somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডজ!!!"---আজকালকার রিলেশন নিয়ে কিছু কাটাছেড়া

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলো পত্রিকার “নকশা” পাতায় আজ একটা নিউজ দেখে চোখ আটকে গেল। নিউজের শিরোনামঃ “দেখা হলো পুরোন প্রেমিকের সাথে।” কৌতুহল জাগার মতই শিরোনাম। আমারও কৌতুহল জাগল। পড়া শুরু করলাম। যতই পড়ি, ততই অবাক হই। লেখাটা কে লিখেছেন আমি জানি না। তার ধারণা অনুযায়ী, রিলেশন যার তার সাথে যখন তখন হতেই পারে। ভেঙেও যেতে পারে। সব রিলেশনে বিয়ে হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। আর সব ব্রেক আপ ই “মিউচুয়াল ব্রেক আপ।” এ যুগের নব্য লাইলী-মজনুরা কিছুকাল প্রেম-প্রেম খেলা খেলে, ঢলাঢলি করে শেষে এসে “মিউচুয়ালী” ঐকমত্যে পৌঁছায়, তাদের দুজনের আর একসাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের চাহিদা একরকম না। তাদের মধ্যে কিছু “হচ্ছে” না। তারা ব্রেক আপ করে। কয়েকদিন পর আবার আরেকজনকে জুটিয়ে নেয়। তারপর আরেকজন কে, আরেকজন কে, আরেকজন কে... ...। এ খেলা চলতেই থাকে। কিন্তু জনৈক লেখক/লেখিকা হয়তো ভুলেই গেছেন, অথবা দেখেও দেখেন নি যে এ যুগেও অনেক ছেলে-মেয়েই আছে, যারা প্রকৃতই ভালোবাসে। ভালবাসতে জানে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদের ভালোবাসার মানুষটি যদি বর্তমান যুগের “সো কল্ড” ছুপা চুচীল সমাজের অথবা আলট্রা-মডার্ন কোন ছেলে হয় অথবা “শিলা কি জাওয়ানী” দেখে নিজেকে শিলা ভাবতে শুরু করা কোন মেয়ে হয়, তাহলে একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই রিলেশন আর থাকে না। ২/৩ অথবা ৫ বছরের সম্পর্কও তারা অবলীলায় ভাঙতে পারে...তাদের মধ্যে “কোন কিছু হচ্ছে না” এই ধুয়া তুলে। তখন সেই নিষ্পাপ মেয়েটির অথবা সেই সহজ সরল ছেলেটির কি অবস্থা হয়, সে কথা ভাবার তাদের সময় থাকে না। অনেকের জীবনই ধ্বংস হয়ে যায়। আর পুরানো সেই প্রতারক প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে যদি পথে দেখা হয়ে যায়, তাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকতে পারে, সেটা বলাই বাহুল্য। রাগ হতে পারে, ক্রোধ থাকতে পারে, আসতে পারে অপরিসীম ঘৃণা। হয়তো অনেকের চোখে জল ও আসতে পারে। আর যাই হোক, “স্বাভাবিক” থাকা সম্ভব না। আর কি সুন্দর বলে দিলেন স্বাভাবিক থাকার জন্য!


হাসি আসে।


পশ্চিমা সংস্কৃতির হাওয়া বাংলাদেশে লেগেছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। সেই সাথে আছে বলিউডি হাওয়া। এই দুই কালো হাওয়ার প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের হাওয়াও আর পরিষ্কার নেই। দিন দিন এদেশের ছেলে মেয়েরা তাদের নৈতিকতা হারাচ্ছে। মিডিয়াগুলোরও রয়েছে প্রাণসংহারী ভূমিকা। যার প্রমাণ আজকে প্রথম আলোর “নকশা” তে প্রকাশ হওয়া এই লেখাটি। এ তো গেলো প্রিন্ট মিডিয়ার কথা। নাটক-সিনেমার জগতও এর বাইরে নয়। এখনকার সময়ের নাটক-সিনেমা আমাদেরকে রুম ডেট করার জন্য “লিটনের ফ্ল্যাট” এ যাওয়ার শিক্ষা দেয়, পরকীয়া প্রেমের শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় ওষুধের দোকান থেকে কি উপায়ে কনডম কেনা যায়।


কিভাবে আমরা নৈতিকতার আশা করতে পারি?


