somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটের কিছু ক্ষণজন্মা মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে রইলাম...............

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যদি হ্যারি পটার হতাম তাহলে ৩১.১২.১১-০২.০১.১২ সময় পর্যন্ত স্মৃতি গুলো বোতলে ভরে রাখতাম । কিছু কিছু মুহূর্ত কোন একটি সময়ের ছকে বন্দী থাকেনা । সে গুলো হল কাল জয়ী । সেই মুহূর্তের ক্ষমতা আছে আর ও বিপ্লব সৃষ্টি করার । বুয়েটের ইতিহাসে সেই রকম কিছু মুহূর্ত ব্যায় করেছি উপরে উল্লেখিত সময়ে । সেই মুহূর্ত যেন হারিয়ে না যায় তার জন্য এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ।

প্রথম যখন ফোন পেলাম রফিকের(ছদ্মনাম) সে বলল “তাড়াতাড়ি রশিদ ভবনের(রেজিস্ট্রি বিল্ডিং)সামনে আয় ,সংগে হল থেকে আরো ছেলে নিয়ে আয়” তখন শুধু উঠে দৌড় । রশিদ ভবনের সামনে গিয়ে দেখী সব rag ব্যাচের(বিদায়ী ব্যাচ) ছেলেমেয়েরা দাড়িয়ে আছে ।তখন একজনের কাছে জানতে চাইলাম ভাইয়া ঘটনাটা কি ? তিনি যা বলল তাতে আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য বিচার বিবেচনার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি ।তার কথার সংক্ষিপ্ত রুপ:
দুই বছরের জুনিয়র কিছু ছেলে rag ব্যাচের এক ছেলেকে পিটিয়ে হাত পা ভেংগে দিয়েছে ।তারা মারার জন্য যে সরঞ্জামাদি ব্যবহার করেছে তার মধ্যে একটির কথা আমার মাথাই তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল । আর তা হল ‘বেসবল ব্যাট’
হলিউডের মুভিতে দেখেছি বেসবল ব্যাট দিয়ে কাউকে আঘাত করার দৃশ্য । গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছিল । এবং আমি অবাক হয়ে দেখলাম এত বড় একটা ঘটনার পর ও rag ব্যাচের ভাইয়ারা কত ভদ্রভাবে শান্তিপূর্ন ভাবে প্রোভিসির অফিসের সামনে অপেক্ষা করছে । ভাইয়ারা চাইলে এইসব ছেলে গুলোকে ধরে মারতে পারত । কিন্তু তারা তার একটা যুক্তি সংগত সমাধান চাচ্ছে ।কারন এর সাথে যে ছেলে গুলো জড়িত ছিল(জুনিয়র) তারা ছিল ক্ষমতাশীল রাজনীতি দলের গর্বিত সদস্য !!

এই ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে বুয়েটে আলোড়ন সৃষ্টি করে । কারন যে ঠুনকো কারনে তারা রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে বড় ভাইদের হাত পা ভেংগে দেয় , তাদের হাতে আমরা সবাই অনিরাপদ । কিছু অঘোষিত নিয়ম পৃথিবীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করে । তার মধ্যে তার মধ্যে অন্যতম হল সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক ।এই জায়গায় এসে যখন বেজন্মা কিছু ছেলে তাদের নোংড়া হস্তক্ষেপ করে তখন প্রানের বুয়েটকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে যায় । এবং আমার বলতে প্রচন্ড ভাল লাগছে বুয়েটের প্রত্যেকটি ছেলে মেয়ে এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছিল । অনুধাবন করেছিল এর একটি বিচার না হলে বুয়েট তার সত্ত্বা হারাবে । বুয়েট যে আমিত্বের কারনে বাংলাদেশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে তা আর থাকবেনা ।এটিও হয়ে যাব ছাত্ররাজনীতির হাতে বন্দী কংকালসার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
তখন বুয়েটের সব মোটা চশমা পড়া ইনোসেন্ট ছেলেমেয়েরা জড়ো হতে থাকল রশিদ ভবনের সামনে ।তারা জীবনে স্লোগান দেয়নি । অনেকে জীবনের প্রথমবারের মত এত বড় একটা প্রতিবাদী জন সমাগমে উপস্থিত ।তাদের মনের মধ্যে নিয়ম ভাংগার ভয় ,সাথে সাথে সুবিচার নিয়ে যাওয়ার তীব্র আকাংখা একটি রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে ।


