somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠিকানা

১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একতা এক্সপ্রেসের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে শরিফের।
তার ঘুম এমনিতেই পাতলা। তারপরেও ট্রেনটির কু-ঝিঁকঝিঁক আওয়াজের অপেক্ষায় থাকে। ট্রেনটি এসে যেন মনে করিয়ে দেয়, উঠো কাজে যেতে হবে।

শরিফ ধীর পায়ে বিছানা থেকে নামে। বিছানা অবশ্য বেশি আয়োজন করে পাতা না। একক ভাবে শোওয়ার মতন একটি চৌকি, তার উপর মলিন ম্যাদা মারা তোষক যা কিনা ছয় বছর ব্যবহারে আর ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য আকুলতা প্রকাশ করছে। তোষক এর উপর একপ্রস্থ শত ছিদ্র হওয়া কাঁথা, যা লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখার মতো আদর্শ। সবশেষে টঙ্গি বাজার থেকে কেনা কমদামি প্রিন্টের চাদর। বিছানার উপর শক্ত হয়ে যাওয়া তেল চিটচিটে বালিশ। তবে সব মিলিয়ে ঘরের সাথে এই বিছানা মানান সই।

বিছানা ছাড়ার পর শরিফের প্রথম কাজ হলো এক গ্লাস পানি খাওয়া। কোথায় যেন শুনেছিল সকালে খালি পেটে পানি খেলে সব রোগবালাই দুরে থাকে। পানি খাওয়ার পর তাকে কলসি নিয়ে যেতে হয় কলতলায়। এখন দুই ঘন্টা পানি পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে পানি সংক্রান্ত সকল কাজ শেষ করে নিতে হবে।

দোতলা পুরনো বাসার ছাদের উপর ছোট ছোট ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘরেই একটি করে দম্পতির বাস। মোটমাট দশটি পরিবার এখানে বাস করে। এই দশটি পরিবারের জন্য মোটে একটি ট্যাপ। তাই দিয়ে দিনে চারবার পানি দেওয়া হয়। এই সময় কলতলায় প্রচুর ভীড় হয়।

একহাতে অ্যালুমিনিয়ামের কলসি অন্য হাতে ব্রাশ নিয়ে বাহিরে আসে শরিফ। বেশ বড় লাইন পড়েছে। কলসিটাকে সেই লাইনের শেষ মাথায় রেখে প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনে এগিয়ে গেল। ভাগ্যটা ভালো বলে আজ লাইনে পড়তে হয়নি। সেখান কাজ শেষ করে দেখে তার কলসি ভরা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা কেন যেন একে অপরকে সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত। হয়তো ভুক্তভোগীরাই ভুক্তভোগীদের কষ্ট ভালো বুঝতে পারে।

শরিফ ঘরে এসে দেখলো সাবিনা ঘুমাচ্ছে। গরমে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তা সত্ত্বেও কি শান্তিতেই না ঘুমাচ্ছে।

গতকাল বন্ধের পর আজ আবার কাজে যেতে হবে। তাই শরীরটায় ক্লান্ত লাগলেও কিছু করার নেই। দিবা স্বপ্ন দেখার মতো তার সময় নেই। একদিন কাজ কামাই দিলে তার চাকুরীটাই থাকবে না। আগের দিনের কেনা পাউরুটি কলা খেয়ে কাজে দ্রুত রেডি হলো সে।

দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে আসে সে। দরজা এখন খোলাই থাকবে। সাবিনা ঘুমুচ্ছে, এই মুহূর্তে তাকে ডাকা মানা। অবশ্য ৩২/২৫ নং বাড়ির প্রায় সব দরজাই এভাবে খোলা থাকে। এ এলাকার চোররাও জেনে গেছে চুরি করার মতো কোন কিছু এ সমস্ত বাড়িতে নেই। কিংবা কে জানে হয়তো এটি চোরদের এক প্রকার করুণা। হাজার হলেও চোররাও মানুষ!!

