somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন এক অনিন্দিতার গল্প! (২য় পর্ব)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের লিন্ক।
Click This Link

সেদিন প্রিতম সন্ধ্যার শীতল সমীরন নামার আগ পর্যন্ত অপেক্ষাই করে গেল কিন্তু পায়েল এল না! বেশ কবার ফোন করার চেষ্টা করেছে প্রিতম। লাভ হলো না। ফোন সুইচ অফ! কিছুটা রাগে...কিছুটা অভিমানে ফুলগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে চলে গেল ফিরে..রাতে আর পায়েলকে ফোন দিল না..অনলাইন ও হলো না প্রিতম। প্রচন্ড রকমের মন খারাপ তার! সে ভাবতেই পারে নি যে পায়েল এমন কোনো কান্ড করবে!..কেন যেন মনে হচ্ছিল পায়েল এমন করতে পারে না...ভাবছিল একবার ফোন করে জানা উচিত কি হয়েছে তার.." এত বার ফোন দিলাম..তখন যখন ধরল না এখন আর কি ধরবে!" নিজের মনে মনে ভেবেই আবার ফোন দিল প্রিতম। রিং হচ্ছে অপর প্রান্তে...
:হ্যালো?
:তুমি এত্তক্ষন কোথায় ছিলে? কোনো খবর নেই! আমি তোমার জন্য কত্তক্ষন দারিয়ে ছিলাম সে খবর রাখো? কি হইছে তোমার পায়েল??
: ওহ। এম। জি। আমি তো একদম ভুলে গেছি!!!! সরি সরি!! মনেই ছিল না যে তুমি এমন ঝড়-বাদলের দিনে স্কুলে আসবা!
: নাহ! তেমন কিছু না।

এর চেয়ে বেশি কিছু প্রিতম বলতে পারে নি। অভিমান গুলো যেন পেট থেকে শুরু হয়ে বুক দিয়ে উঠে গলা পর্যন্ত গিয়ে ঠোটের ঠিক আগায় গিয়ে আটকে রইল। মুখ দিয়ে আর বেরোল না! পায়েল জানতেও পারলো না কোন এক জন অধীর আগ্রহ নিয়ে তার জন্য পথ চেয়ে বসে ছিল।
এর পর প্রিতম মনে মনে ঠিক করলো যতক্ষন না পর্যন্ত সে পায়েলের দিক থেকে কোন সারা পাচ্ছে ..নিজ থেকে কিছু বলবে না সে। "কি এমন ঠেকা পরেছে! সে যদি না বোঝে তো আমিও কিছু বলবো না!"
প্রিতম ঠিক করলো এখন থেকে একটু দুরে দুরে থাকবে সে পায়েলের। হয়তো একটু হলেও তখন অনুভব করবে প্রিতমের প্রয়োজন। সেই আশায় প্রিতম প্রতিদিন ফোন করা বন্ধ করলো। আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আশায় থাকলো হয়তো পায়েল নিজে থেকেই কল করবে..কিন্তু হায়..অপেক্ষার প্রহর যে আর শেষ হয় না।
ওদিকে অনিন্দিতার যেন কোন খেয়াল ই নেই প্রিতমের এত অনুরাগের দিকে..খানিকটা যেন বেখায়ালী চারপাশটা নিয়ে...জীবনকে নিয়ে পায়েল কখনো খুব সিরিয়সলি ভাবেনি..যখন যা হবার দেখা যাবে..এমন মন মানসিকতা আর সদা হাস্যজ্জল মেয়েটির জীবনে সামনে কি ঝড় আসছে তার টের হয়ত এখনো পায়নি সে।কারো জন্য ভাবতে ভালো লাগে না পায়েলের..হয়তো তেমন করে কেউ এখনো ভাবতে শিখায়নি তাকে..ভালোবাসার বিরোধী সে নয়। খানিকটা উদাসীন বলা যায়।