৩১.১২.১১

বিকেল পাচঁটা র্পযন্ত সবাই প্রোভিসির অফিসের সামনে অপেক্ষা করছে । ভিসি ক্যাম্পাসের বাইরে ।সব রকমের টিভি চ্যানেল তখন চলে এসেছে । তারা দুই তালা থেকে ভিডিও করছে । আমরা ভেবেছিলাম বুয়েটের এই আঁতেল ছেলে গুলো একলা নয় । বিকেল পাচঁটা র্পযন্ত সবাই অপেক্ষা করেও যখন প্রোভিসির অফিস থেকে আশ্বস্তমুলক কোন কথা আসছেনা তখন সবাই প্রোভিসির অফিস অভিমুখে যাত্রা শুরু করল ।খুব শান্তিপুর্ন ভাবেই তারা নিচ তালা থেকে তারা উঠতে থাকল দুই তালায় ।তখনো তারা ভাবেনি এই বারান্দার মেঝেতে একটানা দুই রাত দুইদিন বুয়েট ছেলে মেয়েদের পরে থাকতে হবে ওই সব পাপিষ্ঠ ছাত্রদের বিচার এর জন্য ।

এখনো রাত শুরু হয়নি । যারা নামায পড়ার তারা নামায পড়ে আবার আগের জায়গায় আসল । এখনো আলোচনা চলছে প্রোভিসির সাথে ।একটার পর একটা স্যার আসতে থাকে । তাদের উঠতে হয় একতালা দুই তালার বিভিন্ন সিড়ি দিয়ে । এই শতশত ছাত্রের সামনে দিয়ে তারা যখন প্রোভিসির অফিসে যাচ্ছিল তখন তারা বুঝতে পারছিল এটা বুয়েটের আন্য চার পাঁচটা ঘটনার মত নয় ।সিনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা স্যারদের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছেন । ছাত্রদের দাবী একদম সুস্পষ্ট এমন একটা দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি যা বুয়েটে ইতিহাস হয়ে থাকবে । এখানে কম্প্রোমাইজ করলে বুয়েটের অতীত ইতিহাস এক অন্যকথা বলে । এখন আসি একটু অন্য কথায় ,অতীত এর কথায় । কিছু দিন আগে যখন ০৫ ব্যাচ বিদায় নিচ্ছিল তখন রাজনৈতিক হানহানিতে ক্ষমতাশীলদের জুনিয়র এক ছেলে ছাত্রফ্রন্টের তৎকালীন বুয়েট সভাপতিকে সম্পূর্ন বিনা উসকানীতে প্রচন্ড ভাবে মারধর করে এবং তার মাথায় লোহার রড ঢুকিয়ে দেয় । ছাত্রফ্রন্টের দোষ ছিল ছাত্রলীগের চাঁদা বাজির বিরুদ্ধে তারা লিফলেট দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল । তারপর ছাত্রলীগ প্রত্যেক হলে যারা ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল তাদের হল থেকে মেরে বিতাড়িত করে । অনেক ছাত্র অনেক দিন পর্যন্ত হলের বাইরে থাকে । তার পর থেকে বুয়েটে রাজনৈতিক দল বলতে বাকি রইল শুধু ছাত্রলীগ । কারণ শিবির বিতাড়িত করেছিল আর ও একবছর আগে এবং আর ও সহিংস উপায়ে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুকে ইস্যু করে তারা বুয়েটের প্রত্যেক হলের(এমনকি শহীদ স্মৃতি হল ,যে হলে স্যাররা থাকেন) শিবির কর্মীদের রুমে রুমে গিয়ে তাদের কম্পিউটার ,কাপড়চোপড় বইপুস্তক লেপতোষক আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় (সব ছাত্রের সামনে ) । তারপর তাদের কার্যক্রম আর লক্ষ্য করা যায়নি ।এতক্ষন বললাম কিভাবে ছাত্রলীগ এতদিন ফাকামাঠে গোল দিচ্ছল ।হয়তবা এই কারন গুলো বলার দরকার ছিলনা কিন্তু তার পরেও বললাম, কারণ যারা এইসব ঘটনার ভিক্টিম তাদের বন্ধুরাইতো বুয়েটের ছাত্র । হয়তোবা আমরা সাধারন ছাত্ররা তখন বলতে পারছিলামনা কারন আমরা ভদ্র , এবং এই ভদ্রতাই আমাদের দুর্বলতার চাদর পড়িয়ে দেয় ।
কিন্তু ৩১ শে ডিসেম্বর যে ঈশান ভাইকে মারল তারত কোন রাজনীতির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়না । সামান্য কন্সার্টে ঢুকাকে কেন্দ্র করে এত বড় দু:সাহস তারা দেখাতে পারে কারন( একমাত্র কারন) উপরে উল্লেখিত কোন ঘটনার কোন বিচার প্রশাসন করেনি । ১০-১২ জন ছেলের কম্পিউটার বই পুস্তক পোড়ানো হল , একজনের মাথায় রড ঢুকানো হল ,যারা এই কাজ গুলো করল তারা দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে । হয়তবা তখন তারা বুঝতে পারছিল তারা untouchable । ছাত্রলীগ নামক নির্লজ্জ পোষাক তারা পড়ে আছে ,তাদের গায়ে কোন আঁচড় দেওয়া যাবেনা এবং তাদের কোন অপমান গায়ে লাগেনা ।এখন আসি আবার ৩১ ডিসেম্বরের ঘটনায় ..

সিনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা কথা চালিয়ে যাচ্ছে । বাইরে থেকে সাধারন ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিচ্ছে ।কয়েক ঘন্টা অতিক্রম হল । প্রোভিসি স্যার কিছু বলছেননা । ছাত্রছাত্রীরা বিকাল চারটা থেকে বসে আছে । এখন বাজে সন্ধ্যা আটটা । অনেকেই ক্ষুধার্ত । আমি অবাক দৃষ্টিতে দেখলাম খাওয়ার জন্য কেউ রশিদ ভবন ত্যাগ করলনা । এমনকি মেয়েরাও না । তারা মাটিতে বসে পড়ল । যে ছেলে গুলো বাইরে বের হল তারা বিস্কুট পানি নিয়ে হাজির হল । বুয়েটের মত একটা জায়গায় যেখানে সব ছাত্র introvert সেখানে একটা করে বিস্কুট এবং এক ঢোক পানি খেয়ে সবার নাস্তা শেষ । সবাই যে যেখানে আছে সেখানেই বসে থাকল । ছাত্রছাত্রীরা যারা পরে খবর পেল তারাও আসতে থাকল । কিছুক্ষন পর সিনিয়র ব্যাচের ভাইয়ারা এসে বললেন “যদি বিচারের জন্য একরাত এই প্রোভিসির ফ্লোরে রাত কাটাতে হয় তোমরা কি রাজি আছ ?” তখন সমস্মরে সবাই বলল “অবশ্যই আমরা সবাই আছি” ।ছেলে মেয়েরা বসে থাকল রসিদ ভবনের দুই তালায় প্রোভিসির অফিসের সামনে । বিচার নিয়ে সবাই রুমে যাবে । ইতি মধ্যে বিভিন্ন টিভি চ্যানালে খবর আসল “ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত এক” । তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশকে এই লুলা অবস্থানে আনার জন্য যতটা না দায়ী অপরাজনীতি, সমান ভাবে দায়ী এই কুত্তার বাচ্চা মিডিয়া ।গালি দেওয়ার জন্য দু:ক্ষিত । গালি দেওয়ার কারন টা বলি । সব ছাত্রছাত্রীরা যখন প্রোভিসির অফিসের সামনে ফ্লোরে বসে আছে তখন অনেক টিভি চ্যানেল আসল , তারা একটা লং শট নেয় তার পর অনেক ক্লোজ আপ নেয় ,কাদের ক্লোজআপ নেয় জানেন ??? -মেয়েদের ।তারা দুই চার জন মেয়ের সাক্ষাৎকারও নিয়েছিল ।এত কিছুর পরও তারা কিভাবে বলে এটা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ । তখন সব ছাত্রের মেজাজ খুব খারাপ ।রাত নয়টা রাতের খাবারের সময় হল । কিন্তু মাঠতো ছেড়ে দেওয়া যাবেনা । আমরা মাঠ ছাড়লেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কাছে হেরে যাব । তখন আবার এক সাহসী পদক্ষেপ নিলেন সিনিয়র ব্যাচের ছাত্ররা ।বললেন “তোমরা এইখানেই থাক । সব হলের ডাইনিং থেকে খাবার এখানে আসবে” । ছাত্রী হল থেকে খাওয়া আসবেনা শুনে তারা চমকায়নি । ছাত্রদের হলগুলো থেকে যে খাবার এল তা দিয়ে ছাত্রীদের সহ হয়ে গেল । আসলে সিনিয়র অনেক ভাইয়েরা না খেয়ে ছিলেন । সব ছাত্রছাত্রীদের স্বত:স্ফুর্ততা এবং ত্যাগ এই শীতের রাতে তাদের সবচেয়ে বড় পাওনা হয়তবা । এইবার ক্লান্তিবিহীন অবরোধ শুরুর পালা । যেখানে প্রোভিসির সকল বুলি আওড়ানো , হাজার রকমের হুমকি চোখ রাঙ্গানোকে উপেক্ষা করে ঘোষনা দেওয়া হল “আজীবন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত শুনে আমরা এইখান থেকে যাব ,তা না হলে প্রোভিসিকে যেতে দেওয়া হবেনা” । তারপর একজন একজন করে স্যার আসতে থাকলেন এবং আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করলেন যে এত বড় সিদ্ধান্ত এত তাড়াতাড়ি বিনা তদন্তে দেওয়া যাবেনা । তদন্তের কথা শুনে সবার মাথা আরো খারাপ হয়ে গেল । কারন বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে এক ঘটনায় ঠিক এই রকম ভাবেই এক জুনিয়র এক সিনিয়রের উপর হাত তুলে(দুই জনেই ছাত্রলীগের) । এবং এই ঘটনায় হল ভ্যাকেন্ট করে দেওয়া হয় এবং বুয়েট একমাস ধরে বন্ধ থাকে । তদন্ত কমিটি একমাস সময় নেয় । বুয়েটের সব ছাত্র জানে কোন ছেলে এই বেয়াদবী করেছিল কিন্তু কোন বিচার হয়নি । তাই ৩১ ডিসেম্বরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির কথা শুনে সবার মাথা খারাপ হয়ে গেল । তখন বলা হল যা ইচ্ছা তাই করেন আমরা ন্যায় বিচার না নিয়ে এই ভবন ছাড়বনা ।

