somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্রকন্যার বাড়ি যাওয়া

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েরা ইনানী, সেন্টমার্টিন ছেলেরা #

গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ের ‘প্রাকটিক্যাল ক্লাস’ হবে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এতদিন তারা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় রান্না করে তা সেরে নিতো। টাকা উঠানোর কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েরা বললো, এবার তাদের প্রাকটিক্যাল ক্লাস হবে ককসবাজারে। ভাবলাম, বর্তমানে ব্যবহারিক পরীক্ষায় ১০০টাকা দিলেই যেখানে খাতা ভর্তি নম্বর পাওয়া যায় সেখানে আমাদের মেয়েরা সৈকত বালুকায় রান্নার ব্যবহারিক শিখতে যাবে, ভালই তো! মেয়েদের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গেলে অন্যান্য শ্রেণির মেয়েরা বায়না ধরলো, তারাও যাবে। দু’দিন যেতে না যেতেই বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রী মিলে ১০০ জনের তালিকা হলো। ততক্ষণে ছেলেরাও ‘মনছবি’ দেখতে শুরু করেছে। তারাও সাথে যাবে। হেডস্যারের নিকট বায়না ধরলো গিয়ে। ছেলে-মেয়ে একসাথে যাওয়া যাবেনা! আর্জি খারিজ। হওয়াটাই ভাল! কারণ ইদানীং অনেক স্কুলে দশম শ্রেণির ছেলেরা জুনিয়র ক্লাসের মেয়েদেরকে ‘ইনফরমাল লেটার’ দেয়া শিখে গেছে! ৮ম শ্রেণির মেয়েরা সহপাঠীদের সাথে চিরায়ত সম্পর্কে জড়াতে শুরু করেছে ভালই, একে অন্যকে জন্মবার্ষিকীর গিফট দিতে ভুল হয়না তাদের। কখনো কখনো উৎসবের সময় ছোট মেয়েদেরকে প্রলুব্ধ করে মোবাইলে ছবি উঠায় বড় মেয়েরা। ওয়াদা অনুযায়ী সফট কপি দিয়ে দেয় ছোট মেয়েটিকে পছন্দ করা ছেলেটিকে! ৮ম শ্রেণির ছেলেরাও আজ ফেসবুকে তার মেয়েবন্ধুর ছবি আপলোড করতে পারদর্শী। মাঝখানে বিব্রত হয় ছোট মেয়েটি ও তার পরিবার। তাছাড়া নতুন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত চমৎকার (?) সব উত্তেজক শব্দ শিখে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরও যে বেপরোয়া হবে, সে আশংকা মনে জাগতেই পারে আমাদের। তাই মেয়েদের সাথে ছেলেদের শিক্ষা সফরে যাওয়া শুভকর নয়!

তবে আমরা ভুলে যাই, আমাদের অনেক বিদ্যালয় সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এম.পি.ও ভুক্ত। ভুলে যাই, অধিকাংশ ক্লাসে ছেলে-মেয়ে একসাথে বসিয়ে ক্লাস নিইনা বলে অনেক স্কুলের স্বীকৃতি নবায়ন করতে গড়িমসি করে শিক্ষাবোর্ড। ‘পরের শিক্ষা বর্ষে সহশিক্ষা অনুসৃত হবে’ মর্মে মুচলেকা দিই, বৈতরনী পার হতে হবে তো! শিক্ষা বোর্ডের তদারকি অতটুকুই। ছেলেরা গেলে ১০০জন মেয়েকে শিক্ষাসফরের একদিন ১০ জন শিক্ষক মিলে আগলে রাখতে পারার সংশয় উকি মারে হৃদয়ে। ১২০০ জন শিক্ষার্থীকে আমরা ১৮ জন শিক্ষক প্রতিনিয়ত ভালই আগলে রাখছি - এ সক্ষমতা সন্দেহের দোলাচলে দোলে! এ অমুলক আশংকা উড়িয়ে দেবার নয়। তাই মেয়েদের সাথে ছেলেরা যাবেনা।

১০০ জন ছাত্রী নিয়ে যেদিন ককসবাজার যাবো, সেদিন আমাদের স্কুল খোলা। ১০০ জনের প্রাকটিক্যালের জন্য কি আর ১২০০ জনের স্কুল বন্ধ দেওয়া যায়! চমৎকার যুক্তি কর্তাদের। শিক্ষা সফরের জন্য স্কুল কি একদিন বন্ধ দেওয়া যায়? তর্কে না জড়িয়ে সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম। ষ্টেশনে গাড়ি ২টি এসে গেলো। গাড়িতে মাইক বাঁধা, ব্যানার যুক্ত করা, গাড়ির মাঝে বেঞ্চ এনে দেওয়া আনুষঙ্গিক কাজগুলো ছেলেরাই করে দিলো। যাত্রাকালে শুভকামনা জানালো দশম শ্রেণির অনেকেই। যেন পাঠ্য বইয়ে পড়া এক একজন ‘মাসুম’ - ভাবখানি এমনই! ‘‘নীলা যখন সিঙ্গাপুর যাবে, তখন বিমানবন্দরে তাকে ‘সি অফ’ করতে গিয়েছিল মাসুম। নীলাকে নিয়ে বিমান উড়ে গেল। আমিও যদি আকাশে উড়তে পারতাম! মনছবি দেখে মাসুম।’’ বইয়ে পড়া তথ্যও হয়তো মনে পড়ে তাদের।

