somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শফিক রেহমানের কলাম "রাজনীতিতে নতুন কালচার রোড মার্চ"

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শফিক রেহমান
রাজনীতিতে নতুন কালচার রোড মার্চ
জানুয়ারী ১২, ২০১২



বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত মার্চটি হয়েছিল চায়নাতে ১৬ অক্টোবর ১৯৩৪ থেকে ২২ অক্টোবর ১৯৬৫ পর্যন্ত। চায়নিজ সভিয়েট রিপাবলিকের ফার্স্ট ফ্রন্ট আর্মির এই মার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং ও চৌ এন লাই। এই আর্মি কোনো রেগুলার আর্মি ছিল না। এই আর্মির সৈন্যরা ছিল নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্ট কর্মী। তারা ছিল যুদ্ধে অনভিজ্ঞ। তাদের অস্ত্র ও সামরিক সাজসরঞ্জাম ছিল দুর্বল। কিন্তু তাদের মনোবল ছিল অজেয়। তাদের লক্ষ্য কোনো সুনির্দিষ্ট শহর বা স্থান ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাদের পিছু ধাওয়াকারী চিয়াং কাই শেক-এর নেতৃত্বে কুওমিনটাং আর্মির কাছ থেকে আত্মরক্ষা করা এবং টিকে থাকা। কুওমিনটাং আর্মি ছিল যুদ্ধে অভিজ্ঞ, সুসংগঠিত ও উন্নততর অস্ত্রে সুসজ্জিত।
৩৭০ দিনের বেশি সময় জুড়ে কমিউনিস্টরা পাড়ি দিয়েছিল প্রায় ১২,৫০০ কিলোমিটার বা ৮,০০০ মাইল। তাই এই মার্চটি লং মার্চ নামে খ্যাত হয়। রেড আর্মি বা লাল বাহিনীর এই মার্চের শুরুতে ছিল ৮৬,০০০ সৈন্য এবং শেষে ছিল ৭,০০০ সৈন্য। রেড আর্মি চক্রাকারে প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিল দেশের পশ্চিম অঞ্চলে। তারপর উত্তরে এবং তারপর পূর্বে। দুর্গম এলাকায় একের পর এক যুদ্ধের শেষে রেড আর্মির এক-দশমাংশেরও কম সৈন্য বেচে ছিল। কিন্তু এই লং মার্চের সমাপ্তি থেকেই সূচিত হয় মাও সে তুং তথা কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আরোহণ।

বাংলাদেশে প্রথম লং মার্চ
বাংলাদেশে সবচেয়ে বিখ্যাত লং মার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। ১৬ মে ১৯৭৬-এ এই লং মার্চ শুরু হয় রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে এবং শেষ হয় ১৭ মেতে রাজশাহীর কানসাট সীমান্তে। এই লং মার্চে কোনো সামরিক ব্যক্তি নয়, এতে অংশ নিয়েছিল দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষ। তাদের গন্তব্যস্থল ছিল শুকিয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর চরাঞ্চল। তাদের লক্ষ্য ছিল দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়া ফারাক্কায় বাধ নির্মাণের সময়ে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইনডিয়া কীভাবে বাংলাদেশকে মরুদেশে রূপান্তরের সূচনা করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে মার্চের সেই ছিল শুরু।