ফ্যাক্টরিটা মেইন রোড থেকে একটু দুরে। দোতলা ভবনের পুরোটা জুড়ে নানান পদের মেশিনারি। তার একটিতে কাজ করে শরিফ। দুইবেলা ভালো করে কাওয়ার জন্যা তাকে করতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম। সারাদিন কই মেশিনে একই কাজ করতে হয়। যে কাজে আনন্দ নেই সেই কাজ কতদিনই বা করা যায়।

তবুও শরিফকে নিরলস কাজ করে যেতে হয়। কাজ না করলে খাবে কি? বাবার অঢেল সম্পত্তি নেই যে বসে বসে খাবে। যদিও বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায়। বাবার সম্পত্তি তো দূরের কথা তাকেই বাবা-মায়ের দেখা শোনা করতে হয়। তার কামাই করা অর্থেই বাবা-মায়ের চলতে হয়, ক্ষুদ্রঋণের বোঝা হালকা করতে হয়।

কিন্তু এমন হবার কথা ছিলনা। তাদের একসময় বেশ ভালো ভাবেই চলে যেত। জমিজমা থেকে যা পেত তাই দিয়ে তাদের সংসার চলে যেত। কিন্তু নদী সব শেষ করে দিয়ে গেল।

এইতো সেদিন তার বয়স কতই বা ছিল? ১৭-১৮। আর দশটা চরাঞ্চলের কিশোরদের মতো এই বয়সেই সে লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছিল। তাদের চরে শিক্ষার আলো সেভাবে এখনো পৌঁছায়নি। একারনে অবস্থাপন্ন কৃষক পরিবারের হয়েও পড়ালেখাটা করা হয়ে উঠেনি। আজ ভাবে পড়ালেখা করলে হয়তো এর চেয়ে সম্মানজনক একটি কাজ খুঁজে পেত।

ফসলের সময় যে ফসল পেত তাতে তাদের সারা বছর চলে যেত। বছর শেষে জমা করার প্রবনতা তাদের কারও ছিলনা। বছরে যে ফসল পাওয়া যায় তা দিয়ে স্বচ্ছন্দে চলে যায়।

কিন্তু একদিন সব শেষ হয়ে গেল।

সেদিন শরিফের আজও চোখে ভাসে। এইতো সে দিনের কথা। টানা পনের দিনের বর্ষণে নদী যেন ডাইনীর রূপ নিল। দুকূল ছাপিয়ে পানি উপচিয়ে পড়তে লাগলো। এর সাথে সাথে নদীর দুইপাড় একের সাথে অন্যে পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গতে লাগলো। সেই বানরের রুটি ভাগ করার মতো।

নদীর পাড়ে বেশ কিছু জমি ছিল শরিফদের। এর আগে কখনো তাদের জমি পর্যন্ত পানি আসে নি। কিন্তু এবার কি যে হলো! সেই ভয়াবহ বন্যায় তাদের সব জমি নদীর গর্ভে চলে গেল। নদীর সাথে সাথে তাদের ভাগ্যও বিলীন হয়ে গেল।

তখন থেকেই কাজের সন্ধানে শহরে আসে শরিফ। শরীরের জোড় থাকার পরও কোন ধরনের কাজ খুঁজে পায়না। ঢাকার রাস্তায় বেশ কিছুদিন হন্য হয়ে ঘুরেছে সে । অবশেষে দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গাজীপুর আসা। সেখানেই একটি পোষাক নির্মান কারখানায় কাজ করে সে।

গাজীপুর এসে নতুন বিপদে পড়ে শরিফ। থাকার সমস্যা। এতোদিন সেই আত্মীয়ও কাছেই ছিল সে। কিন্তু এখন তাকেই তার থাকার জায়গা খুঁজে নিতে হবে। কত জায়গায় না খুঁজল, কিন্তু কোন কিনারা করতে পারলো না। একা মানুষকে বাসা দেয় কে??

