somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যিশু: মহাবিপ্লবের মহানায়ক

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Knowledge and ritual without compassion is empty. Jesus Christ
বিগত দেড় হাজার বছর ধরে ইউরোপের গীর্জে পিতারা যিশুর যে মনোরম ছবিটি তুলে ধরেছেন, সেই ছবির ভিতরে প্রকৃত যিশুসত্তার সবটুকু পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। তার কারণ আছে। মেরিপুত্র যিশু ছিলেন প্রাচীন ফিলিস্তিনের মরমী এসেনেস (Essenes) সম্প্রদায়ের অনুসারী ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে ফিলিস্তিনে মূলধারার অর্থডোক্স ইহুদি ধর্মের পাশাপাশি কতগুলি গৌণ সম্প্রদায়েরও সৃষ্টি হয়েছিল; এদের মধ্যে এসেনেস সম্প্রদায়টি ছিল অন্যতম। উদাসীন এই মরমীসম্প্রদায়টিকে সংখ্যালঘুই বলা যায়, যাদের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল আত্মসংযম, বাধ্যতামূলক দারিদ্র, প্রত্যহ শুদ্ধি¯স্নান, জাগতিক আনন্দ পরিহার করা, অনেক আবার কৌমার্যব্রত পালন করতেন। এসেনেসদের জীবনাদর্শ যেন কোনও ভারতীয় সন্ন্যাসীরই প্রাত্যহিক ব্রত।
যিশু কিংবা যিশুর এসেনেস সম্প্রদায়টি কি ভারতবর্ষের ধর্মীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল?
যিশুর জন্মের সময় প্রাচ্যদেশের তিনজন জ্ঞানী (ম্যাজাই) 'নতুন রাজা' (যিশুকে) অভিনন্দন জানাতে জুদাহ প্রদেশের বেথেলহেমে গিয়েছিলেন। নতুন রাজার সন্ধান করতে তাঁরা রাজা হেরোদ- এর কাছে উপস্থিত হন। রাজা হেরোদ নতুন রাজার ভয়ে ভীত হয়ে অঞ্চলটির সদ্যজাত শিশুদের হত্যা করার আদেশ দেন। যিশুর পিতা যোসেফ তাঁর স্ত্রী মেরি এবং সদ্যজাত যিশুকে নিয়ে মিশরে হিজরৎ করেন। এই বিষয়টি বাইবেলে (ম্যাথিউ ২;১৩-২৩) বর্ণিত আছে। বারো বছরের যিশুকে নিয়ে যোসেফ এবং মেরি যে জেরুযালেমে ‘পাসওভার’ উযযাপন করেছিলেন সে- বর্ননাও বাইবেলে (লিউক ২:৪১: ৫০)রয়েছে। অবশ্য যিশুরজীবনের এর পরের আঠারো বছর অবধি তেমন কিছু জানা যায় না। অর্থাৎ যিশুর জীবনে ১২ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ঘটনাক্রম সম্বন্ধে বাইবেল নীরব। অবশ্য খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে ওই সময়ে যিশু নাজারথেই ছিলেন। অবশ্য এ বিষয়ে অন্যমতও রয়েছে। সেই মতটি হল যিশু ওই সময়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তারা কিছু প্রমাণও দাখিল করেন ।
এমনটা কিন্তু একেবারেই অসম্ভব না। কারণটা এখন বলছি। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পরের সময়টাকে বলা হয় Hellenistic যুগ (বাংলায় হেলেনসম্ভুত যুগ। হেলেনসম্ভুত যুগে গ্রিক সংস্কৃতির সূর্য মধ্য গগনে বিরাজ করছি; রাজনৈতিক ক্ষমতা অবশ্য ক্রমশ রোমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছিল। আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সুবাদে ওই সময়টায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে উন্নত ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল । কাজেই যিশুর পক্ষে ভারতে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। মরমী হৃদয়ের অধিকারীগণ সাধারণত ভ্রমনপিপাসুই হন; দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনের কোনও সরাইখানায় হয়তো সদা উৎসুক যিশুর সঙ্গে কোনও ভারতীয় ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তার কাছেই যিশু জেনেছিলেন ভারতের ধর্মীয় সাধনার কথা।

ইসলামের মহানবী (সা) বলেছিলেন: ‘জ্ঞান অর্জনে সুদূর চিন দেশে যাও।’ মহানবী (সা) কেন বলেছিলেন জ্ঞান অর্জনে সুদূর চিন দেশে যেতে? ইসলামের মহানবী (সা) বানিজ্যকালে হয়তো সিরিয়া কি মিশরের কোনও সরাইখানায় চৈনিক বণিকের কাছে কনফুসিয়াসের অমূল্য নৈতিক শিক্ষার কথা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এমন তো হতেই পারে ...