নতুন কর্মসূচি রোড মার্চ
তার প্রায় ছত্রিশ বছর পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে যুক্ত হয়েছে একটি নতুন উপাদান। সেটি হলো রোড মার্চ। পল্টন, লালদীঘির ময়দান প্রভৃতি মাঠে জনসমাবেশ, রাজপথে মিছিল, বিক্ষোভ, স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সভা, ঘেরাও, অবরোধ, হরতালের আগের রাতে এবং হরতালের দিনে কিছু বাস ও গাড়িতে আগুন লাগানো এবং তারপর হরতাল, আরো হরতাল– এই একঘেয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন হচ্ছিল বিঘ্রিত। অথচ সরকারের ক্ষমতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর আর কোনো কার্যকর পন্থা মানুষ খুঁজে পাচ্ছিল না। ঠিক সেই সময়ে গত অক্টোবরে খালেদা জিয়া আবিষ্কার করেন একটি নতুন অহিংস ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর বিকল্প কর্মসূচি: রোড মার্চ।
তিনি প্রথমে ১০ ও ১১ অক্টোবরে সিলেটে, ১৮ ও ১৯ অক্টোবরে চাপাইনবাবগঞ্জে এবং ২৫ ও ২৬ নভেম্বর ২০১১-তে খুলনা-যশোরে রোড মার্চ করেন। প্রতিটি রোড মার্চেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অংশ নেয় শত শত মোটর কার, জিপ, মাইক্রোবাস ও বাস এবং এদের সঙ্গে পদযুগলে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ। এরপর এই তিনটি রোড মার্চের সময়ে অনির্ধারিত পথসভায় এবং রোড মার্চের শেষে নির্ধারিত জনসভায় বিপুল জনসমাগম রোড মার্চের সাফল্যকে করে বিশাল এবং রাজনৈতিক কালচারে রোড মার্চের অবস্থানকে করে স্থায়ী।
সিলেটে রোড মার্চ শুরু করার প্রাক্কালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও সম্ভবত ধারণা করতে পারেননি এই বিকল্প কর্মসূচি এত সফল হবে। এটা সম্ভব হয় :
এক. বাংলাদেশে ভালো রোড নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবার ফলে, যাতে গন্তব্যস্থলে দিনে দিনেই পৌঁছানো যায়।
দুই. প্রাইভেট কারের মালিকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এবং
তিন. সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রচার ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে।
তাই সিলেটের পর চাপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনার রোড মার্চের সাফল্য উত্তরোত্তর আরো বেশি হয়। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় কিন্তু রাজনৈতিকমনা মানুষ খুশি হয় তাদের রাজনৈতিক মতামত শান্তিপূর্ণভাবে জানানোর বিকল্প পথটি পেয়ে। এর পর যখন ঘোষিত হয় চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ হবে ৮ ও ৯ জানুয়ারি ২০১২-তে তখন থেকেই আলোচিত হতে থাকে চট্টগ্রামের জনসমাবেশে কত মানুষ হবে? সরকার এবং আওয়ামী লীগ কি বাধা দেবে যেন এই রোড মার্চ না হয়?
বিএনপি তখন কী করবে?
সরকার ও আওয়ামী লীগ যেন কোনো সহিংস প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রমুখী না হয় সে জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আগাম সতর্কবাণী উচ্চারিত হতে থাকে। কোনো পক্ষই বলতে পারছিল না চট্টগ্রাম রোড মার্চ শেষ অবধি শান্তিময় থাকবে কি না। অনেকের মনে পড়ছিল ১৯৮৮-তে চট্টগ্রামে লালদীঘির ময়দানে বিরোধীদের সমাবেশে গুলিবর্ষণে বহু ব্যক্তির হতাহত হওয়ার ঘটনাটি। সরকার ও আওয়ামী লীগের বিবেচ্য ছিল যে, এখন ২০১১-তে চট্টগ্রামে যদি বিরোধীদের জনসমাবেশ আরো বিশাল ও সফল হয় তাহলে দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়ে যাবে তাদের জনসমর্থন কত কমে গিয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদের একটি অবিবেচক, অদূরদর্শী ও অর্বাচীন অংশ যখন ১৮ ডিসেম্বরে ঢাকায় মৃদু সহিংস বিক্ষোভ সৃষ্টি করে, তখন তারা সরকারের হাতে তুলে দেয় চট্টগ্রাম রোড মার্চে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অন্তত একটি অজুহাত।
বিএনপির ভাগ্য ভালো ছিল।
জানুয়ারি ২০১২-তে কুমিল্লা সিটি কর্পরেশনের মেয়র নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কুর কাছে আফজল খানের শোচনীয় পরাজয়ে আওয়ামী লীগ হয়ে যায় হতভম্ব ও হতোদ্যম। এর মাত্র তিন দিন পরেই কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামগামী রোড মার্চে বাধা সৃষ্টি করার মানসিক শক্তি তাদের আর ছিল না। কুমিল্লার মেয়র নির্বাচন ফলাফল নিশ্চিত করে দেয় বিএনপির চট্টগ্রাম রোড মার্চের সাফল্যকে।