দুই একদিন খোঁজার পর ব্যবস্থাও একটা হয়ে গেল।
যেই ভাবে ব্যবস্থা হলো সেই ভাবে অনেককেই থাকতে হয়। এছাড়া কি বা করার আছে।

এ এলাকায় কোন অবিবাহিতদের ভাড়া দেওয়া হয়না। অবিবাহিতরা কোন সমস্যা করেনা, সমস্যা করার সময় কোথায়? তারপরও মালিকরা ভাড়া দেয়না।

তার থাকার সমস্যার সমাধান করে দিল সেই দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়। যে প্রথম থেকেই সহায়তা দিয়ে আসছে। কথা শুনে শরিফ প্রথমে রাজি হয়নি। আর হবেও কি করে। বিয়ে না করেও তাকে একজনের স্বামী সাজতে হবে, অপরিচিত একজন মেয়ের সাথে তাকে ভাড়া নিতে হবে বাসা, স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে। তাও কি সম্ভব। কিন্তু প্রয়োজন কোন আইন মানেনা।

সেই থেকে সাবিনার সাথে তার সাজানো বানানো সংসার। খোঁজ নিয়ে দেখেছে এ এলাকার প্রায় সবাই এভাবেই বাসা ভাড়া নিয়েছে। সমস্যা যে হয়না তাওনা। কিন্তু কিছুই করার নেই। প্রয়োজনে অনেক অনিয়মকেই নিয়ম বানিয়ে নিতে হয়।

সাবিনা একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তার সাথে পরিচয় সেই আত্মীয়ের মাধ্যমে। একদিন কাজ করতে ছিল এমন সময়ে শরীফের সেই আত্মীয় এসে বলল, শরিফ তোর বাসার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

অতি উৎসাহের সাথে বলে কোথায় বাসা পেলে?
বিকেলে ছুটির পর সব বলছি।
সারাদিন খুশি মনেই কাজ করেছে সে। আজ তার মনে অনেক আনন্দ। গ্রাম ছাড়ার পর এতো আনন্দ তার হয়নি। বেশ কিছুদিন হয়ে গেল কাজ পেয়েছে, কিন্তু থাকার জায়গা না পাওয়ায় অন্যের বাসায় থাকতে হয়েছে। আজ তার নিজের একটি থাকার জায়গা হবে, হোক তা ভাড়া, কিন্তু নিজের বাসা তো।

কিন্তু বাসা পাওয়ার শর্ত শুনে তো থ। এমন প্রস্তাব পাবে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু থাকার জায়গা নিয়ে কথা। এভাবে না হলে পাওয়াও যাবে না। তাই এ শর্তেই রাজি হয় সে। সেই থেকে এভাবে সংসার পাতা।

এ শহরে বাসা পেতে হলে পরিবার থাকতে হবে। কিন্তু শরিফ তো বিয়েই করেনি। পরিবার পাবে কোথায়?
এজন্যই শরিফের সেই আত্মীয় সাবিনাকে জোগাড় করেছে। সাবিনারও থাকার জায়গা নেই। প্রথমে সাবিনাও রাজি হয়নি, কিন্তু এ ছাড়া তার দ্বিতীয় কোন রাস্তাও নেই, এই মাসেই তাকে বাসা খুঁজে পেতে হবে নচেৎ কাজ ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হবে।

শরীফের সেই আত্মীয় বলল, তোরা স্বামী-স্ত্রী সেজে বাসা নে।
কিন্তু তাই কি হয়? এভাবে একজন যুবতী মেয়েকে স্ত্রী সাজিয়ে বাসা ভাড়া নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার।
শরিফ রাজি হতে চায় না।
সাবিনার প্রয়োজনটা একটু বেশিই। তার এ শহরে থাকার মতো আর কোন জায়গা নেই। গ্রাম সম্পর্কীয় এক বোন ছিল, তার কাছেই এতোদিন ছিল। কিন্তু দুদিন পরই বোনটি ঢাকা চলে যাবে। সেখানে অন্য ফ্যাক্টরিতে চাকুরি পেয়েছে।

পরদিন অনেক ভেবে রাজি হয় শরিফ। রাজী হতেই হয়। সব কিছুর উপরে প্রয়োজন। প্রয়োজনে অনেক কিছুই করতে হয়, তাছাড়া সাবিনার যদি কোন সমস্যা না হয় তবে তারও হবেনা।

