somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বামীর ডিম

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিয়েরে সবে বিয়ে করেছে। নতুন বউ নিয়ে সে খুবই খুশি। কিন্তু তার বন্ধুটি ছিল অন্য ধাঁচের। বিয়েটিয়ে সে একেবারেই পছন্দ করত না। মেয়েরা অবিশ্বাসী—এ রকম একটা বাজে ধারণা ছিল তার।
বন্ধু একদিন পিয়েরেকে একা পেয়ে সেই কথাটা তুলল।
‘বিয়েটা যখন করেই ফেলেছ, তখন আর এ নিয়ে কিছু বলার নেই আমার। তবে ওই বিষ গেলার আগে একটু যদি জিজ্ঞেস করতে, কিছুতেই সায় দিতাম না, বুঝলে।’
‘তাই নাকি! তা বিয়ে সম্পর্কে বন্ধুর এই ক্ষোভের কারণ দয়া করে জানতে পারি?’ পিয়েরের গলায় কৌতুক ঝরে পড়ে।
‘আমার আপত্তি হলো মেয়েদের ওই কান-পাতলা স্বভাব নিয়ে। তোমার পেটে যদি সত্যি কোনো গোপন কথা থাকে, খবরদার ভুলেও বউকে বলবে না। বলেছ কি নির্ঘাত হাটে হাঁড়ি ভেঙে তোমার বারোটা বাজিয়ে দেবে।’
পিয়েরে বন্ধুর কথায় হো হো করে হেসে উঠল—‘খাসা বলেছ তো কথাটা। কিন্তু শোনো, অন্যের কথা জানি না। আমার বউয়ের কান থেকে যে কথা সরে না তা আমি হলফ করে বলতে পারি।’
আসলে বন্ধুর ওই সন্দেহজনক কথাটা খুব লেগেছিল পিয়েরের মনে। মেয়ে মানেই যে সব পেট-আলগা, বন্ধুর এই ধারণা ভেঙে দেওয়ার জন্য সে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
রাতে পিয়েরে ঘুমাতে গেল বউকে নিয়ে। সে অপেক্ষা করতে লাগল কখন বউ ঘুমায়। একটু পরই নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া গেল। পিয়েরে চুপিচুপি খাট থেকে নেমে একটা ডিম নিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। ডিমটা কোলের কাছে রেখে আবার সে যথাস্থানে শুয়ে পড়ল।
একটু পরই পিয়েরে তড়িঘড়ি ধাক্কা দিল বউকে—
‘এই শুনেছ, একটা আজব কাণ্ড ঘটেছে এই মাত্তর। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না। কিন্তু মাইরি বলছি, সত্যি সত্যি আমি একটা ডিম পেড়েছি।’
‘ডিম পেড়েছ! যাও গুল দিচ্ছ।’
পিয়েরে ঘটনা প্রমাণের জন্য ডিমটা বের করে তাকে দেখাল।
‘সত্যি বলছ তো? কী অবাক কাণ্ড না?’ বউ সবিস্ময়ে মাথা নাড়ে।
‘তা তো বটেই। কিন্তু খোদার কসম এটা কিন্তু কাউকে বলবে না। প্রতিবেশীরা জানতে পারলে খুব হাসাহাসির ব্যাপার হয়ে যাবে। ওরা ভাববে আমি হয়তো মানুষ না, মুরগি।’
বউ স্বামীর মাথায় হাত দিয়ে কিরে কাটল। না, এ জন্মে কাউকেই সে বলবে না এ কথা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব অস্থির হয়ে পড়ছিল। তার চোখ কিছুতেই এক হচ্ছিল না উত্তেজনায়। কখন সকাল হলে গোপন কথাটা বান্ধবীর কানে দেবে এই ভাবনায় সে মশগুল হয়ে গেল।
সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই সে ভোঁ দৌড়ে এল বান্ধবীর কাছে।
‘এই শোন, শোন, ভীষণ একটা গোপন কথা তোকে বলছি। খবরদার! কাউকে বলিসনে যেন। জানিস, গত রাতে না আমার স্বামী একটা ডিম পেড়েছে।’
বান্ধবী চোখ কপালে তুলে বলল, ‘বলিস কী! তোর স্বামী ডিম পেড়েছে? চালাকির আর জায়গা পাসনে।’
বান্ধবীর সন্দেহ ভাঙানোর জন্য সে ডিমটা দেখিয়ে বলল, ‘এবার বিশ্বাস হলো তো? কিন্তু দোহাই তোর, এ কথা ঘুণাক্ষরেও কাউকে বলিসনে। তাহলে ও খুব রেগে যাবে আমার ওপর। কী, কথা দিচ্ছিস তো?’
‘মাথা খারাপ। আমি কিচ্ছু বলব না।’ মুখে এ রকম আশ্বাস দিলেও কথাটা অন্য এক বান্ধবীকে বলার জন্য তার পেট ফেঁপে উঠছিল।
‘এই শুনেছিস, আমার বান্ধবীর স্বামী পিয়েরে গত রাতে দুটি ডিম পেড়েছে। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না?’ বান্ধবীর কানে কথাটা উগরে দিয়েই তার শান্তি।
‘অসম্ভব’। অবিশ্বাসে মাথা নাড়ল বান্ধবী।
‘সত্যি, বিশ্বাস কর, একটুও মিথ্যা বলছি না। পিয়েরের বউ আমাকে ডিম পর্যন্ত দেখিয়েছে। কিন্তু এ কথা কাউকে বলিসনে, ভাই। ও শুনতে পেলে খুব মাইন্ড করবে।’
‘না, না, প্রমিজ করছি, কাউকে বলব না।’ কিন্তু বলতে শুধু দেরি, সে দ্রুত অন্য এক বান্ধবীর কানে তুলে দিল কথাটা। সে বলল আরেকজনকে। এভাবে নানা কান ঘুরে ডিমের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেল। শেষ পর্যন্ত শহরময় চাউর হয়ে গেল পিয়েরের ‘ডিম-প্রসবের’ কাহিনি।
তাকে নিয়ে চারদিকে এত যে আলোচনার ঝড় বইছে তার কিছুই জানত না পিয়েরে। এমনকি বিকেলে যখন বিয়েবিরুদ্ধ বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো তখনো সে আশ্বস্ত ছিল স্ত্রী ডিমের ব্যাপারটা পুরোপুরি গোপন রেখেছে ভেবে।
পিয়েরে গলায় একটু গর্বের টান মিশিয়ে বন্ধুকে বলল, ‘এই যে নারীবিদ্বেষী, গত রাতে আমি একটা গোপন কথা স্ত্রীকে বলেছি। বল তো সেই কথাটা কী? না পারলে অবশ্য আমিই বলে দেব।’
বন্ধু মুচকি হেসে বলল, ‘দোস্ত, তুমি তোমার বউকে কী বলেছ না বলেছ তা আমি জানি না। কিন্তু একটু আগে শুনলাম, তুমি নাকি পাঁচ ডজন ডিম পেড়েছ, তা কি ঠিক?’

লা ফঁতেঁ: ফরাসি লেখক।
অনুবাদ: জাফর তালুকদার
রস আলোতে প্রকাশিত
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×