পোলিও মুক্ত বিশ্ব: চাই সচেতনতা । সব শিশুকে টিকাদান কেন্দ্রে নিতে হবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গোটা বিশ্বকে অবাক হয়ে আরেকটি ভয়াবহ মহামারী দেখতে হয়েছিল। রোগটির নাম পোলিও।
এটি এক ধরনের ভয়াবহ সংক্রামক ভাইরাস এবং যে কোন সময় মহামারী রূপ ধারণ করতে পারে ।
এই ভাইরাসের আক্রমণ স্থল নার্ভ এবং মাংসপেশি। বিশেষ করে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বড়রাও বাদ যায় না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্টও পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
অনেক গবেষণার পর বিখ্যাত আমেরিকান চিকিৎসক জোনাস সাক এ পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালের সর্ব প্রথম শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়া হয়।
সেই থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংঘটনের উদ্যোগে পোলিও মুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে পৃথিবী ব্যাপী পোলিও টিকা দেয়া হচ্ছে।
এ বছর বাংলাদেশে জাতীয় টিকা দিবস দুই পর্বে পালন করা হবে। প্রথম পর্ব পালন করা হবে ৭ই জানুয়ারি। এইদিন একদিন থেকে ৫ বছর বয়সী প্রায় ২ দুই কোটি ২০ লাখ শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হবে। সেই সাথে ৬ থেকে ১১ মাসের শিশুকে ১টি ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
দ্বিতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে ১১ ফ্রেব্রুয়ারি। ঐদিন ১দিন বয়সী নবজাতক থেকে পাঁচ বছর বয়সের সকল শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা এবং দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুকে ১টি কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে।
এ জন্য সারাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজার নির্দিষ্ট এবং ২০ হাজার ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রে স্বাস্থ্য-কর্মী/ রোটারী ক্লাব এবং বেসরকারি স্বেচ্ছা-সেবকগন কাজ করবেন।
পোলিও রোগ: ইংরেজিতে Poliovirus (PV)/ Poliomyelitis কে পোলিও রোগ বলা হয়ে থাকে।
এটি Genus Enterovirus রক্তের RNA-তে প্রোটিন বন্ধনী তৈরি করে থাকে।
কিভাবে ছড়ায়: মূলত লালা, হাঁটি-কাশি, ব্যক্তিগত সংস্পর্শে এলে, আক্রান্তের ব্যবহৃত পানির গ্লাস ব্যবহার করলে, আক্রান্তের মল পুকুর, ডোবা বা জলাধারে মিশে গিয়ে, খাবার ইত্যাদির মাধ্যমেই পোলিও ভাইরাস ছড়ায় ছড়ায়। এটি মূলত মানবদেহের অন্ত্র এবং গলবিলে অবস্হান করে।
উপসর্গ: আনুমানিক ৯০ শতাংশ রোগীর জটিল কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। সাধারণত ৭ হতে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ডা. সাক তাঁর গবেষণায় প্রমাণ করনে, পোলিও মূলত তিন ধরনের Poliovirus type 1 (PV1), type 2 (PV2), and type 3 (PV3)।
তিন ধরনের আক্রমণের লক্ষণ:-
১। হালকা সংক্রমণ : জ্বরের মত ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি, গলা ব্যথা, গলা বসে যাওয়া, হালকা জ্বর, মাথা ব্যথা
২। মাঝারি সংক্রমণ: আক্রান্তের শতকরা ৪-৮ ভাগ মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি, গলা এবং শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ, ডায়রিয়া, লেথারজি(গা ম্যাজ ম্যাজ করা), মানসিকতার পরিবর্তন, মাংসপেশীতে ব্যথা যেমন পায়ের ডিম, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, পিঠে ব্যথা,পেটে ব্যথা, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব ইত্যাদি ঘটতে পারে।
৩। ভয়াবহ সংক্রমণ: আক্রান্তদের শতকরা ৩ ভাগের কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্র (Central Nervous System) আক্রান্ত হয়। এটাই পোলিও রোগের সবচেয়ে ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
রোগী শুরুর দিকে মাংসপেশিতে শক্তি না পাওয়া, চলাচলে দুর্বল হয়ে পড়া, স্প্যাসম (ঘাড়, পিঠ, হাত, বা পা) ঘাড় কাত করতে না পারা, ঘাড় সোজা করে না রাখতে পারা, পেট ফুলে যাওয়া,
শ্বাসরুদ্ধ/শ্বাস কষ্ট হওয়া, মুখের মাংসপেশিতে সংকোচন, খাবার গিলতে অসুবিধা, মুখ দিয়ে লালা ঝরা পড়া ইত্যাদি উপসর্গে ভোগে।
