somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পোড়া বাড়ি এবং আমরা ক’জন

১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জুমার নামায পড়ে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে বন্ধুরা গল্প করছিলাম, মসজিদে তখন ইমাম সাহেব পাপ পুন্যের বয়ান করেই যাচ্ছেন। আমাদের উড়ু উড়ু মন কারোরই ওদিকে খেয়াল নেই। এরি মাঝে কেউ একজন বল্লো পাশের গ্রামে ক’দিন পূর্বে পুড়ে যাওয়া বাড়িটির কথা। একসাথে এতগুলো ঘর পুড়ে যাবার ঘটনা আশ পাশের গ্রামে প্রথম শোনা আমাদের এটুক বয়সে। কি মনে করে জানি বল্লাম, চল আমরা যে কয়জন আছি তাদের প্রত্যেকে ঘর থেকে কিছু সাহায্য নিয়ে ঘর হারা মানুষগুলোকে দিয়ে আসি। সবাই খুশি মনে রাজি।

আমরা যে যার ঘরে গিয়ে চাল আর টাকা যার যা সামর্থ আছে তা নিয়ে আসতে লাগলাম। পরে ভাবলাম এতগুলো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল, আর আমরা এত অল্প কিছু নিয়ে গিয়ে কাকে বাদ দিয়ে কাকে দেব? ভাবনাটা সবারই মনটাকে নাড়া দিলো। সবারই সম্মতিতে আমাদের পাড়ার সব ক’টি ঘরে গিয়ে সাহায্য চাইবো স্থির করলাম। অবাক করার মতো কেউ না করলোনা, যার নুন আনতে পান্থা ফুরায় অবস্থা সেও কিছুনা কিছু দিল। ঘরের মা চাচিরা কেউ কেউ পরামর্শ দিলো এ বলেযে, পুরোনো কাপড় চোপর থালাবাটি , কাঁচা তরিতরকারিও তোমরা নিতে পারো যদি কেউ দেয়। কারন সেই বাড়িতেতো সবিই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কিছুটা কেমন কেমন জানি করলেও প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে যে যাই দিচ্ছে তাই নিতে লাগলাম। পুরো বাড়ি ঘুরে এসে দেখি অনেক কিছুই পেলাম । আমাদের উৎসাহ বেড়ে গেল। পাশের বাড়িও গেলাম, এর পর তার পাশের বাড়ি। কেউ না করলোনা। সউৎসাহে যে যা পারলো দিলো। চাল, ডাল, টাকা, শাড়ি, ব্লাউজ, লুঙ্গি, শার্ট, থালা বাটি, তরকারি, ছোট বাচ্ছাদের কাপড়, কেউ কেউ রান্নার জন্য তেল, মরিচ মশলা পর্যন্ত দিলো। আমাদের চেয়ে একটু বড় একটা মেয়ে কয়েকঘর ঘুরে কিসব একটা প্যাকেটে বন্ধ করে আমাকে দিয়ে বল্লো খবরদার খুলবিনা।X( সেটা শুনে আমার দুটা ক্লাসমেট দেখি ফিক ফিক করে হাসে। ধুর মরা তোদের রংতামাসা দেখার সময় নাই। কি দিবি দেয়রে বাবা। সব নিয়ে যাব। সব মিলিয়ে প্রায় ২০মণের মতো চাল, দুই বস্তা কাপড়, আরো অন্যান্ন মিলিয়ে প্রায় আরো দুই বস্তা সামগ্রী। কল্পনার বাইরে। বন্ধুকে বল্লাম, আমাদের এসব সন্ধ্যার আগেই দিয়ে আসতে হবে। আর এত কিভাবে নিয়ে যাবো আমরা। এসব ভাবতে দেখে দুই তিন পরিচিত রিক্সাওয়ালা নিজেই রাজি হয়ে গেল আমাদের এসব ফ্রিতে সেখানে দিয়ে আসতে।

নামায পড়েই দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা। কোথায় আর খাওয়া দাওয়া, বেমালুম ভুলে গেলাম সে কথা। সমবয়সী এবং আরো কিছু পিচ্ছি পাচ্চাও জুটে গেল আমাদের সাথে। রিক্সায় তুলে দিলাম সামগ্রী আর আমরা হেট হেটে যেতে লাগলাম। মুখে এক আনন্দের তৃপ্তি। কোন ভাল কাজে হয়তো এমনই অনুভুত হয়।

গিয়েতো আমরা হতবাক। ওই পাড়ার একটা ঘরও বাকি নেই। সব পুড়ে ছাই। সবাই যে যার ভিটায় উন্মুক্ত আকাশের নীচে অসহায় বসে আছে। আমাদের দেখে কেউ মুখ তুলে তাকাবারও শক্তি যেন তাদের নেই। সর্বস্ব হারিয়ে তাদের শরীর মনের সব শক্তি যেন লোপ পেয়েছে। পুড়া বাড়ির একেকটা মানুষের মনো কষ্ট সেদিন দেখেছিলাম তাদের চোখে মুখে । কি ভয়ানক। বাড়ির শেষদিকটা থেকে এখনো চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। দুইটা নেঙটা পিচ্চি চেচিঁয়ে উঠলো ”ওই আমগো লাইগা খাওন আনছে” ।

বাচ্ছাগুলোর চিৎকার আর এতগুলো পিচ্চি পাচ্চা সহ আমাদের দেখে ওবাড়ির সব ছেলে মেয়ে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। এক বয়স্কজনকে ডেকে বল্লাম চাচা আমরাতো জানতামনা এত কিছু। ভেবেছিলাম কয়েকটা ঘর হয়তো (পুড়েছে), আমরা ছেলেপুলেরা কিছু এনেছি, তাতো পর্যাপ্ত হবেনা মনে হয়। যাই হোক, আপনি এসব সবাইকে যেরুপ ভাল মনে করেন সেরকম করে দিয়ে দিন।

আমরাযে সারাদিন কিছু খাইনি সেটা কিভাবে জানি একজন ঠের পেয়ে গেল। হঠাৎ দেখি এক বয়স্কা মহিলা একটা পোড়া মগে করে পানি এনে আমাদের দিয়ে বল্লো - খা বাবারা । সবাই পানি খেলাম, উনার অন্তরের আশির্বাদ ছিলো হয়তো, আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি যেন নিমিষিই দুর হয়ে গেল।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৩৫
৬৩টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×