somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকালে যেন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে পারেন সে জন্য ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে পঞ্চগড়ের হাফিজউদ্দিন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভালোবাসার এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত পঞ্চগড়ের হাফিজউদ্দিন যিনি প্রিয়তমা স্ত্রীর কবরের পাশে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ২৭টি বছর।

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের মৃত বরকত আলী মিয়ার ছেলে বর্তমানে অশীতিপর মোঃ হাফিজউদ্দিন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের দুই বছর পর বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন ৬ বছরের শুকুরী বিবিকে। বিয়ের ৭-৮ বছর পর্যন্ত ছোট্ট শুকুরী হাফিজউদ্দিনের মা সূর্যবানু বিবির সঙ্গেই থাকতেন। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে দু'জনের সংসার শুরু হয়। প্রেম-ভালোবাসায় ভালোই কাটছিল হাফিজ-শুকুরীর সংসার। বিয়ের ১৯ বছরের মাথায় স্ত্রী শুকুরী মারা যান। স্ত্রীর এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি নিঃসন্তান হাফিজ।
স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করেন হাফিজ; বলেন, 'মৃত্যুর আগের রাতে বিবি আমার কাছে মিষ্টি খেতে চেয়েছিল, মিষ্টি এনে দিয়েছিলাম। রাতে দু'জনে মিলে মিষ্টি খেয়েছি। রাতভর দু'জনের অনেক কথা হলো। 'আমার জন্য কানবেন না, আমি থাকব না এমন কথা বলে পরদিন বিবি আমার হাঁটুতে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।'
স্ত্রীর এমন বিদায়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন হাফিজ। দাফনের পর ছুটে যান স্ত্রীর কবরে। ডাকতে থাকেন তার প্রিয় সঙ্গিনী বিবিকে। কিন্তু সেই আকুলতায় সাড়া দেননি শুকুরী বেগম। হাফিজ ভাবেন, 'আগের রাতে বিবি আমার সঙ্গে ছিল, কথা বলেছে, আজ কেন নেই। কোথায় গেল তার আত্মা।'
স্ত্রীর আত্মার খোঁজে গৃহত্যাগ করেন হাফিজ। হেটে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। আহার ও নিদ্রাহীন ঘুরতে ঘুরতে কুমিল্লার সোনাকান্দা এলাকায় এক পীরের সান্নিধ্যে আসেন হাফিজ। আবদুর রহমান নামের ওই পীরের দরগায় শুরু করেন সাধনা আর তপস্যা।
পীরের দরগায় ৪১ দিন কবরের ভেতর এবং ১ বছর ভাত না খেয়ে দুধ আর কলা খেয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে ১৯৭১ সালে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের পর ১৯৭৮ সালের দিকে হাফিজউদ্দিন নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। ওই সময়ের অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখ হাফিজউদ্দিন স্ত্রীর কবরের পাশে আশ্রয় নেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে ঘর তুলে বসবাস করেন হাফিজউদ্দিন। এ দীর্ঘ সময়ে বনজঙ্গলে ঘেরা নির্জনস্থানে ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে।
২০০৬ সালে আত্মীয়-স্বজনদের চাপে বিবির কবরস্থান ছেড়ে আসতে হয় হাফিজউদ্দিনকে, সবাই মিলে জোর করে বিয়ে করান আরেকটি। কিন্তু কবরস্থান ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি তিনি। বাড়ির বাইরে নিজের কবর খুঁড়েছেন তিনি। সেখানেই ঘর তুলে বাস করছেন এখনও। তার বর্তমান স্ত্রীর সন্তানরাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাকপুর গ্রামে গিয়ে হাফিজউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার জীবনকাহিনী। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে হাফিজউদ্দিনের। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে তিনি জানান, সংসার জীবনে আমরা একে অন্যকে ছেড়ে কখনও ছিলাম না। বিয়ের পর থেকে একাত্ম হয়ে দু'জন দু'জনকে অনুভব করতাম। কেউ কাউকে কষ্ট দিইনি।
হাফিজ জানান, স্ত্রীর কবরের পাশে ২ অগ্রহায়ণ বসবাস শুরু করার কারণে বর্তমানে প্রতি বছরের ওই তারিখে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন তিনি। মৃত্যুর পর পরকালে যেন বিবির সঙ্গে মিলিত হতে পারেন, বারবার এমন দোয়া কামনা করেন হাফিজউদ্দিন।



উৎসঃ UKBDNEWS (হ্যাঁ, প্রেম চিরন্তন: ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:১৫
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×