আমরা বড়দিনের ছুটি পায়। দেশে বিদেশে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মাঝে উৎসবের অন্ত নেই। খাওয়া-দাওয়া, ফুর্তি করা, সান্তা ক্লজের চমৎকারিত্ব কত কিছু। সেই বড় দিন নিয়েই রয়েছে নানা বিতর্ক, যার কমতি নেই। নিত্য নতুনভাবে বেড়ে চলেছে। এখন তো প্রশ্ন উঠেছে যিশুর জম্ম আসলে কবে?
খ্রীষ্ট ধর্মের লোকজন মনে করেন, তাদের ধর্মের ০১ খৃষ্টাব্দের প্রবর্তক যিশুর জম্ম ২৫ ডিসেম্বর। অথচ খোদ বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে যিশুর জম্মের তারিখ লেখা নেই। ডায়োনিসিয়াস নামের এক দার্শনিক যিশুর জম্মের তারিখ বের করতে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, যিশুর জম্ম ২৫ ডিসেম্বর নয়। উত্তর আফ্রিকাতে ডিপাসচা কম্পিউটাস নামের ২৪৩ খৃষ্টাব্দের একটি তথ্য পাওয়া যায়, তাতে যিশুর জম্ম হিসেবে ২৮ মার্চ লেখা রয়েছে। আলেক জান্দ্রিয়ার বিশপ ক্লিমেন্ট ২১৫ খৃষ্টাব্দের মানুষ, তার মতে খৃষ্টের জম্ম ১৮ নভেম্বর। এতকিছু যখন কথা উঠছে তখন খৃষ্টের প্রথম দিকে নাকি ২৫ ডিসেম্বর পালন হতো না।
তাহলে কখন থেকে এলো এদিন? শুনুন তাহলে.. প্রাচীন রোমের একটি জাতি হচ্ছে পেগান। তারা ডিসেম্বর মাসে সাতুরনালিয়া নামের একটি উৎসব পালন করতো। এটি আসলে একটি কৃষি উৎসব। রোমান দেবতা সাটার্ন এর পুজো। উৎসবটি শুরু হতো ১৭ ডিসেম্বর আর শেষ হতো ২৫ ডিসেম্বর। একজন অন্যজনকে উপহার দেয়া, নতুন কাপড় পরা, নানা রকমের খাওয়া দাওয়া, রাস্তায় কার্নিভাল বের করা..ঠিক আমাদের ঈদের মতোন অনুষ্ঠান। তখন দাস প্রথার কারনে মালিকরা ভালো খাবার তুলে দিত দাসদের মুখে। রোমান আদালতগুলো বন্ধ থাকতো। কোন প্রকার নির্যাতন, নিপীড়ন ছিল না। রোমানরা একজনকে নির্বাচন করতেন যার নাম দেয়া হতো বিশৃংখলার প্রভু। এ প্রভুর কষ্টের সীমা থাকতো না। কারন সাতদিন ধরে তাকে জোর করে খাওয়ানো হতো। তাকে ঘিরে থাকতো আনন্দ। সে প্রভু মহিলাও হতো। আনন্দের আতিশায্য এমন ছিল যে যার থেকে বাদ যেতো না যৌন নির্যাতনও। বেশ কিছু বেকারী বড় বড় কেক তৈরি করতো। ৪ খৃষ্টাব্দে এতে পরিবর্তন আসে। নেতারা সিদ্ধান্ত দিলেন, উৎসবের শেষ দিন তারা যিশুর জম্ম দিন পালন করবেন। সেই থেকে ২৫ ডিসেম্বর জনপ্রিয় হয়ে উঠে। একবারতো ইংল্যান্ডে বড়দিন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অলিভার ক্রমওয়েল নামের এক রাজনীতিক পার্লামেন্ট আইন করে এটি নিষিদ্ধ করে দেয়। পরে সরকার পরিবর্তন হলে এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।
যিশু কোথায় জম্ম নিয়েছিলেন এ নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। একটি মত বলে, যিশুর জম্ম গুহায়। কোন আস্তাবলে নয়। যিশুর বাবা যোসেফ ছিলেন একজন কার্পেন্টার।
ইংল্যান্ডে বড় দিনের জনপ্রিয় ডিনার হচ্ছে সরষে দিয়ে রাধাঁ শুকরের মাথা! ইংল্যান্ডের প্রতি দশ কুকুরের মধ্যে ৬ কুকুর উপহার পায়। দক্ষিন ফ্রান্সে তৈরি হয় বড় রুটি। এটি দুভাগ করে এক ভাগ গরীবদের দেয়া হয়, বাকি টুকু নিজেরা খায়। ইউক্রেনে ক্রিসমাস ট্রি তৈরি হয় কৃত্রিম মাকড়সা আর তার জাল দিয়ে। আর্মেনিয়ায় ক্রিসমাসের পছন্দের খাবার হচ্ছে মাছভাজা, লেটুস আর পালং শাক। মাতা মেরি নাকি যিশুর জম্মের আগের রাতে এ খাবার খেয়েছিলেন।
গ্রীকরা বড় দিনের উৎসবে কোন ট্রি বানায় না। উপহারও দেন না। গ্রীক পুরোহিত গ্রামের পুকুরে একটি ছোট্ট ক্রুশ ছুড়ে দেন। এতে নাকি পাপি আত্না দুরে থাকে। নরওয়েতে ক্রিসমাসের উপহার খোলার আগে সব ঝাটা লুকিয়ে ফেলা হয়। ওরা মনে করে, ডাইনি বা অশুভ আত্মা ঝাটা চুরি করে উড়াল দিতে পারে....বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে।