১. Click This Link
বাসরঘরে ফিরে এসে দেখল ভস ভস করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে অরুনাভ।কেন জানি না অহনার ধোঁয়াটা ভাল লাগলো , হয়ত ধ্রুম বর্ণের জীবন শুরু হল বলে। মশারি খাটানোয় ব্যস্ত হল নতুন জামাই। সে এমন ব্যাবহার করছে যেন বিশ বছরের পুরাতন বউ এর ঘরে সে। মশারি টাঙ্গানু শেষ , যা দিয়ে সাজানু হয়েছিল বাসরঘর , সব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে আগেই, দাড়িয়ে দাড়িয়ে তামাশা দেখে যাচ্ছে অহনা। অরুনাভ বিশ্রাম নেয়ার জন্য আবার বসলো ইজি চেয়ারটায় । অহনার খুব রাগ লাগছে, যে এই ইজি চেয়ারটা দিয়েছে তার উপর। আবার এক দিক থেকে ভালই করেছে, নাহলে দেখা যেতো নতুন জামাই বউ এর বদলে আগেই বিছানায় বসে আছে, নতুবা মাটিতে বসে আছে, মাটিতে বসে থাকাটাও এর জন্য অসম্ভব কিছু না। কিছুক্ষন জিরিয়ে নিয়ে আবার বলা শুরু করল অরুনাভ “ আমার হারা জীবনের হাউস বাসর রাইতে বিছানা সাজাইমু দুই তিন ঝুরি গেন্দা ফুল দিয়া। তোমারে বিয়া করনের আগেই তোমার এলাকায় আমার দারুন একটা পাওয়ার আছিল। সেই পুরান পাওয়ার আইজকা বিয়ার কালে দারুন কাজে লাগছে। তোমার বিছানার নিচে দুই ঝুড়ি তাজা গেন্দা ফুল রাখনের ব্যবস্থা করছি। এক ঝুড়ি ছেড়া জোড়া আরেক ঝুড়ি পুরা। নয়া মশারি আনছ , ভালা কাম করছ। ভাল কইরা মশারি গুইজা নাও। বিছানায় দুই ঝুড়ি ডাইল্লা দেই”
ওঃ!! রোমান্টিসিজমের এই নমুনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। অহনা কাদবে না হাসবে। সত্যি সত্যি মশারি গুজে দিয়ে ফুল ঢালার কাজ শুরু। বান্দরের মত কাজ কারবার হলেও রুচির পরিচয় মেলে। ঘর গোছাতে একদম সময় নিল না অরুনাভ। বিছানাও সত্যি সুন্দর সাজানু হয়েছে। অহনা চুপ করে দাড়িয়ে আছে। এবার নিশ্চয়ই খুব অশ্লীল ভঙ্গিতে তাকে বিছানায় ডাকবে ...
