somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘বিদ্রোহী’ স্কয়ার ‘বিদ্রোহী’ টাওয়ার

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর চির জনমের হারানো গৃহলক্ষ্মী নার্গিসকে জীবনের শেষ ও একমাত্র পত্রে লিখেছিলেন, ‘তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না—আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’ নজরুলের এই কথাগুলো যে কতখানি সত্য, তা অনুধাবনের জন্য খুব বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। নার্গিসের সঙ্গে প্রেম, পরিণয় ও বিচ্ছেদের দাহে দৌলতপুর-ফেরত কবি যখন জ্বলছেন অন্তরে-বাইরে, সেই সময় বেরুতে থাকে তাঁর অবিস্মরণীয় রচনাগুলো। একে একে প্রকাশিত হয় পলাতকা, আজান, দহনমালা, দুপুর অভিসার, বিজয়ের গান, মা, কার বাঁশি বাজিল, লক্ষ্মীছাড়া, অনাদৃতা, রণভেরী, বাদল দিনে, দিল দরদী, অকরুণ প্রিয়া, আগমনী, আনোয়ার, মরণ বরণ, খোকার বুদ্ধি, কামাল পাশা, হারা-মনি, চিরন্তনী প্রিয়া, অ-কেজোর গান, ছল কুমারী, ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম (তিরোভাব), বিজয়িনী, বন্দী বন্দনা, নিশীথ প্রিতম, খোকার গল্প বলা, চিঠি আবাহন, অভিমানী, আরবী ছন্দ, ভাঙার গান, প্রলয়োল্লাস এবং বিদ্রোহীর মতো কবিতা। আর সজীব হয়ে উঠল বাংলা সাহিত্যের শ্মশান, গোরস্থান। ধামা ধরা, জামা ধরার দিন শেষ হয়ে এলো নতুন প্রভাত। নতুন এবং অনন্য সাধারণ।
রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,
‘অগ্নিবীণা বাজাও তুমি কেমন করে?
আকাশ কাঁপে তারার আলোর গানের ঘোরে।
বিষম তোমার বহ্নিঘাতে
বারে বারে আমার রাতে
জ্বালিয়ে দিল নতুন তারা ব্যথার ভরে।’
আবুল কালাম শামসুদ্দীনের মতো বিদগ্ধ সাহিত্য সমালোচক আবিষ্কার করলেন, এক মহান ‘যুগ প্রবর্তক’ কবির আবির্ভাব হয়েছে।
তিরিশের তিন কবির মনের অবস্থা জেনে নেয়া যেতে পারে। যার মধ্য দিয়ে ৯০ বছর আগের মানুষরা কীভাবে দেখেছিলেন বিদ্রোহীকে তারও সন্ধান পাওয়া যাবে।
বুদ্ধদেব বসু তাঁর ‘কালের পুতুলে’ লিখেছেন ঃ
‘‘ ‘বিদ্রোহী’ পড়লুম ছাপার অক্ষরে মাসিকপত্রে—মনে হলো এমন কখনো পড়িনি। অসহযোগের অগ্নিদীক্ষার পরে সমস্ত মন-প্রাণ যা কামনা করছিলো, এ যেন তাই; দেশব্যাপী উদ্দীপনার এই যেন বাণী।’’
প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখে গেছেন ঃ ‘বাংলা সাহিত্যে এই শতাব্দীর তৃতীয় দশকের গোড়ায় একবার কিন্তু এমনি অকস্মাত্ তুফানের দুরন্ত দোলা লেগেছিল। সে দোলা যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে সেদিন অনুভব করেননি তাদের পক্ষে শুধু লিখিত বিবরণ পড়ে সে অভিজ্ঞতার সম্পূর্ণ স্বাদ পাওয়া বোধ হয় সম্ভব নয়।... রবীন্দ্রনাথের কাব্য প্রতিভার তখন মধ্যাহ্ন দীপ্তি। দেশের যুবগণের মনে তাঁর আসনও পাকা। তারই মধ্যে হঠাত্ আর একটা তীব্র প্রবল তুফানের ঝাপটা কাব্যের রূপ নিয়ে তরুণ মনকে উদ্বেল করে তুলেছিলো—
আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি—
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি।
কবিতার ছন্দে ও ভাষায় এটি উত্তাল তরঙ্গ। কার কণ্ঠে ধ্বনিত এ প্রচণ্ড কল্লোল? কিশোর জগতে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল, জেগে উঠেছিল একটা রোমাঞ্চিত শিহরণ। মনে আছে, বন্ধুবর কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি কাগজ কোথা থেকে কিনে নিয়ে অস্থির উত্তেজনার সঙ্গে আমার ঘরে ঢুকেছিলেন। কাগজটা সামনে মেলে ধরে বলেছিলেন, পড়। অনেক কষ্টে যোগাড় করেছি। রাস্তায় কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে এ কাগজ নিয়ে। কি সে এমন কাগজ? নেহাত সাধারণভাবে ছাপা, যতদূর মনে পড়ছে ডবল ডিমাই সাইজ-এর সাপ্তাহিক কাগজ। পাতাগুলো আলগা, সেলাই করা নয়। দাম বোধ হয় চার পয়সা। সেই কাগজ কেনবার জন্য সারা শহর ক্ষেপে গেছে? কেন?... পড়লাম কবিতার নাম বিদ্রোহী। ... সেদিন ঘরে বাইরে, মাঠে ঘাটে রাজপথে সভায় এ কবিতা নীরবে নয়, উচ্চকণ্ঠে শত শত পাঠক পড়েছে। সে উত্তেজনা দেখে মনে হয়েছে যে, কবিতার জ্বলন্ত দীপ্তি এমন তীব্র যে ছাপার অক্ষরই যেন কাগজে আগুন ধরিয়ে দেবে।
