somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবু১৫৪
জীবনে সহজেই কোন কিছু পাবার আশা করাটা বোকামী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়েই আসতে হয় কাংক্ষিত লক্ষে। এই পথ এত সোজা নয়। অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে সেই পথ চলায়। হয়তো আরো অনেক কোথিন হবে সামনের পথ টুকু। তারপর ও হার মেনে নেয়ার পক্ষে আমি নই। জয়ী যে আমাকে হতেই হবে।

একটি খুব বোরিং কাহিনি /:)/:)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
এক কুয়াশাঘেরা শুভ্র সকালে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম বললে ভুল বলা হবে। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন সায় দিচ্ছিল না। রীতিমত ঘুমের ভান করে পরে ছিলাম। আহ! কি শন্তিই না পাচ্ছিলাম এভাবে শুয়ে থাকতে। ক্লাস না থাকায় শান্তি ডাবল মনে হচ্ছিল। তার উপর আবার আমার আব্বা এবং আম্মা দুজনেই বেড়াতে গিয়েছেন। যেন সোনায় সোহাগা। আব্বা বাসায় থাকলে অবশ্য এতটা আরাম পেতাম না। তাই বলা যায় ট্রিপল শান্তি।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে চারিদিকে কোলাহল বাড়তে লাগলো। রিকশার টুংটাং শব্দ চারিদিকের কোলাহলকে নতুন এক মাত্রা দিয়ে যেতে লাগলো। মানুষের অবিরাম ছুটে চলা বাড়তে লাগলো। ইতিমধ্যে কুয়াশা ভেঙ্গে সূর্যের আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। খানিক গরম যেন মিশে আছে এর সাথে।

বেলা সাড়ে ১২ টায় লেপ + বিছানার মায়া ত্যাগ করে উঠে পরলাম। নাহ! আর ঘুমিয়ে থাকা যায় না। অনেক কাজ আছে।

২।
বিকেল ৫ টা ২০ মিনিট,
বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম। পড়ন্ত বিকেলে হাল্কা সুন্দর আবহাওয়ায় বেশ ভাল লাগছিল।পাশে রাখা মোবাইল ফোনটি হাতে নিতেই কল পেলাম রাজিবের। বেশ ভাল লাগলো ওর ফোন পেয়ে। কারণ এই শালা সহজে কাউকে ফোন দেয় না। বরং ওর কোন দরকারে আমাদেরই ফোন দিতে হয়। চরম কিপটে একটা বন্ধু সে আমাদের। তবে বেশ ভাল বন্ধু সে। যেকোন দরকারে তাকেই কাছে পাওয়া যায়। আমাদের বন্ধু মহলে সে বেশ প্রাণচঞ্চল একজন মানুষ।
ফোনটা ধরেই –

রাজিবঃ কি রে ব্যাটা! খবর কি?
আমিঃ খবর তো ভালই। এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো তোর!
রাজিবঃ মাফ কর দোস্ত। অনেক প্রব্লেম চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
আমিঃ (শ্লেষা মিশ্রিত স্বরে) কি তোমার এত প্রব্লেম? শুনি! শালা তুমি তো ...............।
আমাকে থামিয়ে দিয়ে
রাজিবঃ দোস্ত তোমার সাথে একটা কথা আছে। বলবো?
আমিঃ বল, শুনি
রাজিবঃ আগামী সোমবার আমার বিয়ে। আমার বাসায়। সকাল সকাল চলে আসিস।
এক নাগাড়ে কথা গুলো রাজিব বলাতে আমার হজম হতে দেরি হচ্ছিল। খুব অবাক হলাম ওর কথা শুনে। এত তারাতারি বিয়ে!
আমিঃ কি কস! মাথা কি ঠিক আছে তোর?
রাজিবঃ সব ঠিক আছে। তুই চলে আসিস। পরে কথা হবে। রাখছি আমি
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দেয়ার শব্দ পেলাম।

ঘটনার সত্যতা উৎঘাটনের জন্য পরের দিন সকালে ইউনিভার্সিটি যেয়ে বন্ধুদের যারা যারা রাজিবকে চিনে তাদের সবার সাথে আলাপ করলাম রাজিবের বিষয়টা নিয়ে। ওদেরকেও একইভাবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা কেউ ঘুনাক্ষরেও জানতে পারি নি আগে ব্যপারটি। যাই হোক, হতাশ হলাম। কিন্তু মনে মনে ঠিকই একটা উত্তেজনা টের পাচ্ছিলাম। হয়ত বাকিরাও হচ্ছিল।