রাত আস্তে আস্তে গভীর হয় । স্যাররা অবরুদ্ধ । স্যারদের জন্য খুব দামী restaurant থেকে খাওয়া আনা হল । তারা নামায পড়ার জন্য বাইরে যেতে চাইল । তাদের যায়নামায সরবরাহ করা হল । কোন অবস্থাতেই তাদের ভবন ত্যাগ করতে দেওয়া হয়নি । রাত আর ও গভীর হয় ছেলেমেয়েদের চোখ ঝাপসা হতে থাকে । কিছু কিছু ছেলে মেয়ে ভবনের বাইরে গানের আসর বসায় । তারা রণ সংগীত গায় । সময় কাটানোর আর কোন উপায় নাই । তারপর ও কেউ ভবন ছাড়লনা ।

ইতি মধ্যে নতুন বছরের আগমনের সময় হচ্ছে । অনেকের অনেক রকম পরিকল্পনা ছিল নিউ ইয়ার পালন করার । কেউ কি ভেবেছিল বুয়েটের সব ছেলেমেয়েদের সব নিউইয়ার উইশ এক হয়ে যাবে । ছেলেরা সবাই মেঝেতে বসা । সময় তখন ১১:৫৯ । সবাই সমস্বরে বলতে লাগল দশ,নয়, আট, সাত ,ছয়, পাঁচ ,চার ,তিন ,দুই এক.......হ্যাপি নিউ ইয়ার । এই চিৎকারে হয়তবা প্রশাসনের বুক কাপেনি , শত শত ছেলে মেয়েদের সমস্বরে এই চিৎকার বুয়েটিয়ানদের অনুপ্রেরণা শত গুন বাড়িয়ে দেয় । এর চেয়ে আর ভাল নিউ ইয়ার উৎযাপনকি আর হতে পারে ???
রাত সাড়ে চারটা ক্লান্ত ছাত্ররা কেউ মসজিদে(রশিদ ভবনের) ,কেউ অডিটরিয়ামে ঘুমাতে শুরু করল । আর যারা প্রোভিসির অফিসের বরান্দায় তারা ওই খানেই মেঝেতেই শুয়ে পড়ল । মেয়েরাও ওইখানে যেখানে বসে ছিল সেইখানে হেলান দিয়ে যে যার মত শুয়ে পড়ল । সিনিয়র আপু ভাইয়েরা জেগে ছিলেন ।





০১.০১.১২



সকাল হল ।সকাল আটটা ।যারা রাতে শীতের কারনে মেঝেতে ঘুমাতে পারেননি তাদের চোখ মুখ পুরা লাল । আবার ছেলে মেয়েরা আসতে শুরু করল।দশটার দিকে আবার আলোচনা । এইবার আলোচনার সংক্ষিপ্ত ভাষা হল –আজীবন বহিস্কার করার এখতিয়ার ভিসি বা প্রোভিসির কার ও হাতে নাই ,তাদের হাতে সর্বোচ্চ ছয় মাস বহিস্কার করার ক্ষমতা আছে । আজীবন বহিস্কার করার এখতিয়ার আছে বোর্ড অব রেসিডেন্স এবং ডিসিপ্লনারী কমিটির । তাদের সাথে মিটিং করা ছাড়া এই রকম কোন ডিসিশন দেওয়া যাবেনা । সিনিয়র ভাইয়েরা তাদের সীমাবদ্ধতার কথা বুঝলেন ।