...গাইবার গান নয়, চিত্কার করে পড়বার এমন কবিতা এদেশের তরুণরা যেন এই প্রথম হাতে পেয়েছিল। তাদের উদাস হৃদয়ের অস্থিরতারই এ যেন আশ্চর্য প্রতিধ্বনি। এ কবিতা যে সেদিন বাংলাদেশকে মাতিয়ে দেবে তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে! [নজরুল সন্ধ্যা: নজরুল প্রসঙ্গে]
কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লেখেন ঃ ‘এ কে নতুন কবি? নির্জীব দেশে এ কার বীর্য বাণী? বাংলা সাহিত্য নয়, সমগ্র দেশ প্রবল নাড়া খেয়ে জেগে উঠলো। এমনটি কোনোদিন শুনিনি, ভাবতেও পারিনি। যেন সমস্ত অনুপাতের বাইরে যেন সমস্ত অঙ্কপাত্রেরও অতিরিক্ত।... গদ গদ বিহ্বল দেশে এ কে এলো উচ্চণ্ড বজ্রনাদ হয়ে। আলস্যে আচ্ছন্ন দেশ—আরামের বিছানা ছেড়ে হঠাত্ উদ্দণ্ড মেরুদণ্ডে উঠে দাঁড়াল। [জ্যৈষ্ঠের ঝড়]
আসলেই নজরুলের বিদ্রোহী সাধারণ একটি কবিতা মাত্র নয়। বিদ্রোহী মানুষের হাতে শব্দ দ্বারা নির্মিত গর্ব, অহঙ্কার, পৌরুষ ও শিল্পের সর্বোচ্চ মিনার। ১৩৯টি পঙিক্ত দ্বারা গেঁথে তোলা এ কবিতা বাংলা কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট। মানুষ ও মানবতার সবচেয়ে বিশাল ও ঐশ্বর্যশালী সুরম্য ভবন। বাংলা কবিতা মাত্র একবারই সমুদ্রের ভয়াল গর্জন নিয়ে ফুঁসে উঠেছিল, মাত্র একবার বাংলা কবিতার মহিমাময় শির দেখে সম্ভ্রমে মাথা নুইয়ে দিয়েছিল হিমাদ্রীর শিখর,—আর তা বিদ্রোহীর মাধ্যমে।
বাংলা কবিতার ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে দেহের ভিতরে যে এত তেজতপ্ত লাভা থাকতে পারে, ভাষা যে ডিনামাইটের মতো বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে, স্বর্গমর্ত্য টালমাটাল করা ভয়ঙ্কর গতিমান হতে পারে; হতে পারে দুর্দমনীয় দুঃসাহসী, হতে পারে বারুদ ও শিল্পের অনাস্বাদিত রসায়ন, নজরুলের জন্ম না হলে আমরা জানতে পারতাম না। তেমনই অবলীলায় বলা যায়, বিদ্রোহী রচনার পরদিন থেকে বিশ্বসাহিত্য ভাগ হয়ে যায় দু’ভাগে, একভাগ যারা বিদ্রোহী পড়েছে, অন্যভাগ যারা বিদ্রোহী পড়েনি।
বিদ্রোহীর পতাকা হাতে নজরুলের আবির্ভাব না হলে বাংলা কবিতা আজও সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের ‘দালাল’ হয়েই থাকত। সে পূর্ণ ‘মানুষ’ হতো না। সে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারত না। স্বাধীন হতে পারত না।
মানুষ ও মানবতার জন্য বিদ্রোহীর চেয়ে বেশি করে বিশ্বসাহিত্যে কোথাও কিছু লেখা হয়নি। সেজন্য একক কবিতা হিসেবে বিদ্রোহী শুধু বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতা নয়, বিশ্বসাহিত্যেরও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।

দুই
যে বিদ্রোহী কবিতা বাংলা কবিতায় নিয়ে এসেছিল অবিস্মরণীয় প্রভাত, সেই বিদ্রোহী কবিতা কিন্তু লেখা হয়েছিল ১৯২১ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের এক রাতে। তপ্ত লাভার উদ্গীরণ ঘটেছিল হাড় কাঁপানো শীতে। নজরুলের কাছে সে সময় কোনো ফাউনটেন পেন ছিল না। দোয়াতে বারে বারে কলম ডুবিয়ে লিখতে হতো তাঁকে। বিদ্রোহী কবিতার প্রথম পাঠক কমরেড মুজাফফর আহমদ এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘দোয়াতে বারে বারে কলম ডোবাতে গিয়ে তার মাথার সঙ্গে হাত তাল রাখতে পারবে না, এই ভেবেই সম্ভবত সে কবিতাটি প্রথমে পেন্সিলে লিখেছিল।’ অর্থাত্ বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিতাটি কোনো কলম দিয়ে নয়, লেখা হয়েছিল পেন্সিলে, ৩/৪ তালতলা লেনের নিচের তলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরে, কলকাতায়।
