১.আমার এক চাচাত ভাই। সে একাই দশজনে সমান দুষ্টমি করতে পারে। আমি বাড়িতে গিয়ে একদিন তাকে দেখিয়ে দিলাম। কি করে সারা শরীরে ধুলা মাখতে হয়। প্রথমে সে কিছুটা ইতস্ত করার পরে গায়ে ধুলা মাখতে রাজি হলো।আমি তাকে পুরো শরীরটা ধুলায় সাদা করে দিলাম। গড়মের দিনে খেলাটা তার পছন্দ হলো। এবং প্রতিদিনই দুই একবার সে এই খেলাটা করে। তার মা রেগে গিয়ে তাকে পেটাতে আসে। এবং মাঝে মধ্যে কিছু উত্তম মাধ্যম দেয়। কিন্তু প্রতিবারই তাকে ধরতে আসলে বলে আমার কি দোষ ভাইয়া আমাকে মাখতে বলেছে।
২.কয়েক দিন আগে আমার এক বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম। সাথে করে দুই হালি মাল্টা নিয়ে গেলাম। আমি জানি তার প্রথম নার্সারীতে পড়ুয়া একটি ছেলে আছে। প্যাকেটা তার হাতে দিতে দিতে বল্লাম। তোমার নাকি বাসায় খেলার বল নাই? তাই নিয়ে এলাম। সে কিছুক্ষন হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো।তারপর মাল্টার গা থেকে স্টিকার উঠিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারলো।
আমি বসে দেখছি । সে মহা আনন্দে খেলছে।
তার বাবা এবং মা দেখে দৌড়ে এল। কি কর? এটা দিয়ে কেউ খেলে? এটা কি বল?এটা মাল্টা। একটা ফল। এটা খেতে হয়।
কে শুনে কার কথা? সে উত্তর দেয়। আঙ্কেল তো বল এনেছে। এটার নাম বল। এটার নাম মাল্টা না। বল কি কখনো মাল্টা হয়?
৩.এক পুরনো অত্নীয়ের বাসায় গিয়েছি। ফুটফুটে এক পিচ্চি এসে পাশে বসলো। তার নাম জিনিয়া, চোখে চশমা। কথা বলে জানতে পারলাম স্টেন্ডার্ড টুতে পরে। এখন সব ক্লাসই স্টেন্ডার্ড হয়ে গেছে। আমরা শালায় সব ননস্টেন্ডার্ড ক্লাসে পড়েছি।
জানাতে চাইলাম। চশমা পড় কেন?
জিনিয়া: বাবা বলেছে।
বাবা কি চশমা পড়ে?
না।
তোমার মা কি চশমা পড়ে?
না।
তোমার চাচু পড়ে?
না।
তবে বাসার কে চশমা পড়ে?
শুধু আমার দাদু।
তোমার দাদুতো বুড়ো হয়ে গেছে। দাদু অসুস্থ, সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকে তাই না?
হুম।
তাহলে তুমি চশমা পড় কেন? তুমি কি বুড়ো হয়েছে ?
সে কিছুক্ষন চিন্তা করলো। তার পর চশমা খুলেফেল্ল। কিছু ক্ষন পরে পাশের রুমে রেখে আসলো।
পরদিন ঐ বাসা থেকে ফোন আসলো এই তুমি জিনিয়াকে কি শিখিয়েছ? শুধু বুড়োরা চশমা পড়ে? ছোটদের এইসব শেখাতে হয়.... ইত্যাদি ইত্যাদি।
৪.গত ঈদে, আমার বান্দর চাচাত ভাইটা ফোন দিল।
ভাইয়া বাড়িতে আস। কবে আসবে?
আমি জানতে চাইলাম কেন আসবো?
সে বল্ল গরু জবাই করবে তুমি থাকবে না? আমি কার সাথে গরু জবাই দেখবো?
আমি সহজ ভাষায় বল্লাম।না আসবো না। গরু আমার পছন্দ না। তুই বাড়িতে বল একটা হাতি জাবাই করতে তাহলে আসবো।
সে কিছু ক্ষন চিন্তা করে বল্ল কিন্তু কম্বল কাটবো কি করে?
আমি বুঝতে পারলাম না। কিসের কম্বল?
ঐ যে হাতির গায়ে থাকে।
তখন ব্যপারটা বুঝলাম। সে যে সব হাতি দেখেছে সব সাকাসের হাতি। হাতির উপর মাহুত বসে থাকে একটা কম্বল বিছিয়ে । সে মনে করেছে কম্বলটা হাতির এটা অঙ্গ। হা হা হা....। আমি ঈদে বাড়ি যাই নি। তবে সে তিন চারদিন খুব কান্না কাটি করেছে একটা হাতি কিনে আনার জন্য।
৫.দুই বছর আগের রমজান মাসের মাঝা মাঝি সময়। এক ফ্যাশন সচেতন পিচ্চিকে জিজ্ঞেস করলাম। তোমরা কি ঈদ করেছ? সে বল্ল রোজাই তো শেষ হয়নি। রোজার পরে ঈদ হবে। আমি বল্লাম আরে না। আমরাতো রোজাতে দুইটা ঈদ করি। রোজার মাঝে একটা করি আবার রোজার শেষে আর একটা করি। যত বেশি ঈদ তত বেশি জামা কাপড়। তাই না?
সে বল্ল কিন্তু আমার বাবাতো একটাই করে। দুইটা তো করে না।
গত ঈদে বাজারে ভাল জামা কাপড় ছিলনা। তাই না। আমরা যে দুইটা করি তাই আগে কিনে ফেলেছি।( আমি তার কাছেই শুনেছি সে পছন্দ মতো জামা কাপড় পায়নি)। আজকে গিয়েই তোমার বাবাকে নিয়ে শপিং করতে যাবে। এবং কালকে ঈদ করে নেবে। আমাকে কিন্তু দাওয়াত দিতে হবে। দেবেনা? হুম। দেব।
৬.আমার এক ধনী অত্নীয়ের মেয়ে তখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে। কোন এক কারনে তাদের বাসায় যেতে হয়েছে ঈদের দুইদিন আগে। তার সাথে কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম। ঈদে কয়টা জামা পেয়েছ? সে আস্তে করে বল্ল তেরটা। আমি তাচ্ছিল্যের সাথে বড় করে বল্লাম মাত্র তেরটা? শুধু তেরটা জামা পেয়েছ? কেন কেন?সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা। সুযোগ পেয়ে আমার সাথে অভিযোগ করে বাবাকে বল্লাম আর দুইটি জামা দিতে কিন্তু বাবা দেয়নি।(তার বাবা মা দুজনে তিনটি দিয়েছে বাকি গুলো এসেছে তার অত্নিয়ের কাছ থেকে গিফ্ট হিসেবে, প্রতিবারই যেমন পায়)।