somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রীক পাতালনদী -২

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব এর পর -

Lethe: গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, Lethe হল ভ্রান্ত মনের নদী। আক্ষরিক বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় অমনোযোগীতা এর নদী [river of unmindfulness]। এটি পাতালগুহা Hypnos এর চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে পাতালের কেন্দ্রের এক বিশাল জলাধার এ পতিত হয়েছে। এই গুহার ভিতরে, গ্রীক ঘুম-দেবতা Hypnos ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে। এই নদীর পানি প্রবাহের শব্দ তন্দ্রার সৃষ্টি করে। যতদিন পানি প্রবাহিত হবে ততদিন Hypnos ঘুমিয়েই কাটাবেন। পৌরাণিক মতে, এই নদীর পানি পান করলে আত্মারা তাদের পূর্ব-জীবনের সব কথা ভুলে যায়। প্রথম শতকের রোমান কবি Publius Papinius Statius তার রচনায় উল্লেখ করেছেন যে, Lethe প্রবাহিত হয়েছে Elysium এর চারপাশ ঘিরে। Elysium হল দেবতাদের কাছের ও ধার্মিক লোকজনের পরকালের বিশ্রামের জায়গা। পাপিষ্ঠ আত্মারা যখন নদী পার হয়ে Elysium এ আসতে চায় তখন তারা পানির ছোঁয়ায় সব ভুলে যায় ও ডুবে যায়। অপর কিছু সাহিত্য অনুসারে, যখন কোন আত্মার পুনর্জীবন হয় তার আগে সেই আত্মাকে Lethe এর পানি বাধ্যতামূলক ভাবে পান করানো হত যাতে সে পূর্ব জীবনের সব কিছু ভুলে যায়। প্রাচীন সাহিত্যে বর্তমান পর্তুগাল এবং স্পেন এর মাঝের Limia River এর পানিকেও বলা হত স্মৃতিভ্রমের কারন। রোমান যখন অন্য রাজ্য দখলের জন্য চলার পথে এই নদীর তীরে আসে তখন সৈনিকরা ভয়ে নদী পার হতে চাচ্ছিল না। তখন রোমান সেনাপতি Decimus Junius Brutus প্রথম এই নদী পার হন এবং ওপার থেকে একে একে সব সৈনিক এর নাম বলেন। ফলে সৈনিকরা বিশ্বাস করে যে, দেবতারা এবারের মত তাদের স্মৃতি নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন না:P। Mnemosyne নামে অপর একটি নদীর কথা জানা যায় যার পানি পানে আবার সব স্মৃতি ফিরে আসে।
বাস্তবেও কিন্তু Lethe নদীর অস্তিত্ব আছে:|। আলাস্কার Ten Thousand Smokes এর উপত্যকায় Lethe নামের একটি নদী রয়েছে। এটি মাউন্ট Katmai থেকে ১৮ কিলোমিটার পূর্বে।



Phlegethon/ Pyriphlegethon: গ্রীক পৌরাণিক এই নদীর নামের বাংলা অনুবাদ করলে হয় আগুনের নদী [ River Of Fire]। পানির নদী না বলে একে জলন্ত লাভার নদী বলাই ভালো। মাউন্ট টারটারুস থেকে উৎপন্ন হয়ে নরকের চারপাশের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে শেষে নরকের কেন্দ্রে এক বিশাল জলাধারে পতিত হয়েছে। বর্তমান যুগে আমরা যাকে আগ্নেয়গিরির লাভা বলে থাকি দার্শনিক Plato অনেক আগেই তাকে Phlegethon এর পানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা মাঝেমাঝে পাতাল থেকে আমাদের পৃথিবীতে উঠে আসে। অপর কাহিনী অনুসারে, দেবী Styx একসময় Phlegethon এর প্রেমে পড়েন কিন্তু তার উত্তাপে দেবী যখন ভস্মীভূত হন তখন জিউস তাকে পাতাল এ পাঠান। পাতালে Styx এবং Phlegethon সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে শেষে এক মোহনায় মিলিত হয়েছে।
কবি Dante Alighieri তাঁর বিখ্যাত The Divine Comedy – এ Phlegethon কে রক্তের নদী হিসেবে বর্ণনা দিয়েছেন যেখানে পাপিষ্ঠ আত্মারা দগ্ধ হয় চিরন্তর। নদীর চারপাশ পাহারা দেয় নরকের প্রহরী centaurs , ফলে পাপিষ্ঠ আত্মারা পানি থেকে উঠে আসতে পারে না। যেইসব খুনি, স্বৈরশাসকরা ইহকালে অকারণে রক্ত ঝরিয়েছে সাধারণ মানুষের তাদের জায়গা হয় এই নদীতে। Dante’s Inferno গেমটি তে আমরা এই নদীতে ডুবন্ত অবস্থায় Attila the Hun, Alexander এইরকম অনেককে দেখতে পাই।


Cocytus/Kokytos এটি হল পাতালরাজ্যের সব থেকে ভিতরের দিকের নদী। নরকের ৭ম স্তর ঘিরে এই নদীর অবস্থান। বাংলায় “Cocytus” এর মানে দাঁড়ায় বিলাপের নদী [the river of wailing/lamentation]। একে নদী না বলে বরফ জমা নদী বলাই ভালো। কারন এর পানি সবসময় বরফ হয়ে থাকে। এর চারপাশের পরিবেশ হিমশীতল। গ্রীক পুরাণ থেকে জানা যায় এই নদী হল সেই সব পাপিষ্ঠ দের আবাসস্থল যারা পূর্বজীবনে লোকজনদের সাথে প্রতারণা করেছে ও ঠকিয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। সেইসব ভণ্ড নবীদের ও জায়গা এখানে যারা মিথ্যা ধর্ম প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। তাদের কর্মের গুরুত্তের ভিত্তিতে তাদের গলা পানি থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ বরফ পানি তে দুবিয়ে রাখা হবে অনন্তকাল। প্রাচীন গ্রীস এর সর্বশ্রেষ্ঠ শয়তান [বর্তমানে আমাদের ইবলিশ অথবা খ্রিশ্তানদের লুসিফার ই হবে :D] এর ও জায়গা হয়েছে এইখানে।
প্রাচীন কাল থেকেই Cocytus নদীকে কবি-সাহিত্যিকেরা তাদের রচনায় ব্যবহার করেছেন। Homer, Cicero, Aeschylus, Plato থেকে শুরু করে পরবর্তীতে জন মিলটনের Paradise Lost এও এই নদীর বর্ণনা পাওয়া যায়।



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×