somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ের ঢালে বারবিকিউ পার্টি (সাথে ফ্রি রেসিপি-ও আছে) B-)

২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনেকদিন ধরেই প্ল্যান করছিলাম শীত আসলে ক্যাম্পাসের আশেপাশে একটা পার্টি করতে হবে। রাতের বেলা পাহাড়ের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে বারবিকিউ। এতদিন এই প্ল্যানটা কাগজে কলমেই ছিলো, কিন্তু এবার কয়েকজন মিলে একসাথে বসে ঠিক করলাম পার্টি হোক আর বারবিকিউ হোক, যা করার এই শীতেই করে ফেলতে হবে। আমি আর সুফিয়ান খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলাম কিভাবে কি করা যায়। একটা খসড়া হিসাব-ও করা হলো, ২০ জনের নামের লিস্ট বানিয়ে। পরটা, মুরগি, সস, সালাদ আর ড্রিংকস, কিন্তু সমস্যা হলো আমরা কেউই তো হাড়ি পাতিলের ধারে কাছে থাকি না, এতসব করবে কে?

অনেক খোজ করার পর মেহেদীকে পাওয়া গেলো, সে নাকি এটা অনেকবার করেছে। আর যেসব জিনিষপত্র লাগে এগুলা করতে তা সবই তার কাছে আছে। আমরা তো লাফিয়ে উঠলাম! কাগজ কলম নিয়ে শুরু হয়ে গেলো হিসাব। কঠিন কিছু না, শুধু সয়া সস আর মসলা গুলার জন্যে ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে যেতে হবে। আর উনুনে কয়লা না দিয়ে দেয়া হবে তুষের লাকড়ি।

এখন যার সাথেই কথা হচ্ছে, সবার-ই জিজ্ঞাসা কোথায় হবে পার্টিটা? এটা নিয়েও আমরা বসলাম। আমি চেয়েছিলাম সাগর পাড়ে করতে, ক্যাম্পাস থেকে কুমিরা বীচ তো হাঁটা পথ। আবার কেউ বললো চলো পাহাড়ের ভেতর করি।


পাহাড়ের ঢালে বারবিকিউ পার্টি...

সবশেষে হিসাব করে দেখলাম জানুয়ারি মাসে পুরা একটা রাত খোলা আকাশের নিচে কাটানো অসম্ভব, আর জিনিষ পত্র নেয়ারও একটা ব্যাপার আছে। তাই পার্টিটা হবে বিবিএ ফ্যাকাল্টির ঠিক পেছনে যে পাহাড় আছে, ঐটার ঢালে। জায়গাটা নিরিবিলি আছে, আবার জিনিষপত্র আনা নেয়া করতেও সুবিধা হবে। আগে যেহেতু কখনো রান্না করে খাওয়া হয়নি, তাই খুব বেশি হৈচৈ-হল্লা-হাটির দরকার নাই, সিম্পল একটা পার্টি হবে।

মেহেদী সম্প্রতি প্রেম-ভালোবাসার পাট চুকিয়ে হুজুর হয়েছে, সুযোগ পেয়ে সে ঘোষণা করে দিলো, ক্যাম্পাসের ভিতরে যেহেতু হচ্ছে, শুধু একসাথে বসে খাওয়াদাওয়া করে উঠে যাবো। কোনও নাচ-গান-বাদ্য-বাজনা চলবে না! কি আর করা…শেফ বলে কথা! তখনকার মতো আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিলাম।

১৬ তারিখ সকালে সুফিয়ান আর মেহেদী লাফালাফি ঝাঁপা-ঝাঁপি করে কাজ শুরু করে দিলো। রুমে রুমে গিয়ে টাকা তোলা, হিসাব তৈরি করে বাজার করা..সব কিছু ঠিকঠাক মতো আয়োজন করে রাত আটটার দিকে আমরা বারোজন জায়গা মতো উপস্থিত হলাম।

