somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোভ ও সুদী কারবার মানুষের ইহকালকেও ধ্বংস করে দেয়

২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোভ ও সুদী কারবার মানুষের ইহকালকেও ধ্বংস করে দেয়
ইসহাক ওবায়দী

উনিশ শ’ আশি-উনাশির দিকে আমি মিরপুরে থাকতাম। চাকরি করতাম রেডিও বাংলাদেশে। আমার একজন বন্ধু ছিলেন, তিনিও তখন মিরপুরেই থাকতেন এবং সরকারি চাকরি করতেন। হঠাৎ করে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সৌদী আরব চলে যান। কিন্তু সেখানে অনেক দিন যাবত চাকরি-বাকরি না পেয়ে খুব কষ্ট করেন এবং বড় ধরনের একটি রোগে অপারেশনেরও সম্মুখীন হন। পরে অনেক দুঃখ-কষ্টের পর তার কপাল খুলতে আরম্ভ করে। একটা ভালো চাকরি পেয়ে যান এবং রীতিমতো দেশে টাকা-পয়সা পাঠাতে থাকেন। একপর্যায়ে ঢাকায় কিছু জায়গাও খরিদ করেন। তাঁর একমাত্র ছেলে পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সে জায়গাতে একটি ভবন তৈরির কাজ আরম্ভ করে। ইত্যবসরে ছেলেটি এম.বি.বি.এস পাশ করে বের হয় এবং ল্যাব ব্যবসা আরম্ভ করে। অন্য দিকে বাড়িটাও চার/পাঁচ তলা ভবন হয়ে তাদের একটা এসেট হয়ে যায়। অবস্থা ভালো হওয়াতে ছেলের বাবা অর্থাৎ আমার বন্ধুটি দেশে চলে আসেন এবং অবসর জীবন যাপন আরম্ভ করেন। তিন মেয়েকে ডাক্তারি ইত্যাদি পড়িয়ে ভালো পাত্রে পাত্রস্থ করার পর বাড়িভাড়া ও ল্যাব-ব্যবসা দিয়ে তাঁদের ভালোই দিন যাচ্ছিল। কিন্তু ছেলেকে পেয়ে বসল লোভে। তাই সে আত্মীয়-স্বজন ও আরো অনেক মানুষ থেকে ব্যবসায় খাটিয়ে তাদের মাসে মানে নগদ লাভ দিবে বলে লক্ষ লক্ষ নয়; বরং কোটি কোটি টাকা নিতে থাকে এবং প্রতি মাসে ব্যবসা হোক বা না হোক, প্রত্যেককে নির্দিষ্ট হারে নগদ লাভ দিতে থাকে। মানুষও নগদ লাভের আশায় তাঁকে প্রচুর টাকা দিয়েছিল। ছেলেটি দুই/তিনটা ল্যাব খোলা ছাড়াও জায়গার ব্যবসা, হাউজিং ফ্ল্যাটের ব্যবসা, এমনকি বিদেশ থেকে মার্বেল পাথর ও টাইলস ব্যবসায়ও নেমে পড়ে। একপর্যায়ে মার্বেল পাথরের জন্য খাটানো নগদ কয়েক কোটি টাকা কিছু টাউট-বাটপারের মাধ্যমে লোপাট হয়ে যায়। তখনই শুরু হয় পাওনাদারদের চিৎকার ও কান্নাকাটি। শোনা যায়, প্রায় ১৭ থেকে ২০ কোটি টাকা মানুষ তার কাছে পাওনা ছিল। তখন পাওনাদাররা তার ল্যাবসহ পাঁচতলা বাড়ি সব পাওনা বাবত রেজিষ্ট্রি করে নেওয়ার পরও পরিশোধ হয় মাত্র তিন/চার কোটি টাকা। ফলে আধা পাগল অবস্থায় খালি হাতে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। শেষমেষ বাবা দেশের বাড়ির ভিটেমাটি বিক্রি করে বিশ/ত্রিশ লক্ষ টাকা পাওনা পরিশোধ করে। এরপরও বহু টাকা পাওনা থাকায় পাওনাদারদের অকথ্য গালাগাল থেকে বাঁচার জন্য এবং অবশিষ্ট মানসম্মানটুকু রক্ষা করার তাগিদে তিনিও পলাতক হয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি আমার আত্মীয় হয়ে যাওয়ায় বন্ধু ও আত্মীয় হিসাবে একটু সমবেদনা জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন, সে যদি শুধু ডাক্তারি প্র্যাকটিস করত, তাহলেও তো তার কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু তার লোভের প্রায়শ্চিত্য করতে গিয়ে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে পথের ভিখারি হয়েও তো মুক্তি পাচ্ছি না। এমন কোনো আত্মীয় নেই, যে কমপক্ষে ২০/৩০ লক্ষ টাকা তার কাছে পাবে না। সবাই লোভে পড়ে মাসে মাসে নগদ লাভ খাওয়ার আশায় কোটি কোটি টাকা তাকে দিয়েছে। এখন সবাই কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। সে তো মরেছে, সাথে বৃদ্ধ মা-বাবা এবং সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকেও মেরেছে। আমি তার উত্থানের সময়ও তার ও আমার এক আত্মীয়কে বলেছিলাম, দেখ! এই লাভ লাভ নয়, পরিষ্কার সুদ। মাসে মাসে নির্দিষ্ট লাভ দেওয়া সুদ ছাড়া আর কী হতে পারে? এর পরিণতি কিন্তু ভালো মনে হচ্ছে না বলছি। সেই আত্মীয় আমার সাথে তর্ক করে বলেছে যে, কেন? সে তো আমাদেরকে লাভের কথাই বলছে। আমি বললাম, লাভটা কীভাবে কোন ব্যবসায় করল তা কি দেখবে না? এখন শুনছি, সেই গরীব আত্মীয়টাও জমি ইত্যাদি বিক্রি করে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা তাকে দিয়েছিল। আরেক আত্মীয়ের কথা শুনেছি, তারা কয়েক ভাই মিলে প্রায় এক কোটি টাকার মতো দিয়েছিল। এ সকল আত্মীয়ের টাকা তো পরিশোধের চিন্তা করাও সম্ভব নয়। শুধু বড় পাওনাদাররাই শক্তি-বলে ল্যাব ও বাড়িটা রেজিষ্ট্রি করিয়ে নিতে পেরেছে। তারপরও ১০/১৫ কোটি টাকার পাওনাদার এখনো তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাবা-মা কোথায় ছিটকে পড়ল, এবং ছেলেটা তার বৌ নিয়ে কোথায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কোনো পাওনাদারই তার হদিস পাচ্ছে না। তাদের খোঁজ-খবর তেমন কোনো আত্মীয়ও এখন জানে না। এমন কেন হল? দেখুন, লোভ মানুষকে কীভাবে ফকির বানিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আর সুদের সাথে জড়িতদের সাথে তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আচ্ছা বলুন তো, আল্লাহ যার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তার কি আর বাঁচার উপায় থাকতে পারে? একটা সুখী ধনী পরিবার হঠাৎ করে কীভাবে রাস্তার ফকির হয়ে গেল একথা ভাবতে গিয়ে আমরা আত্মীয় স্বজনরা কিছুতেই চোখের পানি সংবরণ করতে পারছি না। শুধু আমরা নই, বিষয়টা যেই শোনে, সে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে পারে না। লোভ ও সুদী কারবার মানুষের পরকালকে তো ধ্বংস করেই, ক্ষেত্রবিশেষে ইহকালকেও ধ্বংস করে দেয়।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×