শুরু হয় সম্পর্কহীন সাজানো দাম্পত্য জীবন! দুজনের কাজের শিফট দুই সময়ে। একজন যখন কাজে যায় তখন আরেকজন ফিরে এসে ঘুমানোর আয়োজন করে। ফলে দেখা সাক্ষাত হয় কম কম। একজন যখন কাজ শেষে ঘরে ফিরে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় যায় তখন অন্য জন জেগে উঠে কাজে যাওয়ার প্রস্ততি নিতে।

সেই সময়টাতে কখনও কখনও টুকিটাকি কথা হয়। সামান্য কথা, যার বেশির ভাগই দরকারী। বাসা ভাড়া দেওয়া কথা, বাজার করার কথা, টুকিটাকি কেনাকাটার কথা।

না তাদের মাঝে কোন রোমান্টিক কথা হয়না। রোমান্টিক কথা বলার মতো সময়ও তাদের হাতে নেই, বিলাসিতা করার সুযোগও নেই। তাদের জীবনটা একেবারে যান্ত্রিক।

আজ দুই বছর হতে চলেছে। এভাবেই চলছে। দুইজন পাশাপাশি, কাছাকাছি; কিন্তু তারপরও কাছাকাছি না, যেন তারা দুইজন যোজন যোজন দূরের বাসিন্দা। এতোদিন পাশাপাশি থেকেও শরিফ কখনো সাবিনার প্রতি মন্দ আচরণ করেনি। পুরুষরা হাতের কাছে মেয়ে পেলে যেমন বাঘের মতো হয়ে যায় তা শরীফের মাঝে প্রকাশ পায়নি।

তবে কখনও যে মন্দ আচরণ করতে ইচ্ছে করেনি তা নয়। অনেকবারই অনেক কিছু ভেবেছে। মাঝে মাঝে ভাবে আহা, এই সুন্দর মেয়েটির মতো তার যদি একটি সুন্দর বৌ থাকতো, এই মেয়েটিই যদি তার বৌ হতো তবে কি এমন ক্ষতি হতো?

সাবিনা দেখতে শুনতে আর দশটা মেয়ের চাইতেও বেশ সুন্দরী। খুব বেশি লম্বাও না আবার খুব যে খাটো তাও না। বড় কোন ঘরে জন্মালে বেশ ভালো একটি বর পেত।

অবশ্য এই হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে স্বাস্থ্য অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও সৌন্দর্যের এতোটুকু ঘাটতি হয়নি। রাস্তায় বের হলে বখাটে ছেলেরা সে সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে একটুকুও কার্পণ্য করে না। তবে প্রশংসার সাথে সাথে অনেক বাজে মন্তব্যও কানে আসে। তবে তা কানে নেয় না। রাস্তায় চলতে গেলে কুকুর ঘেউ ঘেউ করতেই পারে। ওগুলো গা সওয়া হয়ে গেছে।

আজ শুক্রবার।
সপ্তাহে এই একটি দিন শরিফ সাবিনা বেশ কিছুটা অলস সময় হাতে পায়। সকালে শরিফ বাজার থেকে ছোট মাছ এনেছিল, সাবিনা তাই রান্না করছে।

তরকারিতে ঝোল দিয়ে সাবিনা বলল, আজ একটু সময় হবে, বিকালে মার্কেটে যেতাম।
শরিফ আধশোয়া অবস্থায় বলল, হঠাৎ মার্কেটে? কি কিনবে?
ছোট বোনটার জন্য একটি শাড়ি আর মায়ের জন্য কাপড়।
মাসের আজ পনের তারিখ, এই সময়ে তুমি এগুলো পাঠাবে কার হাত দিয়ে?