..হঠাৎ প্রচন্ড বৃষ্টি। পায়েল সেদিন অন্য কিছু না ভেবেই একা একা সেই বৃষ্টি তে ভিজছিল..খালি রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটা পায়েলের সব সময়ের সখ! কোন জায়গায় কোন শুনশান রাস্তা যদি থাকে তো পায়েল তার ঠিক মাঝখানটা দিয়ে হাটা শুরু করে। এই ঝড় বৃষ্টির মদ্ধে এমন শুন্য একটা রাস্তা দেখে পায়েল নিজেকে সামলাতে পারে নি। দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি স্নান করছিল শুন্য সে রাজপথে! এতটায় মগ্ন ছিল যে পেছন দিক দিয়ে লাল রঙের র‌্যাংলার টা শো শো করে আসছিল সেটা সে টের ও পায় নি। সেই কখন থেকে ড্রাইভারটা পায়েলের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু বাপ্পার "আজ বৃষ্টি নামুক" গানের বদৌলতে তাও গেল না। শেষে ঠিক পায়েলের সামনে এসে ব্রেক কষা লাগলো তার! গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির মধ্যে বেরোতে বাধ্য হল শান্ত।
:এই মেয়ে! চোখ-কান নেই!! রাস্তার মাঝখানে দারিয়ে এসব কি হচ্ছে! (রাগে হিশিসিয়ে উঠছিল শান্ত। আজকে বোর্ড মিটিং! সময় মত যেতে হবে! প্রেজেন্টেশন আছে। কি ঝামেলা!)
..পায়েলের তার পর ও কোন খেয়াল নেই! কানে হেড ফোন, চোখ বন্ধ আর বৃষ্টির এত সুন্দর মিষ্টি মধুর অনুভূতি! শান্ত এতক্ষন পেছন থেকে কথা বলছিল। কোন জবাব না পেয়ে আস্তে আস্তে মেয়েটার সামনে গিয়ে দারালো।
আর সামনে গিয়ে কোন কথা বেরোলো না শান্তর মুখ দিয়ে। অপলক চোখে চেয়ে রইল সামনে দারানো মেয়েটির মুখের দিকে!
কি অদ্ভূত এক ভালোলাগা। আর পবিত্রতায় ঘেরা যেন মেয়েটির চারপাশ। শান্তর মনে হলো সে কোন দিবা স্বপ্ন দেখছে...যেখানে তার স্বপ্নের রানী তার সামনে দারিয়ে আছে। পাথর হয়ে দারিয়ে রইলো..বৃষ্টির ছপ ছপ শব্দ ছারা কিছুই কানে যাচ্ছে না।
হঠাৎ করেই চোখ খুললো পায়েল। চেয়ে দেখল ঠিক তার সামনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে কেউ একজন! কিছুটা বিব্রত আর বিরক্ত চোখে বললো..(কে আপনি? কি চাই?)
বাস্তবে ফিরে এল যেন শান্ত!!
:কি চাই মানে! বুঝতে পারছেন না কি চাই??
: কি বুঝব! আমি তো আপনাকে চিনিও না! বুঝবো কিভাবে??
: চারদিকে তাকিয়ে দেখেন মহারানী! তাহলেই বুঝবেন! এটাকে কি নিজের রাজত্বের রাজপথ পেয়েছেন যে যকজন খুশি এভাবে বন্ধ করে বসে থাকবেন??
(এতক্ষনে পায়েলের মনে পড়ল সে কোথায় দারিয়ে আছে)
: ওহ! সরি! এই কথা! বললেই তো হয়! আজব! আমি কি আপনার মন পড়তে পারি নাকি যে মুখ দেখেই বুঝে যাব আপনি কি চান?? ওকে সরছি! যান। ভাগেন। যত্তসব!
:কি মেয়েরে বাবা!(মনে মনে বির বির করলো শান্ত)

......................................................................................................

