somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা - মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) এর বাণী সমূহ। ( যে কোন কাজে আল্লাহর রেজামন্দী ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য হইলে উহা আল্লাহ পাক কবূল করেন না ।)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) এরশাদ করেন, পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরামের উম্মতগণের সাধারণ অবস্হা এই ছিলো যে, যতই তাহারা নবুয়তের জমানা হইতে দূরে সরিয়া পড়িত ততই তাহাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসমূহ আপন রুহানী সত্তা হারাইয়া কতকগুলি নাম মাত্র রছমে পনিণত হইত । এই সব প্রাণহীন অনূষ্ঠান ও গোমরাহী হইতে উম্মতকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য নূতন কোন নবীর আর্বিভাব হইত । এই ছিলছিলা সর্বশেষ যখন আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) প্রেরিত হন তখনও সমস্ত জাতি কোন আছমানী দ্বীনের সহিত সম্পর্কযুক্ত ছিল তাহাদের অবস্হাও এইরুপ ছিল যে--

তাহাদের পয়গম্বর আনীত শরীয়তের যেই অংশটুকু তাহাদের নিকট বাকী ছিল ঐসব কতকগুলি প্রাণহীন রছমের সমষ্টি মাত্র ছিলো । অথচ উহাকেই তাহারা আসল দ্বীন ও শরীয়ত মনে করিত । প্রিয়নবী (সাঃ) ঐসব রছমকে মিটাইয়া প্রকৃত দ্বীন ও আহকামের শিক্ষা দান করেন ।

বর্তমানে উম্মতে মোহম্মাদীও এই রোগে আক্রান্ত হইয়াছে । তাহাদের এবাদত আজ রছম ও রেওয়াজে পরিণত হইয়াছে । এমন কি যেই দ্বীনী তালীম সমস্ত অন্যায় আচরণের সংশোধনের সহায়ক উহাও বহুলাংশে রছমে পরিণত হইয়াছে । কিন্তু বর্তমানে নবুয়ত খতম হইয়া গিয়াছে এবং নবীর প্রকৃত উত্তরাধীকারী আলেম সমাজের উপর নবুয়তী কাজের জিম্মাদারী বর্তাইয়াছে, কাজেই গোমরাহী ও বিকৃত অবস্হার সংশোধনের প্রতি মনোযোগ দেওয়া ওলামাদের ফরজ । আর উহার সম্বল হইল একমাত্র তাছহীহে নিয়ত বা বিশুদ্ধ সংকল্প , কেননা আমলের মধ্যে লিল্লাহিয়াত বা খাঁটি আল্লাহর জন্য করার নিয়ত না থাকে তখনই উহা রছমে পরিণত হয় । পক্ষান্তরে নিয়ত শুদ্ধ হইলে আমলের গতি শুদ্ধ হইয়া আল্লাহর দিকে ফিরিয়া যায় এবং রছমিয়াতের পরিবর্তে উহাতে হাক্বীক্বত পয়দা হয় ও প্রত্যেক কাজ খোদা পুরস্তির জযবায় হইয়া থাকে ।

মূলকথা বর্তমান যুগে মানুষের মধ্যে এখলাছে নিয়ত পয়দা করিয়া উহাতে ল্লিল্লাহিয়ত ও হাক্বীক্কত পয়দা করার কোশেশ করা উম্মতের জন্য ওলামা ও দ্বীনের বাহকদের এক বিশেষ কর্তব্য ।

২.তিনি এরশাদ করেন- কোরআন এবং হাদীসে বড় গুরুত্ব সহকারে ঘোষণা করা হইয়াছে যে, জীবন যাত্রার অতি সহজ পন্হা হইল দ্বীন । সুতরাং দ্বীনের মধ্যে যাহা যত বেশি জরূরী বরং উহাই যাবতীয় দ্বীনী কাজের রূহ স্বরূপঃ কাজেই উহাও অতি সহজ এবং আছান । আবার এই এখলাছই হইল যাবতীয় ছুলুক এবং তরীকতের নির্যাস । কাজেই জানা গেল যে, ছূলুক ও বড় সহজ বস্তু । কিন্তু স্বরণ রাখা চাই যে, যাবতীয় কাজের কাজ উহার নিজস্ব পদ্ধতিতে হইয়া থাকে । গলদ তরীকা এখতিয়ার করিলে সহজ হইতে সহজ কাজও কঠিন হইয়া যায় । বর্তমানে মানুষের ভুল এখানে যে, তাহারা উছুলের অধীন কাজ করাকে কঠিন মনে করিয়া উহা হইতে সরিয়া পড়ে অথচ দুনিয়ার যে কোন সাধারণ কাজও উহার নিজস্ব উছুল বা নিয়ম ব্যতিরেকে সমাধা হয় না । জাহাজ, নৈাকা, রেল, মটর সব কিছুই স্বীয় উছূল মোতাবেক চলে । এমন কি রুটি, তরকারীও আপন উছুল মতই পাকানো হয় ।

৩. তিনি বলেন- তরীকতের খাছ উদ্দেশ্য হইল, আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের মধ্যে এমন অবস্হায় উপনীত হওয়া যাহাতে লজ্জত ও আনন্দ পাওয়া যায় আর নিষেধাবলীর নিকটে যাইতেও কষ্ট হয় এবং বিরক্তির ভাব প্রকাশ পায় । বাকী যাহা কিছু অর্থাৎ জিকির ফিকির ও খাছ রিয়াজত ইত্যাদি হইল ঐ উদ্দেশ্য সাধনের উপায় স্বরূপ । বর্তমান জমানায় বহু লোক এই উপায়গুলিকেই আসল তরীর্থত বলিয়া মনে করিয়া থাকে, অথচ উহার মধ্যে কিছু কিছুত বেদাতও রহিয়াছে । সে যাহা হউক, যেহেতু এই সমস্ত যখন শুধুমাত্র উছিলা স্বরুপ আসল মাকছুদ নয়, সেহেতু অবস্হা ও সময়ের পরিবর্তনের সাথ সাথে এই সমস্তের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন আছে । অবশ্য যেই সমস্ত কাজ কোরআন ও হাদীস দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত আছে ঐ সব সর্বযুগে সমানভাবে করিতেই হইবে ।

(৪) তিনি বলেন - ফরজের স্হান নফলের উর্ধ্বে । বরং ফরজের মধ্যে কোন ক্রটি হইলে উহার ক্ষতিপূরণ করিয়া ফরজকে পরিপূর্ণ করাই নফলের উদ্দেশ্য । মূলকথা ফরজ আসল আর নফল উহার পরিপূরক শাখা-প্রশাখা, কিন্তু কোন কোন লোক ফরজ কাজে অবহেলা করিয়া নফল কাজে অতিমাত্রায় লিপ্ত হইয়া পড়ে । যেমন, আপনারা সকলেই জানেন যে, নেকীর দিকে দাওয়াত দেওয়া সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজে নিষেধ করা অর্থাৎ তাবলীগে দ্বীনের যাবতীয় শাখা-প্রশাখা কত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কাজ । কিন্তু কয় জন লোক এইসব ফরজ কাজ আদায় করিয়া থাকে ? অথচ নফল জিকির আজকারে লিপ্ত লোকের সংখ্যা তত কম দেখা যায় না ।

(৫) তিনি বলেন- কোন কোন দ্বীনদার ও ওলামার এস্তেগানা অর্থাৎ পরমুখাপেক্ষিতা সম্মন্ধে বড় ভুল ধারণা রহিয়াছে । তাহারা ইহা মনে করে যে, ধনী এবং মালদার লোকজন হইতে বাঁচিয়া থাকার নামই এস্তেগানা । অথচ এস্তেগনার আসল উদ্দেশ্য হইল তাহাদের নিকট মাল এবং সম্মান লাভের আশায় না যাওয়া । তাহাদের এছলাহ করা ও দ্বীনী মাকছুদের জন্য তাহাদের সঙ্গে মেলামেশা করা কিছুতেই এস্তেগনার খেলাফ নহে বরং অনেক ক্ষেত্রে জরুরীও বটে । হ্যা, তাহাদের সহিত মেলামেশায় যেন আমাদের মধ্যে মালের লোভ ও সম্মানের নেশা পয়দা না হয় তার জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকিতে হইবে ।

(৬) তিনি বলেন- যখন কোন আল্লাহর বান্দা যে কোন প্রকার নেক কাজে অগ্রসর হয় তখন শয়তান তাহার যাত্রাপথে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ও বাধার সৃষ্টি করে । কিন্তু বান্দা যখন ঐসব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া সেই শুভ কাজ করিতেই শুরু করে তখন শয়তানের দ্বিতীয় কোশেশ হয় এই যে, ঐ বান্দার এখলাছের মধ্যে খারাবী ঢালিয়া অর্থাৎ তাহার মধ্যে রিয়া বা পর দেখানো বা শোনানো অথবা অন্য কোন কৌশলে তাহার সততাকে বরবাদ করিয়া সেই নেক কাজে নিজেকে অংশীদার করিতে চায় । অনেক সময় ইহাতে সে কৃতকার্যও হইয়া যায় । এইজন্য দ্বীনী কর্মীদেরকে পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হইবে । কেননা, যে কোন কাজে আল্লাহর রেজামন্দী ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য হইলে উহা আল্লাহ পাক কবূল করেন না ।



উৎসঃ- হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) এর অমর বাণী, মালফুজাত ।
মাওলানা মোঃ ছাখাওয়াত উল্লাহ , তাবলীগী কুতুবখানা, ৬০ চকবাজার, ঢাকা-১২১১ ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×