে রকমেরই। পুলিশও এখন নাম নেই, পরিচয় নেই, তিন হাজার কিংবা চার হাজার অজ্ঞাত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এযাবত্ মানহানির মামলা হয়েছে ৫২টি। ওরা বোধ হয় ভাবছে, মামলার ভারেই তলিয়ে যাবেন ছোটখাটো মানুষটা। মানহানির মামলা হচ্ছে, শত শত কোটি কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে। এসব মামলা কি দেওয়ানি মামলা হওয়া উচিত নয়? তাহলে তো দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের টাকার কিছু অংশ আদালতে জমা দেয়া উচিত, মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে সে টাকা বাজেয়াপ্ত হবে।
আজকের বাংলাদেশের এ হচ্ছে করুণ অবস্থা। গণতন্ত্র বিতাড়িত হলে অথবা কারও হাতের মুঠোয় চলে গেলে অনেক দেশেই এ রকমের দুর্দশা হয়। বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল ১৯৮২ সালেও। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন, তারপর লে জে এরশাদ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে গদিচ্যুত করেন। সেদিন গণতন্ত্রের পক্ষে অন্দোলন শুরু করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বহু প্রতিকূলতা, বহু ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা তাকে করতে হয়েছে। জাতি তার পেছনে ছিল। কিন্তু আন্দোলন যখনই পূর্ণতা পেয়েছে, সফলতার মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে হচ্ছিল, তখনই শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সে আন্দোলন থেকে পিঠটান দিয়েছে, সরে দাঁড়িয়েছে, উল্টো সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে সাহায্য দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কারণে সামরিক স্বৈরতন্ত্র নয় বছর স্থায়ী হতে পেরেছিল।
সে রকমেরই একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এখন। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র বাঁচানোর আন্দোলন শুরু করেছেন, দেশের মানুষ বরাবরের মতোই আছে তার পেছনে। চারটি বিভাগীয় সদর দফতর সিলেট, রাজশাহী, খুলনা আর চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করেছেন, সর্বত্র সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে জনতা তাকে সমর্থন ও হর্ষধ্বনি জানিয়েছে, পথসভাগুলোতে এবং বিভাগীয় সদরের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে কয়েক কোটি মানুষ তার মুখে আশার কথা, গণতন্ত্রের কথা শুনেছে, গণতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামে তাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। স্বৈরতন্ত্রী শিবিরে যে টনক নড়ে উঠেছিল, আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল, সেটা খুবই পরিষ্কার। তারা একই থিয়েটারে অনেক ছোটখাটো আর পাতি নাটক মঞ্চস্থ করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে, তাদের মনোযোগ ভিন্নমুখী করতে চেষ্টা শুরু করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত ও শক্তিহীন করে দেয়ার এটা একটা পুরনো ও সুপরিচিত কৌশল।
বিএনপিতে কি শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন?
দুর্ভাগ্যবশত রাষ্ট্রপতির সম্মানিত পদটিকেও তারা বিতর্কিত করে তুলেছে। দেশের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতি নিয়ে প্রলম্বিত সংলাপ শুরু করাল। এ জাতীয় সংলাপে সব সময়ই নিত্যনতুন শাখা-প্রশাখা গজাতে থাকে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। কেউ একজন নিজের প্রজ্ঞা জাহির করার মতলবে প্রস্তাব দিলেন নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য কমিশনারদের খুঁজে বের করার জন্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হোক। অন্য একজন প্রাজ্ঞ প্রশ্ন তুললেন, এ টি এম শামসুল হুদা (যিনি ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিন অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার, এমনকি বিএনপিকে ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হয়েছিলেন) আবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন কিনা। সেইসঙ্গে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) নিয়ে নাটক তো আছেই। ২০০০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। সে নির্বাচনের পরে আদালত ফ্লোরিডার অল্প কয়েকটি ভোটে জর্জ ডব্লিউ বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন। ইভিএম পদ্ধতিতে গৃহীত নির্বাচনে কয়েকটি ‘চাড’ বিকৃত করা হয়েছিল বলে পরে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টও সম্প্রতি বলেছেন যে, ইভিএম পদ্ধতিতেও ভোট জালিয়াতির সুযোগ আছে।
বিএনপি নেতৃত্বকে আমি কিছুদিন আগে থেকেই হুশিয়ার করে দিয়েছিলাম যে, সম্ভবত মির জাফরের বংশধরদের কেউ কেউ তাদের কাতারে ঢুকে পড়েছে। তারা কেবলই চূড়ান্ত আঘাত হানা থেকে আন্দোলনকে বিরত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষুদ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত ছিল। মির জাফরের পার্শ্বচররা তাদের উদ্দেশে বলে (পরিচিত নাটকের ভাষায়), ‘শোনো হে যোদ্ধাগণ, কর অস্ত্র সংবরণ, নবাবের অনুমতি কাল হবে রণ।’ এবারের গণতন্ত্রের আন্দোলনেও হচ্ছে তাই। স্থির হয়েছে আন্দোলনকে ডিম পাড়ার সুযোগ দেয়ার জন্য তিন মাস সময় দেয়া হবে। তারপর নাকি ‘ঢাকা চলোর’ জিয়াফত হবে। আন্দোলন যদি বরাবরই লক্ষ্যবস্তুকে পাশ কাটিয়ে যায়, লক্ষ্য অর্জনের জন্য শেষ আঘাতটি না হানে, তাহলে সে আন্দোলনে জনসাধারণের শক্তি-সামর্থ্য ও নেতাদের জনপ্রিয়তার অপচয় করার কোনো সার্থকতা আমি দেখতে পাই না।
