somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বিপ্লবীর নাম সিরাজ সিকদার!

১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টি খুব বেশি আগের না হলেও পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ চল্লিশটি বছর। মুক্তিকামী জনতার প্রবল যুদ্ধে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার আগের ইতিহাস দীর্ঘ। একদিন বা দুদিনের চিন্তা-ভাবনার ফসল ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় অর্জন নয়। কয়েকশত বছরের কোটি কোটি যোদ্ধার অকুতোভয় আন্দোলনের ফসল এই বাংলাদেশ। সিরাউদ্দৌলা, তিতুমীর, শের-ই-বাংলা, সোহরাওয়ার্দি, ভাষাণীর মতো নেতাদের আন্দোলনের ফসল এই বাংলাদেশ। অথচ সেই বীর যোদ্ধাদের জন্য কি করেছি, কতটুকু করতে পেরেছি সে হিসেব মেলানোর মতো সময় এখন আমাদের নেই। আমরা আমাদের নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশকে ভোগ করে চলেছি আমরা।
’৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস আমরা নতুন প্রজন্ম অনেকেই জানি না। সিরাজ সিকদার সেই বীরদের মধ্যে একজন। সিরাজ সিকদার (জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪-মৃত্যু ০২ জানুয়ারি, ১৯৭৫) একটি বিপ্লবের নাম। যিনি শুধু যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে দায়িত্ব শেষ করেননি, পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিকারের একটি দেশ গঠনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলার বরিশাল জেলার স্বরূপকাঠিতে গ্রামীন বঞ্চিত জনগণকে সাথে নিয়ে ’পূর্ব বাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী ’ স্থাপন করেন। পরে ৩ জুন ১৯৭১ এ তিনি ’পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষনা দেন। এই দলের যোদ্ধারা পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ পরিচালনা করেন। সর্বহারা পাটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ১৪ জানুযারি এবং সভাপতি নির্বাচিত হন সিরাজ সিকদার। তিনি তার পার্টির সদস্যদের নিয়ে দেশের তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন। তার আন্দোলনের মূল মন্ত্র ছিল দেশের নির্যাতিত মানুষের অধিকার রক্ষা, ভারতের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার আন্দোলন। পরবর্তিতে জরুরি অবস্থা শুরু হলে ১৯৭৪ সালে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান এবং আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু সরকারী গোয়েন্দা বাহিনী তাকে চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭৫ সালের ০১ জানুয়ারি গ্রেফতার করে ঢাকায় আনার পর তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে তাকে হত্যা করে ২ জানুয়ারি, ১৯৭৫ এ। হত্যাকারী হিসেবে অভিযোগ আনা হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর।
কার নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল? বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নাকি অন্য কোন গড ফাদার/মাদারের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু তার দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র? গড নোজ! কিন্তু আমরা একটু মাথা খাটিয়ে যদি ভেবে দেখি তবে কিছুটা হলেও বুঝতে পারব। ’৭১ এ পাকিস্তানীদের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য ভারত মিত্রবাহিনী প্রেরণ করে। যখন মিত্রবাহিনী এদেশে আসে তখন অলরেডি পাকিস্তানীদের বর্বতা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য বিদেশীদের তৎপরতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ামাত্রই ভারতের টনক নড়ে ওঠে এদেশকে নিজের দখলে রাখতে পারবে না এই ভয়ে। তারা সৈন্য পাঠায় যুদ্ধ বিরতির জন্য। কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে যা প্রতিয়মান হয় তা হলো, ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওযা স্বত্তেও এতো দেরিতে কেন মিত্রবাহিনী পাঠালো? শুরুতেই কেন কোন সমঝোতার চেষ্টা করেনি? কি ছিল তাদের মনে? পাকিস্তান যখন আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করে তখন সর্বসম্মুখে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি উসমানীকে রাখা হলো না কেন? ভারত নিজের মতো করে সব দায়িত্ব পালন করে ফিরে যায়। কথিত আছে, ’৭১ এ ভারতীয়রা এদেশ ত্যাগ করার সময় অনেক সম্পদ সাথে নিয়ে যায়। এতেই যদি ওরা ক্ষান্ত থাকত তবে আর কোন সমস্যাই ছিল না। কিন্তু এদেশের ভারতপ্রেমী শাসক শ্রেণীরা কৃতজ্ঞাস্বরূপ ভারত ঠাকুরকে আজীবনের জন্য ঠাকুর ঘরে স্থাপন করে রাখল। আর এটাই ভারতের মূল উদ্দেশ্য ছিল ’৭১ এ সাহায্য করার। ওরা বাংলাদেশকে শোষণ করার বীজ বপণ করে সেসময়ই। সে বিষয়টি তৎকালীন সময়ে এদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীরাই আঁচ করতে পেরেছিলেন য়ার ফলে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে অনেককেই হত্যা করা হয় তখন। সিরাজ সিকদার ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনিও খুব ভালোভাবেই ভারতের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক আন্দোলন চালানোর সময় তাকে সন্ত্রাশবাদী আন্দোলনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর তাই তিনি আন্ডারগ্রউন্ডে যেতে বাধ্য হন। তিনি ক্রমেই তাঁর আন্দোলনের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকেন কিন্তু জনগণের আস্থা হারানোর ভয়ে এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য (ভারতকে অবাধে এদেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য) তাকে খুন হতে হয়! এদেশে যখন যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে আন্দোলন করেছে তাকেই জীবন দিতে হয়েছে। আর এজন্যই বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ ক্রমান্বয়ে পরিনত হয়েছে ভীরু আর অলস জাতি হিসেবে।
একমাত্র নতুন প্রজন্মই পারে দেশের অরাজকতা, নৈরাজ্য দূর করতে যদি তাদের কে সঠিকভাবে দিক নিদর্দেশনা দেয়া যায়। হিংসাত্মক রাজনীতির কারণে আজ সমজের প্রতিটি স্তরের মানুষ দিন দিন কলুষিত হয়ে পড়ছে শুধুমাত্র সৎ নেতৃত্ব বা নেতার অভাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছে। পাকিস্তান এখন আমাদের জন্য আতঙ্ক নয় কিন্তু ভারত আমাদেরকে শোষণ করে চলেছে চল্লিশ বছর ধরে। ’৭১ এ শোষণের যে বীজ বপণ করেছিল আজ তা পরিণত বৃক্ষ। যার ফল সরূপ ফারাক্কা বাঁধ, বিভিন্ন নদীতে বাঁধ, টিপাইমুখে বাঁধ পরিকল্পনা, বিনা ট্রানজিটে বাংলাদেশের বুক চিরে বাণিজ্যের লর্যি চালিয়ে নেয়া প্রভৃতি। । এভাবে আর কতদিন দাসত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে হবে আমরা জানি না! খারণ প্রতিবাদি হতে গেলেই সিরাজ সিকদারের মত মরতে হবে। বর্তমান সময়ে গুপ্তহত্যা, অপহরণ, র‌্যাব সংগঠিত ক্রসফায়ার নিত্যনৈমিত্তিক সংস্কৃতি বা কালচারে পরিণত হয়েছে। অভিনব পদ্ধতিতে দেশের মানুষের প্রাণ নেয়া হচ্ছে। মানুষ হয়ে মানুষকে কেমন করে নির্বিঘেœ হত্যা করে যার কোন বিচার নেই! খাদ্যের অভাবে ডাইনোসর নিজ জাতির মাংস ভক্ষণ করে শেষ মুহূর্তে বিলুপ্ত হয়েছিল মানুষেরও কি তবে বিলুপ্তীর সময় এসে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×