somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ারবাজার উন্নয়ন ভাবনা

১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রই যেখানে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে দেশের শেয়ারবাজার উন্নয়নের পরিবর্তে চোরাবালিতে আটকে গেছে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞগণ হয়রান। প্রণোদনার বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে শেয়ারবাজারকে। কিন্তু আশানুরূপ ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নানা প্রশ্ন বিদগ্ধ জনের। শেয়ারবাজার আগের মতোই তার ইচ্ছাধীন আচরণ করছে। যে দিন উর্ধ্বমূখী এ,বি,জেড সবাই উর্ধ্বমুখী, অনুরূপ নিম্নমুখী প্রবণতাও। ফলাফল যা ছিল তাই, গুজবের ভিত্তিতে বাজারের উত্থান পতন। বাজারের জন্য আসলে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে না- কি আন্দোলনরত জনতাকে আপাতত ঠান্ডা করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? প্রণোদনায় শেয়ার বেচা-কেনার বিষয়টি বেশি গুরুত্ত্ব পেয়েছে, কারণ আন্দোলনপ্রিয় জাতির সামনে তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণের বিষয়টির প্রধান্য দেওয়া ছাড়া সরকারেরও গত্যন্তর নেই। এ বিষয়ে যাঁরা সরকারের নীতি নির্ধ্বারণের দায়িত্ত্ব পালন করেন, তাঁরা হয়তো দায়িত্ত্ব পালনে যত্নবান নন, নতুবা অদক্ষ ও কূপমুন্ডক। কারণ শেয়ারবাজারের এ অবস্থা তাঁদের সৃষ্ট। কিন্তু কারসাজিকারকদের দোহাই দিয়ে নিজেদের দায়িত্ত্ব এড়াতে চাচ্ছেন। রাতে দরজা খুলে ঘুমিয়ে চোরের ওপর দোষ দেয়ার মতো অবস্থা। তাঁরা শুরু করেন ভূল দিয়ে, যেমন নুতন আইপিও বা আরপিও অনুমোদনের সময় কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য আমলে না নিয়ে শেয়ারের প্রকৃতমূল্য বেশী ধরার জন্য সহযোগিতা করে কোম্পানির পরিচালকদের স্বার্থ রক্ষা করেন। সে কোম্পানির পরিচালকরাতো কারসাজির সুযোগ পাবেনই।

সব ব্যবসায় সিন্ডিকেট, কারসাজি ইত্যাদি থাকবে, কারণ চোর না থাকলে চৌকিদারের প্রয়োজন নেই। গৃহস্বামীর দায়িত্ত্ব এমনভাবে গৃহ নির্মাণ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, যাতে তার সম্পদ রক্ষা পায়। জনগনের শেয়ার নামক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ত্ব গ্রগহণকারীদের দ্বারা এ সম্পদ রক্ষার গুরুত্ত্ব চরমভাবে অবহেলিত হয়েছে, কারণ সম্পদ শেয়ারহোল্ডারদের, তাঁরা এসব নীতি নির্ধ্বারকদের জন্য প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ কোনো প্রকার সুবিধা দিতে সক্ষম নয়। কিন্তু নিয়ম-নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটু ফাঁক-ফোঁকর পেলেই যাঁরা অনেক বড়ো ধরনের সুবিধা নিতে পারবেন, তাঁদের জন্য এসব নীতি নির্ধ্বারকদেরকে সন্তুষ্ট রাখা খুবই সহজ।

এই ফাঁক-ফোঁকরযুক্ত নীতি প্রণয়নের কারণে আজ লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত, আরো কয়েক লাখ শেয়ারব্যাবসায়ী পথে বসেছে। অথচ উভয়কে রক্ষা করাটা-ই এ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ত্ব। তাঁরা, হিসাব দিতে অক্ষম কোম্পানির শেয়ার ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দায়িত্ত্ব শেষ করেছেন, কিন্তু হিসেব করেন না এতে কোন পক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে? কোম্পানির পরিচালকরা তাদের নিজস্ব শেয়ার বিক্রি করেও কোম্পানির ব্যবসা, সম্পদ নিজেদের দখলে রেখে যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। শেয়ার বিশেষজ্ঞগণ শেয়ারকে জমির সাথে তুলনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ জমি, তার পরেই ভালো শেয়ার। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্রায়তন ও জনবহুল দেশে জমিতে বিনিয়োগকারীর তুলনায় বিক্রিতব্য জমির সংখ্যা কম । এমন অবস্থায় শিল্প-কারখানার সহযোগী হিসেবে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাওনা কতটুকু আদায় করে দিতে পেরেছে? যদি হিসাব করা হয় প্রায় তিনশো কোম্পানির ভেতর কিছু মিউচুয়াল ফান্ড ও গোটা ত্রিশেক প্রতিষ্ঠান কোনো মতে নিজেদের দায়িত্ত্ববোধের মাধ্যমে কোম্পানির স্বচ্ছতা ও সততা প্রমাণ করেছে। বাকি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ অনুপাতে লাভ দিতে সক্ষম হচ্ছে কি-না? যদি না পারে তার কারণগুলো জেনে সরকারকে জানানোর কাজটা তাদের দায়িত্ত্বের ভেতর গ্রহণ না করার জন্যই কোম্পানির পরিচালকেরা আজ মহিরূহে পরিণত হয়েছে । ফলে পরিমাণমত শেয়ার না রেখেই পরিচালকের পদ দখল করে যত জন নৈতিকতার স্খলন ঘটিয়েছেন তাঁরা সবাই এ চোরাবালি সৃষ্টির জন্য দায়ী। যে সকল পরিচালক শতকরা যতো ভাগ শেয়ার নিয়ে কোম্পানি শুরু করেছেন, পদ থাকাকালীন সে শেয়ার যদি বিক্রয় অযোগ্য থাকতো আজকের এ বিপর্যয় হতো না। আমার বুঝে আসেনা শতকরা একশত ভাগ সুবিধা ও ক্ষমতা ভোগের জন্য সরকার ৪৫ভাগ নির্ধ্বারণ না করে কেন ৩০ভাগ নির্ধ্বারণ করলো? এতে আবারও কারসাজির সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা বিদ্যমান। কোম্পানির পরিচালকদের কাছে যতো বেশি আবদ্ধ শেয়ার থাকবে পরিচালকরা মুনাফা অর্জনের জন্য তত বেশি আন্তরিক হবেন । সরকার তত বেশি লাভবান হবে।
এখনো শেয়ারবাজারকে এ চোরাবালি থেকে উদ্ধারের সময় আছে, উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে যদি কর্তৃপক্ষ শক্ত হাতে হাল ধরেন, শেয়ারবাজার দিয়ে এদেশকে অনেক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব ।