তারপর ইট দিয়ে একটা জায়গায় উনুন বানানো হলো, আমরা তুষের লাকড়ি গুলা টুকরা টুকরা করে সেখানে দিতে থাকলাম। আশেপাশে দুই তিনটা পিকনিক পার্টি নজরে আসলো। শুনলাম কারা নাকি সবজি উৎসব করছে! মুরগির ভেতর শুঁটকী মাছ দিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল (!?) রান্না! এটা অবশ্য শোনা কথা। সত্যি মিথ্যা জানি না। আমাদের ততক্ষণে প্রস্তুতি পর্ব শেষ, তেল ঢেলে আগুন দেয়া হলো। আগুনটা যখন ভিতরে চলে যাবে তখন শিকগুলাতে মাংসের টুকরা গেঁথে তাপ দিতে হবে। মাংসগুলা সকালে সয়া সস আর সব মশলা দিয়ে মাখিয়ে রাখা হয়েছিলো।


তুষ ভেঙ্গে চুলা তৈরীর কাজ চলছে...

সোহেল ততক্ষণে রুম থেকে সাউন্ড সিস্টেম এনে ফুল ভলিউমে চালিয়ে দিয়েছে। মেহেদী মাংসে শিক গাঁথতে ব্যস্ত, দেখে মনে হচ্ছে না এসব গান বাজনার একবর্ণ-ও তার কানে ঢুকছে। পাহাড়ের স্তব্ধ নিথর পরিবেশের ভেতর আমরা কয়েকজন আগুন জ্বালিয়ে উৎসব করছি, ব্যাকগ্রাউন্ডে কে যেন নিকেলব্যাক প্লে করেছে (গানের কথার ভিতর পার্টির মুড নাই, কিন্তু কেন জানি শুনতে ভালো লাগছে..),

Time, is going by, so much faster than I,
And I’m starting to regret not spending all of it with you.
Now I’m, wondering why, I’ve kept this bottled inside,
So I’m starting to regret not telling all of this to you.
So if I haven’t yet, I’ve gotta let you know…

You’re never gonna be alone
From this moment on, if you ever feel like letting go,
I won’t let you fall…
You’re never gonna be alone
I’ll hold you ’til the hurt is gone.

আমি রিয়াদকে নিয়ে রওনা দিলাম পরটার অর্ডারটা আনতে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে প্যাকেটগুলা নিয়ে আবার রওনা হলাম পাহাড়ের দিকে।

পৌঁছে দেখি সব কিছু রেডি হয়ে গেছে, মেহেদী আর সুফিয়ান শিকের ভেতর মাংসের টুকরা গেঁথে আগুনের উপর দিয়েছে, আর একপাশ থেকে বাতাস করা হচ্ছে। চারপাশে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা তখন ফটো সেশনে ব্যস্ত।


কাবাবের স্টিক হাতে রাজন, মেহেদি, সুফিয়ান আর রিয়াদ (আমি ক্যামেরার পিছনে ছিলাম)

শিকগুলো তৈরি হতে আধঘণ্টার মতো সময় লাগলো, এরপর আমরা চারপাশে গোল হয়ে বসে পরিবেশন শুরু করলাম। হালকা কৌতুক হলো, গান হলো…তারপর কিছুক্ষণ হুদাই চিল্লাচিল্লি।


রান্নাবান্না শেষে পরটা-কাবাব সহকারে খাওয়া চলছে...

খাওয়া শেষে বরফ শীতল পানি দিয়ে হাত ধুয়ে আমরা আবার আসলাম সেই আগুনের সামনে। কিছুক্ষণ হাত তাপালাম। তারপর অনেকটা ইয়াঙ্কি নাবিকদের মতো যা কিছু বাকী ছিলো সব আগুনে ফেলে দেয়া হলো। তামজিদ কে নিয়ে আমরা কিছুক্ষণ মজা করলাম, জিয়া আরবিতে একটা মহামূল্যবান ভাষণ দিলো, সবার শেষে সুফিয়ান সব হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে সমাপনী ঘোষণা করলো।

এরপর সবাই ধীরে ধীরে পাততাড়ি গুটানো শুরু করলাম। ঘড়িতে সময় তখন প্রায় এগারোটা, হলের গেট বন্ধ হতে আর আধঘণ্টা বাকী। এই প্রথমবারের মতো পার্টি শেষ করে সময়মত হলে ঢুকছি, সব কিছু গুছিয়ে চিল্লাচিল্লি সহকারে আমরা কয়েকজন হলের গেটে এসে উপস্থিত হলাম।
-------------------------------------------------

বারবিকিউয়ের রেসিপি লাগলে এখানে ক্লিকান ;)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×