রশিদ সাহেব খুব ক্লান্ত, সারাদিন অফিসে খাটাখাটনি করে, বাসে বাদুরঝোলা হয়ে বাসায় পৌঁছেছেন কিছুক্ষণ হলো । হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে টিভির সামনে গিয়ে বসলেন ।দেখলেন স্টারপ্লাস-এ কোনো এক অখ্যাত সিরিয়াল চলছে, আর তাঁর স্ত্রী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন টিভির পর্দায় । তাঁর কিঞ্চিত সন্দেহ হলো, এমন ভালো করে বোধহয় কোনদিন তিনি রশিদ সাহেবের দিকেও তাকাননি !
হঠাত বিজ্ঞাপন বিরতি , এবার বোধহয় রিমোট টা হাতে পাবেন । নাহ- স্ত্রী এরই মধ্যে চলে গেছেন অন্য এক চ্যানেলে - আবারও সেই হিন্দী সিরিয়াল । রশিদ সাহেব পেপারটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ বোলাতে লাগলেন। তিনি ভাবছেন ' প্রতিদিন অফিসের ঝক্কি ঝামেলার পর বাসে -টেম্পুতে বাদুরঝোলা হয়ে আর কতদিন, এবার বোনাসের টাকাটা হাতে পেলেই একটা বাইক কিনে ফেলবো, অফিসের কলিগ রাজু সাহেব কদিন আগেই একটা নিয়েছেন । ঐতো, কী নাম যেন- হুম, পালসার না কী যেন বলল, বেশ টেকসই মনে হলো , তাছাড়া দেখতেও সুন্দর - কেন যে মানুষ এগুলো বাদ দিয়ে আজকাল ওআলটন না কী যেন কিনছে, না আছে তার ভালো ডিজাইন না আছে গ্যারান্টি , এ দেশের কোন জিনিসটাই বা ঠিকমত টেকে...
এইসব চিন্তার মধ্যে হঠাত বাগড়া দিয়ে বসলেন তাঁর স্ত্রী , "এই যে শুনছ, দেখো সামনের পার্টি টার আগেই কিন্তু আমার এই শাড়িটা চাই .." , স্ত্রীর আঙ্গুল টিভি পর্দার দিকে । সিরিয়ালের কোনো এক সুন্দরী( ) রমনী লাস্যময়ী হাসি দিয়ে কী যেন বলছে, তার শাড়িটির প্রতিই স্ত্রীর এত আগ্রহ । তিনি অবাক হয়ে ভাবছেন, এই রংচঙে কিম্ভুতকিমাকার শাড়িটি পড়ে যখন তাঁর স্ত্রী তাঁর সামনে এসে দাঁড়াবেন তখন কেমন লাগবে দেখতে।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার খবরের কাগজে মনোনিবেশ করবেন, এমন সময় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো তার তিন বছর বয়েসী বাচ্চাটি, এসেই বায়না ধরেছে কার্টুন দেখবে - কী আর করা , বাচ্চার চেঁচামেচিতে বিরক্ত মিসেস রশিদ চ্যানেল পাল্টে কোনো একটি কার্টুন চ্যানেল ছেড়ে দিলেন, একী হিন্দী শব্দ না? কার্টুন চ্যানেল- এ? রশিদ সাহেব এবার হেসে দিলেন , আগামীকাল ১লা মার্চ , ফেসবুকের একটা ইভেন্টের কথা মনে পড়ে গেল তার। আগামীকাল ভারতীয় পণ্য বয়কট করা নিয়ে। সম্ভবত , তিনি নিজেও একটা পোস্ট দিয়েছিলেন এর স্বপক্ষে , এবার তিনি ভাবছেন কাল কী কী ভারতীয় পণ্য কিনবেন না ।
(******ফেসবুকের এই ইভেন্টটির প্রতিবাদ একদিনে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকুক এটা আমি চাই না।
হতে পারে এটা কেবল একটা শুরু মাত্র , এরপর আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, ভারতীয় পণ্য পুরোপুরি বর্জনের মত সক্ষম হয়তো আমরা এখনো নই, তাই বলে দাসত্ব মেনে নিয়ে বসে থাকতেও আমরা রাজি নই, আমাদের সক্ষমতা অর্জন করে নিতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই।
আর ঘরের ভিতর, মনের ভিতর, পোশাকে আশাকে হিন্দী সংস্কৃতি যারা ছাড়তে পারবেন না , তারা বাইরে এসে অযথা দেশপ্রেমের বুলি আওড়াবেন না , ফেসবুক আর ব্লগে ২- চারটা জ্বালাময়ী কমেন্ট লেখাটা দেশপ্রেম নয়, এখন সময় এসেছে কিছু করে দেখানোর। দেশকে ভালোবাসেন? আপনার কাজ যেন আপনার হয়ে দেশপ্রেমের কথা বলে। )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১৮