somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- পেশোয়ার এক্সপ্রেস মূলঃ কৃষণ চন্দর অনুবাদঃ জাফর আলম (কপি-পেস্ট পোস্ট, তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( খুব দূর্ভাগ্যজনক হলেও কৃষণ চন্দর বর্তমানে এদেশের পাঠকদের কাছে খুব অপরিচিত লেখকদের একজন । কৃষণ চন্দর তাঁর বেশিরভাগ লেখায় সমাজে নিচুতলার মানুষের কথা, সমাজের নানা
বৈশিষ্টের মানুষের কথা তুলে আনার চেস্টা করেছেন । তাঁর "গাদ্দার" উপন্যাস ও" পেশোয়ার এক্সপ্রেস" গল্প দুটি দাংগাপিড়ীত কিছু অসহায় মাসুসদের খন্ডচিত্র । এ সাহিত্যকর্মদুটি যে তাকে অমর করে রাখবে তাতে সন্দেহ নেই)



আমি যখন পেশোয়ার স্টেশন ছেড়েছি, তখন আনন্দে এক গুচ্ছ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছি। আমার ট্রেইনের বগিতে ছিলো অধিকাংশ হিন্দু শরণার্থীরা। তারা এসেছিলেন সীমান্ত প্রদেশের পেশোয়ার থেকে, মর্দান থেকে, কোহাট, চরসদ্দা, খাইবার, লান্ডিকোটাল, নওশেরা, মানশেরা প্রভৃতি স্থান থেকে। পাকিস্তানে জান-মালের নিরাপত্তা নেই, তাই ওরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। স্টেশনটি ছিলো অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সেনাবাহিনীর অফিসাররাও ছিলো অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক। তবে, যতক্ষণ, আমি (যাদেরকে পাকিস্তানে মোহাজির আর ভারতে শরণার্থী বলা হয়) পঞ্চনদীর দেশের দিকে পাড়ি জমাইনি, ততক্ষণ তারা অস্বস্তিতেই ভুগছিল। অন্যান্য পাঁচজন পাঠানদের থেকে এইসব শরণার্থীদের পার্থক্য করা যাচ্ছিলো না। তাদের চেহারা বেশ লম্বা ও সুদর্শন, পরনে লুঙ্গি ও কুর্তা, হাত-পায়ের গড়ন বেশ শক্ত, অনেকের পরনে সেলোয়ার। তাদের ভাষা পশতু। অনেক সময় কর্কশ পাঞ্জাবী ভাষায়ও তারা কথা বলে। প্রত্যেক বগিতে দু'জন সৈন্য পাহারায় নিয়োজিত। হিন্দু-পাঠান ও তাদের বৌ-বাচ্চাদের দিকে স্মিত হাস্যে দাঁড়িয়েছিলো, হাতে আধুনিক রাইফেল। এরা ভয়ে আতঙ্কে পুরনো বসতবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। এখানে এরা হাজার বছর যাবত বসবাস করে আসছিলো। সেখা
নকার পাহাড়ী জমি তাদের শক্তি-সাহস যুগিয়েছে, তার তুষার-ঝর্ণা তাদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে এবং এ-ভূমির রোদ-ঝলমল বাগান থেকে তোলা মিষ্টি আঙুরের স্বাদে তাদের প্রাণ ভরে গিয়েছিলো। হঠাৎ একদিন এ-দেশ-গ্রাম তাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেলো, শরণার্থীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাড়ি জমালো এক নতুন দেশে। তাদের জান-মাল ও মেয়েদের ইজ্জত বাঁচিয়ে কোনো রকমে-যে চলে আসতে পেরেছে, সে জন্য ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুঃখে ও রাগে তাদের হৃদয়ে যেনো রক্ত ঝরছিলো। তাদের সাত পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে আসতে বুকে যেনো 'গ্রানাইট' বিদ্ধ হচ্ছিলো আর অভিযোগ করছিলো, "মাগো; কেনো এভাবে নিজের সন্তানদের তাড়িয়ে দিচ্ছো? তোমার বুকে উষ্ণ আশ্রয় থেকে কেনো মেয়েদের বঞ্চিত করলে? এসব নিরপরাধ কুমারী মেয়েরা তোমার শরীরে আঙুর লতার মতো জড়িয়ে ছিলো এতোদিন। কেন হঠাৎ তাদের টেনে হেঁচড়ে ছিঁড়ে ফেললে, মাগো মা।"
উপত্যকার মাঝখান দিয়ে আমি দ্রুত ছুটছিলাম আর আমার গাড়িগুলোর মধ্য থেকে এ-ক্যারাভানের দল বিষন্ন চোখ মেলে দেখছিলো পেছনে ফেলে আসা মালভূমি, ছোটো বড়ো উপত্যকা আর ঝির ঝির করে বয়ে যাওয়া আকাঁবাঁকা ছোট নদী। চোখের পানিতে যেনো শেষবারের মতো সবাইকে বিদায় জানাচ্ছে। প্রতিটি আনাচে কানাচে যেনো ওদের চোখ আর বিদায় বেলায় যেনো সবকিছু বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। আমারও মনে হল, চাকাগুলো বোধ হয় ভারী হয়ে পড়েছে। দুঃখ-বেদনায় যেন আটকে যাচ্ছে ওরা, আর চলার শক্তি নেই, বোধ হয় এবার থেমে পড়বে।
হাসান আবদাল স্টেশনে আরো শরণার্থীরা এসে হাজির। এরা শিখ, পাঞ্জাব সাহেব থেকে এসেছে, সাথে লম্বা কৃপাণ, মুখে ভীতির চিহ্ন। ডাগর ডাগর চোখের শিশুগুলো পর্যন্ত যেনো অজানা ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে। ওরা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার বগিতে ঢুকে পড়ল। একজনের বাড়ি-ঘর সব হারিয়েছে, আরেকজনকে শুধু পরনের কাপড় নিয়ে, অপরজনের পায়ের জুতো পর্যন্ত নেই পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এক কোণায় বসে থাকা লোকটি ভাগ্যবান বলতে হয়, তিনি সবকিছু নিয়ে এসেছে সাথে, এমনকি ভাঙা কাঠের তক্তপোশ পর্যন্ত। যারা সবকিছু হারিয়েছে তারা নীরবে বসে আছে। আবার যে উদ্বাস্তু সারাজীবনে ইটের টুকরো পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি, তারা লাখ টাকা হারানোর গল্প শুনাচ্ছে আর নেড়েদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে। ডিউটিরত বালুচ সৈন্যরা নীরবে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে।
