কুসুম মানে যদি ফুল হয় তো বাবা কেন আমার নাম এমনটি রেখেছিলেন।বাবা হয়ত বুঝতে পারেননি তখন, আমার জীবনে থাকবে অসহনীয় একরাশ যন্ত্রনা।সবেমাত্র কলেজে উঠেছি।দু-একদিন ক্লাশে গেছি।কলেজ পরিদর্শনে এলেন পাকিস্তানী কিছু অফিসার।সেখানে একজন আর্মি অফিসার ছিলেন।নাম ছিল আহমেদ ইমতিয়াজ।বাবার সাথে সবাই কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন।আমাদের ক্লাশে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালাম।বাবা আমার সামনে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-সি ইজ মাই অনলি অন ডটার ,কুসুম।
তাদের মধ্যের কোন একজন
-প্রিন্সিপাল,হোয়াটস দা মিনিং অফ কুসুম?
-ফ্লাওয়ার
-বহুত আচ্ছাহে
সবাই বেরিয়ে গেলেন তারপর।কলেজের আর্থিক উন্নয়নে সাহায্য দেয়ার জন্য এরা এসেছিলেন। বাবার সাথে কথা বলার ধরন শুনে বুঝতে পারলাম।
আহমেদ ইমতিয়াজ সাহেব একদিন সন্ধ্যায় উনার মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় এলেন।
মা গেইট খুলে জিগাসা করলেন কাকে চান?
ভদ্র মহিলা বললেন-ধরুন আপনাকেই
মা উত্তর শুনে ভীষন বিব্রত বোধ করছেন দেখে আমি এগুলাম
চিনতে পেরে বসার জন্য ভেতরে নিয়ে এলাম।ভদ্রমহিলা বেশ রসিক এবং স্মার্ট।কিন্তু বাঙালী মহিলার সাথে উনার কি সম্পর্ক মিলাতে পারছিলাম না।
কোন প্রশ্ন করার আগেই নিজেই উত্তর গুলি এমন করে বলছিলেন শুনে মনে হল যেন আমার ভেতরকার কথাগুলি জেনে নিয়ে কথাগুলি বলছেন।
-মেজর সাহেব আমার বড় ছেলে।
শুনে অবাক।মা এত সুন্দর বাঙলা বলেন অথচ ছেলে উর্দূ বলেন।
উনার স্বামী পাকিস্তানী।ছেলেটা অনেক লম্বা এবং যার পর নাই সুন্দর,স্মার্টও বটে।যে কোন রুচিশীলার মন কাড়বে এই সুপুরূষটি।
বাবা এলেন ঘণ্টাখানেক পর।আমাকে নাস্তা আনতে বলায় রান্না ঘরে গেলাম।মিনিট পাঁচেক পর মা এলেন।
-কুসুম ,ছেলেটার মা তোর সাথে তার ছেলের সমন্দ নিয়ে এসেছেন।তুই কি বলিস।
-অসম্ভব!আমি পাকিস্তানী বংশদ্ভূত কাউকে বিয়ে করতে পারবনা।এদেশের মানুষ গুলিকে যারা মানুষ মনে করে না তাদের সাথে এসব ভাবাও ঠিক নয় মা।
-হাঁ তোর ইমোশন আমি বুঝিরে মা।দেখি তোর বাবা কি বলেন,তুই নাস্তা নিয়ে আয়।
আমি নাস্তা নিয়েএকটু আড়াল হয়ে বাবার কথা শুনার চেষ্টা করলাম বাবা বলছেন
-এদেশটাকে আমি ভীষণ ভালবাসি।যেমন বাসি আমার মেয়েটাকে।আমি এদেশেই মেয়ের বিয়ে দেব।
-আরে ভাই!আপনি মিছেই আমাদেরকে আলাদা করছেন ।সবটাই এক পাকিস্তান ।আমিওতো আপনাদেরই।ওর বাবা নিজে আসবে আপনার কাছে ।খু...ব ভাল মানুষ উনি।উনাকে দেখলে অমত করবেন না।আজ আমি শুধু কুসুমকে দেখতে এসেছি।
-আমাদেরকে ভাববার সময় দিন,আমি পরে জানাব।
-ঠিক আছে ভাই।
আমি নাস্তা দিয়ে চা আনব বলে আবার চলে গেলাম।বাবার উপর রাগ হচ্ছে ভীষন।একেবারে না বলবে তানা ঝুলিয়ে রাখলেন ,যত্তসব।ঐ ছেলের সাথে আমার নয় তার নিজের মায়ের বিয়ে দিয়ে আব্বা-আব্বা করুক।
লবণ দিয়ে চা বানিয়ে দিলে ভাল হয়।আইডিয়াটা মাথায় চাপতেই তাই করলাম।খেতে গিয়ে যে ওদের মুখ কেমন হয়েছিল চোখে দেখলে বুঝতে।আমি না জানার ভান করে বললাম
-চিনি কী বেশী দিয়ে ফেলেছি?
-না তেতো হয়েছে বেশী।আর একটু লবণ কম হলেও খাওয়া যেত ,তাই না মা?
ছেলের মুখেওতো বাঙলা বোল শুনছি।তবে একটু অন্যরকম শুনতে লাগছে।
-দুঃখিত।লবণের কৌটটা চিনিরটার কাছে থাকায় বুঝতে পারিনি।
-নো থ্যাংকস,ইটস ওকে।
বাবা ব্যাচারা কখনোই বুঝতে পারলনা এঘটনা
-তাইতো এমন হয়েছে।কুসুমের হাতের চা অসাধারণ হয়।
মা বাবার কথা শুনে মুখ টিপে হাসছিলেন।উনি ঠিকই টাহর করতে পারছিলেন বিষয়টি যে আমার ইচ্ছাকৃত ছিল
চলবে----
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:২৭