somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনিব তার কুকুরের মতন দেখতে নাকি কুকুর মনিবের মতন দেখতে??

১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু শিল্পির সাথে লাঞ্চ ডেট ছিল সেদিন। শহরে কোথাও বসে চুটিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়ার পরিকল্পনা। সকাল থেকেই মন উরু উরু তাই....প্লান করি এই কাপড় পরি নাকি সেই কাপড় পরি! খুজে পেতে বছর তিনেক আগের কেনা আমার একটা প্রিয় কাপড় সিলেক্ট করলাম। কাপড়টা গত ১ বছরে পরা হয়নি তাই মন খুশি...কারন পুরোনো কাপড় অনেক দিন পর পরতে আমার ভাল লাগে। তাছারা কাপড়টার সাথে অনেক আনন্দের স্মৃতিও রয়েছে। ঠিক যাবার আগে কাপড়টা পড়তে গিয়ে দেখলাম এর ভেতর নিজেকে ঢোকানো এক দুরহ ব্যপার। কোন মতে যদিও ঢোকান গেল, তবে তাতে আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে উৎকট লাগল, এই কাপড়ের ভেতরে ঢুকে স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করা যাবে বলে মনে হলো না। বরং খোলাটাই হয়ে উঠল কঠিন ব্যপার :(। মন কস্টে ভরে গেল। কখন যে এই ১ বছরে ওজন বেড়ে ভোম্বল দাস হয়ে গেছি নিজেও টের পাইনি :((

পর পর কয়েকটা প্রিয় কাপড় এর পর ট্রায় করতে গিয়ে ব্যর্থ হলাম পরতে :(। মনে ভিষন কস্ট নিয়ে যেমন সেমন ঢিলা ঢালা একখানা জামা গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু এই মনকস্ট নিয়ে খুবই কঠিন সময় চলতে থাকল পেটের ভেতর। সন্ধ্যায় ক্লিফ কে বলতেই বলল "নো প্রবলেম নতুন কিছু কাপড় কিনে ফেল সাইজ মতন সমস্যা সমাধান।" আমি বলি তাহলে আমার এই প্রিয় কাপড় গুলোর কি হবে? এভাবে বারতে থাকলে নতুন কাপড়ও কিছুদিন পর বাতিল হয়ে যাবে, তার চাইতে Constructive কিছু সমাধান দরকার। ভাবা মাত্রই যেটা সমাধান হয়ে এলো তা হলো - খাদ্য তালিকা পরিবর্তন আর রোজ হন্টন চালানো। সামনে পেছনে এত সুন্দর বীচ থেকেও যদি হন্টন করে ওজন কমাতে না পারি তবে জীবনটাই বৃথা :|

যেই ভাবা সেই কাজ....দুজন মিলে সকালে সন্ধ্যায় হন্টন চালাতে থাকলাম তার সাথে প্রচুর সব্জি ঢুকে গেল খাদ্য তালিকায় আর সময় মেনে কার্ব হাইড্রেট খাওয়া। আমরা থাকি উডিপয়েন্ট জেটিতে, সেখান থেকে সামনের ব্রিজটা ৩কিমি লম্বা। আমরা হেটে ব্রিজ পর্যন্ত যাই আর ফিরে আসি। তাতে ৩+৩= ৬কিমি হাটা হয় এক দফায়। আর বাড়ির পেছন দিকে গেলেও হাটা পথের মার্কিং দেখে ৩কিমি হেটে গিয়ে আবার ফিরে আসা। এই ৬কিমি হাটতে আমাদের ১ ঘন্টা সময় লাগে। কখনও সকালে বিকেলে দুবার হাটি আবার কখনও শুধু বিকেলে হাটা হয় ডিনারের পরে।

এক ছুটির দিনে সময় বেশি থাকায় বাড়ির পেছনে হাটতে গিয়ে সকালে হেটে আসা হয়েছে ১০কিমি। বেশ ক্লান্ত হলাম সেদিন, ব্যাথায় পা টনটন করছে, তবে দুপুরের আবার একটু সতেজ হয়ে উঠতেই ভাবলাম সন্ধ্যায় শুধু হালকা করে ব্রীজ পর্যন্ত ৬কিমি আস্তে আস্তে হেটে আসব কারন সকালের হাটা থেকে এখনও কিছুটা টায়ার্ড। যাই হোক, হাটতে হাটতে ব্রীজে পৌছে ক্লিফকে জিঙ্গেস করলাম ব্রীজ পার হতে চায় কিনা। সে আমাকে ব্রীজ কত লম্বা জিঙ্গেস করল। আন্দাজে বললাম কত আর হবে মাইল খানেক! এই শুনে সে রাজি হয়ে গেল ব্রীজ পারি দিতে। হিসেব মতে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ৭ থেকে ৭.৫কিমি হাটা হবে।

আধা ঘন্টা হাটবার পরেও যখন ব্রীজের মাঝখানে পৌছাতে পারলাম না তখন ক্লিফ আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলে, "Ar you sure this bridge is 1k long??"। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে মিন মিন করি, "That's what i though, do you want to go back from here? We can go back if you want to"! সে বলল, "Nah let's do it..we crossover"। "পদ্মা নদির মাঝি" ছবিতে রুপা গাংঙুলি বলেছিলেন, "হায়রে পুরুষ"! সে হয়তো অন্য কারনে বলেছিলেন কথাটা তবে আমার এই সময় মনে হলো সেই কথাটাই, "হায়রে পুরুষ জীবন যাবে যাক তবু হার মানতে রাজি নয়"। ব্রীজের ওপাড়ে পৌছে উদ্ধার করলাম ব্রীজটা ৩কিমি+ লম্বা। :| ক্লিফ তখন আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে, আর কিছু বলল না। আমিও অন্য দিকে তাকিয়ে না দেখার ভান করি। পারলে সে তখন আমাকে ব্রীজের উপর থেকে পানিতে ছুড়ে ফেলে আর কি ;)। তার মানে এই ৩কিমি পথে আবার ফিরে যেতে হবে আর তার পরে ব্রীজ পার হয়ে আরো ৩কিমি হাটা তবেই না বাড়ি পৌছানো। সব মিলিয়ে সান্ধ্যকালীন হন্টন হবে ১২কিমি। আর সারা দিনের মোট হাটা হবে ২২কিমি :( = পায়ে ব্যাথায় পরের কয়েকদিন কাত :(

