somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীসা নিয়ে ভাবছেন না কেন ?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জমিদারী আমলে জমিদারী বা জমিদারদের আভিজাত্য প্রকাশের জন্য তাঁরা হুক্কা নামক এক ধরনের পাইপ টানত । কিংবা বিভিন্ন সম্রাট তাদের সৌখিনতায় এই হুক্কা সেবন করত। মুখে পাইপ নিয়ে টেনে মুখের ভেতর থেকে ধোঁয়া ছাড়ত । ধারনা করা হয় এই উপমহাদেশে প্রথম মোঘল সম্রাট আকবরের পারস্য কবিরাজ আবুল ফতেহ্ জিলানী হুক্কার ডিজাইন উদ্ভাবন করেন । তামাক পোড়ানো ধোঁয়া পানিতে পিউরিফাই এবং ঠান্ডা করে সেবন করা শুরু হয় তখন । দেশ ও অঞ্চল ভেদে হুক্কা বিভিন্ন নামে পরিচিত । আরবীয়রা এটাকে Nargileh বলে থাকে । এছাড়াও Nargeela, Argileh, Argilee ইত্যাদি নামেও বলা হয় । উপমহাদেশে এটি হুক্কা নামে পরিচিত । তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ছিলুম বা ছিলিম নামে পরিচিত । আবার কোথাও গড়গড়া বা গুড়গুড়ি নামেও পরিচিত । তবে Nargileh শব্দটি পারসিয়ান শব্দ Narghile হতে উৎপত্তি । ধারনা করা হয় এটা সংস্কৃত শব্দ “নারিকিলা” এর পরিবর্তিত রূপ । অনেকে ধারনা করে থাকেন এর নামের উৎপত্তি আমাদের দেশীয় নারিকেলের হুক্কা থেকেই ।

উপমহাদেশের কথা বাদ দিলে ইউরোপ আমেরিকায় এটি Shisha নামে পরিচিত । বর্তমানে সারা বিশ্বে এই সীসার জনপ্রিয়তা অনেক । মূলত Shisha শব্দের অর্থ তামাক । অনেকে বলে থাকেন Shishe মানে কাঁচ । হুক্কার নিচে পানির জারটা কাঁচের তৈরী হয়, তাই হয়তো এটা ভাবা। গ্রাম বাংলায় নারকেলের খোল দিয়ে হুক্কা তৈরী করা হত । কাঁঠের নলের উপর তামাক রাখার একটি কলকে থাকত । কিন্তু বিদেশী হুক্কার সাথে এই হুক্কার গঠন প্রনালীর পার্থক্য রয়েছে । তবে গঠনে পার্থক্য থাকলেও কাজ একই । শিশার গঠনে সবার ইপরে থাকে মাটি বা মার্বেলের তৈরী কল্কে যার ভিতরে থাকে তামাক এবং জলন্ত কয়লা । নিচে কাঁচের তৈরী পানির জার । মাঝের অংশে থাকে স্টিলের পাইপ । নিচের অংশে ধোঁয়া টানার পাইপ এবং অপর দিকে একটি নির্গমন ভাল্ব সংযুক্ত । বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যে হুক্কার ব্যবহার হত তা সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে আবার নতুন রুপে ফিরে এসেছে । একসময় এটা দিয়ে শুধু তামাক কিংবা গাঁজা খাওয়া হত । কিন্তু বর্তমানে এটি নতুন রুপে আবির্ভাব হয়েছে । অন্যান্য উন্নত বিশ্বে যে রকম জনপ্রিয়তা বাংলাদেশেও তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে । তবে সমস্যা হচ্ছে এটি আর সেই পুরনো হুক্কা নয়, শুধু গঠনটাই আগের মত রয়ে গেছে আর পরিবর্তন এসেছে এর দ্রব্য সামগ্রীতে । এখন আর শুধু তামাক ব্যবহার হয়না । এর সাথে মেশানো হয় নানা ধরনের ফ্লেভার ।

বিভিন্ন ফলের নির্যাশই সীসার মূল উপাদান । আপেল, আঙ্গুর, আনারস, কলা, পেঁপে থেকে শুরু করে নানা ফলের নির্যাশে তৈরী সীসার উপাদান । এসব উপাদান শুকনো আকারে থাকে । বাংলাদেশে মূলত দুবাই থেকে এই উপাদান আসে । এসব ফলের শুকনো নির্যাশ কলকেতে ভরা হয় ।
আমাদের দেশেই বিভিন্ন জায়গায় এই সীসার জন্য ফ্লেভার পাওয়া যায় । এসব ফ্লেভারের মুল্য ও অনেক বেশি । এক প্যাকেট ফ্লেভার (তামাক) কিনে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।




আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশ কিছু জায়গায় এসব সীসা পাওয়া যায় । ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা লাউঞ্জগুলোতে সীসা খুবই সহজ লভ্য । রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি, বেইলি রোড সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২০০ লাউঞ্জ রয়েছে । তবে বেশির ভাগ লাউঞ্জ রয়েছে বনানীতে । এসব লাউঞ্জে সীসা খুব সহজেই পাওয়া যায় ।
অনেকে মনে করেন সীসা কোন মাদক এর মত ভয়াবহ খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু নয়। আর এই দোহাই দিয়েই নিয়মিত সীসা গ্রহন করছেন । অনেকে মনে করছেন সীসা সিগারেটের তুলনায় কম বিষাক্ত কিংবা এর মধ্যে কোন বিষক্রিয়া নেই । তাই হোটেল থেকে ভেলপুড়ি কিনে খাবার মত করে কিনে খাচ্ছে ।
কিন্তু এটা যে মোটেও সঠিক নয় তা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ প্রমান করে দেখিয়েছেন । একটি সীসায় মোট চারটি অংশ থাকে । যথা ঃ বেজ, পাইপ, বওল আর মাউথপিস । বওলটাকে এলুমিনিয়ামের কভার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় আর সেই ফয়েলের মাঝে কয়লা রাখা হয় । এর মধ্যে তামাক পুড়ে যায় আর কয়লা পুড়ে কার্বন মনো অক্সাইড হয়, যা মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসে চরম ক্ষতি করে এমন কি মৃত্যু ও ঘটতে পারে ।
রয়টার্সের এক সংবাদ অনুযায়ী একটা পূর্ণ সেশনের সীসা গ্রহন এক প্যাকেট সিগারেট সেবনের মতই মারাত্বক । আবার যারা সিগারেট থেকে সীসাকে কম ক্ষতিকর বলে ভাবেন তাদের জানা উচিৎ যে সিগারেটের চেয়ে সীসায় নিকোটিনের পরিমান বেশি থাকে । সিগারেটে যেখানে ১-৩% নিকোটিন থাকে, সেখানে সীসাতে ব্যবহৃত তামাকে ২-৪% নিকোটিন থাকে । (সুত্রঃ ড. কেনেথ, আমেরিকা একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স এর প্রেসিডেন্ট) । ২০০৫ সালের Journal of Periontology এর সূত্র মতে, একবার পূর্ণভাবে সীসা গ্রহন করা ৬০ টি সিগারেট গ্রহন করার সমান ।
মূলত সীসা একজন মানুষের জন্য যতটুকু ক্ষতিকর তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ঐসব লাউঞ্জে গিয়ে খাওয়াটা । কেননা লাউঞ্জগুলোতে ইদানিংকালে সীসার ভিতরে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য । আর উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে সীসার অন্তরালে এই মাদক । অধিকাংশ লাউঞ্জে সীসার উপাদানের সাথে মেশানো হচ্ছে ইয়াবার গুড়া, হেরোইন ও বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ নেশাজাতীয় অনেক ট্যাবলেটের গুড়া । এছাড়াও গাঁজার বিশেষ রাসায়নিক অংশ মিশিয়ে এর উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে । খুব সহজেই একজন মানুষ এই নেশায় ডুবে যাচ্ছে ।

নেশার চেয়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারন করেছে লাউঞ্জগুলোর পরিবেশ । লাউঞ্জগুলোতে যারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই তরুণ তরুণী । আর বেশিরভাগ তরুণ তরুণীই সেখানে অশালীন কাজে লিপ্ত হচ্ছে । ৫০০ টাকায় ক্রয় করে পাইপে একবার মুখ লাগিয়ে দীর্ঘক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকা যায় । আর নেশার তালে চলে প্রেমিক প্রেমিকাদের অশালীন কাজ । বেশিরভাগ লাউঞ্জেই দেখা যায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পরিবেশ । আর এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অশালীন কাজ করছে তরুণ তরুণীরা । মূলত সীসার অন্তরালে যে মাদক রয়েছে তার কারনেই এমনটি হচ্ছে । আর একটা বিষয় তরুণ তরুণীদের মাঝে কাজ করে, আর তা হল নিশ্চিতভাবে অশালীন কাজ করতে পারা । মোদ্দা কথা একটা নিরাপদ অশালীণ কাজের জায়গায় পরিনত হয়েছে লাউঞ্জগুলো ।

আর এসব লাউঞ্জে যারা তাদের বেশিরভাগই ধনী পরিবারের সন্তান । তবে ইদানিংকালে মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়েরাও যাচ্ছে । কেননা দিনে দিনে সহজলভ্য হয়ে উঠছে সীসা ।
সচেতনতার সময় এসেছে । প্রতিটি পরিবারের সচেতন হওয়া উচিৎ । আমরা সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবো । কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়া মানে মাদক সেবন করা নয়, যৌনাচার করা নয় । যদি আধুনিকতার দোহাই দিয়ে সীসাকে গ্রহণ করা হয় কিংবা লাউঞ্জগুলোর অশালীন পরিবেশকে সাবলীল ভাবে মেনে নেওয়া হয় তাহলে শুধু তরুণ সমাজই ধ্বংস হবেনা বরং একটা সভ্যতার গতিপথ ও পরিবর্তন হবে । আর এই পরিবর্তন কোন ভালো কিছু বয়ে আনতে পারবেনা ।



এখানেও দেখতে পারেন


৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×