somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নূরে মোহাম্মদীর (সাঃ) অলৌকিকত্ব দৃশ্যমান

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর জন্ম পূর্ববর্তী বহু অলৌকিক কাহিনী বিভিন্ন পুঁথি-পুস্তক ও রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে যৎসামান্য তুলে ধরার প্রচেষ্টা নিচ্ছি। খ্রিস্টান বাদশাহ আবরাহা (যা কোরানুল করীমে উল্লেখ আছে) যখন মক্কার কাবা গৃহ ধ্বংস করার জন্যে আসে, তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব মক্কার শাসনকর্তা ছিলেন। আবরাহার সেনাবাহিনী আবদুল মুত্তালিবের কিছুসংখ্যক উট জবরদস্তিমূলকভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিলো। আবদুল মুত্তালিব সে উটগুলো ফিরিয়ে আনতে স্বয়ং আবরাহার শিবিরে গমন করেন। আবরাহা ইচ্ছে কলে তাকে হত্যা, বন্দী কিংবা অপমানিত করতে পারতো। কিন্তু সে তার কিছুই করতে পারেনি। বরং তাকে দেখামাত্র তার প্রতি এত আকৃষ্ট হয়ে পড়ল যে, তাৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতঃ তাকে নিজের পাশ্র্বের আসনে উপবেশন করলেন। আবদুল মুত্তালিবের ললাট হতে নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) তখনও পুত্র আবদুল্লাহ্র ললাটে স্থানান্তরিত হয়নি। সুতরাং সে উজ্জ্বল আলোকরশ্মি তার ললাট দেশে চমকাচ্ছিলো। আর শুধু তার কারণেই আবরাহার মত বিরাট শক্তিশালী সম্রাট তার প্রতি এত আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, তাকে এরূপ সম্মান প্রদর্শনে বাধ্য হয়েছিলেন। নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) অভূতপূর্ব আকর্ষণের আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিষয় বর্ণনা করছি। নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) তখন আবদুল আবদুল্লাহর ললাটে স্থানান্তরিত হয়েছে। তিনি যখন পূর্ণ বয়স্ক যুবক। এমনি সময় একদিন তিনি স্বীয় গৃহ হতে কাবা গৃহাভিমুখে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বনু খাসআম গোত্রের ফাতেমা বিনতে মোররাহ নাম্নী জনৈকা বুদ্ধিমতি যুবতীর সাথে তার সাক্ষাৎ হল। ফাতেমা এর পূর্বে আবদুল্লাহকে আরও বহুবার দেখেছেন ও তার কথাবার্তা শুনছেন। কিন্তু আজ তিনি আবদুল্লাহকে যে দৃশ্যে দেখলেন কেমন এক অতু্যজ্জ্বল আলোকশিখা তার ললাট হতে ফুটে বের হচ্ছে। এর ঔজ্জ্বল্যে তার দেহ মোহনীয় হয়ে ওঠছে। ফাতেমার মনে হল তা আবদুল্লাহর স্বাভাবিক সৌন্দর্য নয়। নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক জ্যোতি তাকে ঘিরে রেখেছে। তার ওপর ইহা কোন অশুভ শক্তির প্রভাবও নয়। কারণ অশুভ শক্তির প্রভাব মানব দেহের ক্ষতি সাধন করে। তা ছাড়া তা এভাবে উজ্জ্বল জ্যোতির আকারে প্রকাশ পেতে পারে না। ফাতেমা আবদুল্লাহকে বললেন, আবদুল্লাহ্ একটু সময় তুমি বসবে কি? তোমার সাথে দুটো কথা বলার আছে। আবদুল্লাহ্ উপবেশন করলেন। ফাতেমা তাকে বেশ আদর-যত্ন শেষে বললেন, তুমি ভাই আমাকে পরিণয়ে আবদ্ধ কর। আমি তোমাকে স্বামীরূপে পেতে চাই। উল্লেখ্য যে, আরবে সে যুগে সাধারণ অবস্থায় যা-ই হোক না কেন ভদ্র সমাজে বিয়ের ব্যাপারে পাত্রীর অভিভাবকের মতামতের ওপরই বিয়ের কার্য সমাধা হতো। পাত্র-পাত্রী এতে নিজস্ব মতামত প্রয়োগ করতে পারতো না। ফাতেমার এ কথা ভালোভাবেই জানা ছিলো। এছাড়াও সে আরবের একটি ভদ্র এবং বিশিষ্ট কবিলার কন্যা ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে সব সংকোচ ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে একটি যুবকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার প্রস্তাব দিলেন, তার কারণ ছিলো এই যে, আবদুল্লাহ্কে দেখবার সাথে সাথে তার অন্তরে এমন এক মোহ সৃষ্টি হয়েছিলো, যাতে সে নিজেকে কোনো