somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রক ক্যাডেট : গারদখানার আমলনামা-৪ (ক্যাডেট কলেজের জীবন নিয়ে মজা করে লেখা একটি প্রামাণ্য উপন্যাস)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রক ক্যাডেট : গারদখানার আমলনামা এর- চার নম্বর এপিসোড এটি। এর প্রথম তিনটি এপিসোডের লিঙক নিচে দেয়া আছে।

রক ক্যাডেট : গারদখানার আমলনামা- চতুর্থ এপিসোড
মোবাইল তখনো একটি ব্যয়বহুল যোগাযোগ যন্ত্র। স্যার-ম্যাডামরা হাতে নিয়ে ঘুরতে শুরু করেছে কেবল। ছেলেদের হাতে তখনো এতোটা সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। কলেজের হাতেগোণা মাত্র কয়েকজন ছেলের কাছেই আছে এই কথন ও শ্রবণ ডিভাইসটি। তাও রাখতে হয়েছে অনেক লুকিয়ে চুকিয়ে- ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় । যন্ত্রটার নাম তখনো মোবাইল থেকে মুঠোফোন হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রথম সারির কবি নির্মলেন্দু গুণের হাতে তখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি এই তারহীন যোগাযোগ যন্ত্র। এই ডিভাইসটাকে মুঠোবন্দী করার পরেই তো কবি সাহেব অনেক ভেবে চিন্তে বাংলা অভিধানে মুঠোফোন নামে নতুন একটি শব্দ যোগ করে দিলেন।

বয়সের ভারে হেলে যাওয়া দেশের বড় বড় কবিদের অনেক আগেই ক্যাডেট কলেজের কতিপয় দুষ্ট কবির দখলে চলে আসে এই যন্ত্রটি। রাতভর মুঠোফোনের বোতাম চেপে চেপে দু-লাইনের ছন্দসুখ লিখতে বেশ পটুও হয়ে যায় ওরা অল্পদিনে। মনহরাণো কাব্য লিখে- কিছু খুদেবার্তা বানিয়ে, সেগুলো পাঠিয়ে দেয় তারা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অর্ধপ্রেমিকাদের নির্ঘুম মুঠোফোনে। আর গভীর রাতে সুযোগ পেলেই নতুন কোন আফ্রোদিতি শিকারে ঘন্টাখানেক সময় জমিয়ে দেয় তারা দলবেঁধে। একটা মুঠোফোন হলেই আট-দশজন বন্ধু অনায়াসে জমে যায় প্রেম কিংবা অপ্রেমের বিলাস কথনে।

রিজভীর কোন নতুন প্রেম নেই, নতুন প্রেমিকাও নেই। পুরাতন প্রেমিকাদের সংখ্যা নিয়েই অনেক খুশি সে। চিঠির ভাব লেনদেনের তেমন ঝামেলাও নেই ওর। খায়েস হলে বড়ভাইদের কাছ থেকে সারা রাতের জন্য একটা মুঠোফোন চেয়ে নিয়ে আসে। তারপর দু’তিনজন অর্ধপ্রেমিকার সাথে ঘন্টাখানেক আধা-প্রেমের প্যাচাল পাড়ে। রিজভীর বিলাস কথন শেষ হলে বাকি রাতের জন্য মুঠোফোনটা শরীফ দখল করে। তারপর তুলির নাম্বারে ডায়াল করে শরীফ। নম্বর খোলা পাওয়া গেলে কয়েক মিনিটের ছোট্ট একটা আলাপচারিতাও সেরে ফেলে সে।

################


দুপুরে খাবার খেয়ে আসার পর সবাই নিজ নিজ রুমে শুয়ে আছে। রিজভীর কাছে তখন একটা মুঠোফোন। উত্তর বারান্দার এককোনে হাফপ্যান্ট পড়ে রেলিং ঘেষে বসে আছে সে। আর কলেজের দুইজন স্যার ও মেজর দবির দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে ডাইনিং হলের সামনে।

হঠ্যাত রিজভীর মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। আস্তে করে বারান্দা হতে সরে রুমে ঢুকে গেল সে। তোষকের ভিতর থেকে মুঠোফোনটা বের করল টেনে। নিজের আসল সিমকার্ডটা খুলে রেখে অন্য একটা সিমকার্ড ভরে নিল তাতে। তারপর উত্তেজিত মনে জানালার ধারে বসে মেজর দবিরের নাম্বার ডায়াল করল সে।

