somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার "ক্রিসমাস ডে"

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বহু বছর আগের কথা, কোন এক মফস্বলের ছোট্ট শহরে, ক্রিসমাস ডে'র সন্ধ্যায় আমার আগমান এই পৃথিবীতে, জায়গাটা ছিল আমার নানা বাড়ি। তাই হয়তো আজও নানা বাড়ি আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা সময়গুলো, মানুষগুলো আমার কাছে খুব আপন। আর আপন মানুষগুলো সবসময় কেনজানি বেশি কষ্ট দেয়, অথবা তাদের দেয়া ছোট ব্যাথাও যেন বড় বেশী কষ্ট দেয়।

সেই থেকে, কোননা কোনভাবে প্রতিটা "ক্রিসমাস ডে" আমার জন্য বিশেষ হয়ে থাকে। মনে পড়ে, ৮৯, ৯০,৯১ সালের কথা, ৯-১০ বছর বয়স। যখন নিজের নামে চিঠি পাওয়া ছিল, সারা বছরের শ্রেষ্ঠ চমক। প্রথম যেবার সেঝ মামা (মামা, তখন চা বাগানের এ্যসিস্টন্ট ম্যানেজার), আমার নামে জন্মদিনের কার্ড পাঠালেন - ডাক পিওন বাসার গেটে দাড়িয়ে আমার নাম উচ্চারন করলো , নিজের নামটাকে যেন সেদিন অচেনা লাগলো। চিঠিটা ধরে দাড়িয়ে ছিলাম আমি, বুঝতে পারছিলামনা কিছুই। সাথের বন্ধুরা ডাকলো যখন , তখন দেখি ওদের চোখে, কি এক আশ্চর্য অবিশ্বাস। চিঠিটা নিয়ে সারা দিন ঘুরে ছিলাম, খুলিনি। পরে যখন আম্মু কলেজ থেকে ফিরে (আমার মা কলেজের প্রভাষক ছিলেন) শুনলেন সব কিছু, খুলে দেখালেন। আজ আমার নামে মেলবক্সে প্রতি সপ্তাহে অনেক চিঠি আসে,
আজ আমার মামা এ্যসিস্টন্ট ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার হয়েছেন,
মা প্রভাশক থেকে অধ্যাপক হয়েছেন তাই হয়তো আজ মামাও আর জন্মদিনের কার্ড পাঠায়না , মা ও আজ খুলে দেয় না। তাই হাজারও চিঠির ভীড়ে অনেক চিঠি খুলেও দেখা হয়না।

পরের এক জন্মদিনে, মেঝ মামা । আমার এই মামাটা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেনা , পড়াশোনা করেনি বেশিদূর, তাই ছোট চাকুরি করতো। সে তার অল্প বেতন দিয়ে , আমার জীবনের প্রথম ঘড়িটা দিয়ে ছিল। সেকি আনন্দ । আমার এই মামাটা হয়তো, সবার মত অনেক বেশী বোঝেনা বলেই, আজও আগের মতোই আছে।

বড় মামাকে সবচেয়ে ভয় পেতাম ছোটবেলায়, তবে বুঝতাম মামা আমাকে খুব আদর করে। বড় মামা প্রতিদিন আমার জন্য "কাপ কেক" নিয়ে আসতো, আমার পরের দিনের স্কুলের টিফিন। মামা ভাত খেতে বসলে আমি বসতাম তার পাশে, ছোট্ট একটা চেয়ারে। মামা মাছের কাটা- মাংসের হাড় খুব অপচ্ছন্দ করতো। আর আমি হলাম বিড়ালের স্বভাব- যাবতীয় উচ্ছিসটাংসে আমার আর্কশন। আমি বেড়াতে খুব পচ্ছন্দ করতাম তাই, মামা বন্ধুদের বাসায় গেলে, আমাকে সাথে নিয়ে যেত। এমনকি মামার বিয়ের কার্ড দিতেও আমাকে সাথে নিয়ে বেরিয়েছে সারা শহর। মনে পরে, কোন একদিন মামার সাথে বেড়াতে বেড়িয়ে আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। পরদিন সকালে, নানু বলেছিল মামা নাকি আমাকে সারা পথ কোলে করে নিয়ে এসেছিল। আচ্ছা, মামার কি মনে আছে- এসব।