৩।
সোমবার বেলা ১২ টা ঠাকুরবাড়ি লেন,

আজ বহুদিন পর এই রাস্তায় এলাম। তাও প্রায় ৫/৬ বছর পর। এত অল্প সময়ের ভিতরেই এই লেনের পরিবর্তন চোখে পরার মত। চারিদিকে পরিবর্তন দেখতে দেখতে কখন যে চলে এলাম রাজিবদের বাড়ির কাছে টের পেলাম না। শুধু এই একটি বাড়ি আমার কাছে আগের মতই লাগলো। অন্যগুলোর থেকে বেমানান বলাই যায়। এরকম সাতপাচ ভাবতে ভাবতেই রাজিব বাসার দরজা দিয়ে জোরে হাক দিল। সৎবিত ফিরে পেয়ে দেখলাম রাজিব ডাকছে। ওর সাথে মোলাকাত করে বুঝতে পারলাম খুব খুশি সে আমি আসায়।

বিয়ে বাড়িতে ঢুকে বেশ হই হূল্লোড় করে সময় কাটছিল। রাজিব তার কাজিনদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ঘন্টা দুয়েক পরে আমাদের সব বন্ধুরাও চলে আসলো। বিয়ের বাড়ির সব কাজ আমাদের উপর দেয়া হল। বাড়ি সাজানো, বাসর ঘর সাজানো, রান্না বাড়ার তদারকি ইত্যাদি সবকিছু আমরা নিজেদের দ্বায়িত্বে নিয়ে নিলাম। রাজিবের বাবা খুব খুশি হলেন আমাদের এই উদ্দোগে।

৪।
বিকেল ৫ টা,
বাসর ঘর সাজাচ্ছি আমি আর আমার ২ বন্ধু মিলে। হাসি ঠাট্টা করে সময়টা দারূণ কাটছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম বাসর ঘরে এক অষ্টাদশী মেয়ে প্রবেশ করেছে। কারো সাথে কোন কথা বলছে না। শুধু বার বার আমার দিকে অপলক চেয়ে আছে। চোখে চোখ পরলে সে ফিরিয়ে নিচ্ছে। বেশ কয়েকবার এই ব্যপারটি আমি লক্ষ করলেও আমার বন্ধুরা তা করে নি। শেষে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সে রুম থেকে বিদায় নিয়েছিল।

এরপর থেকে আমি যেখানেই যাই সেখানেই সেই মেয়ের আগমন ঘটতে থাকে। এটা এতটাই বেড়ে গেল যে আমার বন্ধুরাও শেষে লক্ষ করলো বিষয়টা। তবে আর যাই হোক, মেয়েটা দেখতে খারাপ না। তাই আমার মনের মধ্যে একটা আকুপাকু ভাব অনুভব করলাম।

বরের সাথে যখন কনেকেও বসানো হল একসাথে তখন স্টেজে আমরা ছিলাম। কেউ কেউ ছবি তুলছে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম এক কোনায়। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পাশেই সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। সে কখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আমি খেয়াল করি নি। কোন কথা না বলে শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। কি এমন আছে এই মেয়ের মধ্যে যে বার বার তার দিকেই আমি আকর্ষিত হচ্ছি। বা সে আমাকে দেখে যাচ্ছে এভাবে। বিয়ে বাড়ির সব ঝামেলা শেষে যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসছি তখন রাস্তার ওপারে সেই মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম বিষন্ন বদনে। রাস্তার লাইটের আবছা আলোয় যা আমি স্পষ্ঠ দেখতে পেলাম।

৫।
২/৩ মাস পর,
পড়াশোনার প্রেশারে বিষয়টা ভুলেই গিয়েছিলাম। নিয়মিত পরীক্ষার টেনশেনে যখন মাথা খারাপ অবস্থা তখন একদিন সকালে বাসে উঠেই চমকে গেলাম। আমি যেই সারিতে দাঁড়িয়েছি তার ঠিক পিছনের সারিতে সেই অপরিচিতাকে বসে থাকতে দেখলাম। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেছে সে। আমার দিকে চোখ পরতেই মুচকি একটা হাসি দিল। আমি কি করবো ঠিক বুঝতে না পেরে মাথা ঝাকালাম।