জানালায় একটা কাপড় ঝুলিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে মেজর দবিরকে দেখছে রিজভী। পকেটের ভিতর হাত নিয়ে যাচ্ছে মেজর। এবার পকেটের ভেতরের মুঠোফোনটা ধরে হাতটা আবার বের হয়ে আসছে বাইরের দিকে। সাথে সাথে নিজের মুঠোফোনের লাল বোতামটা চেপে কলটা বাতিল করে দিল সে। মিসড কল হয়ে গেল। নাম্বারটা অপরিচিত দেখে মেজর সাহেব আবার পকেটে রেখে দিল তার মুঠোফোন। দুষ্ট কিন্তু মিষ্টি একটি হাসির রেখা ফুটে উঠল রিজভীর মুখে।

মেজর দবিরের হম্বিদম্বিতে কলেজে টিকে থাকাই দায় হয়ে গিয়েছে ইদানীং। প্রতিদিন খেরার সময় কয়েকজন করে এক্সট্রা ড্রিল খাটছে। আর্মির ষ্টাফদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। ষ্টাফরা ছোটখাট ছুতো পেলেই যখন যাকে পাচ্ছে আটকে দিচ্ছে। অযথা রাস্তায় থামিয়ে কথা শোনাচ্ছে । কথার উত্তরে কিছু বলার চেষ্টা করলে শাস্তি হিসেবে বিকেলে একটা করে একস্ট্রা ড্রিল ইস্যু করে দিচ্ছে। রীতিমতো আতংক ছড়াচ্ছে চারপাশে।

যাদের একটু স্বাস্থ্য ভাল তাদের জন্য মেজর দবির কম্বল থেরাপি চালু করেছে। বিকেলে খেলার সময়ে তাদেরকে কালো কম্বলে পেচিয়ে দৌড় ঝাপ করানো হচ্ছে মাঠে। রাস্তায় সামনা সামনি দেখা হলেই খবর হয়ে যায় সিনিয়র ক্যাডেটদের। জুতার দিকে তাকিয়ে দেখছে সে- জুতা চকচকে পালিশ আছে কি না, কোমরে হাত দিয়ে দেখছে বেল্ট টাইট আছে কি না । কিছুদিন থেকেই মেজর দবিরের উপর রিজভীর মন মেজাজটা খুব খারাপ- এসব নানাবিধ কারণে ।

ক্যাডেটদেরকে সামরিক কায়দা শেখানোর জন্য ক্যাডেট কলেজ গুলোতে একটা করে আর্মি টিম থাকে। সেসব টিমের হর্তাকর্তা হিসেবে থাকেন আর্মির একজন মেজর। সেই মেজর দায়িত্ব পালন করেন কলেজের এ্যাডজুডেন্ট হিসেবে। মেজর দবির রক ক্যাডেটদের এ্যজুডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় তিন মাস হলো। এরমধ্যেই অনেক নিয়ম বদলে দিয়েছে সে। এমনকি কলেজের অনেক ঐতিহ্যও ভেঙে দিয়েছে সে। এ্যজুডেন্ট কিংবা আর্মির স্টাফরা জুনিয়রদের সামনে কখনোই সিনিয়রদেরকে অপমান করেনা। কোন কলেজেই এমনটা করা হয় না। কিন্তু মেজর দবির মাথা গরম করে জুনিয়র-সিনিয়র নির্বিশেষে একসাথে চড়-থাপ্পর মেরে দেয় সবাইকে। একদিন রিজভীকেও মেরেছিল এক জুনিয়রের সামনে। আজ তাকে বারবার মিস কল দিয়ে বিব্রত করে সেই প্রতিশোধ নিচ্ছে রিজভী।

মেজর দবির তার মুঠোফোনটা পকেটে রেখে দেয়ার পরপরই আবার তার নাম্বারে কল দিল সে। কিন্তু কলটা ধরে ফেলার আগেই আবার তা কেটে দিল রিজভী। আজ রুমে বসে মজা নিচ্ছে সে। আর জানালা দিয়ে মেজরকে চোখের আওতায় রেখে মিসকল মিসকল খেলায় মজে উঠেছে।

একটু পর পর কল যাচ্ছে মেজরের মুঠোফোনে। ফোন পকেট থেকে বের করতেই তা আবার কেটে যাচ্ছে। বিব্রত হয়ে নাম্বারটার দিকে কিছুখন তাকিয়ে থাকল সে। স্যারদের সাথে গল্প করা বন্ধ করল বিরক্তিকর সেই নাম্বারে ফিরতি কল পাঠিয়ে দিল মেজর দবির।