আমাকে তক্ষশিলা স্টেশনে অনেকণ অপেক্ষা করতে হয়। স্টেশন মাস্টার জানালেন, "আশেপাশের গ্রাম থেকে একদল হিন্দু শরণার্থী আসছে। তাদের জন্য ট্রেনটি অপেক্ষা করছে।" এক ঘন্টা অতিক্রান্ত হল। আমার বগির লোকজন পালিয়ে আসার সময় সামান্য যা কিছু খাবার আনতে পেরেছিলো, পোটলা খুলে তাই খেতে শুরু করলো। বাচ্চারা হৈ চৈ করছে আর তরুণীরা জানালার বাইরে শান্ত গম্ভীর চোখে তাকিয়েছিল। হঠাৎ দূরে ঢোলের শব্দ শুনা গেল। যাত্রী হিন্দু শরণার্থীদের একটি দল ট্রেনের দিকে আসছে। শ্লোগান দিতে দিতে ওরা এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দলটা স্টেশনের কাছে এসে গেলো। এক ঝাঁক গোলাগুলির শব্দ শুনা গেল, সাথে ঢোলের আওয়াজ। তরুণী মেয়েরা ভয়ে জানালার কাছ থেকে সরে এল। এ-দলটি ছিলো হিন্দু শরণার্থীদের দল - প্রতিবেশী মুসলমানদের আশ্রয়ে ছিলো। প্রতিটি মুসলমানের কাঁধের উপর ঝুলছে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা এক-একজন কাফেরের লাশ। এ-রকম দু'শো মৃতদেহ স্টেশনে এনে বালুচ সৈন্যদের হাতে সোপর্দ করা হলো। মুসলমান জনতার দাবী, এ-মৃত হিন্দুদের যথাযথ মর্যাদার সাথে ভারত পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। বালুচ সৈন্যরা লাশগুলো বুঝে নিয়ে প্রত্যেক বগির ভতিরে মাঝখানে কয়েকজন করে রেখে দিলো। এরপর মুসলমান জনতা আকাশের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করলো এবং স্টেশন মাস্টারকে ট্রেইন ছাড়ার নির্দেশ দিলো। আমি কেবলই চলতে শুরু করেছি, হঠাৎ একজন চেইন টেনে আমাকে থামিয়ে দিলো। এরপর মুসলমান জনতার দলনেতা বললেন, এ-দু'শোজন শরণার্থী চলে যাওয়ার তাদের গ্রাম শূণ্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ট্রেইন থেকে দু'শজন হিন্দু ও শিখ শরণার্থীকে নামিয়ে দিতে হবে। ওরা ওদের গ্রামে থাকবে। কারণ দু'শো জনের শূণ্যতা পূরণ করতে হবে। বালুচ সৈন্যরা দেশপ্রেমের জন্য তাদের প্রশংসা করলো এবং বিভিন্ন বগি থেকে দু'শোজন শরণার্থীকে বেছে নিয়ে জনতার হাতে সোপর্দ করলো।
"সব কাফেররা সরে দাঁড়াও" তাদের নেতা হুঙ্কার দিলো। এ-নেতা পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক প্রভাবশালী জমিদার। শরণার্থীরা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ওদের এক সারি লোক স্টেশনে দাঁড় করানো হলো। দু'শো লোক যেনো দু'শো জীবন্ত মৃতদেহ নগ্ন ভয়ে মুখগুলো সব নীল ... চোখের তারায় যেনো ঝরে পড়ছে রক্তলোলুপ তীর ...।
বালুচ সৈন্যরাই গুলি শুরু করলো। পনেরো জন শরণার্থী, গুলি খেয়ে মরে পড়ে গেলো। জায়গাটা ছিলো তক্ষশিলা স্টেশন। আরো কুড়িজন পড়ে গেলো।
এ-তক্ষশিলায় ছিলো এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে লক্ষ-লক্ষ ছাত্ররা মানুষের এ-সভ্যতার বিষয়ে তার প্রথম দীক্ষা নিয়েছিলো।
আরো পঞ্চাশজন মুখ থুবড়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পড়ে মরলো।
তক্ষশিলার জাদুঘরে সুন্দর সুন্দর মূর্তি ছিলো। অলঙ্কারের অতুলনীয় কারুকৃতি, দুর্লভ শিল্প ও ভাস্কর্যের নিদর্শন, আমাদের সভ্যতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উজ্জ্বল দীপ শিখার ন্যায়।
এবার আরও পঞ্চাশজন এ-পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলো। এর পটভূমিতে ছিলো সিরকপের রাজপ্রাসাদ, খেলাধুলার জন্য এক বিরাট থিয়েটার হল আর পেছনে কয়েক মাইল জুড়ে এক গৌরবোজ্জ্বল ও মহান নগরীর ধ্বংসাবশেষ। তক্তশীলার অতীতের গৌরবের স্মৃতি হয়ে অক্ষুন্ন আছে।
আরও তিরিশজন মারা গেলো। এখানে রাজত্ব করতো কণিষ্ক। ওঁর রাজত্বে প্রজাদের ছিলো শান্তি, সমৃদ্ধি আর ভ্রাতৃত্ব-বোধ।
তারা আরও কুড়িজনকে মেরে ফেলল। এই গ্রামগুলোতেই একদিন বুদ্ধের সেই মহান সঙ্গীতের গুঞ্জন শোনা যেতো। ভিক্ষুরা এখানেই ভেবেছিলেন প্রেমের আর সত্যের সৌন্দর্যের বাণী আর নতুন ধরণরে জীবন যাপনের স্বপ্ন।
এখন সে-দু'শো জনের মধ্যে মাত্র শেষ কয়েকজন মৃত্যুর শেষ লগ্নের জন্য অপেক্ষা করছে।
এখানে ভারতের সীমান্তে ইসলামের বাঁকা চাঁদ চিহ্নিত পতাকা উড়েছিলো আর ঘোষণা করেছিলো ভ্রাতৃত্ব, সাম্য আর মানবতার বাণী।
সবাই এখন লাশ। আল্লাহু আকবর। প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে রক্তের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে এবং এতো ঘটনার পর যখন আবার আমি রওয়ানা দিলাম; আমার মনে হল যে, এমনকি আমার নিচের লোহার চাকাগুলো যেনো পিছলে যাচ্ছে বার বার।
