somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখাটা একবার পড়বেন কি?

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটা কিভাবে লিখব বুঝতে পারছি না। হাত কাঁপছে, চিন্তাগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

একটা ব্যাপার এখনো মেনে নিতে পারছি না, এত কম বয়সের একটা ছেলে কেন মারা যাবে? তার মৃত্যু যদি রোগে ভুগে হত বা অন্য কোথাও কোন পরিস্থিতিতে, শোক জানানো ছাড়া কিছু করার ছিল না আমার। কিন্তু সে মারা গেল তার জন্য নিরাপদতম যায়গায়, শতশত সহপাঠির সামনে।

প্রকাশ্য দিবালোকে তার অন্তিম নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল বিভৎসতম রূপে। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তাকে বিদায় নিতে হল অকালে। ধর্ম হয়ত বলে তার জীবন এই পর্যন্তই নির্দিষ্ট ছিল, তাতে সান্তনা পাওয়া যায় কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হয়।

দেশে এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী নিহত হল তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের নিচে চাপা পড়ে। আর সেই সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেখল তার একুশ বছরের ইতিহাসে ক্যাম্পাসের ওপর প্রথম মৃত্যু, প্রথম লাশ।

খুবিতে ছাত্র রাজনীতি নেই, তাই সন্ত্রাস-খুন-মারামারি এগুলো অপরিচিত শব্দ এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশ বছরে রাজনৈতিক কারণে কোন লাশ পড়েনি। আজ পড়ল। ঘটনাটাকে অনেকে দুর্ঘটনা বলেন, আমি মানি না, আমার কাছে এটা হত্যাকান্ড।

লিখতে লিখতে বারবার হাত থমকে যাচ্ছে। বারবার শুধু একটাই দৃশ্য মাথায় ভেসে ওঠে। ওর লাশটা পড়ে আছে বাসের নিচে, চাকার সমান্তরালে। চাকায় পিষ্ট হয়ে ওর মগজ বেরিয়ে গেছে, রাস্তায় তার ঘোলাটে দাগ। তার সাথে রক্তের স্রোত। প্রাথমিকভাবে ওকে ব্যানারে ঢেকে দিয়েছে কেউ। ব্যানারে ঢাকা শরীরটার মাথা থেতলানো, ওখানটা রক্তে গাঢ় লাল। কেডস পরা পা টা বেরিয়ে ছিল। বাসের নিচে উঁকি দিয়ে এটাই দেখেছি আমি। আর যারা প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের কথা আর কি বলব। ওদেরকে আরো বিভৎস দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এমন কেউ ছিল না ক্যাম্পাসে যে চিৎকার করে কাঁদেনি।

ওর লাশটা দেখে চিন্তা হচ্ছিল, এই ছেলেটা একটু আগেই ক্লাস করেছে, আড্ডা দিয়েছে। আর এখন বাসের চাকার পাশে শুয়ে আছে লাশ হয়ে। কিভাবে সম্ভব? এমন কেন হয়? সৃষ্টিকর্তা এতটা নিষ্ঠুর হলেন কিভাবে? আচ্ছা, ছেলেটা কি বাসের চাকার নিচে তলিয়ে যাবার সময় 'মা' বলে ডেকেছিল?

আবার মনে হচ্ছিল, ও যখন সকালে বাসা থেকে বের হয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে, তখন কি জানত ওর প্রিয় ক্যাম্পাসেই জীবন দিতে হবে আজ?

আমি রাজনীতি বুঝি না। ওর মৃত্যু নিয়ে, লাশ নিয়ে যেসব রাজনীতি হয়েছে আমি তার জটিলতা বুঝি না। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কেউ, যে ক্যাম্পাসের উপর দিয়ে বাইরের গাড়ি চলে না আর নিরাপদতম পরিবেশ সেখানেই পরিবহনের গাড়িতে ছেলেটির মৃত্যু কেন হল?

সবচেয়ে ব্যথা পেয়েছি যে ব্যাপারটায়, ছেলেটির বাবা চাচ্ছিলেন না ওর জানাযা ক্যাম্পাসে হোক। কিন্তু অনেক অনুরোধের পর তিনি রাজি হয়ে ওর কাফন পরানো লাশ পাঠিয়ে দিলেন। জানাযা হল, তারপর আবার লাশ নিয়ে চলে গেল ওর আত্মীয়-স্বজন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। জানাযায় উপস্থিত শোকার্ত শিক্ষার্থীরা জড়ো হল মুক্তমঞ্চে। আর ওমনি শ দুয়েক দাঙ্গা পুলিশ লাঠি নিয়ে ঢুকে পড়ল ক্যাম্পাসে। যেন ছাত্রদের উচিৎ শিক্ষা দেবে ওরা। এটা নিয়ে প্রতিবাদ হল, শিক্ষকবৃন্দ তাদের পক্ষেই সাফাই গাইলেন। একজন আবার বললেন, খুলনার এএসপি এসেছেন মাত্র দুই-চারজন বডিগার্ড নিয়ে, ছাত্রদের সাথে কথা বলতে, ওদের বোঝাতে। অথচ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার ভেতরই প্রায় ত্রিশ জন পুলিশ, তাদের পেছনে অগণিত। জানাযা শেষ করে মেইন গেটে এক বন্ধুকে আনতে গিয়ে প্রথম টের পাই এত পুলিশ ঢুকেছে। এটা কেন হবে? তাহলে কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য কি ছিল? একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া? এই রাজনীতির শেষ কোথায়?

সবশেষে, অপরিচিত ছোটভাইটির জন্য প্রার্থনা করি যেন ওর পরকালের জীবন শান্তিময় হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৮
২৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×