রিজভীর মুঠোফানের শব্দ তো আগে থেকেই বন্ধ করা আছে। ফোনের পর্দাতে শুধু মেজর দবিরের নাম ভেসে উঠেছে। আর রিজভী শরীর কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে নিঃশব্দে হেসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে । মেজরের কল শেষ হয়ে গেলে রিজভী আবার একটি মিস কল ছুড়ে দিল তাকে।

এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেল মেজর দবির । স্যারদের সাথে আলাপ শেষ করে তার নীল পালসার বাইকটা হাকিয়ে সাঁ করে চলে গেল সেখান থেকে। যাওয়ার আগে কৌতুহলী চোখে একবার তাকিয়ে দেখল- ছেলেদের রুম গুলোর দিকে।

রুমের ভিতর ততখণে দুষ্ট ছেলেদের জটলা বেঁধে গেছে। শরীফ তো অট্ট হাসিতে ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েছে বিছানায়। বেশ ভাব দেখিয়ে রিজভী বললো, এখন থেকে গভীর রাতে ফোন দিতে হবে মিষ্টার দবির কে।

##################



রিমঝিমিয়ে বিষ্টি হচ্ছে। মুষলধারে বিষ্টি হচ্ছে শীতকালের দুপুরে। হঠাত এ বিষ্টির ফোটাকে ছেলেরা খুব উপভোগ করছে। সিনিয়ররা হাউসের গ্রীল বেয়ে বাঁদরের মতো কওে ঝুলে ডাইনিং হলের ছাদে উঠেছে। হাফ প্যান্ট পরে নাচানাচি করছে বিষ্টিতে ভেজার আনন্দে। অনেকে আবার ক্যান্টিনের সামনের ছোট্ট সবুজ মাঠে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা জমিয়ে তুলেছে।

এলেবেলে বিষ্টি দিনের এমন কিছু চঞ্চলা সময় নিয়মের সব রুটিন ভেঙে দিয়েছে। ভোর থেকে দুপুর টানা ব্যস্ততার পর ছেলেদের দুঘন্টা বিশ্রামের সময়কে আরো চঞ্চল করে তুলেছে- পড়ন্ত দুপুরের এই ঝমঝম বিষ্টি। নিয়মকে ভেঙে দিয়ে সবাই মনকে রাঙিয়ে তুলেছে। হৈ হুললো করে- ব্যাকরণহছাড়া সব নাচ নেচে সবাই যেন হঠাত করেই ভিজতে থাকে কল্পলোকে।

বারান্দার রেলিয়ের উপর বসে বিষ্টির ছিটেফোঁটা ছুঁয়ে দ্যাখে রিজভী। আর বারান্দার উত্তর কোনায় গ্রীলের সাথে শরীর চেপে ধরে বিষ্টি ভেজা হচ্ছে শরীফ। বাইরে কারমাইকেল এরিয়ার মাইলজুড়ে পাটের জমির উপর দিয়ে খেলে যাচ্ছে বিষ্টি হাওয়া। অনমনা হয়ে যায় শরীফ বিষ্টি বাতাসে পাটগাছের দোলাদুলি দেখে।

হঠ্যাত চারদিকে চ্যাচামেচি শুরু হল। মেজর দবির তার আর্মি বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছে। লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে ছাদ থেকে ছেলেদেরকে নিচে নামাচ্ছে তারা। নিচে যারা ভিজছিল তারা পালিয়ে কোনমতে রুমে গিয়ে ঢুকছে হুড়মুর করে। সাদা পাতায় একের পর এক নাম লিখে নিচ্ছে আর্মির ষ্টাফরা।

ক্যাডেট কলেজে বিষ্টিতে ভেজাও নিষেধ। বিকেলে খেলার সময় বিষ্টি হলে বিষ্টিতে ভিজে ভিজে ফুটবল খেলা যায় কখনো সখনো। অধিকাংশ সময় তাও খেলতে দেয় না এ্যজুডেন্ট। শরীফ আর রিজভী তাড়াতাড়ি রুমের ভিতর চলে গেল।

দুজন আর্মির স্টাফ এসে শরীফের মাথায় হাত দিল। শরীফের মাথা হালকা ভেজা। উত্তরের বারান্দার গ্রীল ঘেষে দাড়িয়ে বিষ্টি দেখেছে শরীফ। ছুঁয়েও দেখেছে একটু। বিষ্টির ছিটেফোটার হালকা চুমুতে ভেজা ভেজা ভাব এসেছে শরীফের শরীরে। শরীফের নামও লিখে ফেলল তারা।

শরীফ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করল ষ্টাফদেরকে। কিন্তু তারা যে সর্বজান্তা। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিছুতেই কিছু বুঝলনা। শরীফের মাথার চুল হালকা ভেজা দেখেই তারা বুঝে গিয়েছে যে শরীফ এতক্ষণ বিষ্টিতে ভিজেছে! কি মনে করে যেন তারা রিজভীর মাথায় হাত না দিয়েই ওর নামটাও লিখে নিয়ে গেল। বারবার স্টাফদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করল তারা কিন্তু কেউ কোন কথাই শুনল না।

মনটাই খারাপ হয়ে গেল। নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছে শরীফ আর রিজভী। কাল নির্ঘাত কঠিন কোন পানিশমেন্ট হবে- নিরবে ভাবছে সেটা। অনেক সময় পরে, মন খারাপ করা কন্ঠে শরীফ বলল- নিচে গিয়ে বিষ্টিতে ভিজলেই ভালো হতো রে।

#################


সব হাউসের হাউস মাষ্টারদের কাছে অপরাধীদের নামের তালিকা চলে গেছে। পানিশমেন্টগুলো সব মেজর দবিরই ঠিক করে দিয়েছে। পরে নোটিশ আকারে সব হাউসের হাউস মাষ্টারদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সুবাদে মালু স্যারও একটা নোটিশ পেয়েছে। রাতের বেলা স্যার এসে লিস্ট দেখে দেখে ডাকতে শুরু করেছে সবাইকে।

জুনিয়র ক্লাসের মধ্যে শুধু দুজনের নাম। রিজভী আর শরীফ। গোমেদ আলী রুমে এসে শরীফ আর রিজভীকে ডেকে নিয়ে গেল মালু স্যারের অফিসে । ওদেরকে দেখেই তেড়ে উঠল মালু স্যার।

সব অঘটনের সাথেই আমি তোদেরকে পাচ্ছি। এখনই এই অবস্থা। আরো সিনিয়র হলে কী করবি তোরা। গর্জন করে উঠলেন মালু স্যার। নাহ্ তোদেরকে আমি আর রাখতে পারবো না। তোদের বাবা-মাকে চিঠি পাঠিয়ে দিব কাল- তারা যেন এসে নিয়ে যায় তোদেরকে।

স্যারকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করল রিজভী আর শরীফ। কিন্তু স্যার কোন কথাই শুনতে চাইল না। ইচ্ছে মতো পিটিয়ে দিল দুজনকে। শরীফ যতোবার বোঝানোর চেষ্টা করল স্যারকে ততোই জোড়ে জোড়ে পেটাতে লাগল স্যার শরীফকে।

তারপর ড্রয়ার থেকে দুটো সাদা খাম বের করে টেবিলে রাখল স্যার।ওদেরকে সেখানে বাসার ঠিকানা লিখে দিতে বলল। শরীফ বুদ্ধি খাটিয়ে লিখে দিল তুলির ঠিকানা। আর রিজভী খামের উপর লিখল এক বাল্য বন্ধুর নাম।

শরীফের খামের উপর মেয়ের নাম দেখে স্যার বলল- কার ঠিকানা লিখেছিস ?
শরীফ ভয়ে ভয়ে বলল- স্যার, এটা খালার ঠিকানা। উনিই আমার স্থানীয় আভিভাবক।
তোর বাপের ঠিকানা লেখ- স্যার চিতকার করে উঠল। তোর বাপ এসে দেখুক তুই কি কি করে বেড়াচ্ছিস। আমি তোর বাপের সাথে কথা বলব। ওসব খালা টালা চলবে না।
শরীফ বলল- স্যার আব্বু-আম্মু দু’জনই সৌদি আরব থাকেন। দেশে আমার খালার সাথেই থাকি আমি। দেশে উনিই আমার অভিভাবক।
-হুম। স্যার তাকালেন রিজভীর খামের দিকে।
খামের উপর শহীদ উদ্দিন শাফি লেখা দেখে স্যার বললেল, এই শহীদ শাফিটা কে?
স্যার আমার বাবা- বলেই মাথাটা নিচু করে মন খারাপ করে দাড়ালো রিজভী।
ওরা যে সত্য কথাই বলেছে। কিছুক্ষণ রিজভীর দিকে তাকিয়ে থেকে স্যার তা নিশ্চিত হল।

##########

মন খারাপ করে স্যারের অফিস থেকে বের হয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল ওরা।

শরীফ তো হেসেই ফেলল। তুলির কাছে চিঠি যাওয়ার আগেই ওকে সবকিছু জানিয়ে দিতে হবে। দোস্ত, তুলিকে আমি কিভাবে বলব যে ওকে আমার খালা বানিয়ে আজ মালু স্যারের হাত থেকে বেচে এলাম- রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলল শরীফ। যাক এটা ম্যানেজ করে নেয়া যাবে সমস্যা নাই। চিঠিটা পাওয়ার পর তা ছিড়ে ফেলতে বলব তুলিকে। তবে তুলিকে পাওয়ার যে একটু আশা ছিল সেটাও মনে হয় শেষ হয়ে যাবে এই ঘটনার পর। কিন্তু দোস্ত, তোর বাপের নাম তো শহীদ শাফি না। তুই কার ঠিকানা লিখলি আবার? বলেই আবার হাসতে শুরু করল শরীফ।

জেলা ইস্কুলের শাফি। আমার ভালো বন্ধু। তুইও তো চিনিস। চিন্তিত মুখে বলল রিজভী।

ওহ! ওই শাফি। ভয়ানক কাজ করলি তো তুই। ওকে দেখে কেউ বাপ বলবে নাকি! ওতো আমাদের মতোই ছোট দেখতে। আবাক হয়ে গেল শরীফ।

হুম-চোখ তুলে শরীফের দিকে তাকালো রিজভী। শাফি তো ছোটই কিন্তু তাতে কোন সমস্যা নাই। সুপার মার্কেটের কয়েকজন দাড়িওয়ালা দোকানদারের সাথে ওর দারুণ সম্পর্ক। চাচা ভাতিজা বলে ডাকাডাকি করে ওরা।

শাফি নিজে তো নিয়মিত ক্লাস করতো না। এজন্য ওর বাবাকে একবার ডেকেছিল ক্যান্টের প্রিন্সিপাল। তখন শাফি ওর বাবাকে কিছুই জানায়নি। এক দোকানদার চাচাকে বাপ সাজিয়ে নিয়ে যায়। পরে শাফি নিজেই ভয় পেয়েছিল স্যারের সামনে ওই দাড়িওয়ালার হাভ-ভাব দেখে। স্যারের সামনেই শাফিকে নাকি তুমুল বকাঝকা শুরু করেছিল সে। স্যারই পরে উল্টো শাফির বাবাকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। বুঝলি তো কি অবস্থা- হা হা। চিঠি পাবার পর শাফি ঠিকই বুঝে যাবে যে কি করতে হবে। চোখ নাচিয়ে শরীফের দিকে তাকালো রিজভী।

রিজভী বলেই চলল- আর শোন তুলিকে বলিস চিঠিটা নষ্ট না করে ওটা শাফির কাছে দিয়ে দিতে। আরেকটা দোকানদারকে তোর খালু সাজিয়ে দিবে তাহলে শাফি। তোর খালু আর আমার বাপ একসাথে মালু স্যারের কাছে এসে একদিন মজা করে যাক। শাফিকে আজ রাতেই ফোন করে সব জানিয়ে দিচ্ছি আমি। আমাদের বাপ আর খালু আসার সময় যেন দুটো চকলেটের প্যাকেট নিয়ে আসে সেটাও বলে দিতে হবে শাফিকে। তাহলে পরের কয়েকটা দিন বিকেলে খেলার পর আরাম করে চকলেট চোষা যাবে।

মালু লোকটা খারাপ আছে। তবে এবার বলদও হবে। শরীফের দিকে তাকিয়ে দুই হাতের তালু মেলে ধরল রিজভী। চারটি করতল তালেতালে তিনবার শব্দ করে মিলিয়ে- লাফ দিয়ে উঠে রিজভীকে জড়িয়ে ধরল শরীফ। ..........................(চলবে.....)

১ম এপিসোডের লিঙক- Click This Link
২য় এপিসোডের লিঙক- Click This Link
৩য় এপিসোডের লিঙক- Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:৪৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×