somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘরের নেয়ে

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা মারা গেলে কি হয়? একটু আগেই রতনের বাবা মারা গেলেন। মরা বাড়ীর দৃশ্য সব প্রায় একই রকম। কান্নাকাটি হচ্ছে। আশেপাশের বাড়ী থেকে মানুষজন সান্ত্বনা দিচ্ছে।

রতন পাশেই পুকুর পাড়ে ছিল। সে একই জায়গায় স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইল। মাথায় কেবল চাপ্টি নামের একটা খাবারের কথা ঘুরছে। হাটে পাওয়া যায়। দুই ধরনের চাপ্টি পাওয়া হয়। একটা গাঢ় চিনির শিরায় বাদাম মিশিয়ে বানানো হয়। আর একটা মিঠাই এর শিরায় বাদাম মিশিয়ে। এর বাইরে আর কিছুই ঢুকছেনা মাথায়। কান্নাকাটির শব্দও তেমন কিছুই মনে হচ্ছে না।

অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। হয়ত অধিকের উপরের শোকে আবার নরম্যাল। রতন ভাবছে তার শোকটা অল্পওনা, অধিকও না। তাই তার কিছুই মনে হচ্ছে না। সে বাড়ীর মেজ ছেলে। বড় দুই ভাই, ছোট এক ভাই, এক বোন। এক ভাই ঢাকায় বুয়েটে পড়ছেন। অন্য ভাই চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে। দুই ভাইকে খবর দিতে হবে। ছোট বোনটা স্কুলে, ওকে খবর দেবার দরকার নেই। একটু পরে এমনিতেই চলে আসবে। আত্মীয়-স্বজনদের খবর দিতে হবে। এলাকায় মাইকিং করতে হবে। মৃত্যুর পর শোক বুকে নিয়েই অনেক ফর্মালিটিজ পালন করতে হয়। এর পরেও কোন একটায় ভুল হলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলেই সবাই ধরে নেয়। ওমুককে কেন খবর দেয়া হলো না, তুমুককে কেন সবার শেষে বলা হলো।

সকালের দিকেই রতনের বাবার খুব শ্বাস-কষ্ট হচ্ছিলো। তিনি রতনকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, রতন তুই ছাড়া এই সংসারের হাল ধরার কেউ নাই। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেও মানুষের মাথায় সংসার নামের ব্যাপারটা থাকে! বাবার মুখটা মনে আসার সাথে সাথেই চোখে পানি আসলো। চোখের পানি এত গরম হয়? রতন ঝরঝর করে অনেক্ষন কাঁদলো, বাবা বাবা...

পকেটে টাকা বলতে শ’খানেক আছে। রতন সবেমাত্র ইন্টার পাশ করেছে। তার পকেটে এরচেয়ে বেশী টাকা থাকেনা। সে কোনদিন কারো কাছে টাকা ধারও করেনি। কাফনের কাপর কিনতে হবে। ভালোটাই কিনতে হবে। বাবা খুব পরিষ্কার ও রুচিয়ালা মানুষ ছিলেন। মৃত্যুতে অবহেলা নিয়ে যেন বিদায় না হয়। ছোট বোনটা চলে এসেছে। কান্নাকটি আরেক ধাপে শুরু হলো। এর মধ্যে বসে থাকলে চলবে না। রতন ঘরে ঢুকে বাবার দোকানের চাবি হাতে নিলো। যদি ক্যাশে কোন নগদ টাকা থেকে থাকে এই আশায়। এই প্রথম বাবার দোকনের চাবিতে হাত দিলো রতন।

বাবার মৃত্যুর পর দুই দিন পার হয়ে গেল। তার মানে মৃত্যুর তিন দিন হলো। “আজ মরলে কাল দুই দিন” হিসাব মতে। আগামি দিন মিলাদ পড়াতে হবে। ক্যাশে যা টাকা ছিলো তা প্রায় শেষ। বড় ভাইরা এসেছিলেন। যাবার সময় গাড়ী ভাড়া দিতে হলো। কেউ চায়নি, রতনের মনে হলো টাকা ছাড়া যাবেন কিভাবে? দুই দিন আগেও রতন বুঝেনি টাকার কতটা প্রয়োজন সংসারে। মৃত্যুর পরেও যদি ফর্মালিটিজে এত টাকা খরচ হয় তবে জীবন্ত মানুষের কেন টাকা লাগবে না? এলাকার চৌকিদারকে দিয়ে বাড়ী বাড়ী খবর দেবার কাজটা করা হয়েছিল। ছেলেটাকে কিছু টাকা দিতে হবে। এক কাজ করা যায়, ওকে দিয়ে চার দিনের মিলাদের টুকটাক কাজ করিয়ে সাথে বকশিস হিসাবে একটু বেশী টাকা দিয়ে দিলেই হবে।

