somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাধা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্বের জন্য Click This Link

ছাত্র থাকা অবস্থায় আরেকজনের দুরবস্থা দেখে সানোয়ার মনে মনে বলতো, আমি যখন অনেক টাকা কামাবো, তখন তোদের সবার অবস্থা পাল্টে দেবো। এখন ও অনেক টাকা কামায়ও; কিন্তু সেই পাল্টে দেয়াটা এখন আর সম্ভব না। স্বাভাবিক কারণেই সম্ভব না। বন্ধুকে সাহায্য করতে গেলে সে অনেক ছোট হয়ে যায়। সেজন্য এখনো যারা বেকার, তারা মাঝেমধ্যে ধার চায়। ধার নেয়ার পর আর সে যোগাযোগ করতে চায় না। তার ধারণা থাকে, যোগাযোগ করলেই হয়তো টাকা চাইবে। কিন্তু ওরা ধারণাও করতে পারে না, সানোয়ার যে বেতন পায়, তার পাঁচভাগের একভাগ টাকা বেতনের চাকরির জন্য ওরা তুমুল প্রতিযোগিতায় নামছে। সেজন্য সামান্য দু-এক হাজার টাকা ও এমনিই দিয়ে দেয় ওদেরকে। বন্ধুদের লজ্জাটা যাতে ভেঙে যায় সেজন্য ও নিজেই ফোন করে। এরও পেছনে বড় যে উদ্দেশ্যটা কাজ করে, তা হলো বন্ধুদেরকে জড়ো করার প্রক্রিয়ায় রাখা। এইসব মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর পরিবেশও বিদেশী বিদেশী। বন্ধুরা একসাথ হলে দেশী সম্পর্কের স্বাদটা পাওয়া যায়। অনেক বড়লোকও গ্রামে গেলে পাজেরোর ছাদে নারকেল আর পেছনে মুরগি বেঁধে নিয়ে আসে।
সানোয়ার এখন ফোন করবে মুহিতকে। প্রতিদিনই তালিকা করে কাউকে না কাউকে ফোন করা হয়। কোম্পানি মোবাইল বিলের জন্য এক হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়। একটা সময় মানুষ কল দিতে গেলে সেকেন্ডের দিকে তাকিয়ে থাকতো। আটান্ন সেকেন্ড হলেই কুটুস করে কেটে দিতো। কিন্তু ওর কোনো মাসেই এক হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে না। মোবাইল খরচ এখন অনেক কমে গেছে। টাকাটা বেতনের সাথে দিলে অন্য কাজে লাগানো যেতো। কিন্তু মোবাইলও কোম্পানির; বিলও দেয় কোম্পানি। মোবাইলটা দেয়া হয়েছে এজেন্টদের সাথে কথা বলার জন্য। কোম্পানি মোবাইল দেয়ার আরেকটা সূক্ষ্ম উদ্দেশ্য আছে। এটা নিয়ে বাসায় যাওয়া সম্ভব না। নিজের মোবাইল বন্ধ করে বাড়িতে গিয়ে একটা ঘুম দিয়ে আসা যায়; মোবাইলে চার্জ ছিলো না—এই ছুতো দেয়া যায়।
ফোন ধরেই মুহিত প্রতিবারের মতো এবারো বললো : স্যার, কেমন আছেন স্যার?
সানোয়ারও বললো : এই বেয়াদব, আমি কি তোকে ধরে রেখেছি যে ছাড়বো?
আসলে কী স্যার, আমাদের বাড়ি ছারছিনাতে। ছোটবেলা থেকে ছাড়ছি না শুনে এসেছি তো, তাই এখন…।
আমি কেটে দিলাম কিন্তু ভালোভাবে কথা না বললে।
আমার মুখ দিয়ে কি খারাপ কথা বেরোচ্ছে? সকালবেলা ক্লোজ আপ দিয়ে দাঁত মেজেছি।
ঠিক আছে, তোর সুবাসিত কথা বল। কেমন আছিস?
আগে জিজ্ঞেস করবি আছি কি না। তারপরে না ভালো-মন্দ।
আছি কি না মানে? তুই কি মারা গেছিস?
সংজ্ঞা অনুযায়ী আমার অস্তিত্ব নেই। কারণ আমি আকারহীন—বেকার; যার কোনো আকার নেই।
আকার নেই; কিন্তু দেখা যায় তো?
তা অবশ্য যায়।
তাহলে তুই আছিস। এবার বল কেমন আছিস?
খুব ভালো, দোস্ত।
মুহিত, তোর কণ্ঠ কেমন যেন শোনা যাচ্ছে। তোর কি কিছু হয়েছে?
মা খুব অসুসথ রে।
ডাক্তার দেখিয়েছিস?
ডাক্তার দেখালেও কোনো লাভ হবে না। আমি জানি ওনার কী অসুখ। ওনার অসুখ হলো মনে। ছেলে বেকার—এই নিয়ে তার মন খুব খারাপ। চোখের সামনে ভালো মেয়েগুলোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যেই-সেই ছেলের সাথে। আর ওনার ছেলে এখনো চাকরি-বাকরি কিছু করে না।
কেন, টিউশনি করিয়ে তুই জমি পর্যন্ত কিনেছিস। নারকেলের ব্যবসায় না কি ভালো কামিয়েছিস। এরপরও তোকে চাকরি করতে হবে বিয়ের জন্য?
শুধু ভালো না রে, সত্তুর হাজার টাকা লাভ হয়েছে নারকেলের ব্যবসায়। নোয়াখালীতে যেই লোকের সাথে চুক্তি করেছিলাম, সে শুধু ট্রাকে উঠিয়ে দিয়েছে; আমি ট্রাক থেকে নারকেল নামানোর সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম। একেকটা নারকেল কেনা ছিলো এগারো টাকা করে। পাইকারি বিক্রি করেছি আটাশ টাকায়। ট্রাকের ভাড়া উঠে গেছে ছোবড়া বিক্রির টাকা দিয়ে—ভাবতে পারিস?
পারবো না কেন? ঐদিন ম্যাট্রেস কিনতে গেলাম; নারকেলের ছোবড়া আঁশিয়ে বানানো এক ম্যাট্রেস চাইলো পনেরো হাজার টাকা। তাও আবার কভার ছাড়া। আমার কোম্পানি লাঠি বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা কামায়—আমি বুঝবো না?
লাঠি বেচে মানে?
ডুপ্লেক্স বোর্ডগুলো কি কাঠ দিয়ে তৈরি করে? সবগুলো গাছের ডাল। পঁচিশ টাকা মণ কেনা।
এখন দোস্ত, বিয়ে করতে হবে; নইলে মা সুস্থ হবে না। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার অনেকক্ষণ দেখে-টেখে একটা সিনকারা সিরাপ ধরিয়ে দেয়।
বিয়ে তো আমারও করা লাগে।
তোর আর কী চিন্তা? তোদের শোরুমগুলোতে যেসব সুন্দর সুন্দর শোপিস-মার্কা মেয়ে আছে! আমি তোদের কোম্পানির একটা শোকেস কিনবো; আর তাতে সাজিয়ে রাখার জন্য ওরকম একটা শোপিসও লাগবে। দেখিস তো খোঁজ নিয়ে—কোন শোপিসটার অর্ডার এখনো হয়নি।

চলবে...
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×