আজ নানান অযৌক্তিক প্রণোদনার অবতারণা করা হচ্ছে, জমি কেনার জন্য কি কোনো প্রণোদনার দরকার হয়? জমির যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং উৎপাদনশীল হয় তাহলে তা কেনার জন্য কি প্রণোদনার দরকার হবে? প্রণোদনা দিয়ে স্বচ্ছতা ও জওয়াবদিহিতার আওতায় আনতে হবে তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলো। এ প্রণোদনার ফলে সরকার যতটুকু ব্যয় করবে ফেরত পাবে অনেক বেশী।
এক. বেশী রাজস্ব আয় হবে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে।
দুই. কোম্পানির ব্যবসা ভালো হলে ভ্যাট ও আয়করের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

কোম্পানির পরিচালকদের জন্য নির্দিষ্টকৃত শেয়ার, পদে থাকাকালীন সময়ে বিক্রয় বা হস্তান্তর করা নিষিদ্ধ করলে কারসাজি কমে যাবে।

ব্যাংকের উপর শেয়ার ক্রয়ের জন্য পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা কতটা যৌক্তিক তা বিশেষ বিবেচনার বিষয়। কারণ ব্যংকগুলো আমানত সংগ্রহ করে নির্ধ্বারিত একটা লাভের বিনিময়ে, সে আশায় লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী ব্যাংকে টাকা আমানত রাখেন, দেশের তালিকাভূক্ত কোনো কোম্পানি শেয়ারের বাজারমূল্যের কাছাকাছি অনুপাতেও ব্যাংকগুলোর সমান নগদ লাভ দিতে পারে না, তাই এ খাতে তদেরকে বিনিয়োগে বাধ্য করার চেয়ে এক্ষেত্রে শেয়ার সহ অন্যান্য সম্পদ বন্ধক রেখে হাইপো (সিসি) ঋণ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ব্যাংকগুলো কম ঝুঁকিতে বেশী বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

যেহেতু, শেয়ারবাজার শিল্প, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তিনটি মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পৃক্ত, তাই একক কর্তৃত্ব দেওয়া ও দেখ-ভালের জন্য একটি সাংবিধানিক পদ সৃজনের বিযয়টি বিবেচনায় নেওয়া জরুরী।

এ ছাড়াও নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলে শেয়ারবাজার ইতিবাচক দিকে অগ্রগামী হবে ।
যেমন,(১) তালিকাভূক্ত শিল্প-কারখানার প্রোটেকশনের জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্য সরকারিভাবে সরাসরি ক্রয়ের বিধান রাখা ।
(২) অনুরূপ সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি এবং রফতানিযোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সুবিধা সৃষ্টির ব্যবস্থা নিশ্চিত করণের বিষয় বিবেচনা করা।

(৩)তালিকাভূক্ত যে সকল কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের ঠিকমতো মুনাফা দিতে পারে না তাদের ক্রয় ও নিয়োগের অস্বচ্ছতা দূরীকরণে স্বতন্ত্র অডিট টিম পরিচালনা করা।
এতে কোম্পানির আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকার ও শেয়ারহোল্ডারদের আয় বৃদ্ধি পাবে।
(৪) ওটিসি মার্কেটের সব শেয়ার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালকদেরকে কিনে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া।
নতুবা অন্য দেশের মতো কোম্পানি নিলাম করে বিক্রিত অর্থ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিধান চালু করা।
এতে পরিচালকেরা শিল্প কারখানা চালু রাখার জন্য চেষ্টা করবে। অথবা নুতন উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে অনুৎপাদনশীল কারখানাগুলো উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে বেকার সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও নুতন আইপিও এবং আরপিওর জন্য শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যের গুরুত্ব দিয়ে শেয়ারমূল্য নির্ধ্বারণের বিষয়টি বিবেচনা করলে বাজার শক্তিশালী হবে।
এটার গুরুত্ত্ব দেওয়া জরুরী, কারণ শিল্পোন্নয়নের সবচেয়ে বড় সহযোগী শক্তিশালী শেয়ারবাজার।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ত্ব দিয়ে পদক্ষপে গ্রহণ করা হয় তবে কালোটাকা এনে শেয়ারবাজার গরম করার প্রয়োজন হবে না। শেয়ার বাজারের গতি স্বাভাবিক থাকবে।






একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×