গাড়ির প্রতিটি বগিকেই মৃত্যুর হিমেল ছোঁয়া স্পর্শ করেছে। মৃতদেহ মাঝখানে শোয়ানো আর চারপাশে জীবন্ত মৃতরা বসে আছে ট্রেইনের সীটে। কোথাও একটা বাচ্চা কেঁদে উঠছে এক কোণায় মা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এক স্ত্রী তার মৃত স্বামীর দেহ আঁকড়ে ছিলো। আমি ছুটতে লাগলাম ভয়ে আর রাওয়ালপিন্ডি স্টেশনে এসে পৌঁছলাম।
এখানে আমাদের জন্য কোনো শরণার্থী প্রতীক্ষায় ছিলো না। কেবল পনেরো-বিশজন পর্দানসীন মহিলাকে সাথে নিয়ে কয়েকজন মুসলমান যুবক আমার একটি বগির মধ্যে ঢুকে পড়লো। ওদের সাথে ছিলো রাইফেল, সঙ্গে কয়েকবাক্স গোলাবারুদ। তারা আমাকে ঝিলাম আর গুজর খাঁ এর মর্ধবর্তী স্থানে থামিয়ে নামতে লাগল। হঠাৎ সাথে আসা পর্দানশীন মহিলারা বোরকার পর্দা তুলে চীৎকার শুরু করল, "আমরা শিখ, আমরা হিন্দু, ওরা জোর করে আমাদের নিয়ে এসেছে।" যুবকরা হেসে উঠলো, "তারা তো আমাদের লুটের মাল। ওদের তো ঘর থেকে জোর করেই এনেছি। যেভাবে ইচ্ছা আমরা ব্যবহার করবো। কে বাধা দেবে?"
দু'জন হিন্দু পাঠান ওদের উদ্ধারের জন্য লাফ দিলো। বালুচ সৈন্যরা ওদের শেষ করে দিলো। আরও পনেরো বিশজন যুবক চেষ্টা করলো। তারাও কয়েক মিনিটে খতম। তারপর ঐ তরুণী মেয়েদের টানতে-টানতে কাছের এক বনের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হলো। আমি কালো ধোঁয়ায় মুখ আড়াল করে সেখান থেকে ছুটে গেলাম সামনের দিকে। আমার লোহার ইঞ্জিনের হৃৎপিন্ড ফেটে যাবে, আর আমার মধ্যকার লাল গগনে আগুনের শিখা যেনো গিলে খাবে এই ঘন জঙ্গলকে, পুড়ে ছাই করে দেবে যা পনেরোজন মেয়েকে গ্রাস করেছিলো।
'লালামুসা স্টেশনের কাছাকাছি এসেছি। মৃতদেহের দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়লো। বালুচ সৈন্যরা সিদ্ধান্ত নিলো, এগুলোকে ট্রেন থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। যে-সব যাত্রীকে দেখতে তাদের মনঃপূত নয়, এমনি একজনকে নির্দেশ দেয়া হবে, মৃতদেহ ট্রেইনের দরজার কাছে নিয়ে আসতে, তারপর দরজার কাছে আসলে তাকে-সহ মৃতদেহকে বাইরে ফেলে দেয়া হবে। এর ফলে যাত্রী কমতে থাকে এবং পা ছড়িয়ে বসার জায়গাও হলো।
লালমুসা থেকে এসেছি আমি ওয়াজিরাবাদ। ওয়াজিরাবাদ হলো পাঞ্জাবের অত্যন্ত পরিচিত শহর। সারা ভারতে ওয়াজিরাবাদ থেকে ছুরি রপ্তানী করা হয়। আর এ-ছোরা নিয়ে হিন্দু-মুসলমানরা পরস্পরকে হত্যা করে। ওয়াজিরাবাদে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত বৈশাখী উৎসব। এ-বৈশাখী উৎসবে হিন্দু-মুসলমানরা বৈশাখী মেলায় একত্রিত হয়ে উৎসব পালন করে। আমি যখন ওয়াজিরাবাদ পৌছিলাম, দেখি চারিদিকে শুধু মৃতদেহ ছড়ানো ছিটানো। অনেক দূরে শহরে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, আর স্টেশনের কাছে কাঁসর ঘন্টা ধ্বনি, অট্টহাসি আর উন্মাত্ত জনতার করতালি। মনে হলো বৈশাখী উৎসব।
জনতা প্ল্যাটর্ফমরে দিকে এগিয়ে এলো, সঙ্গে একদল উলঙ্গ মেয়েলোক। তাদেরকে ঘিরে নাচতে গাইতে গাইতে ওরা এলো। স্ত্রীলোকগুলো সম্পূর্ণ উলঙ্গ। তাদের মাঝে ছিলো বৃদ্ধা ও তরুণী, ছিলো বাচ্চারা; নগ্নতা নিয়ে যাদের কোনো চিন্তা ভয় নেই। ওদের চারিদিকে ঘিরে পুরুষেরা নৃত্য করছে গাইছে। মেয়েরা সব হিন্দু শিখ আর পুরুষেরা মুসলমান এবং তিন সম্প্রদায় মিলেই যেন বৈশাখী উৎসব করছে। মেয়েরা হেঁটে চলছে। তাদের চুল আলোথালু। দেহ উলঙ্গ কিন্তু তবুও তারা সোজা হয়ে হেঁটে চলছে, যেন হাজারো শাড়িতে তাদের দেহ আবৃত। চোখে কোনো ঘৃণার রেশ মাত্র নেই। লক্ষ সীতার অকলঙ্কিত অহঙ্কার তাদের দু'চোখ লাভায় জ্বলজ্বল করছে। হয়তো এ-লাভার মুখ বন্ধ, এখনই বিস্ফোরিত হবে। আর এ-আগুনে পুড়িয়ে পৃথিবীকে দোজখে পরিণত করবে।
তাদের চারিদিকে জনতার স্লৌগান, "পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ্ জিন্দাবাদ।"
বিচিত্র এ-শোভযাত্রা সরাসরি এসে গাড়ির সামনে জড়ো হলো। এ-দৃশ্য দেখে ট্রেইনের শরণার্থী মেয়েরা আচঁলে মুখ লুকায় আর দ্রুত ট্রেনের জানালা বন্ধ হতে থাকে।
বালুচ সৈন্যরা গর্জে উঠে, "জানালা বন্ধ করবে না, তাজা হাওয়া প্রবেশ করতে দাও।" কিন্তু যাত্রীরা সৈন্যদের কথা গ্রাহ্য না করায় সৈন্যরা গুলি চালালো। কয়েকজন শরণার্থী মারা গেলো। তবুও জানালা বন্ধ করা থামেনি, ট্রেনের বগির একটি কামরার জানালাও খোলা ছিলো না।
এ-উলঙ্গ স্ত্রীলোকদের ট্রেনে উঠে শরণার্থীদের মাঝে বসে পড়তে বলা হলো। তারপর তারা ইসলাম জিন্দাবাদ, পাকিস্তান জিন্দাবাদ; কায়েদে আজম জিন্দাবাদ স্লৌগান দিয়ে আমাকে বিদায় জানালো।
গাড়িতে উপবিষ্ট একটি বাচ্চা একজন বৃদ্ধানগ্ন মহিলাকে বলল, "মা, তুমি কি এক্ষুণিই স্নান করেছ?"