তারা সমাধান দিলেন আপাতত ছয়মাস বহিস্কার করা হোক কিন্তু বোর্ড অব রেসিডেন্স এবং ডিসিপ্লনারী কমিটির মিটিং আজকে ডাকতে হবে । এইমর্মে একটি কাগজে স্বাক্ষর প্রদান করে প্রোভিসিকে রুম ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয় ।তারা যে কাগজটাতে সই করলেন তাতে যা ছিল তা হল –ছয় মাসের বহিস্কার এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত করে বোর্ড অব রেসিডেন্স এবং ডিসিপ্লনারী কমিটির মিটিংএর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রায় দেওয়া হবে । সব স্যার যারা আটকা পরেছিলেন তারা একে একে বের হলেন ।তারা অবাক হয়ে দেখলেন সব ছেলেমেয়েরা এখনো মেঝেতে শুয়ে আছে । ভিসি আসলেন । সবাই ভিসির সাথে দেখা করার জন্য গেলেন । এবার ভিসির অফিসের সামনে অবস্থান নিল সবাই । আগের দিনে প্রোভিসির অফিসের সামনে অবস্থানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রস্তুতি ভাল ছিল । ছাত্রের সংখ্যা বাড়তে থাকল । দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হল । দুপুরের খাওয়াও আসল হল থেকে । আরেক রাত মেঝেতে কাটানোর প্রস্তুতি । মেয়েদের প্রস্তুতি ভাল । তারা চাদর কম্বোল নিয়ে আসল । যে যার মত শেয়ার করে থাকা আরম্ভ করল ।
ইতিমধ্যে নাটক আরও বাড়তে থাকল । তবে এই নাটক সম্পূর্ন অনুমান করার মত । একটি গ্রুপ আবির্ভুত হল দোষী ছেলেদের বাচানোর জন্য । তাদের মধ্যে নাকি একজন সম্পূর্ন নিষ্পাপ । ০১.০১.১২ তারিখের রাতটাও কাটল ভিসির অফিসের সামনে ,ক্যাফেটেরিয়ায়, অডিটরিয়ামে ,মেঝেতে মসজিদে ।