“ তুমি তো আইজকা দারুন টায়ার্ড , এই কিসিমের বিয়া আমার পছন্দ আছিল না, কিন্তু কি আর করা? হজ্ঞলে এমন কইরা ধরছে যে রাজি হইতে হইলো। বিয়ার পরে নয়া বউএর লগে কি কথাবার্তা কমু, তা আগে চিন্তা করি নাই, তুমি চিন্তা কইরা থাকলে ইস্টারট দাও’’
অহনার মনে হল এটাই আসলে অশ্লীল আমন্ত্রন, স্টার্ট দাও। কি বিশ্রী কথাবার্তা । তার কিছুই বলার প্রবৃত্তি নাই।
মশারি একপাশ তুলতে গিয়ে কিছু ফুল মাটিতে পরে গেল। অহনার খুব ভয় হচ্ছে; এই তুচ্ছ কারনে যদি তাকে বকাঝকা শুনতে হউ। ঘটনা ঘটলো ঠিক অহনার মনে হল এটাই আসলে অশ্লীল আমন্ত্রন, স্টার্ট দাও। কি বিশ্রী কথাবার্তা । তার কিছুই বলার প্রবৃত্তি নাই।
মশারি একপাশ তুলতে গিয়ে কিছু ফুল মাটিতে পরে গেল। অহনার খুব ভয় হচ্ছে; এই তুচ্ছ কারনে যদি তাকে বকাঝকা শুনতে হউ। ঘটনা ঘটলো ঠিক তার উল্টো । “সুন্দর হইসে তো , কিছু ফুল বিছানায় চারপাশে ছিটাইয়া দেয়া যায় । ফুল ছিটানুর কাজ শেষ করল সে। লাফ দিয়ে না উঠে , বেশ পরিমার্জিত ভাবে বিছানায় উঠলো অরুনাভ। একপাশে হাঁটু জড়ো করে বসে আছে অহনা, এইবার কি শুনতে হয় সেই অপেক্ষায়।
“ জীবনে একবারই আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্লাস টেন এ। তবে কোন বারই পাঁচ এর বাইরে যাই নাই। পাঁচ এর বাইরে গেলে নিশ্চিত সুইসাইড করতাম। কারেন্ট এ লাইগা মরা আমার সবচাইতে প্রিয় , আলাদা আরাম পাওয়া যায় । আমার কথাবার্তা কওনের বেবাক স্টাইল উল্টাপাল্টা , রাগ করিও না। এতক্ষন এই ঘরে যা করলাম, তোমার ধৈর্যর একটা টেস্ট নিলাম, তুমি পাশ করছ, হাত বাড়াও , ডাইন হাত। ইসসিরে! হাতের একটা আঙ্গুলও খালি রাখে নাই। পকেট থেকে অসম্ভব সুন্দর হীরার আংটি বের করলো অরুনাভঃ পরিয়ে দিল অহনার অনামিকায়। খুব কষ্টে কান্ননা চাপছে অহনা।
“ তোমারে এহেন জ্বালাতন করার লাই তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী , ক্ষেমা দিলে বাকি বাৎচিত শুরু করি”
কিছু বলতে হল না অহনার, তার ডান হাত আলতো করে তুলে নিয়ে দুহাতে রাখল অরুনাভ।
“তুমি আজ খুব রাগ করেছ, এরকম ধরনের রাগ আমার খুব অপছন্দ,রাগ থাকলে তার প্রকাশ থাকতে হয়। এখানে একটা কাঁচের জগ, আরেকটা গ্লাস রাখা আছে, তুমি চাইলে এই দুইটা ভেঙ্গে ফেলতে পারো । ঝন করে একটা শব্দ হবে । ঝন ঝন শব্দের সাথে রাগও কেন জানি না কমে যায় । তবে আমি কোনও জিনিষের উপর রাগ মেটাই না। টাকার অপচয়। তুমি যে কাজটা করতে পারো সেটা হল আমাকে কয়েকটা কিল ঘুষি মারতে পারো । এতে তোমার লজ্জাও ভাঙ্গবে , তুমি আমই খুব সহজে বন্ধু হয়ে যাবো । আমার একটা খুব প্রিয় ডাইরি আছে। যেখানেই যাই সাথে থাকে। এমনকি বিয়ে করতে আসলাম, সেটা সাথেই আছে। তোমার জন্য আরেকটা উপহার, এই ডাইরি । আমি সেটা তোমাকে পড়তে দিবো। তুমি কিছুটা হলেও আমাকে জানবে। আর আমি তোমার কাছ থেকে চেয়ে নিবো আমার উপহার। আজকে রাতের মত এখানেই কথা বলা শেষ হউক।
অহনার সেই বাসর রাতের বাকি গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। গল্পটা এখানেই শেষ । অহনার সেই বাসর রাতের বাকি গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। গল্পটা এখানেই শেষ ।
আজ অনেকদিন পর অহনা সেই ইজি চেয়ারটায় বসা; তার কোলে অরুণনাভের ডাইরি । ডাইরির শেষ লিখাটাই সে পড়ছে ।