"হাঁ, বাবা, আমার দেশের ছেলেরা আজ আমার ভাইয়েরা আমাকে গোসল করিয়েছে।"
তাহলে কাপড় চোপড় কোথায়?
বাবা, আমার বিধবার রক্তে ঐ কাপড়ে দাগ লেগেছিল। তাই আমার ভাইয়েরা সে কাপড় চোপড় নিয়ে গেছে।
আমি যখন ছুটছি তখন দুই উলঙ্গ তরুণী আমার গাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে লাফ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে। ভয়ে আমি চিৎকার করে উঠি আর লাহোর পৌছেঁ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
লাহোর এক নম্বর পাটফর্ম এসে থামলাম। আমার উল্টো দিকে দু'নম্বর প্ল্যাটর্ফমে দাঁড়িয়েছিলো অমৃতসর থেকে আসা একটি ট্রেইন। পূর্ব পাঞ্জাব থেকে ট্রেইনটি মুসলমান শরণার্থীদের বয়ে এনেছে। কিছুণের মধ্যে মুসলমান স্বেচ্ছাসেবকেরা আমার গাড়ির প্রতিটি বগিতে তল্লাশি চালাল। টাকা পয়সা, গয়নাগাটি ও মূল্যবান মালামাল সব কেড়ে নিয়ে গেলো। তারপর ওরা চারশা' শরণার্থীকে নির্বাচন করে পর্যায়ক্রমে বের করে সারবেদ্ধভাবে দাঁড় করালো যেনো কুরবানীর খাসি। ব্যাপারটা হলো, মুসলমান শরণার্থী বহনকারী অমৃতসর থেকে আগত ট্রেইন পথে আক্রান্ত হয়েছে এবং চারশো' মুসলমান নিহত এবং পঞ্চাশ জন স্ত্রীলোককে লুট করা হয়েছে। কাজেই এখন ঠিক চারশো' হিন্দু ও শিখ শরণার্থীকে হত্যা করা হলো এবং পঞ্চাশজন হিন্দু ও শিখ মহিলা বেছে বেছে বের করে নিল যাতে পাকিস্তান হিন্দুস্তানের মধ্যে সমতা বজায় থাকে।
মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা একটি সীমারেখা ঠিক করে ছোরা হাতে পর্যায়ক্রমে এক এক করে কয়েক মিনিটে চারশ' শরণার্থীকে হত্যা করলো। তারপর আমি এগিয়ে যাই। আমার দেহের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘৃণাবোধ হচ্ছিলো। দেহ খুবই অপবিত্র হয়ে গেছে। মনে হয় শয়তান আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাহান্নাম থেকে পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দিয়েছে। পৌছেঁ দেখি পরিবেশ পাল্টে গেছে।
মোগলপুরায় সৈন্য বদল হলো। এবার এল শিখ ও ডোগরা সৈন্য। আতারি স্টেশন থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। হিন্দু ও শিখ শরণার্থীরা অসংখ্য মুসলমান শরণার্থীদের মৃতদেহ দেখতে পেলো। এতে তারা খুশীতে আত্মহারা, তারা বুঝতে পারলো স্বাধীন ভারতের সীমান্তে এসে গেছে।
অমৃতসর স্টেশনে পৌছেঁ দেখি শিখরা স্লৌগানে স্লৌগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করছে। এখানেও মুসলমানদের লাশের স্তূপ আর হিন্দু, রাজপুত এবং ডোগরারা ট্রেইনের প্রতিটি কামরায় উঁকি মেরে জিজ্ঞাসা করে, "কোন শিকার আছে কি?" অর্থাৎ কোনো মুসলমান আছে কি-না।
অমৃতসর থেকে চারজন ব্রাহ্মণ আমার গাড়িতে উঠলো। ওরা হরিদ্বারে যাচ্ছে। তাদের মাথা ন্যাড়া; কপালে তিলক, রাম নাম ছাপা ধূতি পরে ওরা তীর্থে যাচ্ছে। অমৃতসর থেকে বন্দুক, বর্শা ও কৃপাণ হাতে দলে-দলে হিন্দু ও শিখরা পূর্ব পাঞ্জাবে গমনকারী ট্রেইনে উঠে বসলো। এরা শিকারের খোঁজে ঘুরছে। তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণদের দেখে ওদের সন্দেহ হলো। জিজ্ঞাসা করল, "ব্রাহ্মণ দেবতা, যাওয়া হচ্ছে কোথায়?"