রকমেই স্থির রাখতে পারেনি। ফাতেমার এ প্রস্তাবের উত্তরে আবদুল্লাহ্ বললেন, না তা হয় না ফাতেমা। বিয়ের ব্যাপারে আমার নিজের কোনো মতামত নেই। পিতামাতা এখনো জীবিত আছেন। তাদের অনুমতি ব্যতীত এ ব্যাপারে আমি তোমার কাছে কোনো কথা দিতে পারবো না। তুমি এক কাজ করো যিনি তোমার অভিভাবক আছেন, তিনি আমার পিতার নিকট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তারপর আমার পিতা যদি প্রস্তাব গ্রহণ করেন তাহলে আমার অমতের কিছু থাকবে না। অন্যথায় আমার দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আবদুল্লাহর এ জবাব শুনে ফাতেমা যদিও খুশি হলেন না, তবু তার পক্ষে করার মত কিছু ছিলো না। তিনি নীরব হয়ে রইলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ তার নিকট হতে বিদায় গ্রহণ করলেন। বলাবাহুল্য যে, তখন আবদুল্লাহর ললাটে অপূর্ব নূরে মোহাম্মদীর (সাঃ) উজ্জ্বল আলো বিকশিত হয়েছিলো, আর তার অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণেই ফাতেমা তাকে তাৎক্ষণিভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর সত্যতা পরবর্তীকালের ঘটনার দ্বারা নিঃসন্দেহরূপে প্রমাণিত হয়েছে। তখন আবদুল্লাহর সাথে বিবি আমেনার বিয়ে হয়েছিলো এবং তাঁর ললাট হতে নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) বিবি আমেনার গর্ভে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিলো। এ সময় একদিন আবদুল্লাহ্ কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হঠাৎ আজো সে পূর্বোক্ত যুবতী ফাতেমার সাথে সাক্ষাৎ হল। ফাতেমা তখনও অবিবাহিতা ছিলেন। তিনি একবার চক্ষু তুলে আবদুল্লাহর দিকে তাকালেন। তারপর কোনো কিছু না বলেই সে আপনার কাজে মনোনিবেশ করলেন। ফাতেমার আজকার অবস্থা দেখে আবদুল্লাহ্ কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, হে ফাতেমা! তুমি না একদা আমার সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে? কিন্তু এখন যে কিছুই না বলে একেবারে চুপ করে রইলে? এর কারণ কী বলতো? ফাতেমা বললেন, আবদুল্লাহ্! তুমি এতদিনে নিশ্চয়ই কোনো ভাগ্যবতী মহিলাকে বিয়ে করেছ। আমি অবশ্য তোমার বিয়ের কথা কারো নিকট শুনিনি। তবে তোমার চেহারা দেখেই বুঝে নিয়েছি যে, তুমি নিশ্চয়ই এখন বিবাহিত। যে মহিলাকে তুমি বিয়ে করেছ, তার মত ভাগ্যবতী নারী এ জগতে আর নেই। সেদিন আমি যে তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তার কারণ কি জান? সেদিন তোমার ললাটে এক অদ্ভুত দীপ্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো, যার আকর্ষণ কোনো রমণীই অবহেলা করতে পারে না। কিন্তু আজ তোমার ললাটে সে দীপ্তির কোনো নিদর্শন নেই। তা দেখেই আমি অনুমান করেছি যে, এতদিনে নিশ্চয়ই তোমার বিয়ে হয়ে গেছে এবং সে নূরের দীপ্তি তোমার ললাট হতে তোমার বিবাহিতা পত্নীর গর্ভে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এ ঘটনা ব্যতীতও নূরে মোহাম্মদী (সাঃ)-এর অপূর্ব শক্তি সম্পর্কিত আরও বহু জনশ্রুতি রয়েছে। এখানে আরও একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। জানা যায়, আবদুল্লাহর পরিপূর্ণ যৌবনকালে তখনও তার সাথে বিবি আমেনার বিয়ে হয়নি। কিন্তু পিতা আবদুল মুত্তালিবের ললাট হতে নূরে মোহাম্মদী (সাঃ) আবদুল্লাহর ললাটে আশ্রয় নিয়েছে। এমতাবস্থায় তাঁর ললাট এবং মুখমণ্ডল এমন অলৌকিক সৌন্দর্যের আভায় বিকশিত হয়েছিলো যে, তাঁকে দেখে আরবের শতাধিক শ্রেষ্ঠ রূপসী যুবতী তাকে বিয়ে করতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলো। কিনতু তাদের আশা ব্যর্থ হওয়ায় হৃদয়ের জ্বালা সইতে না পেরে তারা সকলেই আত্মহত্যা করেছিলো।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×