কাউকে কিছু বলতে হলো না। সংসার নামের যে নৌকার মাঝি তিন দিন আগে রিটায়ার করলেন, সেই নৌকার হাল এখন রতনে হাতে। কোথার এই নদীর চড়া কোথায় গভীরতা তা সব এখন রতনেরই বুঝতে হবে। সে যে নায়ের নেয়ে এই নায়ের লক্ষ্য কোন তীর নয়। এই নায়ের নেয়ের কাজই হলো একে ঠিক মত বেয়ে নিয়ে যাওয়া। সংসার নামক নৌকার কোন গন্তব্য থাকে না। অনাদি কাল থেকেই তা চলছে। যে নৌকায় হাল ধরার মত কেউ থাকেনা তা উদ্দেশ্যহীন ভাবে এদিক সেদিক চলে। চলতে চলতে ধাক্কা খায়, ঠোক্কর খায়। ধাক্কা, ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে কোন একদিকে চলে যায়। ডুবেও যায় কেউ কেউ। রতন তা হতে দিবে না।

বড় ভাইদের পরীক্ষা ছিলো, উনারা চলে গিয়েছিলেন। আগামী দিন আবার আসবেন। রতন দোকানে বসা শুরু করেছে। মাঝেমাঝেই মনে হচ্ছে সে ছাড়া আর কি কেউ আছে যে নাকি সংসারের হাল ধরবে? সে চিন্তা করে। কোন কূল কিনারা পায় না। সে ছাড়া আর কে ধরবে হাল? বড় দুই ভাইয়ের পড়াশোনার আর কয়েক বছর বাকী। এর পরেই বড় চাকরী পাবেন। নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে তারা গ্রামে ফেরত আসবেন? আবার শহরে থাকতে গেলে তাঁদের খরচ পাঠবে কে? অতএব রতনই একমাত্র যোগ্য ব্যাক্তি সংসারের হাল ধারার। ছোটদের দায়িত্বতো এমনিতেই তার উপর। যাই হোক, আপাতত মিলাদের কাজটা শেষ হোক।

মিলাদ শেষ হলো। বড় ভাই আসেননি, উনার পরীক্ষা। এর পরের জন এসে সেদিনই চলে গেলেন। সংসার নিয়ে কেউ কিছুই বলছেনা। ছোট ভাই বোন কেউই স্কুলে যায়নি এই কয়দিন। পাঁচ দিনের দিন আত্মীয়-স্বজন সবাই চলে গেল। বাড়ী প্রায় ফাঁকা। ছোট ভাইটা কাছে এসে বল্লো, ভাইয়া তোমার সাথে আমিও যাবো দোকানে। খুব সহজ একটা কথা। ভিতরটা হুহ করে ওঠলো রতনের। ভাইটাকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো। মা আসলেন, ছোট বোনটা আসলো। মরা বাড়ীর শোকটা এখনো মরেনি, আবার যেন তা কয়লার আগুনে বাতাস লাগার মত জ্বলে ওঠলো। সবাই একসাথে কাঁদছে।

রতন চট করেই নিজেকে সামলে হালকা করে হাসি দিয়ে বল্লো, দোকানে যাইতে চাইলে যাবি, আগে স্কুলে যা।

প্রায় মাস খানেক হয়ে গেল রতন সংসার চালাচ্ছে। ব্যাবসাটা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। একটা ব্যাপার ভেবে সে প্রায়ই মজা পায়। ঘটনাটা হলো, অনেকেই বাকী টাকা চাইতে আসছেন। কিন্তু কেউ কেউতো বাকীতে নিশ্চয়ই নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাকী যারা চাইতে আসছেন তাদেরকে আস্তে আস্তে সে শোধ করছে। সব কিছুর পর হাতে তেমন টাকা থাকছেনা। সংসার একটা তলাহীন ঝুড়ি, যতই দেয়া হয় ততই যেন নিমিষেই নাই হয়ে যায়। বাজার সদাই, মায়ের ঔষধ, ছোট ভাই বোন দুইটার খরচ। তার উপর আছে বড় দুই ভাই। বেশ কয়েকদিন ধরেই টুকটাক করে জমানোর চেষ্টা করছে রতন। তার ইচ্ছা হলো, বড় দুই ভাই লজ্জায় হয়ত তার কাছে চাইতে পারবে না। চাওয়ার আগেই যেন সে টাকা পাঠিয়ে দিতে পারে। বড় ভাই তার কাছে টাকা চাইবে এ হয়না। রতন কিছুতেই বড় ভাইদের এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে দিবে না। এতে উনাদের চাইতে তারই লজ্জাটা বেশী হবে।