হরিদ্বারে।
হরিদ্বারে না পাকিস্তানে। একজন ইয়ার্কি করে বললো। একজন ব্রাহ্মণের মুখ ফসকে বের হল, "আল্লাহ-আল্লাহ করো।" তাহলে খতম করা হোক। সে হাঁক দিলো নাথা সিং, নাথা সিং; এদিকে এসো, বড়ো শিকার পাওয়া গেছে। ওরা একজনকে বল্লম দিয়ে খুন করলো। অন্য তিনজন ব্রাহ্মণ পালাবার চেষ্টা করলো। কিন্তু তাদের ধরে ফেললো। নাথা সিং চিৎকার করে বললো, হরিদ্বারে যাওয়ার আগে তোমাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করা জরুরী। ডাক্তারী পরীক্ষায় দেখা গেল ওদের 'খতনা' করা হয়েছে।
তারপর ঐ তিনজন ব্রাহ্মণকেও হত্যা করা হলো। এরা প্রাণ বাঁচাবার জন্য ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করেছিলো।
হঠাৎ এক ঘন অরণ্যের ধারে আমাকে থামানো হল। সেখানে হঠাৎ আমি স্লৌগান শুনতে পেলাম। "সৎশ্রী আকাল হর হর মাহাদেব" আর দেখলাম সৈন্যরা, শিখ, জাট, ও হিন্দু শরণার্থীরা ট্রেন ছেড়ে জঙ্গলের দিকে পালাচ্ছে। আমি ভাবছিলাম ওরা মুসলমানদের ভয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু সেটা আমার ভুল। ওরা যাচ্ছে নিজেদের আত্মরার জন্য নয় বরং কয়েকশ গরীব মুসলমান চাষীদের হত্যা করতে। এরা স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে জঙ্গলে লুকিয়েছিলো। আধ-ঘন্টার মধ্যে সব শেষ। বিজয়ী বেশে সকলে ফিরে এলো। একজন জাট বর্শার ডগায় একজন মুসলমান শিশুর মৃতদেহ শূন্যে দোলাতে-দোলাতে গান গাইছিলো, "দেখো বৈশাখী জটা এনেছি।"
জলন্ধরের কাছে পাঠান বসতির একটা গ্রাম ছিলো। এখানে আবার আমাকে চেইন টেনে থামানো হলো। আর সবাই নেমে আবার ছুটল ঐ গ্রামের দিকে। পাঠানরা এদের সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধ করেছিলো কিন্তু আক্রমণকারীরা ছিলো সংখ্যায় অনেক বেশি ও অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত। গ্রামের পুরুষরা প্রতিরোধ করে জীবন দিলো। এবার মেয়েদের পালা। এখানে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠের পাশে গাছের নিচে তাদের ইজ্জত কেড়ে নেয়া হলো। এ-হলো পাঞ্জাবের সে-মাঠ, যেখানে হিন্দু, মুসলমান ও শিখ চাষীরা একত্রে সোনার ফসল ফলাতো। সেখানে র্সষরে সবুজ পাতায় ও হলুদ ফুলে সমস্ত গ্রামাঞ্চল এক স্বপ্নের রাজ্যে পরিণত হতো। এসব পিপুল, শীষম ও সারিন গাছের নিচে ছায়ায় সারা-দিনের কঠোর পরিশ্রমের পর স্বামীরা অপো করতো কখন তাদের প্রিয়তমা স্ত্রী খাবার নিয়ে আসবে। ঐ-যে মাঠের ধারের আইল দিয়ে ওরা সারি বেঁধে আসছে। হাতের কলসীর মধ্যে লস্যি, আর মধু, গমের চাপাতি আর মাখন। তৃষ্ণাতুর চোখে কৃষকরা চেয়ে থাকতো কিষাণী বধুর দিকে, তাদের চাহনীতে বউদের বুক কেঁপে উঠতো। এটাই পাঞ্জাবের হৃদয়। এখানেই জন্ম নিয়েছিলো সোনি আর মাহিওয়াল, হীর ও রঞ্জা। আর এখন পঞ্চাশজন নেকড়ে পঞ্চাশজন সোনি আর পাঁচশো মাহিওয়াল। এ-পৃথিবী আর কখনও আগের মতো হবে না। চেনাব নদী আর কখনও ঝির ঝির করে বয়ে যাবে না। হীররাঞ্জা আর সোনি মাহিওয়ালের এবং মীর্জা সাহেবানদের গানের সুর কখনও হৃদয়ে ঠিক আগের মতো গুঞ্জন তুলবে না।
ল অভিশাপ নেমে আসুক এ-নেতাদের মাথায় আর তাদের সাত পুরুষের মাথায় যারা এ-সুন্দর মর্যাদাশীল ভূখণ্ডকে অসম্মান ও হত্যার মহোৎসবে এনে হাজির করেছে, যারা এদের শরীরে হত্যা, লুটতরাজ ও ধর্ষণের জীবাণুর বীজ ঢুকিয়েছে। পাঞ্জাব আজ মৃত। এর সংস্কৃতি মরে গেছে। এর ভাষার মৃত্যু হয়েছে। মৃত এর সঙ্গীত। আমার যদিও চোখ কান কিছুই নেই, তবুও আমি এ-মৃত্যু দৃশ্য দেখলাম, শুনতে পেলাম মৃত পথযাত্রী মানুষের কাতর ধ্বনি।
শরণার্থী ও সৈন্যরা পাঠান নারী-পুরুষের মৃতদেহ বহন করে স্টেশনে ফিরে এলো। আবার কয়েক মাইল যাওয়ার পর একটি খাল পাওয়া গেলো। এখানে আমাকে থামানো হল। এখানে লাশগুলোকে জড়ো করে ফেলে দেয়া হল এবং আমি তারপর এগিয়ে যাচ্ছি। রক্ত ও ঘৃণার স্বাদ তারা পেয়েছে এবং এখন দেশী মদের বোতল খুলে তারা আনন্দে ফূর্তি করতে মেতে উঠলো। আমি রক্ত, মদ আর ঘৃণার ধোঁয়া ছেড়ে এগিয়ে যাই।