রিলেশন জিনিসটা এখন হয়ে গেছে ছেলেখেলার মত। ইচ্ছা হল করলাম, ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে রুম ডেট করলাম, “উড়লাম” (!!!), কয়েকদিন পরে ঝগড়া লাগালাম, কিছু হচ্ছে না বলে ব্রেক আপ করলাম। এতে করে হয়তোবা একই ধরণের মেন্টালিটির দুজন ছেলে মেয়ের কোন সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা টা তখনই হয়, যখন একজন সিরিয়াসলি ই ভালোবেসে ফেলে। রিলেশন ভাঙ্গার কারণে হয়তো অনেকে আত্মহননের পথ বেঁছে নেন। অনেকে হয়তো জীবনে আর কোন কিছু করার আগ্রহ খুঁজে পান না। সমাজে এসব এখন এতটাই কমন যে এগুলো এখন আসলে আমরা দেখেও দেখি না। গা সওয়া হয়ে গেছে সবার। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যাক্তির উপর, পরিবারের উপর, সমাজের উপর।


কী কারণে আসলে রিলেশন ভাঙে?


ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা একটা সম্পর্ক ভাঙার জন্য ৯৯% দায়ী। খুব কম সংখ্যক ছেলেমেয়েই পারে পরিবেশের দ্বারা নিজেকে প্রভাবিত না করতে। অনেক ছেলেমেয়ে যখন একসাথে গ্রুপিং করে অথবা একসাথে থাকে, সেখানকার একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের ভাবের আদান প্রদান হয়েই যায়। তার যদি রিলেশন থেকেও থাকে তারপরও। কিন্তু সবার সামনে তারা সেটা স্বীকার করে না। তাদের প্রেমিক-প্রেমিকা যদি জানতে চায় সেই ছেলেটি অথবা মেয়েটি কে, তখন তারা উত্তর দেয়, “আমরা শুধুই বন্ধু!উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডজ!!!” পরবর্তীতে দেখা যায় এইরকম “জাস্ট ফ্রেন্ড” এর সাথেই তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আর তাকে যে ছেলেটি অথবা মেয়েটি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো, তাকে নিক্ষেপ করে আস্তাকুরে। ভুলে যায় ভালোবাসার সম্পর্ক।
প্রগতিশীলতার ধুয়া তুলে ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা কে বন্ধ করতে না পারলে এরকম ঘটনা বাড়তেই থাকবে। অনেক কিছুর উপরেই এটা নির্ভর করে। ছেলেরা কি মেয়েদের সাথে মিশবে না? তারা কি বন্ধু হবে না? অবশ্যই হবে। একসাথে ক্লাস করতে গেলে, কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে অনেকের সাথেই মিশতে হয়, কথা বলতে হয়। কিন্তু সব কিছুই করতে হবে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। মুখে বললাম ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ আর গায়ে হাত দিলাম, কোলের উপর নিয়ে বসিয়ে রাখলাম অথবা ঘাড় ধরে ঝুলে থাকলাম, এটা কোন ধরণের ফ্রেন্ডশিপ, আমি জানি না। আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে কী খাপ খায়, আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ আমাদের কী শিক্ষা দেয়। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে সেই মানুষটির কথা, যে আপনাকে তার জীবনের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছে। অসংখ্য মানুষের মাঝখান থেকে যে আপনাকে বেঁছে নিয়েছে। সে তো অন্য আরেকজনকেও বেঁছে নিতে পারতো, তাই নয় কি? সে যদি আপনার অন্য ছেলের সাথে অথবা মেয়ের সাথে অবাধ মেলামেশায় কষ্ট পায়, তাহলে কেন আপনি তাকে কষ্ট দিবেন? কেন শুধু তাকে নিয়েই থাকতে পারবেন না?


যদি আপনার ভালোবাসা প্রকৃত হয়, আপনি অবশ্যই পারবেন। আর তাহলে এইসব পত্রিকায় এই ধরণের কোন নিউজ ও আমাদের চোখে পরবে না। কারো সাথে সম্পর্ক করলে এমন মনমানসিকতা নিয়েই করুন, যাতে তাকেই আপনি বিয়ে করতে পারেন। আর যদি আপনার ব্যাক্তিত্বের ধরণ এমনই হয় যে আপনি মজা করতে ভালোবাসেন, রিলেশনের ব্যাপারে সিরিয়াস না, তাহলে এমন কাউকেই আপনি খুঁজে নিন যে আপনারই মত। অযথাই একটা ভালো ছেলে অথবা মেয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিবেন না। “মানুষের মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা দুটোই সমান অপরাধ”---কথাটা মনে রাখা আমাদের সবার কর্তব্য।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×