বেলা বারোটার দিকে মেয়েদের নিয়ে আমরা ‘বসুন্ধরা এমিউজমেন্ট পার্ক’ এ গেলাম। তীব্র রোদে হাঁটা দায়। ঘুরে ফিরে ছবি উঠানো হচ্ছে কেবলই। শিক্ষা সফর বলতে কি পছন্দের জায়গায় গিয়ে কেবল ক্যামেরায় ক্লিক করা! দুপুরের খাবার খেয়েছি হোটেলেই। আমাদের মেয়েরা রাঁধেনি, প্রাকটিক্যাল করেনি তাতে কি! এক স্যারের রেঁস্তোরাতে মেয়েরা পালাক্রমে সবাইকে পরিবেশন করে খাইয়েছে তো! খাওয়ার পর মেয়েদের নিয়ে ইনানী গেলাম। সাগরজলে অনেক পাথরের সমাবেশ ছিলো আগে। এখন তা কমেছে আশংকাজনকহারে। ইউনিপে টু ইউ, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক কিংবা পদ্মা সেতুর টাকা যারা অবৈধভাবে গিলেছে, সেই দানবীয় মানুষেরা কি ইদানীং ‘সাগরকন্যার নোলক’ ডাকাতি শুরু করে দিলো! নাকি লুলুপ দৃষ্টি পড়েছে কোন ‘কালো বিড়াল’ এর - সদুত্তর দেয়নি কোন পড়শী।

সন্তর্পণে পাথরে হাঁটলো আমাদের মেয়েরা, কেহবা ঢেউয়ের জলে কাপড় ভেজাতেই খোঁজে পেলো নির্মলতা। সুখকর পরিবেশের সৌন্দয্যে অবগাহনের ছবিগুলো ফ্রেমে আটকিয়ে আমরা ফিরছি হিমছড়ি ও দরিয়ানগর। ততক্ষণে ঘড়িতে বিকেল ৫টা পেরিয়ে। গাড়ি চলছে, মেয়েরা গাইছে গলা চুটিয়ে, নাচন তুলেছে অনেকেই। অনেকে আবার সমুদ্রের অপরুপ জলরাশির দিকে ফিরে ফিরে তাকায়, যেন মামার বাড়ি থেকে ফিরছে! এতে অনেকের চোখে ধরা পড়ে শুটিং হচ্ছে ওখানে। গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার আমাদের আগেই নেমে গেছে। মেয়েরাও নামলো, পিছু পিছু আমরা। মিনিট দুয়েক পরেই লাইট-ক্যামেরা-এ্যাকশন। নায়িকা গানের তালে শরীর নাচিয়ে চলে। মেয়েটির বেশভুষা ও অঙ্গভঙ্গি দেখে আমাদের মেয়েরা মিটিমিটি হেসেছে, আমরা হয়েছি বিব্রত। তাড়াতাড়ি মেয়েদের নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। পরিজন নিয়ে একসাথে বাংলা সিনেমা দেখার পরিবেশ আমরা হারিয়েছি সেই কবে!

গাড়ি দরিয়ানগরে থামতেই দেখি পশ্চিমাকাশে লাল হয়েছে সুয্যি মামা। সময়াভাবে দরিয়ানগরে প্রবেশ হলোনা। তড়িঘড়ি করে র‌্যাফেল ড্র সেরে নিলাম সৈকত বালুকায়। ততক্ষণে মসজিদ থেকে ভেসে এলো সুমধুর সুর। আমরা গাড়িতে উঠলাম। ভাবলাম, ভোরে রওয়ানা দিলে হয়তো দরিয়ানগরের সৌন্দয্য অবলোকন করা যেতো, লাবনী পয়েন্টের বালুকায় নেচে গেয়ে হৃদয় ভরাতো মেয়েরা। হিমছড়ির হিম শীতল ঝর্নায় নাচানাচি না হয় আরেকদিন হবে - এ প্রবোধ দিয়ে আমরা ফিরেছি সেথায় যে নীড়ের ছেলেরা দিন গুনছে সেন্টমার্টিন যাবার! (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×