এই কবিতার দ্বিতীয় পাঠক ছিলেন, ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফজালুল হক। তৃতীয় পাঠক ছিলেন ‘বিজলী’ পত্রিকার ম্যানেজার অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য। প্রথম ছাপার কথা ছিল মোসলেম ভারতে। কিন্তু মোসলেম ভারত ছিল অনিয়মিত মাসিক পত্রিকা। সে জন্য অবিনাশ বাবুর দাবির মুখে আরেকটি কপি চলে যায় ‘বিজলী’তে। বিজলীই ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি প্রথম বারের মতো বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করে বিদ্রোহীর দ্বার। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বিদ্রোহী কবিতার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেছে চিরতরে। চিরতরে বললাম, কারণ ৯০ বছর পরও কেউই এর হদিস দিতে পারেনি।
৬ জানুয়ারির কলকাতা শহরের অবস্থা কেমন ছিল, তা আজ অনুমান করা কঠিন। কিন্তু স্মৃতিচারণে তার ছিটেফোঁটা পাই মাত্র। সেই ছিটেফোঁটা থেকে জানা যায়, সেদিন কলকাতার মোড়ে মোড়ে তরুণরা দলে দলে সমবেত হয়ে উচ্চকণ্ঠে আবৃত্তি করতে থাকে বিদ্রোহী। হঠাত্ যেন পাষাণপুরীতে ফিরে আসে প্রাণ।
সড়কে সড়কে দেখা দেয় ট্রাফিক জ্যাম। বিজলী পত্রিকা দুই বার ছাপতে হয়েছিল সেদিন। দুইবারে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা ছাপা হয়েছিল ২৯ হাজার। এটাও সে সময়কার বাংলায় একটা রেকর্ড। মুজাফফর আহমদের মতো সংযতবাক মানুষও স্বীকার করে গেছেন, সেদিন কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ বিদ্রোহী পড়েছিল।
বিদ্রোহীর এই অভূতপূর্ব সাফল্যের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে মোসলেম ভারতসহ প্রবাসী, সাধনা, বসুমতী ও ধূমকেতু তা পুনর্মুদ্রণ করে। এ ঘটনাও বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়বার দেখা যায়নি। বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় একে একে লেখা হতে থাকে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা। শ্রীমতি ইলামিত্র, সৈয়দ এমদাদ আলী, মোহিত লাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, গোলাম মোস্তফা, হাবিবুর রহমান সাহিত্যরত্ন, নাজির আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ গোলাম হোসেনসহ নাম জানা না জানা অনেকে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। এর মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়া রক্ষণশীল অংশটি নামে বিরোধিতায়, আর যুবক তরুণসহ শিক্ষিত সম্প্রদায় বিদ্রোহীকে প্রাণের বাণী হিসেবে আত্মায় ধারণ করে জেগে ওঠেন।

সামগ্রিক অর্থেই নজরুল জাতির সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন আলোকবর্তিকার মতো। সেটা যেমন রাজনৈতিকভাবে, তেমনি সাহিত্যিকভাবেও। তিনি এই দুই দিক থেকেই ছিলেন ত্রাণকর্তা। ক্রান্তিকালের নায়ক। তিনি আমাদের মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনারও প্রধান উদগাতা।