আবার আমি লুধিয়ানায় থামলাম। এখানে লুটেরারা শহরে ঢুকে মুসলমান মহল্লা ও দোকানে আক্রমণ করলো। ঘন্টা দুয়েক বাদে দশ বিশ জন মুসলমান হত্যার পর তারা স্টেশনে ফিরে এলো। সমস্ত পথে ঘাটে তাদের লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। যতণ পর্যন্ত শরণার্থীরা ঘৃণাকে বিদায় না জানায় আমার এগিয়ে যাওয়া দুস্কর ছিলো। এতক্ষণে আমার বুকে অনেক তাপ জমেছে এবং আমার কাঠের শরীরে খুনীদের রক্তের দাগে এত ময়লা পড়ে যে, আমার গোসলের দরকার কিন্তু আমি জানি, পথের মধ্যে আমাকে এ-সুযোগ দেয়া হবে না।
অনেক রাতে আম্বালা পৌঁছলাম। এখানে একজন মুসলমান ডেপুটী কমিশনার, তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের সেনাবাহিনীর প্রহরায় আমার গাড়ির প্রথম শ্রেণীর একটি কামরায় তুলে দেয়া হলো। সৈন্যদেরকে এ-মুসলমান সরকারী কর্মকর্তার জীবন ও সম্পত্তির যেনো তি না হয় তজ্জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হলো। রাত দুটোয় আম্বালা ত্যাগ করি। মাইল দশেকও যাইনি, এমন সময় চেইন টানল। মুসলমান কর্মকর্তা যে-প্রথম শ্রেণীর গাড়িতে যাচ্ছিলেন, তার দরজা বন্ধ। কাজেই তারা জানালার কাঁচ ভেঙে ঐ মুসলমান ডেপুটী কমিশনার, তার স্ত্রী ও তিনটি শিশুকে হত্যা করলো। ডেপুটী কমিশনারের একটি অল্প বয়সী মেয়ে ছিলো। সে খুব সুন্দরী। তাই তারা ওকে খুন করেনি। ওরা মেয়েটিকে, গয়নাপত্র ও ক্যাশবাক্স নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলের দিকে চলে গেল। মেয়েটির হাতে একটি বই ছিলো।
জঙ্গলে গিয়ে ওরা শলাপরামর্শে বসলো। মেয়েটিকে কী করা হবে? ওকে হত্যা করবে, নাকি বাঁচিয়ে রাখবে। মেয়েটি বলল, "আমাকে খুন করার দরকার নেই। আমি তোমাদের ধর্মে দীক্ষা নেবো এবং তোমাদের একজনকে বিয়ে করবো"
"মেয়েটি তো ঠিক কথাই বলেছে," একজন তরুণ বলল, "আমার মনে হয় ওকে আমাদের ....।" আর একজন তরুণ তাকে বাধা দিয়ে মেয়েটির পেটে একটা ছোরা বসিয়ে বলল, "আমার মনে হয়, ওকে এখানেই খতম করা উচিত। এ সব বৈঠক করে লাভ নেই। চলো ট্রেইনে ফিরে যাই।"
মেয়েটি ওদের হাতে নিহত হলো। জঙ্গলের শুকনো ঘাসের উপর মেয়েটি ছটফট করতে-করতে মারা গেলো। আর ওর হাতের বইখানা তারই দেহের রক্তে রঞ্জিত হলো। বইটা ছিলো সমাজতন্ত্র বিষয়ক। হয়তো মেয়েটি ছিলো খুবই বুদ্ধিমতি, বড়ো হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতো। হয়তো সে কাউকে ভালবাসতো, তার ভালাবাসা পাওয়ার জন্য উন্মুখ ছিলো, উদগ্রীব ছিলো প্রেমিকের আলিঙ্গনের জন্য, নিজের সন্তানকে চুমো দেয়ার জন্য। সে তো ছিলো মেয়ে, কারো প্রিয়তমা অথবা জননী আর এখন সে এ-জঙ্গলে লাশ হয়ে পড়ে থাকলো। শকুনে শেয়ালে তার লাশ টেনে ছিড়ে খাবে। সমাজতন্ত্র ও তত্ত্ব বাস্তবায়ন জানোয়াররা সব ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছে। বিপ্লবের দরজা আর কেউ খুলছে না। কেউ কিছু বলছে না।
হতাশ রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমি এগিয়ে চলছি। দেশী মদ খেয়ে মাতাল কিছু লোকজন আমার গাড়িতে রয়েছে। ওরা স্লৌগান দিচ্ছে "মহাত্মা গান্ধীর জয়।"
বোম্বাই এসেছি অনেকদিন পর। এখানে ওরা আমাকে ধুয়ে পরিস্কার করে শেইডের মধ্যে রেখে দেয়। আমার শরীরে এখন আর রক্তের দাগ নেই। খুনীদের হৈহুলোড় আর স্লৌগান নেই। কিন্তু রাতে যখন একলা থাকি, মৃত আত্মারা যেনো ভূত হয়ে আবার জেগে উঠে। জোরে আহত শরণার্থীরা চীৎকার করে, নারী শিশুরা ভয়ে কঁকিয়ে উঠে। আর আমি সর্বদা কামনা করি, আমাকে যেনো এ-ভয়ানক যাত্রায় কেউ না নিয়ে যায়। এ-ভয়াবহ যাত্রার জন্য আমি এ-শেইড ছাড়তে রাজী নই। কিন্তু আমি ঠিকই সুন্দর যাত্রার জন্য প্রস্তুত, সে-যাত্রা হবে দীর্ঘ গ্রাম-গঞ্জের মধ্যদিয়ে, যখন পাঞ্জাবের মাঠ সোনালী ফসলে আবার ভরে উঠবে। তখন সরষে ফুলের তে দেখে মনে হবে হীর রাঞ্জার অমর প্রেমের গান গাইছে। তখন হিন্দু, মুসলমান শিখ সবাই একত্রে মাঠে চাষ করবে। বীজ বুনবে, ঘরে ফসল তুলবে এবং প্রেম ও পূজায় এবং নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তাদের হৃদয় ভালবাসা ও প্রেমে আবার পূর্ণতায় ভরে উঠবে।
আমি একটি সামান্য কাঠের তৈরি প্রাণহীন ট্রেইন। কেউ প্রতিশোধ ও ঘৃণার এমন জঘন্য ভারী বোঝা কেউ আমার পিঠে চাপিয়ে দিক, তা আমি চাই না। দুর্ভি পীড়িত অঞ্চলে আমাকে দিয়ে খাদ্য বহন করা হোক, গ্রামে চাষীদের জন্য আমাকে দিয়ে ট্রাক্টর আর সার বহন করে নিয়ে যাওয়া হোক। আমাকে যেখানে নিয়ে যাক না কেনো, মৃত্যু ও ধ্বংসের মাঝে যেনো না নেয়া হয়।
আমি চাই, আমার গাড়ির প্রতিটি বগিতে সুখী চাষী ও শ্রমিকের দল এবং তাদের স্ত্রীর কোলে থাকবে পদ্মফুলের মতো সুন্দর শিশু। ওরা মৃত্যুকে নয় বরং আগামী দিনের জীবনকে মাথানত করে কুর্ণিশ করবে। এ-শিশুরাই এক নতুন জীবন পদ্ধতি গড়ে তুলবে, যেখানে মানুষ হিন্দু ও মুসলমান হিসেবে পরিচিত হবে না, শুধু পরিচিত হবে একমাত্র মানুষ হিসেবে।

আমি যখন পেশোয়ার স্টেশন ছেড়েছি, তখন আনন্দে এক গুচ্ছ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছি। আমার ট্রেইনের বগিতে ছিলো অধিকাংশ হিন্দু শরণার্থীরা। তারা এসেছিলেন সীমান্ত প্রদেশের পেশোয়ার থেকে, মর্দান থেকে, কোহাট, চরসদ্দা, খাইবার, লান্ডিকোটাল, নওশেরা, মানশেরা প্রভৃতি স্থান থেকে। পাকিস্তানে জান-মালের নিরাপত্তা নেই, তাই ওরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। স্টেশনটি ছিলো অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং সেনাবাহিনীর অফিসাররাও ছিলো অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক। তবে, যতক্ষণ, আমি (যাদেরকে পাকিস্তানে মোহাজির আর ভারতে শরণার্থী বলা হয়) পঞ্চনদীর দেশের দিকে পাড়ি জমাইনি, ততক্ষণ তারা অস্বস্তিতেই ভুগছিল। অন্যান্য পাঁচজন পাঠানদের থেকে এইসব শরণার্থীদের পার্থক্য করা যাচ্ছিলো না। তাদের চেহারা বেশ লম্বা ও সুদর্শন, পরনে লুঙ্গি ও কুর্তা, হাত-পায়ের গড়ন বেশ শক্ত, অনেকের পরনে সেলোয়ার। তাদের ভাষা পশতু। অনেক সময় কর্কশ পাঞ্জাবী ভাষায়ও তারা কথা বলে। প্রত্যেক বগিতে দু'জন সৈন্য পাহারায় নিয়োজিত। হিন্দু-পাঠান ও তাদের বৌ-বাচ্চাদের দিকে স্মিত হাস্যে দাঁড়িয়েছিলো, হাতে আধুনিক রাইফেল। এরা ভয়ে আতঙ্কে পুরনো বসতবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। এখানে এরা হাজার বছর যাবত বসবাস করে আসছিলো। সেখা
নকার পাহাড়ী জমি তাদের শক্তি-সাহস যুগিয়েছে, তার তুষার-ঝর্ণা তাদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে এবং এ-ভূমির রোদ-ঝলমল বাগান থেকে তোলা মিষ্টি আঙুরের স্বাদে তাদের প্রাণ ভরে গিয়েছিলো। হঠাৎ একদিন এ-দেশ-গ্রাম তাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেলো, শরণার্থীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাড়ি জমালো এক নতুন দেশে। তাদের জান-মাল ও মেয়েদের ইজ্জত বাঁচিয়ে কোনো রকমে-যে চলে আসতে পেরেছে, সে জন্য ভগবানের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু দুঃখে ও রাগে তাদের হৃদয়ে যেনো রক্ত ঝরছিলো। তাদের সাত পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে আসতে বুকে যেনো 'গ্রানাইট' বিদ্ধ হচ্ছিলো আর অভিযোগ করছিলো, "মাগো; কেনো এভাবে নিজের সন্তানদের তাড়িয়ে দিচ্ছো? তোমার বুকে উষ্ণ আশ্রয় থেকে কেনো মেয়েদের বঞ্চিত করলে? এসব নিরপরাধ কুমারী মেয়েরা তোমার শরীরে আঙুর লতার মতো জড়িয়ে ছিলো এতোদিন। কেন হঠাৎ তাদের টেনে হেঁচড়ে ছিঁড়ে ফেললে, মাগো মা।"
উপত্যকার মাঝখান দিয়ে আমি দ্রুত ছুটছিলাম আর আমার গাড়িগুলোর মধ্য থেকে এ-ক্যারাভানের দল বিষন্ন চোখ মেলে দেখছিলো পেছনে ফেলে আসা মালভূমি, ছোটো বড়ো উপত্যকা আর ঝির ঝির করে বয়ে যাওয়া আকাঁবাঁকা ছোট নদী। চোখের পানিতে যেনো শেষবারের মতো সবাইকে বিদায় জানাচ্ছে। প্রতিটি আনাচে কানাচে যেনো ওদের চোখ আর বিদায় বেলায় যেনো সবকিছু বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। আমারও মনে হল, চাকাগুলো বোধ হয় ভারী হয়ে পড়েছে। দুঃখ-বেদনায় যেন আটকে যাচ্ছে ওরা, আর চলার শক্তি নেই, বোধ হয় এবার থেমে পড়বে।
হাসান আবদাল স্টেশনে আরো শরণার্থীরা এসে হাজির। এরা শিখ, পাঞ্জাব সাহেব থেকে এসেছে, সাথে লম্বা কৃপাণ, মুখে ভীতির চিহ্ন। ডাগর ডাগর চোখের শিশুগুলো পর্যন্ত যেনো অজানা ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে। ওরা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার বগিতে ঢুকে পড়ল। একজনের বাড়ি-ঘর সব হারিয়েছে, আরেকজনকে শুধু পরনের কাপড় নিয়ে, অপরজনের পায়ের জুতো পর্যন্ত নেই পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এক কোণায় বসে থাকা লোকটি ভাগ্যবান বলতে হয়, তিনি সবকিছু নিয়ে এসেছে সাথে, এমনকি ভাঙা কাঠের তক্তপোশ পর্যন্ত। যারা সবকিছু হারিয়েছে তারা নীরবে বসে আছে। আবার যে উদ্বাস্তু সারাজীবনে ইটের টুকরো পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি, তারা লাখ টাকা হারানোর গল্প শুনাচ্ছে আর নেড়েদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছে। ডিউটিরত বালুচ সৈন্যরা নীরবে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে।
আমাকে তক্ষশিলা স্টেশনে অনেকণ অপেক্ষা করতে হয়। স্টেশন মাস্টার জানালেন, "আশেপাশের গ্রাম থেকে একদল হিন্দু শরণার্থী আসছে। তাদের জন্য ট্রেনটি অপেক্ষা করছে।" এক ঘন্টা অতিক্রান্ত হল। আমার বগির লোকজন পালিয়ে আসার সময় সামান্য যা কিছু খাবার আনতে পেরেছিলো, পোটলা খুলে তাই খেতে শুরু করলো। বাচ্চারা হৈ চৈ করছে আর তরুণীরা জানালার বাইরে শান্ত গম্ভীর চোখে তাকিয়েছিল। হঠাৎ দূরে ঢোলের শব্দ শুনা গেল। যাত্রী হিন্দু শরণার্থীদের একটি দল ট্রেনের দিকে আসছে। শ্লোগান দিতে দিতে ওরা এগিয়ে আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দলটা স্টেশনের কাছে এসে গেলো। এক ঝাঁক গোলাগুলির শব্দ শুনা গেল, সাথে ঢোলের আওয়াজ। তরুণী মেয়েরা ভয়ে জানালার কাছ থেকে সরে এল। এ-দলটি ছিলো হিন্দু শরণার্থীদের দল - প্রতিবেশী মুসলমানদের আশ্রয়ে ছিলো। প্রতিটি মুসলমানের কাঁধের উপর ঝুলছে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা এক-একজন কাফেরের লাশ। এ-রকম দু'শো মৃতদেহ স্টেশনে এনে বালুচ সৈন্যদের হাতে সোপর্দ করা হলো। মুসলমান জনতার দাবী, এ-মৃত হিন্দুদের যথাযথ মর্যাদার সাথে ভারত পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। বালুচ সৈন্যরা লাশগুলো বুঝে নিয়ে প্রত্যেক বগির ভতিরে মাঝখানে কয়েকজন করে রেখে দিলো। এরপর মুসলমান জনতা আকাশের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করলো এবং স্টেশন মাস্টারকে ট্রেইন ছাড়ার নির্দেশ দিলো। আমি কেবলই চলতে শুরু করেছি, হঠাৎ একজন চেইন টেনে আমাকে থামিয়ে দিলো। এরপর মুসলমান জনতার দলনেতা বললেন, এ-দু'শোজন শরণার্থী চলে যাওয়ার তাদের গ্রাম শূণ্য হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ট্রেইন থেকে দু'শজন হিন্দু ও শিখ শরণার্থীকে নামিয়ে দিতে হবে। ওরা ওদের গ্রামে থাকবে। কারণ দু'শো জনের শূণ্যতা পূরণ করতে হবে। বালুচ সৈন্যরা দেশপ্রেমের জন্য তাদের প্রশংসা করলো এবং বিভিন্ন বগি থেকে দু'শোজন শরণার্থীকে বেছে নিয়ে জনতার হাতে সোপর্দ করলো।
"সব কাফেররা সরে দাঁড়াও" তাদের নেতা হুঙ্কার দিলো। এ-নেতা পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক প্রভাবশালী জমিদার। শরণার্থীরা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ওদের এক সারি লোক স্টেশনে দাঁড় করানো হলো। দু'শো লোক যেনো দু'শো জীবন্ত মৃতদেহ নগ্ন ভয়ে মুখগুলো সব নীল ... চোখের তারায় যেনো ঝরে পড়ছে রক্তলোলুপ তীর ...।
বালুচ সৈন্যরাই গুলি শুরু করলো। পনেরো জন শরণার্থী, গুলি খেয়ে মরে পড়ে গেলো। জায়গাটা ছিলো তক্ষশিলা স্টেশন। আরো কুড়িজন পড়ে গেলো।
এ-তক্ষশিলায় ছিলো এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে লক্ষ-লক্ষ ছাত্ররা মানুষের এ-সভ্যতার বিষয়ে তার প্রথম দীক্ষা নিয়েছিলো।
আরো পঞ্চাশজন মুখ থুবড়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পড়ে মরলো।
তক্ষশিলার জাদুঘরে সুন্দর সুন্দর মূর্তি ছিলো। অলঙ্কারের অতুলনীয় কারুকৃতি, দুর্লভ শিল্প ও ভাস্কর্যের নিদর্শন, আমাদের সভ্যতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উজ্জ্বল দীপ শিখার ন্যায়।
এবার আরও পঞ্চাশজন এ-পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলো। এর পটভূমিতে ছিলো সিরকপের রাজপ্রাসাদ, খেলাধুলার জন্য এক বিরাট থিয়েটার হল আর পেছনে কয়েক মাইল জুড়ে এক গৌরবোজ্জ্বল ও মহান নগরীর ধ্বংসাবশেষ। তক্তশীলার অতীতের গৌরবের স্মৃতি হয়ে অক্ষুন্ন আছে।
আরও তিরিশজন মারা গেলো। এখানে রাজত্ব করতো কণিষ্ক। ওঁর রাজত্বে প্রজাদের ছিলো শান্তি, সমৃদ্
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:২৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×