somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্ভট চিন্তা। যদি তা বাস্তব হয়?

২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্ভুত অনেক কিছুর ব্যপারে আমার কৌতুহল আছে। ট্রাক ভর্তি ডিম নিয়ে যখন রাস্তায় যাতায়াত করে। আমি মনে মনে চিন্তা করি ট্রাকটা উল্টে গেলে কী হবে? এত গুলো ডিম যদি একসাথে মাটিতে পরে তখন দৃশ্যটা কেমন হবে? ডিম ভাঙ্গতে এক ধরনের মজা আছে। এত গুলো ডিম একসাথে ভাঙ্গতে পারলে কেমন লাগবে? আমার যদি টাকা পয়সা থাকতো তবে এমন একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতাম। মানুষের তো অনেক রকমের পাগলামি থাকে। আমিওতো মানুষ, আমারওতো এমন দুএকটা খেয়াল থাকতেই পারে। পারে না?
এরকম উদ্ভট চিন্তা মাথায় থাকে।আমি আশা করতে থাকি নিশ্চয় একদিন দেখতে পাব একটা ডিমেরে গাড়ি উল্টে পড়েছে। তখন আমার মনের আশা পূর্ণ হবে।
কোন এক বোধ বার। আমি গাড়ি করে যাচ্ছি। আমার সামনেই যাচ্ছে এক ভ্যান ভর্তি ডিম। কিছু দূর যেতে না যেতেই ভ্যানের চাকা ভেঙ্গে সব ডিম মাটিতে পড়ে। আমাদের গাড়িটা থেমে যায়। আমি এইবার শখ মিটিয়ে দেখার সুযোগ পেলাম। গাড়ি থেকে নেমে এই বহু আকাঙ্খিত দৃশ্য দেখতে সবার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম।

ডিমের তাক গুলো একটার উপর একটা এসে পড়ছে। নিচ দিয়ে হলুদ সাদার একটা ধারা ধীরে ধীরে কাল পিচ গড়িয়ে যাচ্ছে ঢালোর দিকে। অনেক লোক এই ডিমের তাক গুলোকে সোজা করার চেষ্টা করছে। তাদের শরীরের ভরে গেছে ডিমের তরল পদার্থে। এক বিচ্ছিরি রকমের দুর্ঘন্ধ হচ্ছে। আমি বেশি ক্ষন দাঁড়াতে পারিনি। এত আকাঙ্খিত বিষয় এমন নিরস হবে ভাবি নাই। যে রকম চমৎকার কল্পনা করেছিলাম ব্যপারটা তেমন হয়নি। এক বিচ্ছিরি রকমের মনে হয়েছে। কিছুদিন আমি আর ডিম খেতে পারি নি, ঐ খানের গন্ধটা সব সময় নাকে লাগতো।

এক্সিডেন্ট দেখার একটা কৌতুহল ছিল। চালক যখন শেষ মুহূর্তে তার গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার বাইরে চলে যেতে থাকে। তখন এক একজন যাত্রির আবেগটা কেমন লাগে। কেমন ফিল করে তারা। যখন মনে হবে এই কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার মৃত্যু হবে কেমন লাগে তখন? মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার অবস্থাটা কেমন?কি চিন্তা তখন মাথায় কাজ করে?

এই চিন্তাটাও মাথায় ঘুড়ঘুড় করেছে অনেক দিন। ভাবছি এক্সিডেন্ট থেকে ফিরে আসা কোন যাত্রির সাথে কথা বলবো। বলেছিও দু একজনের সাথে। কিন্তু কেউ ভাল ভাবে বিষয়টা বুঝাতে পারেনা। তারা কেবল এক্সিডেন্টের পরের বিভৎষতার বর্ণনা করতেই বেশি পছন্দ করে। পুলিশ কখন এলো। মানুষ কি করে মালা মাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই বিপদের সময় কেউ কেউ অনেক হেল্প করে। এই সব কথাই বেশি বলে। আমার মনে হয়েছিল। এই বিষয়ে আমার জ্ঞান লাভ হবে হয়তো কিন্তু তার আর বোঝার ক্ষমতা থাকবেনা।