ছোট মামা ছিল, সবচেয়ে আপন। যার আদর, আবদার মেটানো, সবছিল সবথেকে আলাদা। মনে হতো- ও বুঝি আমারকে বোঝে। আমার উঠতি বয়সের অনেক চাওয়ার কথা , আম্মুকে বলার সাহস হতো না। অথচ মামা পূরন করে দিত সেসব। আমার ছোট ভাইটার অভিযোগ ছিল- ছোট মামা নাকি আমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে। হয়তো তাই। কিন্তু আজ সারাটা দিন আমার অনেক অপেক্ষার শেষে মনে হলো- ভালোবাসাটাও বুঝি "সময়ের এক চাহিদা"। আজ সময় বদলেছে, তাই চাহিদাও বদলেছে।

মনে পড়ে, কোন এক ডিসেম্বারের প্রথম কি দ্বিতীয় সপ্তাহে, ছোট চাচা রংপুরের তার চাকুরীস্থল থেকে একটা শাড়ি এনেছিল। হয়তো আমার জন্য কিছু আনেনি বলেই বলেছিল - শাড়িটা আমার জন্য, জন্মদিনের উপহার।একবারও ভাবিনি শাড়ি দিয়ে আমি কি করব? ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ,সেদিনই আমি নানা বাড়ি চলে যাই। মহা আনন্দে আমার "জন্মদিনের উপহার- শাড়িটা" নিতে ভুলিনা। আমার নানীআপা শাড়িটা খুব পচ্ছন্দ করে , আর আমার নানী হচ্ছে আমার সবচেয়ে আপন (মায়ের চেয়েও)। জানিনা , চাচা শাড়িটা কার জন্য এনেছিল (চাচা তখন অবিবাহিত ছিল- তাই হয়তো আমার আম্মুর জন্যই এনেছিল)। কিন্তু আমি শাড়িটার মালিকানা স্বত্ব অনুসারে নানীআপাকে দিয়ে এসেছিলাম। আজও মাঝেমাঝে নিজের মনেই হাসি- ছোটবেলায় আমরা কত আশ্চর্য আচরনই না করি।

এবারের জন্মদিনটাও অনেকদিক থেকে আলাদা। গতকাল, বহুবছর পর আবার জন্মদিনের কার্ড পেলাম (ভাইয়া পাঠিয়েছে), আম্মু স্কাইপেতে কেক কাটলো আমার জন্য, আব্বু আমাকে ছাড়া কেক খাবার জন্য দুঃখ করলো। আর এই সাতশ মাইল দূরের আমার একলার জীবনে, ভীনদেশী একতরুনীর (আমার রুমমেট) কেক আর প্রান ঢালা ভালোবাসা আমার সম্বল।

তবু ছোটবেলার সেই দিনগুলোই যেন- কত সুন্দর। কেও তখন ভূল ধরতোনা, দোষারপ করতোনা। তারপরও কেবল প্রতিটা বছর ২৫শে ডিসেম্বর আসে- মনে করিয়ে দেয় আমাদের নানা স্মৃতি। আবার অনূভব করায় দিনদিন কেবল সুন্দর সময়গুলো দূরে সরে যাচ্ছে- আর সময় ফুরিয়ে আসছে। হয়তো এই জন্মদিনটাই আমার শেষ জন্মদিন, হয়তো বা এটাও শেষনা , আরো আছে সামনে।

চলতে হবে অনেক পথ, দেখা হবে নতুন অনেক দৃষ্টির সাথে, কথা হবে নতুন অনেক জোড়া চোখের সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×