মানুষ মাটি ফুড়ে বের হবে
বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঝাপিয়ে পড়েন সাংগঠনিক কাজে।
পথমঞ্চ তৈরি, ব্যানার তৈরি, তোরণ তৈরি ও পোস্টার ছাপানো ও লাগানোর কাজে।
এই সময়ে আমি প্রশ্ন করেছিলাম বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিনকে, চট্টগ্রামে কত মানুষের সমাবেশ হবে?
মীর নাছিরউদ্দিন তাৎক্ষণিক উত্তর দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামে মানুষ মাটি ফুড়ে বের হবে।
তার ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়।
চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় সোমবার ৯ জানুয়ারি ২০১২-তে পোলো গ্রাউন্ডে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনতে এবং তার পরবর্তী কর্মসূচি জানতে।

রবিবার সকাল দশটা বিশে গুলশানে তার বাড়ি থেকে খালেদা জিয়া একটি শাদা নিসান পেট্রল কারে চড়ে রোড মার্চ শুরু করেন। এই কারে পেছনে তার সহযাত্রী ছিলেন সেলিমা রহমান। সামনে ছিলেন শিমূল বিশ্বাস, ডিউ ও ড্রাইভার। আর এই কারেই ছিল বিএনপিলাইভডটকম (bnplive.com) ওয়েবসাইটের চারটি ক্যামেরা। এই ক্যামেরাগুলো বহির্বিশ্বের প্রায় সাতাশ হাজার বাংলাদেশীকে সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছিল রোড মার্চ কেমন চলছে। সরকারি প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের ভেতরে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কারো সেটা দেখা সম্ভব হয়নি। তবুও রাজনৈতিক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান গ্রুপ ২০০৯ বা জি-নাইনের সদস্য ফয়সল আলীম যিনি এই ওয়েবসাইটের স্রষ্টা ও পরিচালক তিনি সন্তুষ্ট। কারণ, এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনন্ত শূন্যে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এই ঐতিহাসিক রোড মার্চের খুঁটিনাটি সব বিবরণ।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের মোটর কার কনভয়ের সামনে ছিল পুলিশের পাইলট কার এবং সবশেষে ছিল অ্যামবুলেন্স ও পুলিশবাহী একটি মিনিট্রাক। মাঝখানে ছিল চেয়ারপার্সনের একটি স্পেয়ার কার এবং চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্সের নয়টি কার, জিপ ও মাইক্রোবাস।

গুলশান, তেজগাঁও, মগবাজার, কাকরাইল হয়ে বেলা পৌনে এগারোটায় চেয়ারপার্সনের কনভয় পেরিয়ে যায় নয়া পল্টনে বিএনপির হেড কোয়ার্টার্স। তার আগেই শান্তিনগর-বিজয়নগরের মোড় থেকে ঝুলছিল এই রোড মার্চের সাফল্য কামনা করে বিএনপির ছোট, মাঝারি ও বড় নেতাদের ছবিসহ বড় বড় ডিজিটাল ব্যানার। এসব ব্যানারে খালেদা জিয়ার ছবির সঙ্গে ছিল জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের ছবি। এসব ব্যানার ছিল প্রায় সোয়া দুই শ’ কিলোমিটারজুড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের দুই পাশে স্থাপিত কয়েক হাজার ব্যানারের পূর্বস্যামপল মাত্র।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেউবা আগের রাতেই চট্টগ্রাম অভিমুখে চলে গিয়েছিলেন। কেউবা সেদিন সকালে আগেভাগে চলে গিয়েছিলেন। তাই খালেদা জিয়ার কনভয়ে মাত্র দশ-বারোটি গাড়ি থাকলেও প্রায়ই এই কনভয়ে ঢুকে পড়ছিল বিভিন্ন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়ি এবং টিভি মিডিয়ার কিছু মাইক্রো। তাই অ্যাডভান্স পাইলট পুলিশ কার সত্ত্বেও খালেদার কনভয়ের গতি প্রায়ই হচ্ছিল রুদ্ধ এবং ধীর।
যাত্রাবাড়ি পেরিয়ে নারায়ণগঞ্জের কাছাকাছি জায়গায় আরেকটি কারণে কনভয়ের গতি হয় ধীর। পথের দুই পাশে ছিল শত শত মানুষ।