এ হুশিয়ারিও আমি দিয়েছিলাম যে ক্ষমতাসীনদের (বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মতো ধুরন্ধর, অনৈতিক সরকারের) তুণে বহু অস্ত্র থাকে। সময় পেলে তারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে সেসব অস্ত্র ব্যবহারে ইতস্তত করবে না। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির একটা ঘটনা আমার মনে আছে। সম্পাদক পরিষদের সভায় চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমেদ রাজি হন যে, ভাষা-আন্দোলনকারীদের আইনসভার সামনে দিয়ে মিছিল করে যেতে দেয়া হবে, ১৪৪ ধারা জারি করা হবে না। কিন্তু বিকালে সে ঐকমত্য অগ্রাহ্য করে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে, তার সমর্থনে সন্ধ্যাবেলা এক বেতার ভাষণে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন দাবি করেন যে, চাঁদপুরে ভারতীয় চরেরা পাকিস্তান ভাঙার আন্দোলন শুরু করেছে, তারা ‘জয়হিন্দ’ স্লোগান দিয়েছে, তারা সেখানে একজন আনসারকে গুলি করে মেরেছে।
দেশে-বিদেশে সমানেই স্বীকৃত যে, ‘ভারতের বস্তা বস্তা টাকা আর পরামর্শে’ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কারও মনেই সন্দেহ নেই যে হাসিনাকে গদিতে রাখার জন্য ভারত যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেননা হাসিনার কাছ থেকে ভারত যতটা আদায় করে নিতে পারবে আর কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে সেটা কল্পনাও করা যাবে না। বস্তুত কোনো কোনো ভারতীয় পত্রিকা তো লিখেছিল যে, ভারত যেটা চাওয়ার কথা এখনও ভাবেনি শেখ হাসিনা সেটাও দিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসেন।
অঘটনপটিয়সী আনন্দবাজার
আনন্দবাজার পত্রিকার খবর অনুযায়ী ‘ক্ষমতা থেকে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শেখ হাসিনাকে সরানোর চেষ্টা হলে তাকে সব রকম সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং (যিনি শেখ হাসিনার সব প্রত্যাশায় ছাইচাপা দিয়ে তিস্তা চুক্তি না করেই ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন)। বাংলাদেশ সরকারকেও সেই বার্তা দেয়া হয়েছে।’ আনন্দবাজার পত্রিকার খবরের সত্যতায় সন্দেহ করার কারণ নেই। এখনও আছে কিনা জানি না, তবে কিছুকাল আগেও জানা ছিল যে, এ পত্রিকার অফিসে ভারতের বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর একটা সেল আছে। সেখানে কয়েকজন সাংবাদিক র’-এর অভিপ্রায় অনুযায়ী সত্য-মিথ্যা প্রচার সামগ্রী উত্পাদন করেন।
ভারতের এই গোয়েন্দা সংস্থাটির অতিমাত্রিক তত্পরতা সম্বন্ধে জানেন না, এমন লোক বাংলাদেশেও বিরল। বিগত কয়েক বছরে ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের হৃদ্যতা বেড়ে চলেছে, ভারতের কোনো কোনো মন্ত্রীও সম্প্রতি ইসরাইল সফর করেছেন। আরও আগে থাকতেই জানা যাচ্ছিল যে, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ আর র’-এর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঠকদের কারও কারও মনে থাকতে পারে, এই মোসাদ ২০০২-০৩ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রতারিত করে ওয়াশিংটন আর লন্ডনকে ইরাকের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধে প্ররোচিত করেছিল।
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, আর যারা গদিতে আছে তারা যে কোনো মূল্যে গদি আঁকড়ে থাকতে বদ্ধপরিকর। এ পরিস্থিতিতে নিত্যনতুন নাটক সৃষ্টি করে, নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধরপাকড়ের তাণ্ডব সৃষ্টি করে, সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে জাহির করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত, প্রতারিত করার কোনো চেষ্টারই ত্রুটি থাকবে না। সেইসঙ্গে ভারতের স্বার্থও জড়িয়ে পড়েছে শেখ হাসিনাকে গদিতে বহাল রাখার জন্য। বাংলাদেশের মানুষকে এ পরিস্থিতিতে সদা সজাগ থাকতে হবে; মিথ্যার সয়লাবে তারা যেন ভেসে না যায়, সেজন্যে সতর্ক থাকতে হবে।
ভারত অবশ্যই শেখ হাসিনার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে, কেননা আগেই বলেছি যে, হাসিনাকে দিয়ে তাদের স্বার্থ যেভাবে মিটবে অন্য কোনো বাংলাদেশী সেভাবে নিজের দেশের স্বার্থ অকাতরে ভারতকে দিয়ে দিতে পারবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আগে ভারতকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ জুনাগড়, হায়দরাবাদ কিংবা কাশ্মীর নয়, এমনকি সিকিমও নয় বাংলাদেশ। ইতিহাসের সেসব কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পর পৃথিবী এখন নতুন নৈতিক বলয়ে আবর্তিত হচ্ছে। দিল্লির কর্তাব্যক্তিদের আরও মনে রাখতে হবে যে, আফগানিস্তান এবং ইরাকে হস্তক্ষেপ করে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুগত পাতিশক্তিগুলো কী পরিমাণ মূল্য দিতে বাধ্য হয়েছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×