০২.০১.১২




সকাল হল । সকাল নয়টা থেকে মিটিং হওয়ার কথা । সব বুয়েটিয়ানরা হাজির । অত্যন্ত খুশির সাথে জানাচ্ছি যে অনেক প্রাক্তন ভাই আপুরাও এসেছেন রায় শুনতে । রায় দেওয়ার সময় দুপুর তিনটা । তখন বাজে দুপুর দেড়টা । পুলিশের গাড়ি আসতে শুরু করে । মুহুর্তের মধ্যে প্রায় চার থেকে পাচশত দাংগা পুলিশ এসে হাজির । তখন সবাই সন্দেহ করতে লাগল ,কি হচ্ছে এইসব ? আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে জানাচ্ছি যে একটা ছাত্র ও কোনপ্রকার খারাপ ব্যবহার করেনি । পরিস্থিতির গভীরতা অনুধাবন করে সবাই সবর করতে থাকল । সম্পূর্ন অহিংস উপায়ে সবাই ক্যাফেতে গিয়ে বসে থাকল রায়ের জন্য । রাত নয়টায় রায় আসল ।দুই জন আজীবনের জন্য বহিস্কার । একজনের মুক্তি(প্রমান না পাওয়ার কারনে) ।

কোন বিজয় উল্লাস হলনা । সিনিয়র ভাইয়েরা কেউ কারও দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন না । হয়তোবা একটানা তিন থেকে চার দিন না ঘুমিয়ে থাকার জড়তা তাদের পুরো শরীরে । হয়তোবা এই ধরনের বিজয়ের সব চেয়ে যোগ্য উল্লাস হল নিস্তব্ধতা । হয়তবা ওই মুহুর্তে সবার ঈশান ভাইয়ের কথা মনে হচ্ছিল । তবে আমার উল্লাস করার ক্ষমতা থাকলে সব গুলো সিনিয়র ভাইকে কাঁধে করে নিয়ে নাচতাম । কিন্তু আমিত ক্ষুদ্র । আমার চিন্তার গভীরতাও কম । এই চিন্তা দিয়ে কি কোন বিজয়ী সেনাপতির মন ব্যাখ্যা করা যায় । সবাই আস্তে আস্তে হলের দিকে রওনা দিল । সবাই হাটছে ...এক অন্যরকম বুয়েটের দিকে(হয়তোবা) । যেখানে নিরীহ এবং সাধারনের ক্ষমতা পারমানবিক বোমার মত । এবং যে মুহুর্তে হলে প্রবেশ করছিলাম তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিল “আমরা বুয়েটিয়ানর সব সময় ভার্চুয়াল ওয়ারে জিতিনা ..সত্যিকারের যুদ্ধেও আমরা নির্ভীক” ।

সালাম সব বুয়েটিয়ানদের ।
৩৩টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×