সাবিনা তরকারির লবন হয়েছে কিনা তা দেখে বলল, ছোট বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে, গতকালই চিঠি পেয়েছি। কাল যাব। আর সামনের মাস থেকে আপনাকে আর কাউকে খুঁজে নিতে হবে। মা লিখেছে, আমাকে আর এখানে কাজ করতে হবেনা। এখন থেকে বাড়িতেই থাকবো।

শরিফ কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
সামনে তার ঘোরতর বিপদ। সাবিনা বাড়ি ছেড়ে দিলে তাকে আরেকজন ভাড়াটে খুঁজে নিতে হবে। না হলে এ বাড়িও ছেড়ে দিতে হবে। ডবল ভাড়ায় তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। তার মানে আবার নতুন করে আশ্রয়হীন হওয়া।

সারাটা বিকেল মার্কেটে কাটালো তারা। সাবিনার মার্কেটে ক্লান্তি নেই। এ দোকান ও দোকান ঘুরে ঘুরে দেখছে। কিছুই পছন্দ হচ্ছে না। তার স্বল্প বাজেটে ভালো জিনিস পাওয়াই দুস্কর।

শরিফ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। সে কখনও এতোটা সময় সাবিনার সাথে কাটায় নি। আজ মার্কেটে এসে তার অন্য রকম মনে হচ্ছে। সাবিনার গায়ের গন্ধ, সাবলীল ছুটে চলা, পছন্দের ব্যাপারে শরীফের মতামত নেওয়া এসবই শরিফকে ভাবিয়ে তুলছে।

এতোদিন কাছে থাকার পরও শরীফের এমন বোধ হয়নি।

আজ এ অবেলার হঠাৎ তার একি হলো??

হঠাৎ কি মনে করে শরিফ একটি লাল শাড়ি কিনে ফেলল। সাবিনার হাতে দিয়ে বলল, এটা রাখো, এটা তোমার জন্য আমার উপহার। সাবিনা শাড়ি পেয়ে খুশি হলো। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না।

মার্কেট শেষে সন্ধায় সাবিনা তার নাইট ডিউটিতে চলে গিয়েছে। সন্ধাটা শরিফ বাহিরে বাহিরে ঘুরে কাটিয়ে দিয়েছে। আজ তার কোন কিছুতেই মন বসছে না। ঘরে ফিরে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো। ঘরটা আজ তার কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বিশাল এই পৃথিবীতে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। কাউকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা।

কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা আর মনে নেই। জেগে উঠে দেখলো সাবিনা কাজ শেষে বাসায় এসে সব কিছু গোছাচ্ছে। চোখাচোখি হতে সাবিনা চোখ নামিয়ে নিল। ওর চোখে কি পানি না শরিফ ভুল দেখলো??

শরিফ চোখ মেলে দেখলো সকাল হয়েছে।
সাবিনাকে দেখে বললো, ট্রেন কি চলে গিয়েছে?
হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই চলে গিয়েছে।
হাত মুখ ধুয়ে আসার পর সাবিনা শরিফকে বললো একটু স্টেশনে পৌছে দিতে।
স্টেশনে যাওয়ার পথে দুইজনই চুপ করে রইলো। কারও মুখে কথা নেই। দুইজনই কি যেন ভাবছে। যেন নিরবতা দিবস পালন করছে।

সাবিনা ট্রেনে চড়ে বসেছে। একটু আগে হুইসেল দেওয়া হয়েছে, এখন চাকা ঘুরছে। স্টেশন ছেড়ে ট্রেন গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এই সময়ে শরীফের যেন চোখ খুলে গেল। কালকের অস্থিরতার জবাব আজ সে খুঁজে পেয়েছে।

হ্যাঁ সে সাবিনাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু তাকে বলা হলো না যে? এতদিন পাশাপাশি থেকেও সাবিনার ঠিকানা জানা হয়নি। কিন্তু কিছুই করার নেই। জানে কিছু করতে পারবেনা। তারপরও ট্রেনের সাথে সাথে দৌড়াতে লাগলো। এখন তার জীবনের একটাই লক্ষ্যে, ঐ ছুটে যাওয়া ট্রেনটিকে ধরা। যেন ওখানেই তার জীবনের সকল পাওয়া।।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×