কখন যে কে সংসারের হাল ধরবে তা আগে থেকে কখনোই বুঝা যায়না। যে রতন কয়দিন আগেও বাবার কাছে টাকা চেয়ে না পেলে মন খারাপ করতো সেই রতন এখন টাকা দিতে না পারলে মনে কষ্ট পাচ্ছে। রতন দুই দুই চার হাজার টাকা বড় দুই ভাইয়ের নামে মানি অর্ডার করে দিল। মানি অর্ডারটা করার পর বেশ ফুরফুরে মন নিয়েই বাড়ী ফিরলো রতন।

বাবা মারা যাবার পর রতনের মা অনেকটা শক্ত হয়েছেন। আগে সংসারের অত ঝামেলা তিনি বুঝতেন না। এখন আস্তে আস্তে সবকিছুরই খবর রাখছেন। রতন তার বাবার ব্যাবসাটা ভাল করে ধরতে পারছেনা। যতটুকুই টুকটাক শুনতেন রতনের বাবার কাছে তা রতনের সাথে শেয়ার করছেন। শীত আসার আগেই ভেজলিন কিনতে হবে মনে করিয়ে দিলেন। কৌটায় করে ভেজলিন ভরে রাখতে হবে। বিভিন্ন ছোট ছোট আড়তদাররা এই ভেজলিনে নিয়ে যাবে। অনেকে আবার এর উপর নিজেদের ট্যাগও লাগিয়ে নেন। জমিজামাগুলাও কিছু দেখতে হবে। মুশকিল হলো জমিজামা রতনের বাবাই সব দেখাশুনা করতেন। এছাড়া আর কেউ সব কয়টা জমি চিনেনও না। জমি না চিনলেও সমস্যা নাই। কোন মাঠে কত শতক জায়গা তা মুখে মুখে জানেন। বের করা বেশী কঠিন হবে না।

দেখতে দেখতে সময় দ্রুতই চলে গেল। ব্যাবসায় উন্নতির কিছু হয়নি। অবনতি হতে হতে যখন বন্ধ প্রায় তখন রতনেরও দায়িত্ব প্রায় শেষ। বড় ভাই দুইজন পড়াশুনা শেষ করে বড় চাকরী করছেন। ছোট ভাইটা স্কলারশীপ পেয়ে দেশের বাইরে চলে গেল। ছোট বোনটা পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হলে থাকে। এখন খরচ বলতে ছোট বোনের পড়াশোনা আর রতন আর তার মায়ের যা লাগে।

টাকায় টাকা আনে আবার টাকায় টাকার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই বড় ভাইরা ঈদে বাড়ী আসেন। কথায় কথায় বলেন, ঢাকা শহরে থাকা আর টাকা কচকচিয়ে খাওয়া। যে টাকা কচকচিয়ে তারা খান সে টাকায় কামড় দেবার ইচ্ছা রতনের নেই। তাদের মায়েরও না। প্রতিবারই তারা বলেন, একটু গুছিয়ে নেই তারপর আম্মা আপনারে নিয়ে যাবো। রতনের মাও হাসি দিয়ে বলেন, গুছিয়ে নাও কিন্তু আমাকে নিতে হবে না।

রেল লাইন বহে সমান্তরাল। রেল লাইনের মত সহজ রাস্তাও সোজা চলে না, বাঁক নিতে হয়। জীবন তো বাঁকেরই সমষ্ঠি। বিয়ের পর পুরুষের বুদ্ধি বাড়ে। রতনের বড় দুই ভাইয়েরই বুদ্ধি বেড়েছে। এবার ঈদে বাড়ী আসার পর পরই একটু ভার ভার ভঙ্গি নিয়ে বড় দুই ভাই গুটুরগুটুর করছেন। পাশে দুই ভাবিও আছেন। দুই ভাই, দুই ভাবি গুটুরগুটুর করা স্বাভাবিক। কিন্তু দুই ভাই আর দুই ভাবি একত্রে গুটুর গুটুর করাটা একটু অন্যরকম ঘটনা।

