somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঙ্গীকার করো এবং অঙ্গীকার ভুলে যাও (Promises made, Promises forgotten)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘তোমরা আমাদের অধিকার রক্ষা করবে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা’র ব্যাবস্থা, তৈরি করবে কর্মসংস্থান। তোমরা অঙ্গীকার কর বিভিন্ন সেমিনার, গোল টেবিল, আলোচনা সভা আর টক শো’তে। বাস্তবে কিছুই হয় না। তোমরা বড় বড় অঙ্গীকার কর, পরে সে অঙ্গীকার ভুলে যাও’। কথা গুলো প্রভাতী আন্দোলনের একজন কিশোরীর। বিভিন্ন ভাবে পাচার হয়ে ভারত সহ অনেক দেশে গিয়ে পরে উদ্ধার হওয়া যৌন শোষিত মেয়ে শিশুদের প্লাটফর্ম ‘প্রভাতী আন্দোলন’। অন্যকথায়, সারভাইবাল’স প্লাটফর্ম। তাদেরই এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদেরই মুখে শোনা গেল তীক্ত অভিজ্ঞতা, বঞ্চনা আর অসহায়ত্বের কথা। অঙ্গীকার করা আর অঙ্গীকার ভঙ্গের কথা। তারা তাদের দুই দিন ব্যাপি এই আয়োজনের নাম দিয়েছে ‘Promises made, Promises forgotten’.

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতি (BNWLA)’র প্রচেষ্টায় পাচার হতে উদ্ধারকৃত মেয়ে শিশুরা ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ২০১১, রাজধানীর এল জি ই ডি মিলনায়নে আয়োজন করেছিল এই সভা’র। শেষ দিনে আমার যাওয়া। গিয়ে যা অভিজ্ঞতা হলো তা আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে, নিঃসন্দেহে। বিভিন্ন বয়সের গোটা পঞ্চাশেক মেয়ে শিশু সেজেছে তাদের মত করে। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব, পরিচালনা, ধারণাপত্র ও উপাত্ত উপস্থাপনা সবিই করল তারা। এর বাইরে আমন্ত্রিত অতিথি ছিল আরোও পঞ্চাশের মত। অতিথিরা সবাই শিশুদের সাথে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের কর্তাব্যাক্তি। প্রধান অতিথি ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, এম পি। ছিলেন BNWLA’র নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সালমা আলী, ভারতীয় সংস্থা রেসক্যু ফাউন্ডেশনের প্রধান মিসেস আচেইরা।

শিশুরা দলীয় আলোচনার মাধ্যমে বের করেছে, পরিবারে, পথে, কমিউনিটিতে, কর্মস্থলে কাদের দারা এবং কীভাবে যৌন হয়রাণী, বঞ্চনা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। অকপটে বলেছে, সেই নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে কীভাবে চক্রবৃদ্ধিহারে পুনরায় হয়রাণী হতে হয়। পরিবার থেকে সমাজ, সর্বোপরি রাষ্ট্রের কাছে কিভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয় তাদের। সন্মান নিয়ে, মানুষের অধিকার নিয়ে বাঁচার দাবি মনে হচ্ছিল তাদের জন্য বেমানান। এটা শুধু আমরা, ভদ্র সমাজের ভদ্র বাসিন্দারাই দাবি করতে পারি। পারে আমাদের আদরের সন্তানরা। তারা তো ফুটপাথে, রাস্তায় থাকে, পাচার হয়ে খারাপ পাড়ায় বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের আর কোন আবদার করা কী শোভা পায়? মিসেস আচেইরা জানান সেদিন (২৬ ডিসেম্বর) আরোও ২৬ জন মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে, যারা ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এরকম যে আরোও কত আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই!

বিএসআইডি (২০০৫) এর তথ্য মতে দেশের বড় শহরগুলোতে পথশিশুর সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক, যার ৭৫ শতাংশ ঢাকাতেই বসবাস করে। এই বিরাট সংখ্যক পথশিশু প্রতিনিয়ত শারীরিক, যৌন, মানসিক নির্যাতন আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে সব রকম অধিকার থেকে। ফুটপাতে, রেল স্টেশনে, দোকানের সামনে, বাস স্টেশনে, পার্কে ইত্যাদি জায়গায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। এভাবে অবহেলা আর অযত্নে বেড়ে ওঠা পথশিশুদের সুস্থ্য মানসিক বিকাশ আশা করা বোকামী। ফলে তারা, জড়িয়ে পরছে, মাদক, ভিক্ষাবৃতি, যৌন ব্যাবসা, মাদক পাচারসহ সব রকম অপরাধের সাথে। খুব অল্প খরচেই এসব পথশিশুদের দিয়ে অপরাধ সংঘটিত করা যায়। উল্লিখিত ৫ লক্ষ পথশিশু’র ৫০০ জনও যদি ভয়ানক সন্ত্রাসীতে রুপান্তরিত হয়, তাহলে আমাদের ভালো থাকাটা কি ততটা ভালো থাকবে যতটা আমরা প্রত্যাশা করি?

বেঁচে থাকার আবদার নয়, দাবিই জানাচ্ছিল তারা। সেই দাবির উত্তরে যত অঙ্গীকার পুর্বে করা হয়েছিল সেগুলোও স্বরন করিয়ে দেখালো কীভাবে আমরা সেগুলো পরমুহুর্তেই ভুলে যাই। অথচ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে প্রথম যে কয়টি দেশ স্বাক্ষর করেছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রায়, দুই দশক অতিক্রম হলেও শিশু অধিকার রক্ষায় কতটুকু এগিয়েছে দেশ, তা আজকে ভালোভাবে অনুধাবন করলাম। বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে হাতে গোনা কিছু কার্যক্রম চললেও তা খুব নগণ্য। বিদেশি দাতাগোষ্ঠী নয়, রাষ্ট্রকেই, এদেশের সচেতন কমিউনিটিকেই নিতে হবে শিশু সুরক্ষার দায়িত্ব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামীলীগে শুধুমাত্র একটি পদ আছে, উহা সভাপতি পদ!

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৪ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১


বাঙ্গালীদের সবচেয়ে বড়, পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই দলটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। মানুষ এই দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। ৭০ এর নির্বাচনে এই দলটিকে নিরঙ্কুশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমপি আনারের মৃত্যু এবং মানুষের উষ্মা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৯


সম্প্রতি ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর আনোয়ারুল আজীম আনার নামে একজন বাংলাদেশি এমপি নিখোঁজ এবং পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার মরদেহের হাড়-মাংস আলাদা করে হাপিত্যেশ করে দেওয়া হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

দোয়া ও ক্রিকেট

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৪


দোয়া যদি আমরাই করি
তোমরা তাইলে করবা কি?
বোর্ডের চেয়ারম্যান, নির্বাচকের
দুইপায়েতে মাখাও ঘি।

খেলা হচ্ছে খেলার জায়গা
দোয়ায় যদি হইত কাম।
সৌদিআরব সব খেলাতে
জিতে দেখাইত তাদের নাম।

শাহাবুদ্দিন শুভ ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বকুল ফুল

লিখেছেন নীল মনি, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৪

বকুল ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে থাকে আমার এই ঘর। আমি মাটির ঘরে থাকি। এই ঘরের পেছন দিকটায় মা'য়ের হাতে লাগানো বকুল ফুলের গাছ৷ কী অদ্ভুত স্নিগ্ধতা এই ফুলকে ঘিরে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×