প্রিয়তমা,
তোমাকে কোনদিন লেখা হয়নি। লিখবো লিখবো করেও, লেখা হয়নি। কতবার ভেবেছি, রোমান্টিক একটা কবিতা তোমাকে ভেবে লিখবো। লেখা হয়নি। আজ আমার এক বন্ধুকে নিয়ে সবাই কাঁদছে। জানি, তুমিও কাঁদছো। তোমার কান্না হয়তো একদিন থেমে যাবে, বাস্তবতার কঠিন থাবার আঘাতে। তুমি অনেক রাগ করতে। বলতে, এসব ভালো লাগেনা। রাজনীতি শব্দটা তোমার কখনোই ভালো লাগেনি। তুমি হয়তো জানতে,এই রাজনীতিই আমাকে তোমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাবে।
তুমি কি আমাকে ঘৃনা করো? নোংরা রাজনীতিতে সক্রীয় বলে? বিশ্বাস করো, আমার কোন ইচ্ছে ছিলোনা। আর দশটা ছেলের মতো আমিও স্বপ্নের ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছিলাম, উচ্চশিক্ষার আশায়। যেদিন ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে টিকেছিলাম, চোখে জল এসেছিলো খুশিতে। এতবিশাল ক্যাম্পাস! এটা আমার! এখানে আগামী অনেকগুলো বছর আমি নিশ্বাস নেবো। এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনে মেতে উঠবো আড্ডায়। ভর্তি হবার পর র্যাগিং দেখে ভয় পেলাম। ওরা বললো, র্যাগিং ছোটভাইদের আপন করে তোলে। আমিও ওদের আপন হয়েছিলাম। ওদের সাথেই থেকেছি। ওরা রাতে গাঁজার কল্কিতে টান দিতো। হলের রুমগুলো গাঁজার ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যেতো। আমাকেও ওদের একজন হতে হয়েছে। ওদের আপন না হলে মানষিক নির্যাতন চলে। সেই ভয়ে ওদের পাশে পাশে থেকেছি। ওরা আমাকে মিছিলে টেনে নিয়েছে, বাধ্য করেছে।
তোমার মনে আছে? একদিন তোমাকে নিয়ে সারাদিন ঘোরার কথা ছিলো। তোমার জন্মদিন ছিলো। ওইদিন সকালে এক বড়ভাই এসে ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলেছিলো, আজ সারাদিন ক্যাম্পাসে শো-ডাউন দিতে হবে। নতুন ছাত্ররা ভর্তি হয়েছে। ওদের কাছে আধিপত্য প্রকাশ করতে হবে। সারাদিন ওদের সাথে ছিলাম। তুমি সেদিন অনেক কেঁদেছিলে।
কতজনকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছি। ওরা বলেছিলো, তাই করেছি। ওদের কথা শুনতে হয়। জুবায়ের কে কারা কুপিয়ে মেরেছে,জানিনা। তবুও, আমি জানি আমি ওদের একজন। আমি ওদের সমর্থক বনে গেছি। এই হত্যা আমাকে কাঁদায়নি। আমি পশু হয়ে গেছি, প্রিয়তমা। আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সামনে আর কোনদিন দাঁড়াবোনা। আমি হাত ছুঁয়ে রক্ত পড়ছে। তুমি রক্ত সইতে পারোনা, জানি।
প্রতিপক্ষের হামলায় যদি, কোনদিন আমি লাশ হয়ে যাই। আমার জন্য কেঁদোনা। একটা পশুর জন্য কাঁদতে নেই।
ভালো থেকো।
ইতি
একজন মেধাবী পশু।