somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মহান সাধকের সমাধিপাশে- অনুভূতি ও অভিব্যক্তি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঈশা খাঁর সোনারগাঁও মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় যখন পৌঁছি- বেলা তখন দ্বিপ্রহর।
এক মহান সংগ্রামী সাধক এবং তাঁর সাথীবর্গের সমাধি যিয়ারাতের উদ্দেশে আমি আজ এখানে এসেছি- এ ভেবে আমার হৃদয় ও মন পুলকিত হলেও সঠিক গন্তব্যস্থান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় আমি ছিলাম যুগপৎ চিন্তিত।
১৪শ শতাব্দীতে বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা (মরক্কো) এ এলাকা সফর করেছিলেন। তার সফরনামায় এখানকার বিবরণ রয়েছে।

এক রিকশাচালককে বিজ্ঞভাব চেহারায় ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মাজারে যাবেন? সে রাজী হলো এবং আমাদেরকে নিয়ে চললো।

রিকশা যাচ্ছে তো যাচ্ছে। অনেক দূর গিয়ে সে যেখানে আমাকে নামিয়ে দিল- জায়গাটির নাম পাঁচ পীরের দরগাহ।
একটি সামিয়ানা টানানো ইমারতে পাঁচটি মাযার। আমি নেমেই শায়খ আবু তাওয়ামার সমাধি খুঁজতে লাগলাম কিন্তু তার কোনো হদিস পেলাম না। নামফলকে পাঁচটি নাম পেলাম কিন্তু তাতে আবু তাওয়ামার কোনো চিহ্ন দেখতে পেলাম না।

আমি দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছিলাম- আসল জায়গায় এসেছি কিনা এই আশংকায়। কোনো উপায় না দেখে অবশেষে পাঁচ পীরের মাজার সংলগ্ন প্রাচীন মসজিদে হাজির হয়ে ইমাম সাহেবের শরণাপন্ন হলাম। তিনি আমাকে শায়খের সমাধিস্থলের নাম বাতলে দিলেন। মাজার সংলগ্ন কয়েকজন এ মাজারগুলো হযরত শাহজালাল ইয়ামানী রহ. এর সাথে আগত সাথীবর্গের বলে দাবী করলেও ইমাম সাহেব ওয়াল্ল্হাু আ’লাম বলে নিজের দায় সারলেন। আবার ছুটলাম পেছনপানে।

এ জায়গাটির নাম সাহেব বাড়ী।
অনেকগুলো প্রাচীন কবরের মধ্যে শায়খ আবু তাওয়ামার কবরখানা সবুজ রঙ দিয়ে চিহ্নিত।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে তুঘলক শাসনামলে বুখারা থেকে আগত শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা দিল্লী হয়ে এখানে এসেছিলেন। সুলতান শামসুদ্দীন আলতামাশের শাসনামলে তিনি দল্লীর প্রখ্যাত উসতাযবৃন্দের মধ্যে জ্ঞানমার্গের একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক স্বরূপ ছিলেন- সম্ভবত সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের রাজত্বকালে শায়খের দরবারে ব্যাপক লোকসমাগমের ফলে এবং হিংসুকদের ঈর্ষাকাতরতায় বাদশাহর ইঙ্গিতে তিনি দিল্লী ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সে যুগে ভারত বর্ষের মুসলিম সাম্রাজ্যের শেষ সীমান্ত এই সোনারগাঁও শহরে এসে তিনি নতুনভাবে ইসলাম ও ইলমের প্রচার প্রসার শুরু করেন।

ইতিহাসের প্রখ্যাত পীর ও বুযুর্গ মাখদুমুল মুলক হযরত শায়খ শরফুদ্দীন আহমদ ইয়াহইয়া মুনায়রী রহ. এখানে এ মহান শায়খের দরবারে থেকে দীর্ঘদিন সোহবতপ্রাপ্ত হন।

শায়খ আবু তাওয়ামার শানে নিজের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি খাওয়ানে পুর নেয়ামত নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “মাওলানা শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা এমন একজন আলেম ছিলেন সমগ্র ভারতবর্ষের দৃষ্টি ছিল যার প্রতি নিবদ্ধ এবং সেকালে জ্ঞানের জগতে তার সমকক্ষ কেউ ছিলনা।”
তাকে কেন্দ্র করে তৎকালে এখানে ইলম শিক্ষার জন্য প্রচুর ছাত্র ও জ্ঞান পিপাসুরা সমবেত হয়েছিল এ অঞ্চলে।

ছায়াঢাকা নিরিবিলি একটি স্থানে তিনি আজ শায়িত। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এ মহান শায়খ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমাদের এ উপমহাদেশে ইলমে হাদীসের প্রচারক হিসেবে তার যে অবদান- তা স্মরণ করে বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত দায়ী ও কলমসম্রাট সাইয়্যেদ আবুল হাছান নাদভী রহ. তার ঢাকা সফরে এসে সর্বপ্রথম সোনারগাঁও এসে এই কবরে সালাম জানিয়েছিলেন।

সেসব কথা মনে করে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হলো আমার হৃদয়। আমি যিয়ারাতের অযিফা শেষ করে অন্যান্য কবরের পাশ দিয়েও কিছুক্ষণ সময় কাটালাম।

শায়খ আবু তাওয়ামার কবর ছাড়াও হযরত ইব্রাহীম দানেশমন্দী রহ. এর কবরখানা ইমারত কর্তৃক আচ্ছাদিত।

পাশেই রয়েছে প্রাচীন মসজিদ। মসজিদের বারান্দায় মক্তব পড়াচ্ছিলেন একজন হুজুর। আমাদের আবেদনে তিনি মসজিদের দরওয়াজা খুলে দিলেন এবং আমরা অভ্যন্তরে প্রবেশ করলাম। আশেপাশে শিলালিপি খ্জুলাম কিন্তু তেমন কিছু পেলামনা। মেহরাবের উপরদিকে ডানপাশে কিছু একটা লিখিত ছিল কিস্তু আলো স্বল্পতার কারণে এর মর্মোদ্ধার আমাদের জন্য সম্ভব হলো না।

কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা বাহিরে চলে এলাম এবং প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত কবরগুলোর যিয়ারত শেষ করলাম। আমার হৃদয়জগতে তখন বিরাজ করছিল তৃপ্তি ও প্রাপ্তির এক ভিন্নরকম অনুভূতি।

দীর্ঘদিন লালিত স্বপ্নটি আজ পূরণ হলো। হাদীস শাস্ত্রের এতো বড়ো একজন মহান সাধকের মাযার যিয়ারাতের মাধ্যমে হাদীছে নববীর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক যেন আরও গভীরতর হল্। কৃতজ্ঞচিত্তে আমি শোকরিয়া আদায় করলাম মহান রবের। লোকশিল্প জাদুঘর, পানাম সিটি ছাড়াও আরও বেশকিছু দর্শনীয় প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে এ সোনারগাঁওয়ে। কিন্তু সময় ছিল সংক্ষিপ্ত- রোদ ছিল তীব্র। তাই সঙ্গত কারণে বেশীক্ষণ দেরী করা সম্ভব ছিলনা। আছরের আযানের বেশ খানিক আগেই আমরা ফিরে চললাম।


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×