ইরাক যুদ্ধে অংশ নিয়ে দুই পায়ের কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন মার্কিন সেনা টমাস ইয়ং। দেশের হয়ে ওই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। অথচ তিনিই এখন ত্যক্তবিরক্ত নিজের জীবনের প্রতি। বিরক্তির এই মাত্রা এতটাই যে বেঁচে থাকার ন্যূনতম আগ্রহটুকুও তাঁর আর নেই।
ব্যক্তিজীবনের অভিব্যক্তি নিয়ে সম্প্রতি টমাস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কাছে চিঠি লিখেছেন। দুঃসহ পঙ্গু জীবনের বেদনা ছাড়াও ইরাক যুদ্ধে যাঁরাই হতাহত হয়েছেন, তাঁদের সবার জন্য চিঠিতে এই দুজনকে দায়ী করেছেন তিনি।
টমাস বলেন, চিঠিটি তিনি ইরাক যুদ্ধে আহত মার্কিন সেনা এবং আরও যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁদের আত্মীয়দের পক্ষ থেকে লিখেছেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘নৈতিক, কৌশলগত, সামরিক ও অর্থনৈতিক—প্রতিটি দিক থেকেই ইরাক যুদ্ধ ছিল ব্যর্থ। মি. বুশ ও মি. চেনি, আপনারাই তাঁরা, যাঁরা এই যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এই যুদ্ধের জন্য আপনাদেরই পরিণাম ভোগ করা উচিত।’
টমাস আরও লেখেন, ‘আমার দিন কীভাবে কাটবে, তা এখন আমার ওপর নির্ভর করলেও আপনাদের সময় সামনে আসছে। আমি আশা করি, আপনাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমি এবং আমার মতো আরও যাঁরা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের জন্য আপনারা যা করেছেন, সেই বিষয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর নৈতিক বল অর্জন করুন।’
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (৯/১১ হামলা) টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এর পেছনে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করার অঙ্গীকার করেন। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে সেই সময় ২২ বছরের তরুণ টমাস যোগ দেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে।
ওই সন্ত্রাসী হামলার জন্য আল-কায়েদা ও এর সমর্থক তালেবানকে দায়ী করা হলেও টমাসকে বিস্ময়করভাবে আফগানিস্তানে পাঠানো হয়নি। ২০০৪ সালে তাঁকে পাঠানো হয় ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আগ্রাসনে অংশ নিতে। ইরাক যাওয়ার পাঁচ দিন পরই বাগদাদে টমাসের সেনা ইউনিট বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়ে। হামলায় তাঁর মেরুদণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পঙ্গুত্ব বরণ করে টমাস দেশে ফেরত আসেন। হুইলচেয়ারে বসেই শুরু করেন ইরাক যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা। ২০০৭ সালে প্রামাণ্যচিত্র বডি অব ওয়ার-এ তাঁর এই প্রচারণা স্থান পায়। তবে এ মুহূর্তে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। টমাসের স্ত্রী ক্লডিয়া কিউলার বিবিসিকে বলেন, ‘টমাস শেষবারের মতো বিশ্রাম নিতে তৈরি। আমরা একটা পর্যায় পর্যন্ত কষ্ট সইতে পারি। কিন্তু গত বছর থেকে তার ব্যথা ও অস্বস্তি রাতারাতি বেড়ে গেছে। হাসপাতালে বারবার যাওয়া-আসা করতে করতে সে ভীষণ ক্লান্ত। আমি যে তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হারাতে চলেছি, তা ঠিকই বুঝতে পারছি।’ বিবিসি।
‘মি. বুশ, মি. চেনি... আপনাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে’
Iraq War vet pens 'last letter' to Bush and Cheney(yahoo)