আমার গন্তব্য উত্তরা। সেই মেয়েরও হয়ত। ইতিমধ্যে পাশের সিট খালি হলে আমি একরকম তারাতারি যেয়েই বসে পরলাম তার পাশের সিটে। সে এটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিল একটা। এই প্রথম তাকে এত সুন্দর করে হাসি দিতে দেখলাম।

অচেনাঃ কি ব্যপার? খুব যলদি মনে হচ্ছে?
আমিঃ নাহ! আসলে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে খুব পা ব্যাথা করছিল।
অচেনাঃ ও আচ্ছা। বুঝেছি।
আমিঃ আপনার নামটা জানতে পারি?
অচেনাঃ হ ম ম। আমি অহনা।
আমিঃ বাহ! সুন্দর নাম।
অহনাঃ আপনার নাম আমি জানি তাই জানতে চাইলাম না।
আমিঃ (অবাক হয়ে) কি করে জানেন?
অহনাঃ সেটা বলবো না।
আমিঃ কেন? আচ্ছা............
অহনাঃ আপনি কই যাচ্ছেন?
আমিঃ ইউনিভার্সিটি। আপনি?
অহনাঃ আপনি যেখানে যাচ্ছেন, আমিও সেখানে যাচ্ছি।
আমিঃ রাজিব আপনার কি হয়?
অহনাঃ বন্ধু।
আমিঃ ও আচ্ছা।
অহনাঃ আমি কিন্তু আপনারও বন্ধু!
আমিঃ (অবাক হয়ে) কি করে? আমরা তো মাত্রই পরিচিত হলাম।
অহনাঃ আসলে, তুমি একটা গাধা!
আমিঃ (আকাশ থেকে পড়ার মত) কি বললেন!
অহনাঃ আরে বোকা ছেলে, আমি তোমার স্কুলের সেই অহনা। যার জন্য তুমি ৩ বছর পিছে পরে ছিলা। একবার তো চড় ----------
আমিঃ (প্রায় ৫ মিনিট পর) আরে!! তুমি তাহলে সেই অহনা?
অহনাঃ হ ম ম। এতক্ষণে তাহলে চিনতে পারলে!!
আমিঃ (নিজেকে ধিক্কার দিয়ে) আসলে আমার স্মৃতি শক্তি এতটা ভাল নয়। আমি আসলেই লজ্জিত।
অহনাঃ (অভিমানী ভঙ্গীতে) থাক, আর লজ্জিত হওয়া লাগবে না।

ইউনিভার্সিটির সামনে বাস এসে থামার পর দুজনেই নেমে গেলাম। বিদায় জানাতে মন চাইছিল না। তারপরও বিদায় দিতে হবে। অহনার সামনে দাঁড়িয়ে লক্ষ করলাম ওর মুখটা কালো হয়ে গিয়েছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে সে। কিন্তু পারছে না। মনের ভিতর যে একটা ঝড় হচ্ছে তার সেটা বোঝা যাচ্ছে। অবশেষে নিরবতা ভেঙ্গে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। কিন্তু কি মনে করে জানি তার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই অহনার জন্য সেই স্কুল সময় থেকেই পাগল ছিলাম। তখন সারা না পেলেও আজ বাধা নেই কোন। তাহলে কিসের এত জড়তা? কিসের এত ভয়?

মনের ভাবনাকে দূরে ঠেলে অহনাকে পিছন থেকেই ডাক দিলাম। দৌড়ে তার সামনে যেয়ে বললাম -

“তোমার হাতটা সারাজীবন ধরার অনুমতি পেতে পারি?”

অহনার মুখে একটা খুশির আভা দেখতে পেলাম। যা আমাকে আশাহত না করে আলোর পথ দেখালো। মুখে কিছু না বলে আমার হাতটা ধরে তার হাতে রাখলো।

ব্যস! আমি আমার উত্তর পেয়ে গেলাম।

বিঃদ্রঃ বছরের শেষ গল্প এটা। সবাইকে হ্যাপি নিউ ইয়ার। ভাল থাকবেন।
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×