১৭৫৭ সালের পর বাংলাদেশ দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটা ধারা হলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সহযোগিতা, আপস ও দালালির ধারা। এই ধারার প্রধান কেন্দ্র ছিল কলকাতা। কলকাতার বণিক, মুত্সুদ্দি, কেরানীকুল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে উদ্ভূত ভূইফোঁড় চরিত্রহীন জমিদার শ্রেণী ছিল সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষার মূল শক্তি। অন্য ধারা ছিল মোকাবেলার ধারা, স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার ধারা। এই ধারা মীর কাসিমের পথ, ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের রক্তমাখা উত্তরাধিকার। নজরুল ছিলেন এই মোকাবেলার পথের শ্রেষ্ঠ উপহার। নজরুল যে রকমভাবে তাঁর অবমানিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, পরাধীন জাতির মর্ম ব্যথা অনুভব করেছিলেন—অন্যদের পক্ষে সেটা সঙ্গত কারণেই সম্ভব ছিল না।
এজন্যই বলা যায়, বিদ্রোহীর মধ্যেও যেমন স্বর্গমর্ত্য পাতালের সবকিছু আছে, তেমনি আছে ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরের শহীদের রক্ত, আছে ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ঘৃণা, আছে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের বারুদ, আছে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাস, আছে করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে পথ নির্দেশ।

আবারও বলি বিদ্রোহী শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়। বিদ্রোহী মানুষ ও মানবতার আইফেল টাওয়ার, ইতিহাসখ্যাত কুতুবমিনার, আমাদের লাখো শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বিদ্রোহী মানে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বিদ্রোহী মানেই বাংলাদেশ। এক বিদ্রোহীর শব্দমালা হাতে নিয়েই বাংলাদেশ বিশ্বজয় করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, ইংল্যান্ডের জন্য যেমন শেক্সপীয়র, আমেরিকার জন্য যেমন হুইটম্যান, জাপানের যেমন নোগুচি, ইরানের যেমন ফেরদৌসী, নজরুল বাংলাদেশের জন্য তেমনি। নজরুল সত্যিকার অর্থেই আমাদের জাতীয় চেতনার মানবীয় প্রতিকৃতি। সেজন্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতার নামে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কোয়ার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সেই স্কোয়ারের কেন্দ্রে থাকবে ১৩৯ মিটার উঁচু টাওয়ার। টাওয়ারের সর্বোচ্চ ধাপে থাকবে একটা অবজারভেটরি—যেখানে উঠে চারদিকে দেখা যাবে শুধু বাংলাদেশ। টাওয়ারের নিচে থাকবে ছোটখাট জাদুঘর। যে জাদুঘরে এক দেয়ালে থাকবে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়া কবি-লেখকদের নাম। অন্য দেয়ালে থাকবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতাকারী ‘দালাল’ লেখক-কবি-রাজাকারদের নামের তালিকা। অন্য পাশে থাকবে বিদ্রোহী কবিতার শিলালিপি। সঙ্গে বিজলী-মোসলেম ভারতসহ যেসব পত্রিকা ‘বিদ্রোহী’ ছেপেছিল, তাদের ইতিহাস। থাকবে ৬ জানুয়ারি ১৯২২ সালের নানা ঘটনাপঞ্জি। থাকবে বিভিন্ন ভাষায় বিদ্রোহীর অনুবাদ ও ইতিহাস। সেখানে থাকবে ছোট-খাটো একটা সুভ্যেনির সপ। আর এখনই প্রকাশ করতে হবে একটি স্মারকগ্রন্থ।
এই কাজগুলো যদি আমরা হাতে নেই, তাহলে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষপূর্তির সময় আমরা এক নতুন বাংলাদেশ চোখের সামনে পাব।
এর আগে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাসে পূর্ণাঙ্গ নজরুলকে জানার জন্য কমপক্ষে ১০০ নম্বর পূর্ণমানের একটি স্বতন্ত্র পত্র চালু করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাংলাদেশীর ঘরে পৌঁছাতে হবে এক সেট করে নজরুল রচনাবলী।

# কবি আ ব দু ল হা ই শি ক দা র
দৈনিক আমারদেশ, সাহিত্য-সাময়িকী, ২৩.১২.২০১১ইং।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×