somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সান্তা ক্লস ( Santa Claus)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী কাল ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন, যিশুখৃস্টের জন্মদিন। আজ ২৪শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা হল খৃসমাস ইভ। খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে এই সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত শিশুদের জন্য উপহার বিলিয়ে যাবেন সান্তা ক্লস।

সান্তা ক্লস কে?
খৃস্টান ধর্ম, জনপ্রবাদ , লোকগাথা, ইতিহাস সব মিলিয়ে জন্ম হল সান্তা ক্লসের। জার্মান বিশপ সেন্ট নিকোলাস, বৃটিশ চরিত্র “ ফাদার ক্রিসমাস” এবং ডাচ বা হল্যান্ডের চরিত্র সিন্টারক্লাসের সমন্বয়ে জন্ম হল সান্তা ক্লসের।

৪র্থ শতাব্দী’র বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের আনাতোলিয়ার (এখন তুরস্কের অধীন) বিশপ ছিলেন সেন্ট নিকোলাস। তিনি ছিলেন গরীবদের বন্ধু, উদার হাতে সর্বতোভাবে সাহায্য করতেন গরীবদের। জার্মান লোকগাথা অনুযায়ী সান্তা ক্লসের সাথে সাদৃশ্য মেলে দেবতা ওডিন এর। পৌত্তলিক জার্মান যুগের দেবতা “ওডিন” আকাশপথে উড়ে যেতেন ৮পা ওয়ালা ঘোড়ার উপর সওয়ারী হয়ে। তার ঘোড়ার জন্য শিশুরা চিমনীর পাশে রেখে দিত গাজর, চিনি বা,ঘাস । ওডিন তার ঘোড়াকে খাইয়ে শিশুদের জন্য রেখে যেতেন চকোলেট, মিস্টি , খেলনা ইত্যাদি। হল্যান্ড বেলজিয়াম বা লুক্সেম্বার্গে সেন্ট নিকোলাস চরিত্র হল সিন্টারক্লাস (Sinterklaas,) ।সিন্টারক্লাস সাহায্যকারীদের সাথে নিয়ে নভেম্বর মাসে নৌকাযোগে আসতেন স্পেন থেকে। তার খাতায় থাকতো ভাল বা দুস্টু ছেলেদের মেয়ের তালিকা। তিনি ধুসর সাদা রঙের ঘোড়ায় চড়ে আকাশপথে উড়ে যতেন ছাদের উপর দিয়ে। ভাল শিশু দের উপহার দিতেন খেলনা, চকোলেট, বাদাম মিস্টি ইত্যাদি।
বৃটেন এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যে বড়দিনের উৎসবের সাথে অবিচ্ছেদ্য অংগ ছিলেন “ ফাদার ক্রিসমাস” উত্তর আমেরিকার বৃটিশ কলোনী যুক্তরাস্ট্র এবং কানাডাতে ফাদার ক্রিসমাসের সাথে হল্যান্ডের চরিত্র সিন্টারক্লাস চরিত্র সমন্বয়ে জন্ম নিলো সান্তা ক্লস। ওয়াশিঙ্গটন হার্ভে’র ১৮০৯ সালে প্রকাশিত বইতে উল্লেখ করা হয় সান্তা ক্লস এর।
১৮২৩ সালে’ নিউ ইয়র্কে প্রকাশিত হয় কবিতা “A Visit From St. Nicholas" । তাতে সান্তাক্লসের বিশদ বর্ননা মেলে। ১৮৬৩ সালে আমেরিকার কার্টুনিস্ট টমাস ন্যাস্ট Harper's Weekly.পত্রিকায় আকেন সান্তা ক্লসের ছবি।