তাদের হাতে ছিল লাল গোলাপের ডালা ও হলুদ গাদাফুলের মালা।
এদের অনেকেই খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং স্থানীয় নেতাদের ছবিসহ পোস্টার হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। তারা অনবরত স্লোগান দিচ্ছিল,

খালেদা, জিয়া জিয়া, খালেদা।
গাড়ির ওপর গোলাপ ছিটিয়ে দিয়ে বলছিল,
লাল গোলাপ শুভেচ্ছা
খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া।
মালা ছিড়ে হলুদ গাদা ফুল ছিটিয়ে বলছিল,
খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো
আমরা আছি তোমার সাথে।

ব্যানার-পোস্টারের আধিক্য যাদের ছিল
খালেদা জিয়া এগিয়ে চলছিলেন।
তার আগে ও পেছনে রোড মার্চে অংশগ্রহণকারী গাড়ির সংখ্যা ছিল সম্ভবত আট থেকে দশ হাজারের মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জ এলাকায় তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যানার ও পোস্টারের আধিক্য ছিল। অন্যান্য স্থানীয় নেতারও পোস্টার ছিল। জি-নাইনের সদস্য তরুণ ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদের পোস্টার এদের অন্যতম ছিল।
মুন্সীগঞ্জ এলাকায় একমি গ্রুপের কর্ণধার মিজানুর রহমান সিনহার ব্যানার-পোস্টারের প্রাধান্য ছিল। এখানে আরো ছিল জেলা বিএনপির সেক্রেটারি আবদুল হাইয়ের ব্যানার-পোস্টার। বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা শামসুল ইসলামের বিজ্ঞাপন ছিল কম।

একটি টোল গেইটে বিএনপি নেত্রীর গাড়ি পাস করার সময়ে জনৈক পুলিশ অফিসারকে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করতে। তিনি একটি ছোট নোট বইয়ে খালেদা জিয়ার এবং কনভয়ের অন্যান্য গাড়ির নাম্বার টুকে রাখার চেষ্টা করছিলেন। টোল গেইটে আগে থেকেই ফিস দেয়া ছিল। তাই বিনা বিলম্বে কনভয় টোল গেইট পেরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে ওই পুলিশ অফিসারের পক্ষে সম্ভব হয়নি গাড়ির নাম্বারগুলো টুকে রাখার। ইতিমধ্যেই তিনি যদি ওএসডি না হয়ে থাকেন অথবা তেতুলিয়ায় ট্রান্সফার না হয়ে থাকেন, তাহলে তার সাহায্যার্থে আমি বিএনপি নেত্রীর নাম্বারটা (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-২৬১২) দিয়ে দিচ্ছি। যদিও এই নাম্বার বহু আগেই নিশ্চয়ই ডিএফআই, এনএসআই, আইবি প্রভৃতি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছেই আছে। কিন্তু কনভয়ের অন্য গাড়ির নাম্বারগুলো দিলাম না। সরি, মিস্টার অজ্ঞাতনামা পুলিশ অফিসার।

দাউদকান্দি এলাকায় বিএনপির প্রবীণ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং তার ছেলে নতুন নেতা খন্দকার মারুফ হোসেনের ব্যানার-পোস্টার ছিল বেশি।

এরপরে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট রেদোয়ান আহমেদের পোস্টার ছিল অনেক। এক স্থানে খালেদার কনভয় থামতে বাধ্য হয় এবং রেদোয়ান আহমেদের পথসভায় খালেদা সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।

তারপর চান্দিনায় কনভয় কিছুক্ষণের জন্য থামে। এখানে পথের পাশে একটি মাঠে লাল সবুজ শাদা কাপড়ে ঘেরা ছোট মঞ্চে খালেদা জিয়া একটি ছোট ভাষণ দেন।