রাতে খাবার পর বড় ভাই কথাটা শুরু করলেন। তিনি কথা ঠিকমত গুছিয়ে বলতে পারছিলেন না, ভাবি পয়েন্টগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন পাশ থেকে। সারমর্ম হলো, ব্যাবসার টাকা এখন কি করা হয়। টাকাতো তেমন খরচ নাই। ঢাকার মত গ্রামেতো আর বাড়ী ভাড়া দিতে হয় না। দু’জনের খাবার খরচতো আর হাজার দুই এর বেশী লাগার কথা না। অবশ্য এই হিসাবের মধ্যে রইলো না মায়ের ঔষধ, ছোট বোনের হোষ্টেল ও ভার্সিটি খরচ। তার উপরে যোগ হলো, বেশ কয়েক বছর ধরেইতো বড় ভাইরা জব করছেন তাই তাঁরা টাকা নিচ্ছেন না। তাহলে সেভিংস কত আছে। সেই টাকারওতো সমান ভাগ হওয়া দরকার। আফটার অল ব্যাবসাটাতো বাবার। ছোট ভাবি আবার মনে করিয়ে দিলেন, ব্র্যান্ড ভ্যাল্যু বলেওতো একটা কথা আছে। বড়জনের ছোটজন তাতে সুর মিলিয়ে বল্লেন, হুম আব্বার বিজনেসতো বাজারের মধ্যে খুবই নামকরা ছিল। টং এর চেয়ে সামান্য একটু বড় একটা দোকানের মালিক আজ ব্র্যান্ড ভ্যাল্যু ওয়ালা বিজনেসম্যান হয়ে গেল।

রতনের মা সব শুনলেন। সবার কথা শেষ হবার পর তিনি শান্ত ভাবে বল্লেন, জায়গা জমি আমি তোমাদেরকে ভাগ করে দিবো। রতন যত বছর দোকান চালিয়েছে, তোমরাও তত বছর চালাও। তোমরা না পারলে লোক রেখে চালাও। আর আমার জানা মতে রতনের কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাই। তারপরেও তোমরা খবর নিয়ে দেখ। নামে, বেনামে সে কিছু রেখেছে কি না। সব চেয়ে বড় কথা হলো, তোমাদের সংসার থেকে আমি ও রতন কিছু নিবো না।

এই কথা শুনার সাথে সাথেই বড়জন ওঠে বল্লেন, আম্মা আপনেতো ব্ল্যাকমেইল করতেছেন, ইমোশনার ব্ল্যাকমেইল। এইটাতো ঠিক না।

মা খুব আস্তে করেই বল্লেন, আমি যা বলেছি তা বলেছি। আমি কাগজপত্র তেমন বুঝিনা। তোমরা সব কাগজ রেডি করো। তারপর রতনের দিকে তাকিযে বল্লেন, রতন সংসারের ভাগে তোরে আমি কিছুই দিলাম না, কিছু বলবি না?

রতন কি বলবে? সে যাই বলুক না কেন এর একটা বাজে ব্যাখ্যা দাড়া হয়ে যাবে। কি দরকার? যেদিন এই সংসারের হাল সে ধরেছিল সেদিন তেমন কিছুই বুঝেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝে গেছে, যারা দেয় তারাই বেশী খারাপ হয়। তাদের সাথেই যারা পায় তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। দেনা পাওনার হিসাবে সে সব সময় হেরে যাবে, এই হিসাব তার আগেই করা ছিলো। সে কি বলবে? রতন জানে সব ভাগাভাগির পর মা তার সাথেই থাকবেন। কোথায় থাকবেন, কিভাবে থাকবেন এখনো জানে না। কেউ না, রতন ও না মা ও না। সম্পদের ভাগাভাগি করতে গিয়ে যদি মাটির ভাগ না পেয়ে বরং সম্পূর্ণ মাকে ভাগে পাওয়া যায় তার চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?

