তারেক। সে ভাল ছেলে।যাকে বলে আদর্শ ছেলে।পূর্ব দিগন্তে যুখন সূর্য উঁকি দিত তারেককে তখন দেখা যেত পড়ার টেবিলে।পশ্চিম যখন লাল হয়ে সন্ধ্যা নামার আভাস জানাত তখনো তাকে পড়ার টেবিলেই দেখা যেত।বাবা মায়ের আদরের সন্তান তারেক ভাল ফলাফল ও সবার আদর নিয়ে ভালই দিন কাটাচ্ছিল।বন্ধু মহলেও ও ভাল ছেলে নামে পরচিত।তবে কিসে যেন অপূর্ণতা তাকে সবসময় ভোগাত।নিজেকে কেন যেন ছোট মনে হত।পড়ার ফাঁকে কখনও নিজেকে ফটিক ভেবে,কখনও নিজেকে দীপু ভেবে,কখনও বা নিজেকে ‘Children of heaven’ এর সেই ভাই যে তার বোনের জুতার জন্য দৌড়ে অংশ নিয়েছিল-ভেবে আবেগী ও নিস্তরঙ্গ জীবনের কামনার জাল বুনত।অস্বাভাবিকতার দোলাচলে পড়ে নতুন জ্ঞানে উদ্ভাসিত হওয়ার আশায় কিভাবে যেন গানের প্রতি নিজেকে সঁপে দিল সে।জানত গান বাজনা খারাপ জিনিস,এবং ইসলামে গান বাজনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আছে।কিন্তু গান গুলো তো অনেক জ্ঞানের ও মেধার বিষয় !আস্তে আস্তে সে গানের প্রতি নেশাগ্রস্ত হয়ে গেল।প্রথম দিকে লিন্কিন পার্ক,সিস্টেম অফ আ ডাউন,জ্যাক্সন,বাংলা হাবিব,লিমন,অর্থহীন,শিরোনামহীন,পরে সিগারেট।।ধীরে ধীরে নামাজ ছাড়া,বন্ধুদের সাথে অযথাই আড্ডা দিতে দিতে সময় নষ্ট করা,নেট থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে মিউজিকের এভুলিউশন,শ্রেণীবিভাগ,বিভিন্ন মিউজিশিয়ান্ দের জীবনী পড়ে পড়ে আন্দোলিত হওয়া, নিজেকে ঘৃণা করা।প্রথম প্রথম এসব ভাল লাগত না,কিন্তু কি যেন নেই জীবনে মনে করে নতুনত্ব আবিস্কার করতে উদ্যমী ছিল সে। নিজেকে ক্রিয়েটিভ মনে করত।কিছু নাস্তিক বন্ধু ও তার ভাগ্যে জুটল।তারা এমন সব অদ্ভুত প্রশ্ন করত,যা চিন্তা ধারাতে জোয়ার এনে সবকিছুকে এলোমেলো করে দিত। ও কারো কাছে কিছু না বলে ইসলামে এসবের যৌক্তিক জবাব নেই মনে করে দূরে সরে যেতে লাগল ইসলাম থেকে।ভাল ছাত্র হওয়ায় এসব দোষ কারো চোখে পড়ত না। মিউজিকের বেড়াজাল কিছুতেই ছিন্ন করতে না পারা জীবনটাকে দূর্বিষহ করে তুলত।মেটালিকা,আয়রন মেইডেন,গানস & রোজেস তার নিত্যদিনের সঙ্গী হল।ভালোবাসার মানুষটাও কিভাবে যেন অস্বীকার করে দূরে সরে গেলো।
সময় থেমে থাকে না।নিরবধি সময় টার দুরবোধ্য চলাচল এটাই জীবন বলে সব সময় তাকে জোরে সোরে জানান দিত।কান্নাবিহীন,আনন্দবিহীন একটা জীবনের মুল্য অনেক বেশী অনেকের কাছে-যা পীড়া দিয়ে যেত অবিরাম।সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে তার ঘেন্না লাগত।আবার এই ঘৃণা তাকে কষ্টের(কষ্ট ই ভাল লাগে আমার) সাগরে ডুবাত ও ভাসাত।কর্ণ,অডিওস্লেইভ,ডিস্টারবড,এসি-ডিসি,গডস্ম্যাক,পান্টেরা এবং পিঙ্ক ফ্লয়েড নেশার মত জেঁকে বসত।প্রত্যেক গানের লিরিক্স,কোন জায়গায় কি রকম লীড দিল,কোন ব্যান্ডের ভোকাল কত শক্তিশালী,গথিক মেটাল,থ্রাশ মেটাল।এমঙ্কি ডেথ মেটাল পর্যন্ত গড়াল ব্যাপারটা।দুঃখজনক কথা সে এখন নামাজ আর আদায় করে না।মনের ভিতর জমে থাকা প্রশ্নগুলো এখন বীজ বুনতে শুরু করেছে।ভাল ছাত্রের তকমা টা এখন আর এত গুরুত্বপুর্ণ কিছু না।পড়ালেখা যারা করে তাদেরকে আঁতেল মনে করে সে।নিজের মধ্যে কার যেন ছায়া দেখতে পেত।অসহায় হয়ে যেত,অন্ধকারে হাতড়াত একটু আলো।বাবা মা এর কাছ থেকে অনেক দূরে এখন সে।ভাল ফলাফল শুনে বাবা মা,আত্মীয়দের হৃদয় উল্লসিত,আর এদিকে তারেকের মনের সীমাহীন অস্থিরতা।সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল।হতাশার ছবি আলো হয়ে ঘিরে রাখে তার চারপাশকে।
দূর তেপান্তরের মাঠে কেউ নেই।হেঁটে যাচ্ছে একা একজন ছেলে।মাথায় তার চেয়ে বেশী ওজনের বোঝা।কি করবে জানে না সে।সুর্য তখন দূরে ডুবে যাচ্ছিল ।যতদুর চোখ যায় কেউ নেই।আজ এই কষ্টের মুহুরতে কেউ পাশে নেই।দু হাত জোর করে সে মুক্তি চায় জগতের সব শৃংখল থেকে।
তারেককে জিজ্ঞাসা করি-“কি তোমাকে পেছন ফিরতে বাধ্য করেছে?এ রকম হতাশা থেকে মুক্তি পেতে আমার কি করা দরকার?” ও বলে-“ভাই ইসলামের পথে আসুন।ইসলামকে জীবনের সব ক্ষেত্রে আপ্পলাই করেন,শান্তি পাবেন।
বিচার বিবেকযুক্ত মানুষ হিসেবে কিছু যুক্তি দেখাও যা আমাকে ইসলাম মানতে উদ্বুদ্ধ করবে?
অনেক যুক্তি-আপনার ধৈর্যে্ কুলাবে না।পরে আরেকদিন বলি।