দেবীদ্বার এলাকায় ছিল ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল আহসান মুনশী ও তার স্ত্রীর ছবি। যদি কোনো কারণে স্বামী নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন সম্ভবত তাই আগাম স্ত্রী পরিচিতির ব্যবস্থা হয়েছিল। বাংলাদেশে স্বামীর অকালমৃত্যুর পর রাজনীতিতে স্ত্রীর (খালেদা, ইলেন ভুট্টো প্রমুখ) প্রবেশের কালচার ছিল। এখন দুর্নীতির অভিযোগ বিড়ম্বনায় রাজনীতি থেকে স্বামীর সাময়িক বিদায়ে স্ত্রীর আগমনের কালচার শুরু হয়েছে।
এরপর বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা এম কে আনোয়ারের কয়েকটি ব্যানার-পোস্টার দেখা গেল। কচুয়া এলাকায় বিএনপির তরুণ নির্যাতিত নেতা এহছানুল হকের ব্যানার-পোস্টারও দেখা গেল। মুরাদনগরে দেখা গেল জনপ্রিয় নেতা কায়কোবাদের ব্যানার-পোস্টার।

কুমিল্লার দক্ষিণে দেখা গেল হাজী ইয়াসিন, রাবেয়া চৌধুরী এবং সদ্য নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যানার-পোস্টার। তারপরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণে জাকারিয়া তাহের সুমন, চৌদ্দগ্রামে জি-নাইনের আরেক সদস্য ড. নয়ন বাঙালি, লাকসামে আনোয়ারুল আজিম, লাঙ্গলকোটে গফুর ভূইয়ার ব্যানার-পোস্টারের ছড়াছড়ি ছিল।

তিনটি সহিংসতার সংবাদ
কুমিল্লায় পৌছানোর আগে মোবাইল ফোনে তিনটি সহিংস সংবাদের খবর পৌঁছায় কনভয়ে। এক. ঢাকায় কাকরাইলে বাসের চাপায় মোটারসাইকেল আরোহী সাংবাদিক দীনেশ দাস নিহত হওয়ার পর বেলা দেড়টায় প্রেস ক্লাবের আশপাশে ভাঙচুর হয়েছে। দুই. কুমিল্লায় নবনির্বাচিত মেয়র সাক্কুর সমর্থক বনাম প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকদের মধ্যে বেলা একটায় মারামারি হয়েছে এবং এতে সাক্কুর সমর্থকরা জয়ী হয়েছে। তিন. বেলা বারোটায় ফেনীতে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং তারপরে সেখানে কর্তৃত্ব করছে ছাত্রদল।

কুমিল্লায় খালেদার কনভয় থামে।
এখানে পাদুয়াবাজারে বিশাল জনসমাবেশ হয়।
হবারই কথা।
মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়ের পর এটি ছিল আরেকটি বিলম্বিত বিজয় উৎসব।
এখানে খালেদার একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর কনভয় রিস্টার্ট দেয়।

খালেদার কনভয়ে আমিও ছিলাম বিএনপির নবাগত নেতা রিটায়ার্ড মেজর ড. রেজাউল হকের প্রাডোতে। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকা থেকে নির্বাচন অভিলাষী। তাই নিয়মিত যান ঢাকা থেকে তার নির্বাচনী এলাকায়। রোড মার্চের দিনে ওই তিনটি সহিংসতার খবর শুনে আমরা কিছুটা চিন্তিত হলাম।
রোড মার্চের এত বিশাল আয়োজন ও ব্যাপক সাফল্যকে ছাপিয়ে ওই তিনটি সংবাদই কি টিভি নিউজ ও টক শোতে এবং পরদিন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রাধান্য পাবে?