কিন্তু এই অভিজ্ঞতাও আমার হয়েছে। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল। আমি কুমিল্লা থেকে মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। টিকিট কেটে উঠলেও গাড়িটি লোকাল। খুব একটা দ্রুত গতিতে চলছে বলে মনে হয়না। আমি বসে ছিলাম গাড়ির বাম পাশে , সামনে থেকে দুই সিট পিছনে।মাঝে মাঝে যাত্রি নিচ্ছে আবার নামাচ্ছে। আমিও নতুন জায়গায় যাচ্ছি আমার ভেতরেও উত্তেজনা কাজ করছে। আমি সকৌতুহলে চারদিকে তাকিয়ে থাকি।
হঠাৎ খট করে বিকট একটা শব্দ হলো। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের গাড়িটি রাস্তাছেড়ে বাইড়ে ছুটে যাচ্ছে। একটা হোটেলের দিকে। বাঁশের খুটি গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। গড়ম দুধের বড় পাতিলটা ছিটকে গিয়ে পড়েছে অনেক দূরে। একটা বাঁশ আমার জানালার কাঁজ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। সব কিছুই হচ্ছে চুখের পলকে। রাস্তা থেকে একটি গাড়ি ছিটকে পড়তে দশ সেকেন্টের বেশি সময় লাগেনা । জানালার কাছের সিটের লোকটি এসে আমার উপরে পড়েছে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আমি তাকে জায়গা করে দিতে দিতে ভাঙ্গা কাঁচে তার শরীরের কয়েক জায়গা কেটে গেছে। কেবল চিৎকারে শব্দ শুনতে পেলাম। আল্লা গো, আল্লাগো শব্দটাই বেশি ছিল। এক্সিডেন্ট তো আল্লাই করেছে। তার পরেও তাকে ডেকে কি লাভ?

হোটেলের পিছনেই একটি খাল। খালের ধারে হেলে পড়ে থাকা একটি কাঠাল গাছে এসে গাড়িটা থেমেছে।
আমার কোন অনুভুতি কাজ করছেনা। সাধারণত কোন বিপদ দেখলে আমার হাতপা কাঁপতে থাকে। কিন্তু সে দিন আমি খুবই স্বাভাবিক ছিলাম। নিজে নামলাম, আরো কয়েক জনকে ধরে নামালাম। সবই হচ্ছ জানালা দিয়ে সামনের দরজা খোলা যাচ্ছেনা। পেছেনের দিকে জানালা ভেঙ্গে সবাইকে এক এক করে জনতার সহায়তায় নামিয়ে আনা হচ্ছে।

আমার তল্পি তল্পা ছিল গাড়ির পেছনের বক্সে। সেটা খুলার চেষ্টা করলাম। সম্ভব নয়। দর্শকদের কয়েকজন এগিয়ে এল। এবং বাঁশ দিয়ে টেনে হিচড়ে বক্স খুলে কাঁথা বালিশ যা কিছু আমার বস্তায় ছিল নিয়ে আসলাম।
অচেনা এলাকা। কোথা থেকে বাস পেতে হয়? কি ভাবে যেতে হয়? আমি কিছুই জানি না।

কেউ মারা যায়নি তবে অনেক কেই দীর্ঘদিন হয়তো হাসপাতালে থাকতে হয়েছে।
আমি মাত্র তিন দিন বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়ালাম। কিছু কাটাকাটির দাগ ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি।

এটা ঠিক মনে ভরেনি।ব্যপারটা খুবই অল্প সময়ে ঘটেছে। বিশেষ ভাবে কিছু বুঝার সুযোগ পাইনি।
আশায় আছি যদি কখনো বিমানে উঠার সুযোগ পাই। এবং বিমানটা যদি আকাশে ........। আর আমি যদি ফিরে আসতে পারি । তাহলেই কেবল সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো।আপনাদের সাথে চমৎকার অভিজ্ঞতাটা অবশ্যই শেয়ার করবো।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×