খাবার শেষে কথাও শেষ হলো। রতন আর মা ঘরেই বসে আছে। ভাই ও ভাবিরা ওঠোনের এক কোনে আবার গুটুরগুটুর শুরু করেছেন। এবারের সারমর্ম হলো, এমন রানিং একটা দোকানে নিশ্চয়ই অনেক টাকা লাভ হয়েছে। জায়গা জমিও মনে হয় ভালোই কিনেছে নিজের নামে। না হলে জায়গার ভাগ পর্যন্ত চাচ্ছেনা কেন? শহরে তো পানিটা পর্যন্ত কিনতে হয়, বাড়ীতেতো খরচই নাই! টাকা যা লাভ হয়েছে সবইতো জমিয়েছে।

পরের দিন সকাল বেলা সবাই ঢাকা চলে যাবে। প্রতিবার সকাল বেলা রতনের মায়ের ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। ছোট ছোট ব্যাগে করে বাড়ীর হরেক জিনিস প্যাকেট করে দিয়ে দেন। রতনেরও ব্যাস্ততা বাড়ে। মায়ের কথামত শাক, লাউ, নারিকেল, কামরাঙ্গা ইত্যাদি তারই রেডি করতে হয়। মা তো শুধু দুই ভাগে ভাগ করে বস্তায় ভরেন। কিন্তু এবার আর তা হলো না।


আজ খুব সকাল বেলা মা উঠলেন। রতনকে ডাকতে গিয়ে দেখেন রাতনকে ডাকার দরকার নেই। সে জেগেই আছে। মাকে দেখে রতন আস্তে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। সদ্য ওজু করে নামাজ পড়া মাকে দেখে রতনের কাছে অন্য রকম লাগছে। ভক্তি, প্রশান্তি ও মমতায় মনটা অন্যরকম হয়ে গেল রতনের। মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো। ভোরের আলো আস্তে আস্তে করে ফুটছে। দূর থেকে হালকা ঘোমটা আঁটা মায়ের মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছিলো না। কাছে এসে রতন দেখলো শান্ত স্নিগ্ধ মায়ের মুখে অন্যরকম একটা কাঠিন্য। যে কাঠিন্যের লক্ষ্যের কোন এদিক সেদিক হয় না।

রতনের দিকে তাকিয়ে মা বল্লেন, রতন তোর বড় দুই ভাইয়ের নাম রেখেছিলাম আমি। উজ্জ্বল আর ধ্রুব। তোর নাম রাখছিলো তোর বাবা। ছোটবেলা থেকেই তুই তোর বাবার খুব ভক্ত ছিলি। আমার চেয়ে তোর বাবাকেই তুই বেশী পছন্দ করতি। তাই উনি চলে যাবার পর ছায়ার মত যেন তোর পাশে দাড়ায়ে তোরে সব দায়িত্ব বুঝায়ে দিলো সংসারের। তার রতন ঠিকই রতেœর কাজ করলি। কিন্তু আমার উজ্জ্বল আর ধ্রুবতো নিভে গেলোরে বাপ। এই কথা বলতে বলতে মুখে আঁচল চেপে ফরিদা বেগম ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে ওঠলেন। রহিম সাহেবের মৃত্যুর পর এই প্রথম এই শক্ত মহিলা ভেঙ্গে পড়লেন।

একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বল্লেন, শুভ্রর কথা তেমন ভাবি না। ওর পড়াশুনাতো প্রায় শেষ, স্কলারশিপেইতো পড়ছে। ও যথেষ্ট ভালো ও বুদ্ধিমান ছেলে। সে নিজের পায়ে নিজে দাড়িয়ে গেছে প্রায়। বাকী রইলো মায়া। ওর পড়াশোনা শেষে বিয়ে পর্যন্ত দায়িত্ব যা সব তোরই নিতে হবে। আমি সংসারের ভাগ তোরে কিছুই দিলাম না। ইচ্ছা করেই দিলাম না। দেখি, মানুষ যে বলে, মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। আজই আমি আর তুই আপাতত আমার বড় আপার বাসায় গিয়ে উঠবো ঢাকায়। এখন মায়ের হাতের নীচে কি আছে একটু দেখতে চাই। আর পিছনে ফেলে যেতে চাই আমারই গর্ভে ধরা সন্তানদের মোহের সবকিছু।

এই কথা বলে ফরিদা বেগম তার ছেলের মাথায় হাত রাখলেন। রতনের বয়স হয়েছে। তার প্রায় পয়েত্রিশ বছর। এই বয়সের পুরুষ মানুষ কাঁদে না। রতন তার মাকে জড়িয়ে ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠলো।


Click This Link
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×