মনের মাধুরী মিশিয়ে বিলবোর্ড-ব্যানার-পোস্টার
তখন বেলা সাড়ে চারটা।
সকাল থেকে যাত্রাপথ ছিল পৌষের মিষ্টি রোদে আলোকিত।
পথের দু’পাশে বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার ও পোস্টারে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছবিকে সেই আলো করেছিল আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয়।

খালেদার পূর্ব প্রকাশিত ছবিগুলোকে ভিত্তি করে আর্টিস্টরা তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে সুন্দর সব ডিজিটাল ছবি তৈরি করেছেন। খালেদা যদি দেখতে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির মতো হতেন তাহলে হয়তো আর্টিস্টরা এত অনুপ্রাণিত না-ও হতে পারতেন।

খালেদার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ছবির পোজগুলো ছিল সীমিত ধরনের। কারণ, জিয়াউর রহমানের সময়ে ব্যানার-পোস্টার কালচার তেমন একটা ছিল না।

খালেদা-জিয়া-তারেকের রঙিন ছবি সংবলিত বিলবোর্ড-ব্যানার-পোস্টারে ছিল বিএনপি নেতাদের ছবি। প্লাস কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওই সব নেতার বিজনেস পেট্রনদের ছবি। এসব রঙিন ছবি রোড মার্চকে দিয়েছিল রঙ এবং করেছিল প্রাণবন্ত।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল শাদা-লাল-সবুজ কাপড়ে মোড়া বহু সিংগল তোরণ যার খরচ ছিল প্রায় পনের হাজার টাকা এবং কিছু ডাবল তোরণ যার খরচ ছিল প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা। পথের পাশে ছোট মঞ্চগুলোর ও মাইক্রোফোন ইত্যাদির খরচ ছিল আধা লক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকার মধ্যে। এসবের প্রস্তুতির সময় লেগেছিল তিন থেকে এক দিন।

গণতন্ত্রকামী মানুষের আলোর দ্বীপ
কুমিল্লা থেকে ফেনী যাবার পথে সন্ধ্যা নেমে আসে।
শুরু হয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি।
তবু পথের দুই পাশে দেখা যায় কোথাও পাঁচ, কোথাও পনের, কোথাও পঞ্চাশ, কোথাও শতাধিক মানুষ দাড়িয়ে। তাদের হাতে তখনো ছিল কিছু পোস্টার ধরা। কারো গলায় ছিল মাফলার।
অন্ধকার তাদের গ্রাস করেছিল।
তাদের পেছনে কিছু বিলবোর্ডে নিয়ন লাইট ছিল।
কিছু বিলবোর্ডে লাইট ছিল না।
আরো পেছনে কিছু স্থানে ছিল খালেদা-প্রত্যাশী ছোট ছোট মঞ্চ। বক্তা ও অতিথিহীন মঞ্চের চারপাশে ছিল নিয়ন লাইট।
গ্রামবাংলার অন্ধকার সমুদ্রে আলোকিত বিলবোর্ড-ব্যানার-মঞ্চগুলো ছিল গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষের ছোট ছোট কয়েকটি আলোর দ্বীপ।
তারা যেন হাতছানি দিয়ে বলছিল খালেদার কনভয়কে,
ম্যাডাম, ও ম্যাডাম, একটুখানি থেমে যাও না আমার এখানে।
একটু কিছু আশার কথা শুনিয়ে যাও না তুমি।

কোনো প্রাপ্তি ছিল না
কিন্তু ম্যাডামের কার কনভয় হুশহুশ করে এগিয়ে যাচ্ছিল ফেনীর দিকে।
যারা তাকে দেখতে এসেছিল এক পলক, তারা হতাশ হচ্ছিল।
এত দিনের প্রস্তুতির পর, আশার পর, তাদের প্রাপ্তি তেমন কিছুই ছিল না।
গাড়িতে কালো কাচের মধ্য থেকে খালেদা দেখছিলেন অপেক্ষমাণ মানুষকে।
কিন্তু মানুষ তাকে দেখতে পাচ্ছিল না।
পলিটিকাল নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, তাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই।
কিন্তু আসলে সেটা মোটেই সত্যি নয়।