পরবর্তীতে আংশিক কিম্বা পরিপূর্ণ ভাবে পক্ষাঘাতের শিকার হয়। এবং অনেকের মেনিনজাইটিস রোগ হতে পরে।
এই Central Nervous System-এ আক্রান্ত রোগীর শতকরা ৭৯ ভাগ Spinal polio, শতকরা ১৯ ভাগ Bulbospinal polio শতকরা ২ ভাগ Bulbar polio নামক অসুখে আক্রান্ত হয়।
যার নিরাময় একেবারেই অসম্ভব।
নির্নয়ঃ
রক্তের CSF Analysis পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয়।
প্রতিরোধ: পোলিওর বিরুদ্ধে লড়তে টিকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
টিকা দু ধরনের। মুখে খাবার এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হয়।
মুখে খাওয়ানোর (OPV) এর চেয়ে ইনজেকশন বেশি কার্যকর বিধায় উন্নত দেশগুলোতে পোলিও ইনজেকশন বেশি প্রচলিত।
প্রথম ডোজের ২মাসের মধ্যে ২য়, ৪ মাসে ৩য় , ৬-১৮ মাসে ৪র্থ এবং ৪-৬ বছরের মধ্যে বুষ্টার ডোজ নিয়ে নিজে এবং পরিবারের সবাইকে পোলিও মুক্ত রাখা সম্ভব।
পোলিও দেশে দেশে: গত ৫ বছরে বাংলাদেশে কোন পোলিও রোগী শনাক্ত হয়নি। তবুও বাংলাদেশকে পোলিও মুক্ত দেশ ঘোষণা করা হয়নি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কারণে। ভারত এখনও পোলিও মুক্ত হতে পারেনি। তাই বাংলাদেশে পোলিও সংক্রমণের পুরো ঝুঁকি রয়েই গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী আশপাশের দেশগুলো পোলিও রোগের অবস্থা পরপর ৩ বছর শূন্যের কোঠায় থাকতে হবে। পোলিও মুক্ত হলেই বাংলাদেশও পোলিও নির্মূলের সনদ পাবে। সনদ না পাওয়া পর্যন্ত চলবে পোলিও টিকা দান কর্মসূচি।
আশার কথা বাংলাদেশ পোলিও নির্মূলের ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
দীর্ঘ এক দশক পর আবারও চীনে পোলিও রোগ ধরা পড়েছে । ১৯৯৯ সালের পর গতবছর চীনেও রোগটির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।
পোলিওর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এমন চারটি দেশ হলো আফগানিস্তান, ভারত,পাকিস্তান (পাকিস্তানে এ রোগ প্রায় মহামারী আকারে এখনো বিদ্যমান) ও নাইজেরিয়া।
পোলিও মুক্ত বিশ্ব গড়তে ইতিমধ্যে কানাডা সরকার, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নাইজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ/দাতা সংস্থা পোলিও মুক্ত কর্মসূচিতে অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সতর্কতা/টিপস : পোলিও ঝুঁকি পূর্ণ দেশে ভ্রমণ করার আগে পোলিওর টিকা দিন। বড়দের জন্যও প্রযোজ্য।
আপনার দায়িত্ব: একটি প্রতিবেশী শিশুও যাতে বাদ না যায় তা নিশ্চিত করা আপনার সামাজিক এবং মানবিক দায়িত্ব।
দেশকে দক্ষ জন-সম্পদে সমৃদ্ধ করতে হলে শিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধি ও সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর অকালমৃত্যু রোধ করতে।
EPI তথা গুরুত্বপূর্ণ ৬টি টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলেই ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, পোলিও, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার ইত্যাদির মত ভয়াবহ সংক্রমনের হাত থেকে আমাদের শিশুকে সহজেই বাঁচাতে পারি।
উপসংহার: বাচ্চা বাঁচান। নবজাত শিশুকে শাল-দুধ সহ মাতৃদুগ্ধ পান করান। এটি মায়েদের স্তন-ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচাবে। নির্দিষ্ট সময়ে ৬টি টিকা দিন।
তথ্য ও ছবি সূত্র: ইন্টারনেট।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ভণ্ড মুসলমান
ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?
মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসবে তুমি কবে ?
আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন
(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )
একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোথাও ছিলো না কেউ ....
কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।
আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন
#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়
আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন