somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থনীতির নিরুদ্দেশ যাত্রা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ঘাটতি, শেয়ারবাজার বিপর্যয় ও অর্থনীতির নানা সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় পর্যুদস্ত একটি বছর কেটে গেছে। তার হাত ধরেই নতুন বছরে অর্থনীতির নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু হয়েছে।

বিদায়ী বছরে দেশের অর্থনীতি স্মরণকালের সবচেয়ে নাজুক ও ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বছরজুড়েই সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় ছিল অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে দফায় দফায় ঋণ নিয়ে ও নতুন টাকা ছাপিয়ে দেশ চালাতে হয়েছে সরকারকে। পুঁজিবাজারের দেউলিয়াত্ব, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি গ্রাস করে পুরো অর্থব্যবস্থাকে। এর সর্বগ্রাসী প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনমানে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ছিল ২০১১ সালের অসহনীয় ঘটনা। অবিরাম মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরো ভারী করে তোলে। এ সময় ইউরোপের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে পোশাক রপ্তানিও কমতে শুরু করে। এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয় শেয়ারবাজার বিপর্যয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির স্বস্তির জায়গা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, বাড়ছে শঙ্কা। সরকারের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়ায় গেল বছর অর্থনীতি একটি অস্থির সময় পার করেছে। নতুন বছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ দিতে না পারায় নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। কর্মসংস্থানও বাড়ছে না। লোডশেডিং আর গ্যাসের স্বল্প চাপে নগরজীবন একেবারে দিশাহারা। অথচ সাত মাসে চারবার দাম বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের। বছরে কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও।

২০১১ সালে সরকারের হাতে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো টাকাও ছিল না। নতুন বছর ২০১২ সাল তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় নতুন বছরে সঙ্কট আরো বাড়বে, যা সামলানো সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এতে সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাদের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ অর্থবছরের ৬ মাসেই সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ ধারের বেশিরভাগই নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমানত রাখে না বা তার নিজস্ব কোনো অর্থও নেই। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেয়ার মানেই হচ্ছে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে সরবরাহ করা। গত বছরে ক্রমাগত ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানো হয়েছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঋণের সুদ ছিল ১১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১১ সালের শেষে এসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশে। এ হচ্ছে সাধারণ ঋণের অবস্থা। তবে শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যাংক ঋণের এ সুদের হার ১৭ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ। ঋণের এ ঊর্ধ্বগতি সুদের হারই প্রমাণ করে- গেল বছর দেশের অর্থনীতির অবস্থা কতটা নাজুক ছিল।

এদিকে বছরজুড়েই রপ্তানি ও রাজস্ব আদায়ের অবস্থাও ছিল বেশ নাজুক। এ খাতেও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে হু হু করে। আমদানি প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের ঘরে থাকলেও প্রকৃত আমদানি ব্যয় কত হচ্ছে তা অজানাই ছিল।

বছরজুড়েই আশঙ্কা করা হচ্ছিল আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যার প্রমাণ মেলে টাকার বিপরীতে কয়েক দফায় ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার ঘটনায়। এক বছরে বৈধ চ্যানেলে ১০ থেকে ১২ টাকা এবং কার্ব মার্কেটে ১৫ টাকা বেড়েছে ডলারের দাম। ২০১০ সালের জুনে যে ডলার কিনতে হতো ৬৯ টাকায় সেই ডলার ডিসেম্বরে কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা বা তার উপরে। কার্ব মার্কেটে তা ৮৫ টাকার উপরে ওঠে।

গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪০ ভাগের উপরে। মূলত রেন্টাল পাওয়ারের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানির কারণে এ ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেশি দেখিয়ে এখানে মুদ্রা পাচারের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, তা না হলে আমদানি প্রবৃদ্ধি এত বেশি হওয়ার কথা নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের ঘরে থাকলেও আগামীতে তা আবারো বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিময় হার ও রিজার্ভের ওপর।

সরকার জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করলেও অর্থনীতির নানা সঙ্কটের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় খারাপ হবে।

বছরের শেষ কয়েক মাসে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নেমে এক হাজার কোটি ডলারের নিচে চলে যায়; যা দিয়ে বড়জোর সোয়া দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল। এ ঘাটতি নিয়েই নতুন বছর শুরু হয়েছে। সাধারণত নিরাপদ সীমা হিসেবে একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার প্রয়োজন ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থের। গত বছর রিজার্ভ ঘাটতির ফলে মূল্যস্ফীতি এখন আকাশ ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশের ঘরে এবং আগস্টে এটি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে, গত এক দশকে দেশ মূল্যস্ফীতির এ হার নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছে। আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।