পৌষালি শীতে বৃষ্টি মেশানো সন্ধ্যায় পথের দুই পাশে দাড়ানো এই সাধারণ মানুষগুলো জানতো না খালেদা কখন ওই স্থান দিয়ে পাস করবেন। ফুল, মালা আর পোস্টার নিয়ে তারা বেশ আগে থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে ছিল।
তারা স্লোগান দিতে পেরেছিল ঠিকই।
কিন্তু সেই সমর্থন ঘোষণার বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তি ছিল এক সেকেন্ডের এক ভগ্নাংশ সময়ে খালেদাকে নয়, খালেদার নিসান পেট্রলকে দেখা!
বস্তুত এটাই ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী, ধৈর্যশীল ও শান্তিপ্রিয়, সহিষ্ণু ও সংযমী মানুষের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত এবং সত্য প্রতীক।
কুমিল্লা ও ফেনীর রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল এর তুলনায় অতি নগণ্য দুটি ঘটনা যা বাংলাদেশের রাজনীতির মূলস্রোতের প্রতীক নয়।
অথচ দেখা যায় মূলস্রোতকে ছোট করার জন্য মিডিয়াতে এসব ঘটনাকে প্রায়ই প্রাধান্য দেয়া হয়। এটা সঠিক সাংবাদিকতা নয়। এটা সৎ সাংবাদিকতা নয়।
যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তাদের বিবেচনায় আনতে হবে ঢাকা-চট্টগ্রামের রোড মার্চে পথের দুই পাশে সারি বেধে অপেক্ষমাণ এই সাধারণ মানুষকে।
এদের চাওয়া খুব কম।
এদের পাওয়াও খুব কম।

ফেনীতে ছিল আবদুল আওয়াল মিন্টুর ব্যানার-পোস্টারের প্রাধান্য।
ফেনীতে সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাইস্কুল ময়দানে খালেদা তার ভাষণ দেন।
তখন বৃষ্টি ধরে এসেছিল।
ঢাকা থেকে খবর আসছিল সেখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রামে কী হবে?
না। চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়নি।
বিএনপির ভাগ্য এখানেও ভালো ছিল।
কিন্তু মানুষের ও গাড়ির ভিড়ে সীতাকুন্ড, কুমিরা, বার আউলিয়া, ভাটিয়ারি, ফৌজদার হাট, সিটিগেইট, একে, খান (অলঙ্কার মোড়) পৌছাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এসব স্থানে জনারণ্যের সৃষ্টি হয়েছিল।
এসব এলাকায় আলোকিত মঞ্চগুলো থেকে ভেসে আসছিল মাইক্রোফোনে কিশোরীকণ্ঠে গানের কলি :
প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ।
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ।
সেই গায়িকাদের সামনে ছিল না কোনো শ্রোতা। শ্রোতারা ছিলেন কনভয়ে অথবা অন্য গাড়িতে।
কিন্তু তাতে কী?
কিশোরী গায়িকারা পূর্ণ উদ্যমে গেয়ে চলেছিল বিএনপির দলীয় সঙ্গীত।
এসব মঞ্চে আরো গাওয়া হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কিছু ব্যঙ্গাত্মক বা প্যারোডি গান।
চট্টগ্রাম সিটি গেইটের আগে থেকেই শহরকে সাজানো হয়েছিল। এই সজ্জার একটি মূল উপাদান ছিল গাছে ও লাইটপোস্টে মালা করে ঝুলিয়ে দেয়া হাজার হাজার মরিচবাতি।
মেয়র মনজুর এসব মরিচবাতিতে বিদ্যুতের জন্য আগেই প্রাইভেটলি চার্জ মিটিয়ে দিয়েছিলেন।

অভূতপূর্ব সজ্জা যার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব
কোনো মরিচবাতি মালার রং ছিল লাল।
কোনোটার হলুদ।
কোনোটার সবুজ।
কোনোটার ফিরোজা।
কোনোটার নীল।
বিলবোর্ড ও ব্যানারে অতিরিক্ত নিয়ন লাইট সংযোজনের ফলে রাত এগারোটার সময়ে চট্টগ্রাম শহর ছিল আলো ঝলমল।
রঙিন মরিচবাতি আর শাদা নিয়ন আলোয় ভরা চট্টগ্রাম প্রস্তুত হয়ে ছিল রোড মার্চে যোগদানকারীদের বরণ করে নিতে।
স্লোগান ও গান, ফুল ও মালার সাথে তখন যুক্ত হয় বিরিয়ানির প্যাকেট ও মিনারাল ওয়াটার ফল। গাড়ির জানালা খুলে রাখতে বাধ্য হন চালকরা। গাড়ির ভেতরে এসে পড়তে থাকে এসব প্যাকেট ও বটল।
সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের দ্রুত মেসেজ।
অমুকের সৌজন্যে।
তমুকের সৌজন্যে।
সবাই বলাবলি করছিল এ যেন আরেকটি ঈদ উৎসব।