তত্ত্বজিজ্ঞাসু তরুণ যিশুর ভারতবর্সে যেতে আগ্রহী হওয়ারই কথা। এসব অনুমান তো অসম্ভব কিছু না। তাছাড়া খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে ভারতবর্ষ এবং পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে অটুট বানিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক Romila Thapar লিখেছেন:The most profitable of the overseas trade was the Roman trade with south India. Yavana merchants (i.e. merchants from westren Asia and the Mediterranean) had trading establishments both in the Satavahana kingdoms and in those of the far south. pp. 114 (A History of India (vol.1) সুতরাং অনুমান করা যায় যে যিশু নৌ কিংবা স্থলপথে ভারতে পৌঁছেছিলেন।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে, অর্থাৎ যিশু যে সময়টায় ভারতবর্ষে পা রাখলেন, সেই সময়টায় ভারতবর্ষের ধর্মীয় পরিমন্ডলে বিরাজ করছিল সুমহান বেদান্ত দর্শন, পতঞ্জলির যোগসূত্রের আত্মিক উন্নতির বিধান, অহিংস জৈনধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের গম্ভীর আবহ । এইসব আধ্যাত্মিক সাধনমার্গের মূল বক্তব্য তো মরমী যিশুর হৃদয় স্পর্শ করারই কথা।

ঈশাবাস্য মিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্ছীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম।


অর্থাৎ, এই চলমান পৃথিবীতে যা চলছে তা ঈশ্ব র দ্বারা আবৃত বলে জানবে এবং ত্যাগের সঙ্গে ভোগ করবে।

কিংবা,

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে


অর্থাৎ, শরীরের মৃত্যু হলেও আত্মার বিনাশ হয় না

উপনিষদ এবং গীতার এই সব বাণীতে কি যিশু মুগ্ধ হননি? নিশ্চয়ই হয়েছেন। কাজেই তরুণ বয়েসে যিশুর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের তীর্থভূমি ভারতে আসা এবং মরমী চেতনায় সমৃদ্ধ হওয়াই খুব স্বাভাবিক। ভারতবর্ষের মরমী ভাবধারায় স্নাত হয়েই যিশু বলেছিলেন: Knowledge and ritual without compassion is empty. এই কথাটি তো নিখাদ বৌদ্ধদর্শনের- ঠিক সেমেটিকভাষী হিব্রুদের নয় । কাজেই ঐতিহাসিকরা যিশুর ধর্মে ভারতীয় সাধনার স্ফূরণ খুঁজে পান। যেমনটি Romila Thapar লিখেছেন The impact of Indian ideas in westren Asia can also be traced to this period. In particular the doctrines of the Manichaeans, Gonstics, and Neo-Platonists constitute an inreresting study from this point of view.Certain aspects of the life of Christ (the supernatural birth and the temptation by the Devil) are so closely parallel to events in the legends of the life of Buddha that it is difficult to avoid suspecting some indirect borrowing. The observances of the Essenes (to which sect Christ is said to have originally belonged according to some theories ) also indicate a knowledge of indian religion belief and practice in the Mediterrancan world. (pp. 119)
ভারতীয় ধর্মসাধনায় স্নাত হয়ে ফিলিস্তিনে ফিরে আসন্ন বিপ্লবের দীক্ষায় নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন যিশু?
কিন্তু, কি সেই বিপ্লব?
যিশুর মাতৃভূমি ফিলিস্তিন অঞ্চলটি হাজার বছর ধরে মিশর, সিরিয়া, ব্যাবিলন, পারস্য, গ্রিক এবং রোমানরা দখল করে রেখেছিল। মাঝে অবশ্য ফিলিস্তিন অঞ্চলটি স্বল্পকালীন স্বাধীনতা জুটত । যিশুর জীবদ্দশায় ফিলিস্তিনে বলবৎ ছিল রোমান শাসন । সে শাসনশোষন ছিল অত্যন্ত নির্মম। ভোগবাদী রোমান অভিজাত শ্রেণির ভোগবিলাসিতার জন্য (যে ভোগের বিরুদ্ধে ছিল গৌতম বুদ্ধের আতীব্র বিতৃষ্ণা) ফিলিস্তিনে প্রতি বছরই করের হার বাড়ানো হত। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি-বা বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়- বিদ্রোহীকে ক্রশবিদ্ধ করে হত্যা করা হত! ফিলিস্তিন থেকে রোমান আধিপত্যবাদ উচ্ছেদ করতে বিশাল আত্মত্যাগ ছিল যুগের দাবী। আত্মত্যাগের জন্য প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির, যা হৃদয়ে বিশ্বচৈতন্যের (দি আলটিমেট রিয়ালিটি/ ব্রহ্মন) স্বরূপ উপলব্দি করেই তবে সম্ভব।

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে


যিশু মর্মমূলে এটি উপলব্দি করেছিলেন এবং মৃত্যু আসন্ন জেনেও নিজেকে রোমানদের বিরুদ্ধে মহাবিপ্লবের এক মহানায়কে উন্নীত করেছিলেন । সেই মহানায়ক আজ থেকে দু-হাজার বছর আগে মহাবিপ্লবে আত্মাহূতি দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও যেন আমাদের জন্য দিন দিন অনিবার্য হয়ে উঠছে ...


তথ্যসূত্র:

http://www.essenespirit.com/
http://en.wikipedia.org/wiki/Jesus
Click This Link
Click This Link
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×