অর্থনীতির মাপকাঠিতে ৭ মাত্রার নিচের মূল্যস্ফীতিকে স্বাভাবিক এবং সহনীয় বলা হয়। ৭ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য সতর্ক সঙ্কেত এবং এর ওপরের মাত্রাকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে দেখা হয়। আর ৯ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে মহাসতর্ক সঙ্কেত বলা হয়। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে প্রায় ১২ শতাংশ ( অর্থাৎ ১২ মাত্রার)।
দেশের অর্থনীতির আরেক খাত শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর প্রায় সবাই নিঃস্ব হয়ে যায় গত বছর। উপর্যুপরি বাজার পতনের কারণে লাখ লাখ মানুষ তার পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতি তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। তাদের অনেকের জীবনযাত্রার মান ক্রয় ক্ষমতার নিচে চলে গেছে; যা অর্থনীতির জন্য খুবই নেতিবাচক কবলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন, মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে। এ জন্য তিনি অভ্যন্তরীণ নীতিগত অনেক কারণকে দায়ী করে বলেন, চরম মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের অর্থনীতি বেশ সমস্যায় আছে। এটা বলা যাবে না যে, শুধু আন্তর্জাতিক মূল্য পরিস্থিতির কারণেই এই মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটছে। বরং এর জন্য অভ্যন্তরীণ অনেক নীতিও দায়ী। তার মতে, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্যে দেশের মুদ্রা ও আর্থিক নীতিতে আরো সমন্বয় দরকার। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন, বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে তা আরো বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছর এ খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই সিংহভাগ ঋণ নেয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ না নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে। আর ঋণ না নেয়াই হবে শ্রেয়। কারণ ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কট দেখা দেয় এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।

একইভাবে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। তখন আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যতা চাপের মুখে পড়ার কারণ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫টি পরামর্শ দেয়। এগুলো হচ্ছে- মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্বনীতি গ্রহণ, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রক্ষেপিত মাত্রায় রাখা, জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা এবং রপ্তানি আয়ের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করা।

সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে ২০১১ সালে সরকার প্রথম বিদেশ থেকে সার্বভৌম (সভরেন) ঋণ নেয়ার চেষ্টা করে। এ জন্য বিদেশি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু করে সরকার। এর আগে বাংলাদেশ কখনোই এ জাতীয় বাণিজ্যিক ঋণ নেয়নি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশ থেকে সার্বভৌম (সভরেন) ঋণ নিয়েও যে দেশের অর্থনীতি সামাল দেয়া যাবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তারা বলছেন, অনেক উন্নত দেশ এ প্রক্রিয়ায় নিজেদের বেসামাল অর্থনীতি সামাল দিতে পারেনি। ইউরোপজুড়ে মন্দা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ জাতীয় ঋণের মধ্যে ঢুকলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরই মধ্যে গ্রিস, ইতালি এবং স্পেন এ ধরনের ঋণ দিয়ে ডুবে গেছে। আরো কয়েকটা দেশ এভাবেই ডুবে যাওয়ার পথে রয়েছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণসহায়তা হিসেবে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে মোট ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বৈদেশিক ঋণ আর অনুদান মিলিয়ে এসেছে ৪১ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছিল ৬১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে অর্থ ছাড়ের পরিমাণ কমে গেছে ২০ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। শতকরা হিসাবে এক বছরে বৈদেশিক সহায়তা কমেছে ৩৩ ভাগ।

এদিকে আগামী দিনগুলোতে বিদেশি সাহায্য বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সূত্র। সরকার মনে করেছিল বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা খাতে ১০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। অন্যদিকে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির (বাড়তি ঋণসহায়তা) আওতায় আইএমএফের কাছ থেকে পাওয়া যাবে আরো ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ দুটি সংস্থা থেকে খুব শিগগির ঋণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাজেটে ধারণা দেয়া হয়েছিল এ দুটি সংস্থা থেকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যাবে। কিন্তু অর্থবছরের ৬ মাসে তার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এখন এ ঋণ না পাওয়া গেলে তা অভ্যন্তরীণ খাত থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। আর সেটি করতে হবে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েই। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে টার্গেট ধরা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। কয়েক বছর ধরে টানা মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ এখন সঞ্চয়ই করতে পারছে না। উল্টো হাতে থাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক বিবেচনায় ২০১১ সাল একেবারেই ভালো যায়নি। অর্থনীতির অবস্থা একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে। এর ধারাবাহিকতায় নতুন বছর ২০১২ সাল উন্নতির দিকে যাবে বলে আশা করেন না তিনি। তার মতে, ২০১১ সালে মূল্যস্ফীতি এতই বেশি ছিল যে জনগণের ওপর তা বোঝা হয়ে আছে। সরকার ব্যাংক ঋণ এত বেশি নিয়েছে যে, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আর ঋণ নেয়ার জায়গা নেই। একই সঙ্গে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন হয়েছে এসবই অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া শেয়ারবাজার বিপর্যয় মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

আরেক অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়া হয় না। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। সরকার তথ্য না দিয়ে কোনো কিছু মন্তব্য করা কঠিন। তবে গত ক্যালেন্ডার বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী, যা সামলাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রভাব জনগণের ওপর পড়েছে, যা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের উপরে উঠলে প্রত্যাশা বেড়ে যায়। আর প্রত্যাশা বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে। এর ফলে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে পড়ে। মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়। এতে অর্থনীতি বিরূপ আচরণ করে। বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। একদিকে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে অপরদিকে সরকারের ঋণ নির্ভরতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। এতে করে বিনিয়োগও কমে গেছে। ফলে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১১'র সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় ছিল। যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে বাজারে নিয়ে আসার কারণে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ফলে বেসরকারি খাতকে ঋণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×