তার পর দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিল শান্ত। যত তারাতারি সম্ভব অফিসে পৌছে সোজা কনফারেন্স রুমে...সবাই অপেক্ষা করছে তার জন্য! যাই হোক ঠিক ঠাক প্রেজেন্টেশটা দিল কিন্তু যা হবার তা তো হয়েই গেছে! সারা ক্ষন পিসির স্ক্রীনে শুধু একটাই চেহারা ভেসে উঠছে! কি যে করবে সে! কে এই মেয়ে! কি নাম? কোথাই থাকে? ভাবতে ভাবতেই দিন গেল শান্তর। বুঝতে পারলো যে করেই হোক খুজে পেতে হবে তার রাজপথের মহারানী কে!!
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
শান্ত যেন ঠিক তার নামের উল্টোটি।বেশ চন্ঞল প্রকৃতির। একবার যা মনে ধরে .সে যাই হোক না কেন নিজের সে করে নিবেই। "না" শব্দটি শান্তর অভিধানে নেই.. প্রচন্ড স্বপ্নবিলাসী,কনফিডেন্ট,হাসি-খুশি আর চঞল এই ছেলেটি প্রিতমের ঠিক উলটো। মনের কথা সে খুব কম ই ধরে রাখতে পারে..তার একটাই ফিলোসফি "জীবনে চলার পথে যদি কখনো সেই একজন স্পেশাল মানুষের দেখা পাও..তবে তাকে যে করেই হোক, ধরে রেখ! যেতে দিও না।"
শান্ত মাত্র গত সেমিস্টার এই গ্রাজুয়েশন করে বেরিয়েছে। ভার্সিটি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এই মাল্টিন্যাশনাল কম্পানীতে জয়েন করেছে। ভালো কাজ। ভালো কো-ওয়ার্কার। এখানে কাজ করতে বেশ লাগে শান্তর! সবাই এখানে যেন এক পরিরাবের মত! খুব দ্রুত সবাই কে খুব আপন করে নিয়েছে সে।
কিন্তু তার-পর ও বন্ধু আড্ডা আর ভার্সিটির হারিয়ে যাওয়া সেই মিষ্টি মধুর দিন গুলো খুব মিস করে শান্ত! কাজের পাশাপাশি গান লেখা আর এখানকার লোকাল একটা রেডিওতে আর জে এর কাজ ও করে শান্ত। নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে সে। রেডিওতে কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অনেক মেয়ে শান্তর প্রেমে পড়েছে। কারন টা হয়তো তার মন ভুলানো কন্ঠ আর সুন্দর করে কথা বলার ধরন! অবশ্য এ নিয়ে এক ধরনের গর্বও তার মধ্য কাজ করে। সে জানে সে শ্রেস্ঠ্য। সে এও জানে আশেপাশের মেয়েরা তাকে নিয়ে কথা বলে..কিন্তু শান্ত যেন এখনো ঐ একজন স্পেশালের জন্যই অপেক্ষা করে আছে! যাকে দেখলে চারপাশের সব কিছু স্থির হয়ে যাবে.যাকে বলে .LOVE AT FIRST SIGHT! শান্ত এখনো পর্যন্ত সেই "FIRST SIGHT"
এর অপেক্ষাতে ছিল। আজ কেন যেন তার মনে হচ্ছে এই তো সে যার জন্য সে এতটা কাল অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল। কিন্তু হায়! কে সে? কোথায় খুজে পাব তাকে???

আকাশ মেঘে ঘেরা...
হাসি দিয়ে পাল-তুলে..
অসীমে এই ছোট্ট তরী
ঢেউ ভেঙে ছুটে চলে
খুব ধীরে কিনারা ঘেসে
আনমনে বসে থাকি
একি মুখ বারে বারে
সাদা ক্যানভাসের আঁচোলে
রং তুলির মাঝে আঁকি।
আর ভেবে যাই, কে তুমি?
কোন সে পথের রাজরানী।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৮
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×