এবার আসল কথায় আসি....তো এই হাটা হাটি আজ অবদি চালিয়ে যাচ্ছি। ফল ও পেয়েছি ৩ সপ্তা'র ভেতরই। আমি সহজেই ঢুকতে শুরু করেছি আমার পুরোনো কাপড়ে আর সেটা পড়ে স্টাচু হবার সম্ভবনাও দুর হয়েছে। তো এই রোজ রোজ হাটা হাটি করতে গিয়ে পথে অনেক হন্টন প্রেমিকদের সাথে দেখা হয়। একটু পর পরই হাই হ্যালো করতে করতে প্রানাতিপাত আরকি। মাঝে মাঝে ভোরে ঘুম চোখে মেজাজ খারাপ নিয়ে হাটতে গেলে হাই হ্যালো করার মতন মুড থাকে না :(। রোজ আমাদের এই হন্টন Enjoyable করতে আমরা নানান জিনিস নিয়ে আলোচনা করি আর observe করি nature ও তার চারপাশকে :).

একটা ব্যপার চোখে পরে যারা রোজ হন্টনে আসেন তারা সাথে তাদের কুকুরদেরও নিয়ে আসেন....কুকুরের শরীর চর্চা আর হাগু/মুতু সারিয়ে নেন এই ফাকে....এক ঢিলে দুই পাখি মারা আরকি ;)। তো একদিন ক্লিফ বলল, "Do you know every Dog owner looks like their Dog" সত্যি বলতে কি ব্যাপারটা কখনও আমি খেয়াল করিনি। কথাটা শুনে খেয়াল করে কুকুর ও তার মালিকের চেহারার দিকে তাকানো শুরু করলাম ;) আর মনে মনে আমার যে সব বন্ধুদের কুকুর আছে তাদের ও তাদের কুকুরের চেহারা মনে করার চেষ্টা করলাম। এক সময় অবাক হয়ে নিজেই নিজেকে বলতে শুনলাম, "ঘটনা সত্য!!"। হা হা হা আশ্চর্য হলেও ঘটনা আসলেই সত্য ;) !। প্রতিটা মনিব দেখতে তার কুকুরের মতন যার কিছু উদাহরন এখানে দেখুন.... ;)










এই লেখাটিও পরতে পারেন ;)
Dogs Really Do Look Like Their Owners

কিছু দিন আগে আবার রিসেন্টলি রিলিজ পাওয়া একটা মুভি দেখলাম নাম "Red Dog"। সেটা দেখে হাপুস হুপুস কান্না করলাম হলের অন্ধকারে বসে। তো এখন ব্যপার হচ্ছে গত কিছু দিন হলো আমি নিজেও কুকুর প্রেমি হয়েছি আর পেট হিসেবে একটা কুকুর নেবার কথা সিরিয়াসলি ভাবছিলাম। মনে মনে প্রমাদ গুনি আমি তাহলে কোন কুকুরের মতন দেখতে? কুকুর আমাকে চিনে নেবে নাকি আমি আমার চেহারার কুকুর চিনে নেব??? ;)

একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলি সব শেষে। আমি কিছু দিন থেকে বেশ কিছুটা অসুস্থ। তো সেই কারনে হাসপাতালেও থাকতে হলো এক রাত। সেখানে সেদিন চারজন মানুষ হসপিটালে একই সময় অনেকটা একই ধরনের কমপ্লেইন নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মাঝে আমি একজন। দুজনের ছিল হাই ব্লাডপ্রেশারের কারনে হার্ট এ্যাটাক, আমার হাই ব্লাডপ্রেশার ও বুকে ব্যথা আর চতুর্থ জনের ছিল ড্রাগ ওভার ডোজ। আমরা চারজনই একই ঘরে পাশাপাশি বিছানায় ছিলাম। দুজন হার্টএ্যাটাকের পেশেন্টকে সতেজ হয়ে উঠতে দেখলাম আমার পাশেই। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখলাম তাদের প্রিয়জনের সাথে....আমাকেই হাই বলল হেসে। পরদিন সকালে আমি একাই বাড়ি ফিরে এলাম.......ওদের তিনজনের বাড়ি ফেরা হলো না। রাতে মৃত্যু আমার এত কাছ দিয়ে হেটে গেছে আমি জানতেও পারলাম না..........। যারা বেঁচে আছেন প্রাণ ভরে স্বাস নিন আর আনন্দে বঁাচুন। মনের সব ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করুন, যদিও সেটা শুধু মাত্র, আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো বা লাটিম নিয়ে খেলা আথবা পুতুলের বিয়ে দেবার মতন যত Silly ই হোকনা কেন....বড় হয়েছেন বলে সেই শখ গুলোকে দুরে সরিয়ে না রেখে শখ গুলো পূরণ করুন......জীবন একটাই আর সেটা খুবই ছোট, শখ আল্লাদ বলে একটা কথা আছেনা?? ;) সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
৫২টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×