ধীরে ধীরে গাড়ির বহর চলতে থাকে সার্কিট হাউজের দিকে। দেখা যায় ওই পথের দুই দিকই ঢেকে গিয়েছে খালেদাকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছাবাণী সংবলিত নতুন বিলবোর্ড আর ব্যানারে। এসব বিলবোর্ড-ব্যানারে চট্টগ্রামের বিভিন্ন নেতার ছবি ছিল। যেমন, মেয়র মনজুর আলম, এম মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছিরউদ্দিন এবং চট্টগ্রাম রোড মার্চের প্রধান সংগঠক ও সমন্বয়কারী আমীর খসরু মাহমুদের ছবি। এদের মধ্যে আমীর খসরুর ছবির সংখ্যা ছিল সবচেয়ে কম। আত্মপ্রচারে তার এই সংযম আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
রঙিন, আলোকিত ও আনন্দিত চট্টগ্রামের এই চেহারা ভবিষ্যতে আর দেখা যাবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।

কারণ কোনো নির্বাচন যদি হয়, তাহলে তখন থাকবে প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের প্রার্থীদের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজ্ঞাপন। তাদের সংখ্যা, রঙ ও সাইজ থাকবে নির্বাচন কমিশন দ্বারা সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত।
আশা করা যায় ফয়সল আলীমের বিএনপিলাইভডটকমের ক্যামেরা চতুষ্টয় ৮ জানুয়ারি ২০১২-র রাতের রূপসী চট্টগ্রামের পূর্ণ ছবি তুলে রাখতে পেরেছে।

পট পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষ
রাত এগারোটার কিছু পরে খালেদা জিয়ার কনভয় পৌঁছায় সার্কিট হাউজে।
সেখানে এবং স্টেডিয়ামের চার পাশে শত শত মানুষের ভিড় ছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের দুই পাশে দাড়ানো সেই সব সাধারণ মানুষের এক্সটেনশন ছিল শহরের এসব মুখর মানুষ।
এরাই ঘটাবে বাংলাদেশের রাজনীতির পট পরিবর্তন।
অস্ট্রেলিয়ান পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট ডন এইটকিন সাধারণ মানুষ সম্পর্কে বলেছিলেন,
Whatever politicians, activists and manipulators propose, it is the phlegmatic, indifferent, ingrained electorate which disposes.
অর্থাৎ, পলিটিশিয়ান, কর্মী ও চক্রান্তকারীরা যা-ই ভাবুক না কেন, এই স্বভাবত উদাসীন, নিস্পৃহ, অন্তর্নিবদ্ধ ভোটাররাই সেসব নাকচ করে দেয়।

বাংলাদেশের পলিটিশিয়ান ও পলিটিক্যাল অ্যাকটিভিস্টদের (তিনি যে দলেরই হোন না কেন) মনে রাখা উচিত হবে ডন এইটকিনের এই বাক্যটি।

এই দেশে বারবার সরকার বদলেছে। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন আশা পূরণ হয়নি।
এই দেশ এগিয়েছে। কিন্তু যতটা এগোনো উচিত ও সম্ভব ছিল, তা হয়নি।
বিশেষত গত তিন বছরে মানুষের আশাভঙ্গ হয়েছে বেশি।
কারণ গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী অভিযানে ও ম্যানিফেস্টোতে আশা দিয়েছিল বেশি।
বাংলাদেশের আশাহত মানুষের কাছে নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি, রোড মার্চ, নিয়ে এসেছে নতুন আশার হাতছানি।

সেই হাতছানিতে সাড়া দিয়েছে সাধারণ মানুষ।
এখন তারা অপেক্ষা করছে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য।

১২ জানুয়ারি ২০১২
(বানান রীতি লেখকের নিজস্ব)
শফিক রেহমান: প্রবীণ সাংবাদিক ও জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×