somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন পিরোজপুরের এমপি আউয়াল

১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিলেন পিরোজপুরের বর্তমান এমপি আলহাজ্জ এম এ আউয়াল ওরফে সাঈদুর রহমান। তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে রাজাকার ও তৎকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা, লুট, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগের বর্ণনা দেন।

সাক্ষী এম এ আউয়াল সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা ১২তম সাক্ষী। ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০ টা বেজে ৪১ মিনিটে সাক্ষী আউয়াল তার জবানবন্দী দেন। তিনি বলেন , ১৯৭১ সালের মার্চে আমি পিরোজপুর জেলার পাড়ের হাট ইউনিয়নে ছিলাম। তার কিছুদিন পরে আমি বাগেরহাট জেলা মোড়ল গঞ্জে চলে যাই। ১৯৭১ সালে ৭ ই মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরি। এবার সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এই ভাষণ আমরা উদ্বুদ্ধ হই। পিরোজপুরের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে আমরা স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে থাকি। জনমত সৃষ্টি করে আমরা সকলে এনায়েত হোসেনের খানের নেতৃত্বে পিরোজপুরের টাউন হলে বর্তমানে স্বাধীনতার মঞ্চতে আমরা সকলে একত্রিত হই। সেদিন সমাজের সব পেশার লোক সেখানে ছিলও। সকলে এনায়েত হোসেনের কাছে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য অস্ত্র চায়। তিনি বলেন, অস্ত্র ট্রেজারিতে আছে। স্থানীয় কয়েকজন গণ প্রতিনিধিও সেদিন সেখানে ছিলও। এনায়েত হোসেনের কাছে যেসব অস্ত্র ছিলও সেসব অস্ত্র আমাদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এরই মাঝে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়। এমপি এমএলএ রাও বিপ্লবী পরিষদের সদস্য ছিলও। আমি তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।

বর্তমান অবসর প্রাপ্ত মেজর জিয়া উদ্দিন তখন লেফটেনেন্ট পদে ছিলও। তাকে পিরোজপুরের সামরিক শাখার দায়িত্ব দেয়া হলও। তার নেতৃত্বে পিরোজপুরে বহুলোক সামরিক ট্রেনিং(প্রশিক্ষণ) নিতো। ট্রেনিং চলার এক পর্যায়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিরোজপুর চলে আসে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পিরোজপুর আসতে দেখে প্রশিক্ষণ রত মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ও আমরা সকলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। অনেকে ভারতে চলে যায়। আমি ভারতে না গিয়ে মোড়ল গঞ্জে চলে যাই। সেখানে আমার সাথে মেজর জিয়া উদ্দিনের সাক্ষাত হয়। সেখানে আমি ও মেজর জিয়া উদ্দিন স্থানীয় লোকদের মুক্তিসংগ্রামে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করি। তারপর সেখান থেকে আমরা পার্শ্ববর্তী সুন্দরবনে চলে যাই। সুন্দরবনের ট্রেনিং ক্যাম্প খোলার জন্য আমরা জায়গা খুঁজতে থাকি। সুন্দরবনের স্থানীয় ফরেস্ট অফিসকে আমরা ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করি। ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে যুদ্ধের অস্ত্র ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতে চলে যাই। ভারত থেকে আমরা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ও উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে আসি। ১৯৭১ সালের ১৪ ই আগস্ট আমরা সেই অস্ত্র দিয়ে মোড়ল গঞ্জে রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করি। সে যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাক সেনা নিহত হয়। আমাদেরও ৫-৭ জন মুক্তিযোদ্ধা সেখানে শহীদ হওন।

সুন্দরবনের ওই ট্রেনিং ক্যাম্পটি প্রাথমিক অবস্থায় ছোট থাকলেও পরে এটি বিশাল আকার ধারণ করে। তখন সেটিকে সাব সেক্টর কমান্ডারে উন্নীত করা হয়। আমি সাব সেক্টর কমান্ডারের হেড কোয়াটার ছিলাম। সেখারকার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়। সেখান থেকে বহু অপারেশন(অভিযান) চালানো হয়। সেসবের দায়িত্বেও আমি ছিলাম। দিনে দিনে মুক্তিসংগ্রামে বহু সংখ্যায় লোকজন যোগ দিতে থাকে। আমরা সিভিলিয়ানদের থেকে কিছু লোককে সোর্স হিসেবে নিয়োগ করি। এই সোর্সদের মধ্যে কিছু লোককে গোয়েন্দা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করি। পাক সেনা ও রাজাকারদের গতিবিধিতে লক্ষ্য রাখাই ছিলও এদের কাজ। গোয়েন্দাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ব্যক্তি হচ্ছে মাহাবুবুর রহমান, শহীদ উদ্দিন পসারি, সিরাজ সহ অনেকে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী মে মাসের শেষ দিকে হুলার হাট দিয়ে পিরোজপুর প্রবেশ করে। পাক বাহিনী আসার পর সম্ভবত শান্তি কমিটি গঠিত হয়ে থাকবে। পাড়ের হাটে সেকান্দার শিকদারের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে এই সেকান্দার শিকদারের নেতৃত্বেই রাজাকার বাহিনী সেখানে গঠিত হয়। রাজাকার বাহিনী তে সেকান্দার শিকদার,দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীরা উল্লেখ যোগ্য ছিলও। সাক্ষী এম এ আউয়াল আরও বলেন, দানেশ আলী মোল্লা বর্তমানে মৃত। তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী উর্দু ভাষা বলত। সে কারণে তারা ভালো উর্দু জানা লোক খুঁজছিলও। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ভালো উর্দু বলার কারণে তাকে তারা দলে নেয়। সাঈদী, সেকান্দার শিকদার ও দানেশ আলী মোল্লা পাড়ের হাটের লোক হওয়ার কারণে অতি উৎসাহ নিয়ে সেখানে লুটপাট চালায়। পাক বাহিনী আসার সাথে সাথে দেলুর নেতৃত্বে পাড়ের হাটে মদন সাহার দোকান লুট হয়। সেখান থেকেই পাকিস্তান বাহিনী ২২ সের স্বর্ণ লুট করে। এই লুটের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাড়ের হাটের নাম বদলে রাখে সোনার হাট। শোনা যায় সাঈদী মদন সাহার ঘরটি লুট করে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। পাঁচ তহবিলের দায়িত্বেও ছিলেন সাঈদী।

ভাগীরথী নাম এক গরীব মহিলা বর্ণনা দেন আউয়াল। ভাগীরথী ছিলও একজন পান ব্যবসায়ী। তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য প্রধান কারী সন্দেহে পাক বাহিনীর হাতে তুলে দেয় সাঈদীর নেতৃত্বাধীন রাজাকার গোষ্ঠী। পরে এই ভাগীরথীকে জীপের পিছনের বেধে উলঙ্গ অবস্থায় পুরো পিরোজপুর ঘোরানো হয়। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হলে তাকে বলেশ্বর নদীর বেদিতে ফেলে দেয়া হয়।

ওমর ফারুক নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার ও পাক বাহিনীর সদস্যরা মাথায় বাংলাদেশে পতাকা লাগানো ১৩ টি রড় ঢুকিয়ে বলা হয় “বল জয় বাংলা”। এভাবে নির্যাতন করে ওমর ফারুককে সেদিন হত্যা করা। খবরের সূত্র এই লিংকে
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×