১৮২০ সাল থেকে প্রচলিত লোকগাথা অনুযায়ী সান্তা ক্লস তার বহু অনুগামী যাদুশক্তির অধিকারী বামুনদের(Magical elves) নিয়ে বাস করেন উত্তর মেরুতে। তার কারখানায় সারা বছর ধরে বামুনেরা তৈরী করেন শিশুদের জন্য খেলনা। ২৪শে ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অর্থাৎ “কৃসমাস ইভে” সান্তা ক্লস তার স্লেজ গাড়ীতে রওয়ানা দেন সারা পৃথিবী প্রদক্ষিনে। তার গাড়ী আকাশ পথে উড়িয়ে টেনে নিয়ে যায় ৯টা উড়ন্ত হরিন বা “ ফ্লাইং রেন ডিয়ার” সান্তা ক্লসের কাছে থাকে সারা বছর ধরে তৈরী করা সারা পৃথিবী’র শিশুদের তালিকা। ২৪ শে ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সান্তা ক্লস বিলিয়ে বেড়ান উপহার সামগ্রী।
সান্তা ক্লস হলেন হাসিখুশি সাদা চুলদাড়ির বৃদ্ধ । মাথায় লাল টুপি, পরনে লাল কোট এবং লাল প্যান্ট। কোটের হাতা এবং কলারের রঙ হল সাদা। কোমরে কাল চামড়ার বেল্ট এবং পায়ে কালো রঙের বুটজুতা। কাধে থাকে উপহার সামগ্রীভরা মস্ত এক ঝোলা।


সান্তা ক্লস এবং ক্রিসমাস উৎসব।
খৃস্টান অধ্যুষিত দেশ গুলোতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে এবং শপিং মলে সান্তার আগমন ঘটে ক্রিসমাসের ২/৩ সপ্তাহ আগে থেকেই। সান্তার পোশাক ,সান্তা’র মুর্তি বিক্রি হয় দোকান গুলোতে। কৃসমাস পার্টিতে লোকজন অংশ নেয় সান্তার পোষাক পরে। মনের ইচ্ছে জানিয়ে বা ভাল হওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে সান্তাকে চিঠি লেখা হল এই সমস্ত দেশের ছেলেমেয়েদের উৎসবের অংগ। তাদের চিঠি’র উত্তর লিখেন হয়ত ডাকবিভাগের কোন কর্মচারী বা সেচ্ছাসেবক। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় ফিনল্যান্ডের সান্তাক্লস এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ লক্ষ চিঠি পেয়েছেন পৃথিবীর ১৯৮ টি দেশের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে। কানাডাতে সান্তা ক্লসের রয়েছে নিজস্ব পোস্টাল কোড। ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ডাক বিভাগের কর্মচারী সান্তার হয়ে ছেলে মেয়েদের চিঠির উত্তর দিয়েছেন। আমেরিকা কানাডাতে সান্তাকে ফোন করার রেওয়াজ ও রয়েছে। আমেরিকাতে ১৯৫৫ সালে সান্তাকে ফোন করার জন্য ভূল নম্বর দিয়ে এক বিজ্ঞাপন দেয় সিয়ারস।সেই নাম্বারে বাচ্চারা ফোন করার পর তা গিয়ে পৌছে আমেরিকার বিমান বাহিনী’র কর্নেল সুপ এর কাছে। কর্নেল সুপ তার অধীনস্থ কর্মচারীদের নির্দেশ দেন সমস্ত টেলিফোনের উত্তর দিতে। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় North American Aerospace Defense Command (NORAD)। ইন্টারনেট আসার পর এখন সান্তাকে ই মেইল করার প্রচলন এসেছে।
NORAD স্থাপন করেছে উপগ্রহের সাহায্যে “সান্তা ট্রাকিং সিস্টেম। আজ কানাডার টরন্টোর স্থানীয় সময় সকাল ৬ টায় উত্তর মেরু থেকে সান্তা রওয়ানা হয়েছে পৃথিবী প্রদক্ষিনে।
মার্কিন ফার্স্ট লেডী মিশেল ওবামা সহ অসংখ্য সেচ্ছাসেবী ছেলেমেয়েদের করা টেলিফোনের উত্তর দিচ্ছেন। মিশেল প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৮টি করে ছেলেমেয়েদের টেলিফোনের উত্তর দিচ্ছেন। আমেরিকার কলারডোর বিমান বাহিনী ঘন্টায় প্রায় ৮ হাজার টেলিফোনের উত্তর দিচ্ছেন সান্তার অবস্থান জানতে চেয়ে ছেলেমেয়েদের করা টেলিফোনের। সান্তা পৃথিবী প্রদক্ষিন করে ফিরে আসবে তার বাসস্থান উত্তর মেরুতে। NORAD এর ওয়েবসাইট থেকে সান্তার অবস্থান জেনে নিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×